আমেনা তাউসিরাত এর কবিতা

0

ব্রহ্ম-কমল

পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।
বলছে লোকে আহারে বলুক,
তুমি বর্ষা ছুঁয়ো না।
চার চাকার এক ধাতব বাহনে,
মানব নয় কিছু দানব চারণে।
হায়েনা মেতেছে হুল্লোড়ে হায়।
বিদলিত ফুল তুমি ছিলে অসহায়।
অথৈ অভিমান ছিলো মানছি আমি।
অভিশাপে অগ্নি হও বলছি আমি।
অভিযোগটুকু না কী লিখতে গিয়ে,
ছ’টা ঘণ্টা তুমি ছিলে নেতিয়ে।
আহত অপেক্ষা আর অস্বস্তি মিলে,
কাহিনী ফিরেছে টেবিলে টেবিলে।
কান্নারা বুকে জানি হল্লা করেছে।
নিপীড়িত কালো রাত বর্শা ছুঁড়েছে।
আমি জেনেছি।
জানলে কী আর?
আমি আমরা মামুলি জনতা।
ক্রোধে তোলপাড়, এইতো ক্ষমতা।
পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।
ইয়াসমিনও চড়েছিলো ভ্যানে জানো কি সে কথা?
পোশাকি কিছু পশু ছিঁড়েছিলো সেই কুঞ্জলতা।
দুর্বৃত্তরা সব ফিরল ঘরে,
নীলকণ্ঠ হায় একলা নিথরে।
পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।
উল্লাসে কারা দামামা বাজিয়ে,
বোশেখ, বসন্তে সাজলো চিড়িয়ে,
লেজ গুটিয়ে ফের খাঁচার ভেতরে,
আহা লিটন কিছু কম ছিলরে।
দুষ্ট না কী দস্যু ওরা,
সে জানে জানুক কাকাবাবুরা।
গল্প গণেশে ক্লান্তি এসেছে,
ক্লান্তি এসেছে বুকে ক্ষত জননী গুনতে গুনতে।
পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।
উদ্যতপনা আর উন্নাসিকতায়,
স্বদেশ যাচ্ছে আহা যাচ্ছে কোথায়?
একলা বকুল আর ভীরু বালিকা,
স্বর্ণ চামেলি আর মেঠো মল্লিকা,
কে বোলো আজ খবর হবে না?
বৃথা স্বাধীনতা বোলো বীরঙ্গনা।
ইতিহাস হাসে অট্টহাস্যে।
পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।
পয়মন্ত পারুল তুমি, তুহিনাদ্রিরও মেয়ে।
তুষারেরা সব তুড়িয়ে যাবে, প্রলয়ঝড়ে ধেয়ে।
আর আমরাতো আজ জল হয়েছি,
লজ্জাতে সব তল হয়েছি,
ব্রহ্ম কমল আমি তোমায় বলেছি,
তুমি ঢল হয়ো না।
পাহাড়ি ফুল তুমি জল হয়ো না।

এলিজিতে পথ

বৃদ্ধ দুপুরটার রোদের ঝাঁপির আড়ালে
দিনগুলো গত হয়ে গেছে।
রাতের জলটাকে আস্তিনে মুছে,
যেদিন প্রধান সড়কে উঠলাম-
আমার গোলাপি ছায়ায় দেড় জোড়া
ডাহুকের ভ্রুকুটি আজও
নিকট বর্তমান।
আমি শুধু থমকে ফিরি।
রোজ রোজ দিগন্তের মেইলে
হাসতে হাসতে পাখির সঙ্গম দৃশ্য
ফেরি হয়ে যায়।
সর্ষে শাড়ির দরোজায়
একতাল ফিঙে রাত দিয়ে যায়
ভিজে পৌরুষ।
রক্তের সাহসী প্রকাশে বুদবুদ শৈশব,
পিছমোড়া দীঘল তা-বের ইতিহাস
স্বেচ্ছায় চটির আলিঙ্গনে তুলে রাখে।
আশাহত জলের মুখে
ছিপটানা মোমকিশোরীর গল্পটা
ছায়ায় ভাঙে।
তবুও মনে পড়ে মেঘের উৎসবে
আকাশগুলো হাত নেড়ে,
হাঁসের মতো, ডানার মতো
আমাকে দিয়ে যেতো
অধরবোধে উষ্ণ আদর।
রোদগুলো আমার মায়ের
বিহঙ্গ শ্রম আর বেলিগলা ঘামের
দিনটাকে শেকড়ে বাঁধে।
আমার ফিরে ফিরে চমক লাগে।
আমার আস্তিনের বারুদে
সমুদ্র বসত নিলো,
অথচ আমি ফের অসময়ের জলের ভার
গোছাতে গোছাতে
নতুন সড়ক খুঁজি।

ঘুম ছিলো মহলায়

ভুলে যাওয়া ডাংগুলি উৎসব,
স্নেহ রোদে তুচ্ছ অভিমান।
ভেঙে পড়া একুশটা পলক,
ভুলপাঠ পড়ে নেয়া ক্লাসরুম।
দ্রুত পায়ে ঠেলে আসা
অতো অতো জলজ প্রহর।
আর কখনো উচ্ছ্বল,
কখনো ঋজু সাগরিক বিমর্ষ বিষাদে
জেগে থাকা একটা শহর।
থেঁতলানো তিনশ রাত্রি
আমিও জেগেছিলাম,
রাত মৈথুনে গলে গলে পড়া
ল্যাম্পপোস্ট হয়ে।
কখনো একটা শিশুর অবাধ্য চিৎকারে,
খামরঙ পোশাকী মানুষটার অকারণ হুইসেলে,
কখনো একজোড়া স্বরকল্পে ছত্রভঙ্গ,
একটা বিছানার অন্ধ জলকূপে।
কখনো রাত পেঁচার দৃষ্টি গৌরবে…
আরো কতো শিথিল অভাবে,
দিনক্ষণ ভুলে থেকে এভাবে এভাবে,
অবরুদ্ধ গৃহিণীর কান্নার ম্যাকআপে,
নিষিদ্ধ তরলে কিছু কিছু তরুণ নিঃশ্বাসে,
রাত আঁকা কবিতার সন্ন্যাস ছুঁয়ে,
ঘুমবোধ ভুলে থাকা ধোঁয়াটে মাদকে,
আমিও জেগেছিলাম
ঘুমকাতুরে একটা চোখে।
সভ্য নগরীর অসভ্য বিবেকে,
অদ্ভুত ক্রূরতায় বেমালুম জেগে থেকে,
ঘুম গল্পদের আমিও একদিন ছিঁড়েছিলাম
লাশকাটা শোকে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার