শামীম মেহেদীর কবিতা

0

নামি মানুষের গন্ধ

তোমার পরতে পরতে স্নিগ্ধ
গন্ধ ছড়ায়;-সুগন্ধি আতর!
চারকোণ বৃত্তের মানুষগুলো শুধু ছোটে
শিকড় থেকে শিখরে!
আমিও ফেরি করি-গন্ধগোলাপজলে
যদি সুবাস ছড়াও কথা আর কাজে
এই পথেই হেঁটে যাও-হাঁটি
বিরাণ স্বপ্নের স্রোতে!
নিখিলের মেয়ের বিয়ে

রানুর মাথার সিঁথির সিঁদুরে চিকচিক করছে বালিহাস!
স্বপ্নের সমান দূরত্ব! সিঁথির আলপথ ধরে এগুলেই
দু’পাশে ঝাঁউবন, সেখানে উঁকুন বিলি করে,-হুক্কাহুয়া
ডাক পড়ে ইঁদুর দৌড়ে।
মা বলতেন, যার সিঁথির দৌড় যতো-তার বিয়ে ততো দূর।
নিখিল যজ্ঞে সুবিশাল ঋণের বোঝা,
স্বপ্নের  ফানুসগুলো কেমন তৈ তৈ উড়ছে আকাশে
সিঁথির দূরত্ব ঋণের বোঝা কাছাকাছি মনে হয় নিজেকে

চিনেছি বিশ্ব-চিনেছি নিজেকে

আজান হচ্ছে…
এখানেও নাফ নদীতে নৌকার দুলনি
নড়েচড়ে বসে একটা চিকন জোক
কালচে শরীর টগবগ করে-ফিনিক দিয়ে গড়গড় করে
ঘাড়বেয়ে নেমে আসে সন্ধ্যারাতের গণিকা।
আপাতত নীলাচল,-নীলাভ শুভ্রকেশের দেশ
যাযাবর পথমারাই আগামীর গন্ত্যবে
ভুলভাল ক্রোশবিদ্ধ ইশ্বরপুত্র
থুতনিতে টুলপড়া রাখাইন আসিরুন
পেকে ওঠা কদবেল ঘ্রাণ

পাহাড়ের কুলঘেষে থেমে থাকে স্বপ্ন

ওপাড়ে যা খুইয়েছি-এপাড়েও কি তাই?
সেলাইয়ের ফাঁকে ফাঁকে দুঃখ বিলাপ!
এ আশ্চর্য  সত্য, এখানেও সূর্য উঠে,
লাল সূর্য মিয়ানমারের আকাশ অচেতন জনরুদ্ধ
যে পাখি ফিরেছে সভ্যতার খুঁজে

আশ্রয় হোক-ভূখণ্ড
এ তাদের অধিকার
ফিরে যাক, ফিরিয়ে দিতে চাই
আলোকসভ্যতার দুয়ারে
রোহিঙ্গা বৌ কুপি হাতে-এখানেও আলো আসে
দূর থেকে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি

ঘুম

হারানের বৌ পুয়াতি, সকাল দুপুর নিড়ানো ক্ষেতে পানি ঢালে আর স্বপ্ন আঁকে।
বিরাণ মাঠ কেমন উর্বরা, ট্রাফিকজ্যাম ঠেলে একদিন নিশ্চয়ই আলো  ফুটবে বাড়ী

সেদিন না হয়  চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা নীল সকাল বাড়িয়ে দেবো সামনে।
ভাবছিলাম, কি হলো এক আচানক ঘাসফড়িং
                                গালভারী রাগে জানালো সবকিছু মিছেদের দলে

নীল হাই তুলছে ঘুমে! সামনে ফাগুন-হলদে ছেয়ে আছে সমস্ত মাঠ
দেখো আমাদেরও হবে একদিন

সন্ধ্যায় ফিরে আসি শূন্যতায়

আবার পুনঃমুদ্রণ, পাঁচ টাকার ভাড়া দশ টাকা
গতবারের পেয়াজের ঝাঁজ এখনো পকেট ভর্তি চোখ মুখে লেগে আছে

কেমন আফিম ঘ্রাণে নিশ্চুপ চারপাশ
অনেক বছর পর ইলিশের তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম

ব্যাংকের টাকাগুলো নাকি হাওয়া হয়ে গেলো শুনলাম
আমার টানাপড়া সন্ধ্যায় এমনিতেই শূন্যতা এখন
অন্ধ আপেল

একা নাকি?
কেনো।
দুঃখী দুঃখী চোখ যে!
ঐচ্ছিক সপ্তাহের সকাল
থেমে থেমে নামতা জপি; নামজপি
আপেলের বিচিতে যোগবিয়োগ
পথহাটি, যেমন জপেছি গুণিতক শব্দগুঞ্জন
চুপ যে?
কি বলবো
রাতটা কি গভীর
জলছবি, সঙ্গীন, যদি হারাই…
হারানের আবার ভুলোপথ!
তারপর থমকে থাকে পৃথিবী,
অবাক বিস্ময়ে জাগিয়ে তুলো তুমি
তুমি এখন তুমি নও
স্বর্গ, শীর্ষ, স্বাপ্নিক, ঢেউ…

গুম

যেভাবে পা টেনে টেনে খুড়াই; হাঁটি সকাল দুপুর
স্বাপ্নিক সময়ের অস্থিরতায়, দ্বিধানিত্ব হই
                        এই খুনের নগরীতে, এখন গুম হয়
এ নারকীয় নাট্যযজ্ঞে ফাঁদপাতা ইঁদুরকলে
গলাঅব্দী ডুবে থাকি ঘুমের ঘরে এই আমি অজ্ঞানে
                     নত হই তোমাদের নাট্যতে, কে আমি আমি কে?

রোগ

তোমার অসুখ,-তোমার নিঃশ্বাসের মতো
ভালো থাকার ব্যস্ততায়,-পোকাদের আনাগোনা
                      চোখের কর্ণিয়ায়
তোমার অসুখ,-তোমার শব্দের মতো
তোমার প্রশ্ন অবান্তর
তোমার এই হেঁটে চলা বহতা সকাল
শেষ সন্ধ্যার আলোহীন জোনাক

 

দাম্পত্য

বলেছিলে মিথ্যে করে হলেও বলতে
বলা কি যায় সত্যমিথ্যার চঞ্চু
ভেঙ্গে ফেলতে বলেছিলে-
ভাগ করা যেতো, হয়তো
স্বপ্নটা কি করে গড়বে তুমি?
একটা দীর্ঘ স্রোত ভেসে ভেসে
হাওয়ার কু-লী আঁকা যেতো
প্রজাপতি প্রজাপতি  হয়ে উড়া হতো
ঘোড়ার মতো কাঁধে চড়ে,-
আলাদিনের দৈত্যের দেখা পেতে?
পথ সেই আগের মতোই আছে
সমান্তরাল-শুধু তুমি সরে গেছো!

 

পুঁচকেটার আজ আলো দেখার দ্বিতীয় দিন

নন্দিতাদের বাড়ি সীমান্তের ওপাড়ে
এ পাড়ে আমার-মাঝখানে
কাঁটাতার!
নন্দিতাদের সকালের পাখিডাকা ভোর
আমার চায়ের কাঁপের মৃদুধোয়া
বাতাসে ওড়ে!
আমি আর সে পাখি দেখি
ভোর দেখি, চা খাই
দূরে দূরে থাকি!
এই ভাবি ঐ দূরের আকাশ ব্রহ্মা-ের ছাদহীন
কুঁড়েঘর!

 

এই সময়ে বনলতা

হাঁটছিলাম, হঠাৎ সামনে আইয়া খাড়াইলো
জিগাইলো ক্যামুন আছি। কইলাম
এই তো জায়গা দিন।
স্তম্ভিত তাকাইয়া থাইক্কা জিগাইলো
ক্যামনে ভালা থাকো?
           আমি কইলাম ক্যা…
আমি ছাড়া তুমি ভালা থাকো ক্যামনে

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার