শুভ্র সরকারের গুচ্ছকবিতা

0

মুহূর্ত

বদলানো পাতাদের সবুজ মলাটে
নির্জন দাঁড়িয়ে আছে পথ!
টোল পড়া পুকুরের জলে
বড়ই ফুলগুলো
ফুটে থাকা যেনো
এক একটা ফুলস্টপ…
প্রেম ও বিরাগে জলের কাছাকাছি
নিশ্চুপ স্বভাবে বিরহ শুকাচ্ছে হাঁস
মুহূর্ত তখন বিস্তর ছড়ানো লতাপাতা ঘাস
স্পর্শের স্বাদ নিয়ে কেবল প্রজাপতি জানে
বিচ্ছুরিত রোদে মাখানো আছে
তাহাদের রঙ
রোদ ফুরাবার আগেই তারা বুঝে যায়
আঁধার নামছে বুঝি দূরে কোথাও?

মরিচ ফুল

কালো কালো মরিচের পাশে
সবুজ চোখগুলো মসৃণ অবাক
বেগুনী ফুলগুলো ডানা উড়িয়ে
খুলে দিচ্ছে দূরের হলুদবন
তুমি ঋতুকাল এক
শেফালি ফুলের গাঁথামুখে
দাঁড়ানো বহুকালের নিঃসঙ্গ ঘর
এইসব অবকাশ আঁচড় কেটে গেলে
অভিমানের মিছিল থেকে শিখে নাও
সান্ধ্য স্বভাবভরা বিস্মৃতির জল
এই হলুদবন পার হয়ে
তুমি কোন মায়াহরিণ
লাল রোপনে গোধূলি বেয়ে
ডালিমের মতো ফুটে রও
লাল পিঁপড়া ও পাপড়ির বেড়ে ওঠায়
হাওয়ায় বাজছে
যে কিশোরীর কানের দুল
তুমি তার বিনিময় হও
বৃক্ষের গল্পে নদী এক হাঙ্গর
বদলে যাওয়া নাম
কেবল ঝিনুক জানে
গোপন অসুখ নেমে এলে
পাখিরা কেনো শীতের দিকে যায়….

মাতৃত্বকাল

এক বিকেলের কিছু না বুঝার
আনন্দ খেয়ালে
মেয়েটি ক্যানভাসারের কাছে যায়…
একদিন মাতৃত্ব আসবে ভেবে
মেয়েটি সালেহা আচার খেয়ে
মুখ ঢাকে লজ্জায়
মিছামিছি পেটে আঁকে
গাছ ও শিকড়ের বিন্যাস
আচার থেকে গোপনে সরে এলে
তার এক মাতৃত্বকাল চলে যায়…

কলার দোকান

ভেঁপুর ভেতর দিয়ে ছড়ানো এক দুপুর
দুলছে হাওয়াদের বীণে-
একটা কলার দোকান। ছড়িসহ কলাগুলো ঝুলে আছে। সংগত কারণেই কলাগুলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঝুলে আছে।
অজস্র রোদ এসে কলাগুলোকে ফর্সা করে দিচ্ছে। কলাগুলো হলুদ হতে হতে বউ হয়ে যাচ্ছে…..
প্রতিদিনি ছাগল ও ভেড়াগুলো কলাগুলোর খোঁজ নিতে আসছে। তাহারা মূলত কলাগুলোর মন নয়-
শরীরটাকে ভালোবাসছে…

সম্পর্ক

পৃথিবী এক বিষণœতার নাম
আমি একা নিশ্বাসের একান্ত গহীনে
নেমে দেখেছি অতল অতল
তখন সাড়ম্বর বিষাদের পাশে
নির্বিকার বসে থাকে
মেঘ ও ছায়া বিকেল।
যদি নিবিড় সন্তের বহর আসে
আরশির প্রকোষ্ঠে
তবে সত্তার দিকে চেয়ে বলবো
তুই আরো নিকট হ
যেমন পাপড়ির জড়াজড়ি ফুলবসন্তে
বিবিধ রঙের দিকে যায়
যদি অস্তিত্ব খুলে, আকাশ খুলে
দীঘল জ্যোৎস্নার মতো আঁকি মুখ
জ্যোৎস্নার পাশাপাশি মেঘ হয়ে যাস
তখন আমার কান্না
নিশ্চিত তোকে জড়াবে
সুর ও বাঁশির উত্তালতায়
হৃদয় কেবল লেটারবক্সের মতো
পরিপূর্ণ হতে চায়
চায় সম্পর্ক জুড়ে থাকা বিভার এক বন
সে কোনো পিতৃকামনায়-
বাবা, বাবা ডাকাডাকির সর্বনাম হয়
সে কোনো পাতার আড়ালে
আমাকে ছেড়ে চলে যায়
ভাঙা-ভাঙা, টুকরো-টুকরো দহনের ভেতর
আমি কী সত্যিই বাস্তবিক হই?
দূরত্ব দিয়েছি বলে
বিদায় দিয়েছি বলে
মুড়িয়ে যাচ্ছে, হেলে পড়চ্ছে
আমার চাঁদ-
চাঁদের পাশ ধরে ঢুকে যাচ্ছে
একটা হরিণের পলায়ন…

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার