দেবশিল্পি
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের ঘোষণা মতে
কে বা কাহারা দিন-দুই আগে
চুরি যাওয়া ডাইনোসরের হাড়খানা
অক্ষত, সম্পূর্ণ অব্যবহৃত; তবে
মাথার কাছটায় খানিকটা ধুলোর প্রলেপ
লাগিয়ে ভেগে গেছে কিউরেটরের অলক্ষে।
ভোরের এবিধ ঘটনায় এবংবিধ
বিস্তারিত কারণ দর্শানো সত্ত্বেও
কিউরেটরের চাকরিটা বাঁচানো গেল না।
আর্থিক মন্দার এই ভয়াল দিনগুলোতে
বাচ্চারা কি খাবে, বৌয়ের এক কাপড়ে
সংসারকে গুডবাই জানিয়ে বাপের বাড়িতে
চলে যাবার সম্ভাবনা কতটা প্রবল— এসবের
বদলে এক অদ্ভুত চিন্তায় তার মাথা অস্থির
— হাড়ের মাথায় ধুলো এলো কি করে!
দিন-দুই আগে আমিও সামন-পেছন
বহু ভেবে শুধু আপনার জন্য রেললাইন ধরে
জোর ভেগেছিলাম, প্রিয় বোন অথবা প্রেমিকা।
ফিনিশিং লাইন ছোঁবার আগে দুঃস্বপ্ন দেখে
জেগে ওঠার দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা
আপনার ষোড়শি অভিজ্ঞানের থলেতে ঢেলে দেবার
ইস্পাতসম প্রত্যয়ে আমার ভেতরের ভাঙা-গড়াকে
নমস্কার জানিয়ে ভেগেছিলাম সেই রাত্রিতে।
আমার দুঃখিত টেবিলে পড়ে থাকা অজস্র চিঠি,
খসড়া কবিতা চাপা ক্রোধ হয়ে স্রেফ উবে গিয়েছিল
স্বপ্নাভিনয়ের অসংখ্য ফাঁক— ছিদ্রগাঁথায়।
সেদিন আপনার প্রেমের পেছনে কারো ফিসফিসানি
কারো মায়াকান্না আমার গলার কাঁটাকে
আমূল বিঁধে দিয়ে বলেছিল, ‘এত্ত!’
কিছু না করে চলে আসার চাইতে
আপনি থেকে তুমিতে নেমে,
মিউজিয়ামের কিউরেটরকে ফাঁসিয়ে
আপনার পায়ের কাছে আশ্রয়ের খোঁজে
ঊর্ধ্বপানে চেয়ে থাকা ধুলোমাটিতে
চুরি যাওয়া ডাইনোসরের হাড় দিয়ে লিখেছিলাম
— অন্তত একটিবারের জন্যও নিষেধের সুরে ‘হ্যাঁ’ বল
পাপিমন বারবার যায় পুণ্যস্নানে
নরক থেকে ফিরতি মেসেজ এল
‘তোমাকে আর ক’টা দিন
সবুর করতে হবে।
থাক না বাবা কিছুদিন
মর্তলোকে!’
শুনে আমি কাঁদলুম।
আমার দেখাদেখি
পাশের বাসার কুকুরটাও কাঁদল।
কান্না থামিয়ে ফের মেসেজ লিখতে বসলুম
‘ডিয়ার ভগবান,
এই মর্তে আমার মাসুম কবিমন
বড়ই পেরেশান হইতেছে;
আমারে ডাউনলোড কর।’
ভগবান মেসেজ না দিয়া কলই দিলেন
‘তুই কবিতা লেখ, প্রেম কর
কিন্তু খবরদার!
এইদিকে আসার নামও নিবি না।
করছস কি, হালায় বেকতে কান্ধে ব্যাগ লইয়া
ঘুরতাছে আর লিখতাছে?’
অযথা বাক্য না বাড়াইয়া
ভগবানের অ্যাসিস্ট্যান্টরে কল দিলাম
‘স্যার কি রেস্টে?’
ও কইল
‘উনি অহন নীরেনবাবু
কবিতার ক্লাস
সাড়ে সর্বনাশ!’