তাজমীর-উজ-জামান এর কবিতা

0

নদীর কাছে নাও

মেঘের স্বরে বৃষ্টি বইলা দাও;
তীরের কাছে নীড় বুনসি,
নদীর কাছে নাও।
নদীর তাবিজ বুকে বাঁইধা নিয়া
ঝুমবর্ষায় ডুব দিবো খুব,
জ্বর পুড়াবে গাও।
গাওগেরামের ঘুম আসে না ক্যান?
ধিঙ্গি চাঁদের মেন্দি হাতে,
মোমের মতোন পাও।
কার হাসিতে দুকূল ভাইসা যায়?
বারবেলাতে হাসা বারণ,
হংসকুলের ছাও!
চোখের ভেতর চোখ রয় না আর!
চাই না কাজল, চোখের ডানায়
আকাশটা নামাও।

আশাবাদ

মানুষের ফেলে যাওয়াা পায়ে হেঁটে
রমণীদের বোতামহীন বুকে উঠে পড়ি,
মানুষের লজ্জাবোধের গল্প শোনাতে শোনাতে
তারা আমাকে পৃথিবী ভ্রমণ করিয়ে আনে।
‘আমি সমুদ্র ভালোবাসি’।
প্রসন্ন চোখ নিয়ে তাদের ঊরুর ভেতর
একটা গোপন দরোজা খুঁজি এবং আমাদের
সমুদ্রবিষয়ক প্রথম পাঠ।
ভালোবাসা সম্পর্কে যাদের গভীর উদ্বেগ আছে,
ঘুমের মধ্যে কারো নগ্নশরীর দেখে নিলে
তারাও সন্দেহজনক হয়ে পড়বে।
একজন নারীকে তবু ভালোবাসার কথা বলি।
‘ভালোবাসা এমন একটি বিশ্বাস
যার লুকোনো ঠোঁটে শতবছর ধরে অবিশ্বাসের নিতম্ব
চুমো রেখে আসে’-নারীটি জানালো।
‘ওরা কেন যে পরস্পরের ফুসফুসে শ্বাস রাখে!’
তাকে জেনেছি অনেক কাল পরে।
কারো বুকের সৌরভ পূর্বজন্মগন্ধী মনে হলে
মানুষ যেভাবে তাকে নিজস্ব ভাজে রেখে দেয়,
সেভাবে আমার সত্তার ভেতর
আত্মস্থ হয়ে এলো সে।
‘তোমাকে ভালোবেসেছি, যেভাবে পাখিদের ব্যাপারে
তোমার মুগ্ধতা’।
‘এবং আমাদের শরীর শুধু ভালোবাসবার সহজাত উপকরণ’-
চোখের ভেতর থেকে সে বলে।
এখনো আকাশের নিচে দু’দ- দাঁড়ানো গেলে,
আমরা ভাবি-
সভ্যতা আজো আকাশের থেকে গভীরোতরো
আয়না নয়।
‘তোমাকে ততোদূর জেনেছি, মনে হয়,
যতোদূরে আকাশ দেখি’।
‘মানুষ একদিন ভালোবাসার কাছে
যোগ্যতরো হবে’-এরকম একটি আশাবাদ
তাকে নিয়ে গ্যালো একদিন।

নিজেকে

এই যে দুহাতে তৈরি করছো ভ্রম,
সর্বনাশের দরজা খুলে মানুষ ঘুমাতে যায়?
তারাদেরও পথে মানুষ পড়লে গুঁড়িয়ে যাবে,
মানুষের পথ আরো তো স্বার্থপর!
সারারাত তুমি গুনেছো বৃষ্টিফোঁটা,
খুব ভোরে কার গলায় রেখেছো ভালোবাসবার স্বর,
ভালোবাসা দূর বনান্তে শোভমান
একটি কুটির, তার ভেতরে নিভছে আলো।
কেমন দুপুর বিকেল সাজাও!
সকল কবিতা লেখা শেষ হলে তাকেই ভাবো,
যাবে কতোদূর?
কতোদূরে গিয়ে ঠোঁট ভোলা যাবে?
বুকের পরতে সাদা পাহাড়ের জৌলুস রেখে
তোমাকে ভুলেছে সে।
প্রেমিক প্রবর মাঝরাত তার, দুপুর, সকাল।
পৃথিবীর সব পেরোনো পথের শেষ গাছটির
বিবর্ণ পাতা তোমার মতো,
তোমার মতো যুদ্ধের শেষ শেকড়ছেঁড়া বিক্রীত ফুল।
মানুষ এখন ঘুমিয়ে গেলেও স্বপ্ন দ্যাখে লাভ লোকসান,
মানুষ এখন দিনখোরাকি, পাথর ফুল আর ফলের দোকান।
কোথায় যাবে?
নৌকা সাজাও, পালের রশি শক্ত বাঁধো।
মানুষ যেহেতু দরোজা-জানলা আটকে রাখে ভেতর থেকে,
নৌকা নাবাও, জল ছেঁচে নাও বুকের কাছের।
এই যে দুচোখ টুপটাপ গলে,
ডুববে জেনেও সাঁতার শেখার অপ্রয়োজন,
তোমাকে ডোবাবে।
তোমাকে জানাবে সকালবেলার বিরস পাখি
সব হারানোর হারমোনিয়া।
সব হারাবে, সব হারাবে,
তোমার কাব্য, সম্ভাব্য সব হারাবে!

এভাবে পেয়ে বসো কেনো?

এভাবে পেয়ে বসো কেনো, শাশ্বতা?
আজ কাজে যাবো না,
যাবো না স্নানে,
যেহেতু মায়ের কাছে আছি
তিনবেলা খাবারের ব্যাপারে তিনশোবার
ফেরাতে হবে মা’কে।
আজ দুপুরে ঘুমাবো না,
বেরুবো না বিকেলে,
সন্ধ্যায় বন্ধুদের মানা করে দেবো আসতে,
যেহেতু বাবা কাছে আছেন
তিনশোবার আমার ঘরের সামনে ঘুরঘুর ক’রে
তিনবার কপালে হাত রেখে বলবেন-
তোর গা টা এতো গরম কেনো রে?
এরকম হুড়মুড়িয়ে কেউ আসে কারো ভেতর!!
পিতামহের কাদামাখা জুতাজোড়া
স্বপ্নের ভেতর আজ আমাকে অভিশাপ দেবে-
কার স্বপ্ন এরকম দশদিক পোড়ে, হতচ্ছাড়া!
শাশ্বতা, শেষ কবে হাড়গোড় ভেঙেছি?
শেষ কবে মিছিলে গেছি?
শেষ কবে বেড়ালটা আদর পেয়েছে?
শেষ কবে মরেছি?
শেষ কবে জন্ম?
স্বমেহন?
সান্ধ্যভ্রমণ?
কিচ্ছু খবর রাখো নি শাশ্বতা!
শুধু অধিকার করেছো!

চলে যাবো

চলে যাবো প্লাবনের দেশ।
টাকা কড়ি সামান্য নিলেই হবে;
ফসল ফলাবো,
নদীভাঙনের আগের রাতে
কমবয়সী বউকে শোনাবো চর জাগার গল্প।
পাহাড়ি গ্রামেও আশাবাদ আছে।
পৃথিবীর যেসব রূপকথা শুরু হয়
একটা অনতিক্রম্য পাহাড়ের ওপার থেকে,
চলে যাবো।
বাচ্চাকাচ্চারা শহুরে ইট-কাঠের গল্প শুনে শুনে,
জাপটে ধরে ঘুমাবে তাদের মাকে।
সমুদ্র টানে না তেমন।
সৈকতে এখন নেভাল অ্যাকাডেমি খুলে
সমুদ্রবিদ্যা শেখান না মৎসকন্যারা।
ওখানে যাবো না-
মানুষেরা যাক।
চলে যাবো।
এখানে এখন আমাদের বৃদ্ধ পিতাদেরকে
তাদের মায়ের জন্য কখনো শোক করতে দেখি না।
নারীদের নাভীমূলে ভালোবাসা নেই।
ইটের আড়তদারী
পুরুষের লোমকূপ কেড়ে নিয়ে গ্যাছে।
চলে যাবো
তুমি গেলে ভালো হয়,
যদিও তোমার স্বামী আমাদের কাছ থেকে
আরো বেশি সমব্যথা আশা করে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার