বাটারফ্লাই
তোমাকে বাঁধতে চাই- ধরো ইন্দ্রজালে
দিয়ে কিছু মৌন উপহার
ইতিহাস অথবা বিজ্ঞান- পড়া পাঠ্যকালে
যেভাবেই পারি করে উদ্ধার।
গভীর কৌতুকে মনে হবে বেশ অভিনীত
গিয়েছি যখন সহসাই
দেখি নিমজ্জিত পৌরশিল্পে, অযাচিত
জ্বলছে-নিভছে বাটারফ্লাই।
লাৎসিউম
ত্রিশঙ্কু হয়ে আছি, ত্রিশূলে গাঁথবে কী করে?
বুকে তো ¯’ল নেই, আছে জল অথৈ সমুদ্র
হে নিনাদকারিনী থামো, আমি অতি ক্ষুদ্র
আগে মরি একা, পরে হত্যা করো অবসরে।
এই এত অস্ত্র, দেখে তো শিল্প মনে হয়
ঘৃণাও ঘুরে যাবে বাতাসে রেণুর সাথে দূরে
দেখো- মনে রেখো মরেও গজাবো অঙ্কুরে
তাহলে ধ্বংস, রক্তে-রাঙানো অতোটা সহজ নয়।
ধরো আজ কোজাগরী, পাত্রে পড়েছে চাঁদ
সেই তাপে গলে যাচ্ছে দেশ, প্রদেশের মায়া
আকাশ ঊর্বর তাতে ফিনিক্সি-এর পড়েছে ছায়া
উড়ে তারা কেথায় যায? পৃথিবীর পরে যে ফাঁদ!
সেখানেও বন্দি আছে, বরফে নির্মিত কারাগারে
ভাতের বদলে ভর্ৎসনা দেয় মাটির বাসনে ভরে
আছে পিঙ্গল প্রজাপতি প্রেতের পদতলে মরে
দ্বীপ-দ্বীপান্তে তারা আসে-যায় চড়ে নভোচরে।
যেখানে ফুল ফুটে আছে ফলের নিয়মে ব্রতে
পাঁপড়িতে পাপ, পোশাকে পাথরে গেঁথেছে মালা
দু’চোখে দীপ্তি দাও পরিধানে নিমিত্ত ছালা
যেন আমি যেতে পারি ভেসে দূর হেডিসের স্রোতে।
জেব্রা
নিষ্ঠুর হাওয়ার মাঝে ফিরে এলে ফের;
জেব্রা দিবসের ডাকে
এলে আলপনা এঁকে-এঁকে আকন্দ বনের পাশে।
আর আমাদের লাজুক নাবিক কৃষ্ণ-ধূসর গায়ে;
এলো নুনের অহমিকায়, দ্রাঘিমাংশের নিয়তি নিয়ে পায়ে।
অথচ ব্রিজের বাতাসে তুমি এলোমেলো
উপহারে উদভ্রান্ত ব্রোঞ্জের বারতায়
নিয়েছো রসায়ন ঘনত্ব ভালোবেসে- চোখের কালিতে তাকে
তবুও ক্রন্দনে আবির্ভূত হলে আজ গভীর গুঞ্জনে।
এত যে মৃগমাংসের আনাগোনা
তীর ছুড়ে শিকারী রয়েছে ঘুমে। অতিথি আতঙ্কে।
কে দেবে পরিত্রাণ! বলো আজ নৈশ কোলাহলে?
বাসর
অকারণে চোর এসে চুড়িতে রেখেছে হাত
ভয়ে- মদিরায় ডুবে আমি ধরেছি নির্ঘাত
মনে হলো বাসরের রাত- যথা ও যেমন
দেখি চোর গেলে থেমে যায় চুড়ির কাঁপন।
বিবাহের গুঞ্জনে
কত গান, কত কলি ও কথার আগমনে ভরা
গৃহটি তেমন তথা- বিবাহের ভারে আনকোরা
যত দিদি ও দাদার খানদানি শত চিৎকারে
বিষণ্ন শাড়িতে খালা, খালু তার বসেছে আহারে
গন্ধে তুলে গতি- এ-ঘরে ও-ঘরে নিত্য আসে যায়
আমাকেই খাদ্য ক’রে হেসে-খেলে কণ্ঠে ও লালায়
জরী আর জরোয়ায় যত তেজী আনাচে-কানাচে
ধরো হাতে হাত, আঁখিতে আঁখির প্রশ্নে তারা নাচে
গোলাপে আলাপ রেখে রাখে মন সূর্যমুখী ফুলে
ও-পলাশ কাঁটার কাহিনী শুনে গেঁথে রাখো চুলে
আমি তবে কোথায় নিযুক্ত সাঁই? কে আমাকে বাঁধে?
কোন মালা বালিকা সাজাও চাঁদ ওঠা দূর ছাদে
মাতা আর মাতামহী জাগে অচেনা ভাসুর, জায়ে
সাধু ও সন্যাসী ধুম্র-সিক্ত-বালে- চলে চার পায়ে
ফলে বজ্রে ডাকা মেঘ, তাতে বৃষ্টিমাখা বর-কনে
বাহিরে ননদ কাঁদে আগাগোরা ছন্দে আনমনে
সেহেতু তৃণের বদলে ইস্পাতে রাখি অতিশয়
দাবির দহনে পোড়া এই দেহ, চিত্তে চড়ে ভয়
ধরণী পড়েছে ধরা ধর্মে-কর্মে, তবু এই রাতে
তুমি বাজো সাঁনায়ের সুরে, কবি তার কলিজাতে।
পাখি
“চতুর্দিক থেকেই পরিশ্রমী পাখিরা
রাত্রিতে আমার বসন্তবৃক্ষে সমবেতভাবে বিশ্রাম নিয়ে
প্রত্যুষেই নিজ নিজ উদ্দেশ্যে উড়ে যায়।’’
সিন্দুকে তুলে রেখে,
পাখিরে বলে রাখি-
আমি যেন বন্দুকে
কভু আর না রাখি আঁখি।
শিবলী মোকতাদির
কবি, প্রাবন্ধিক
জন্মঃ ১১ জুন ১৯৬৯ বগুড়া, বাংলাদেশ
kobi.shiblymoktadir@gmail.com
প্রকাশিত গ্রন্থঃ
ধানের রচনা দিলে পত্রে (কাব্যগ্রন্থ)
ছন্দের নান্দনিক পাঠ (প্রবন্ধগ্রন্থ)
নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল (কাব্যগ্রন্থ)
সোনার কার্তুজ (কাব্যগ্রন্থ)
রৌদ্রবঞ্চিত লোক (মুক্তগদ্য)
ব্যবহারিক বিস্ময় (কাব্যগ্রন্থ)
1 Comment
Pingback: নবপর্যায়ে প্রথম সংখ্যা । জুলাই ২০১৬ | চারবাক