সাজ্জাদ সাঈফ এর গুচ্ছকবিতা

0

এ যাবৎ যতো প্রেম

প্রকাশের পর ফুল তার নিজের কেশর দানপত্র করে দেয় লোকে, কুঁড়ি থেকে সে জীবনের অভিষেক; রোদ জ্বলে তার গায়, ঝলসায় বেদনার অযুত বাজনা নিয়ে-তবু ফুল, মানসকৃত্য জুড়ে প্রেম-কৃপা-আরাধনা করে আছে অধিকার!
আজন্ম ভেসেছো, প্রিয়, ফুলের দোলকে ঘূর্ণি বাতাসের কোলাহলে, আমি তো নিষ্ঠাশূন্য;
যদিও সোনালি খড়ের ঘ্রাণ স্বভাবস্বরূপে ঢের, চোখে সওয়ার বরুণ জাতক এক; স্বাত্ত্বিক প্রসাধনে, অধীর অতল প্রেমে তোমাকে পাই না কাছে, পেলে কাছে বিকারবিহীন কেনো যে এতো, ফুলতোলা খোঁপার কোরকে!
বাতাসের পানপাত্রে ডুব দিয়ে আসি তোমার হেরেমে, নারী, পাখীদের সাথে তারও  বেশি সহজাত আমি। জানালার মুখোমুখি বাঁশপাতাময় আবছায়া কাড়াকাড়ি করে  মেঘের চুমু; এইখানে বসে থেকে, দণ্ডিত মুখ করে বসে থেকে দেখি কালের মিনারে চুল শুকাতে বসে আছে এ যাবৎ যতো প্রেম!

ধুলার খামার

আমাকে ডেকেছে আজ নীরবতা-রাগ,
পায়ে পায়ে মল বাজে এমন রাতের!
তবু তো অভ্যাসেরাই, মেলেছে পরাগ;
রাঙা মন, খুলি জুড়ে আঁচড় দাঁতের;
শ্বাপদ আঁধার বুঝি, আজ ভালো লাগে,
সংঘরহিত হবার যতো অভিলাষ,
দুই হাত মুষ্ঠি বাধা, পাতিনি আবেগে,
চাইনি কারুর কাছে ব্যথার বিলাস!
ঘুমের ভঙ্গিমা নিয়ে চিবুক আমার,
পতিত পাতার কাছে নুয়ে আছে ঢের;
এখনও সঙ্গী যারা, পাই নাই টের,
কি রূপে জেগেছে বোধে, ধুলার খামার!

দিলখোলা

কাঁচিতে চুল ছাঁটানোর শব্দ আড়ি পেতে শুনি, ভালো লাগে, আজ সেলুনের ধারে কাছে আড্ডা বসাই-কাকে যেনো বলে বসি ঘুম ভাঙা স্বপ্নের কথা, দপ্তরীর লোহার মতো আয়েশী সুরে ঝননের কথা, পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাডানো ছোট খালার কথা!
আজ বড় দিলখোলা আমি-আকাশ ছুঁড়েছে মেঘের বাবল; আর, গেরস্থালীর অবসরে, গৃহে, বৃষ্টির গল্প ওঠামাত্র ছাতা হাতে উঠানের ধারে এসে দাঁডাও তুমি, যেনো কেউ এখনি ফিরবে বাড়ি!

রোলকল ডাকা শ্রেণিকক্ষে

কুয়াশাতাড়িত ভোরব্যাপী দালানে দালানে গম্বুজ ধরে ধরে থির হয়ে আসে নবাবী আমলের হাওয়া, সোডা ও তন্দুরের ঘ্রাণে প্রশান্ত গলিমুখ, যেনো সবটা সকাল টমটম নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় সহিস
পিতার ডাকের মতো মনোহর ভোর আসে খড়িমাটি ভেজা ফটকের সিড়ি বেঁয়ে, হাত ধুতে ধুতে বেসিনের আয়নায় মুখের ব্রণ দেখে নেয় কেউ, বুকের ভেতরে চঞ্চলা চড়ে নারিন্দা হাই স্কুল
বিশ্বাস থেকে ফড়িঙেরা উড়ে এসে প্রত্যয়ে জড়ো হয়, নিশ্চয়ই, নগর প্রান্ত প্রাণায়াম পরিধান করে স্থির, সুপরিসর; তবু কারও নিঃশ্বাস বাতাসে বহন করে গেলো তারা অনুপস্থিত কায়ামধ্যে, আমি তার নাম অজ্ঞাত রাখি রোলকল ডাকা শ্রেণিকক্ষে
জুঁইফুল তার ডাগর মাত্রাবৃত্তে কতো কতো রূপে আবৃত্তি হয়ে গেলো, আমার লোমকাঁটা পরাক্রমশীল সারাটা সকাল!

ফটোগ্রাফ

সেই যে পাইপ ঠেকিয়ে মুখে, বুদবুদ ওড়ানো খেলা আমাদের,
ফেণা ও তরলের গতিসূত্রে যেটুকু বেমানান ছিলো চেতনার
তুমি ঠিক সেই আলোতেই ফটোগ্রাফ, দেয়ালে-
কাগজের ভাঁজ অনুপাতে ভ্রু কুঞ্চিত
দু’চোখে গোলাপ, জল ছেটানো,
রাখবো না কিছুতেই আড়িপাতা ঘুম নাগালে কোথাও
জেগে থাক ঘুঘুডাক, পাখার মলাট!
নড়াচড়া ছেড়ে স্থির ফুলে অভিহিত হও
তহবিলও হতে পারো মেঘ জমা দেবো।

যাপিত পাথর

ধোঁয়া উড়ছে ভাতের, পাতিলে সলি নাড়ছেন মা, আমাকে সামনে পেয়ে একত্রিত সবগুলো কবুতর মিলে ভারি করে ফেলেছে উঠান;
দ্রুত ডুব মেরে মানুষকে ফাঁকি দেয়া মাছগুলো ঘাপটি মেরেছে কোথাও, এসব কিছুর মাঝেই আমার বেঁচে থাকা, তল্পিতল্পাসহ৷
জীবন অহেতু বলে গালমন্দ করে লোকে, নিজেকে বুঝে সুঝে রাখি, আবহাওয়ার বিদ্রুপ ভুলে শত শত গাছেরা আগলায় কি করে তাহলে নির্বাক নক্ষত্রের দিকে চলে যাওয়া হাইওয়েকে, গভীর রাতে!
সত্যি, ভ্রম নাকি ভ্রমণ এ জন্মযাত্রা আমাদের?

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার