রুদ্র অনির্বাণ’র কবিতা

0

জন্মযাত্রা

যখন অনেক দিন হারাই অচেনা অনেক পথে
চেনা উপসর্গ নিয়ে, সাবলিল সন্তরণে ফের ঘূর্ণি
লাগে যদি শুয়ে থাকি হঠাৎ একটি মাছরাঙার
ঠোঁটের বিলাপ দেখে জলের শরীরে। নিশিমগ্ন
মায়াপুষ্পের অদৃশ্য আহ্বানে ছুটে যাই বন থেকে
বনান্তরে, চৈতালি চুম্বনে জাগি মৃদু কম্পমান
কুয়াশার মানবিক ক্রোড়ে। ক্রমশ ঘোর লাগে
পথচিহ্নহীন ক্যানভাসের বিস্তীর্ণতায় ছড়ানো
শিশিরের অশরীরী নৃত্যের অজাত কলা দেখে।
তথাপি সুরের অনাবিষ্কৃত দিগরেখা যে রঙ দেখায়
মেঘের মিনারে তার জটাজাল ছিন্ন করতে গিয়ে
জড়িয়ে যাই নতুন করে পুরোনো দিনের মতো।
শেষ অব্দি হাওয়ার নিরাপত্তাই একমাত্র
আশ্রয়। যদিও জানা থাকে হাওয়ার বিশুদ্ধতা
প্রশ্নাতীত নয়, এমন নিঃশঙ্ক থাকার অবকাশ
মুছে যাবে জেনেও পরম শুদ্ধতা ঢাকে কোষ থেকে
কোষের সমূহ অঙ্গাণু।

আমাদের নদী ও নর্তকি একদিন একাকার হলে
পরস্পরের মধ্যে, হাওয়ার আবাস ছেড়ে যাবে
ডানাহীন সেই বক অদেখা উষ্ণতায় শস্যময়
সবুজের নিবিড় গহ্বরে ক্রমশ নিশ্বাসহীন।

আগুন আকাঙ্ক্ষা

শ্রাবণের আকাক্সক্ষায় যে পথ পুড়েছে ঋতুরৌদ্রে
মানুষি মন্ত্রের ছোঁয়া তাকেও ভাসায় আজ ঘরে!
বিগত কণ্ঠের স্রোত এ পাড়ায় বুঝি আবার এসেছে?

ও মন মানুষ হও নন্দনের হাটে ঘাসফুল
আমাদের অদৃশ্য মুদ্রায় কিনে নেব অজস্র আগুন।

নিসর্গের বীজ

যদি কোনো গান ভাসে এ অরণ্যে
আমি তা কুড়িয়ে আনি বৃষ্টির রাতে

মানুষের বেদনার কথা বলি না এ জলাভূমিকে
ভোরের বাতাসে বপন করি নিসর্গের বীজ

আরো আরো গান হবে
ছায়া মাড়ানো দিনে আমাদের ঋতুর ভুবনে

কলার পাতায় বেঁধে শহরের সমূহ ভোজ
পাড়ি দেয় যারা আরব্য রজনি
তারাও ঘুমোবে এক দিন
তখন হয়ত পাবে গ্রামদেশে ফোটা অনামি ফুলের ঘ্রাণ

বাতাসের সঙ্গে বুঝি পাখিদের তাই এত কোলাহল।

প্রাক-পুরুষের ধ্বনি ও কালের রঙিন ময়দান

কেউ কেউ ইদানিং খুব হাসতে পারে। হাতের মুঠোয় রাখা অলস হাওয়ারা আচমকা উড়ে গেলে শরাহত মানবির ক্ষীণ প্রণয়ের দ্বার হঠাৎ বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই সব যুবকেরা ‘ইহাদেরি কানে’ অখণ্ডতার মন্ত্র ছড়িয়ে আকাশ-মৃত্তিকা-জল র‌্যাপিং পেপারে মুড়ে জন্মদিবসের রাতে উপহার পাঠায়। তারাও জানে না বুঝি করুণ কান্নার সুরে ‘সোনালি ডানার চিল’ ভাসিবে না মধ্যাহ্নের সূর্য চিড়ে আমাদের কালের রঙিন ময়দানে। যেহেতু চিলের ডানা প্রশ্নাতীত ঝড়ে উত্তরের খোপে কম্পমান। আগামি ঝড় যদি ভাসায় পাথরকথা জোয়ারের থরে থরে তবে এক মৌলধ্বনি হয়ত জাগাবে ভোর মাঘনিশিথের রাতে। হাস্যরত যারা নিজস্ব ভূ-ভাগে আকাশের অসমাপ্ত চিত্রলিপি দেখে দেখে তাদেরও ঘুম হয়ত ভেঙে যাবে কোনো একদিন অকস্মাৎ মেঘজামা ছিঁড়ে বৃষ্টিবার্তা যদি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বর্ণিল আভরণে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার