গাছটা
গাছটা বলেছিলো-
আমাকে নিয়ে হেঁটে যেও না।
নিঃকম্প থাকো-
নড়বে না।
যাদু
টোনা-
আনাগোনা,
নিরঙ্কুশ হাতের রেখায়।
পাতাটিও যাবে না সাথে,
মাথার মুকুট-
ছিন্নমূল,
যাবে না
নিও-‘না’-নিবন্ধিত হাতে।
এভাবে ‘না’ উত্থাপন করে
গাছটি হেঁটে এলো কাছে,
হলুদ পাঁজরে-
অচেনা সুগন্ধি পুঁতে
কানে দিলো তরজমা-
‘তোমার নামে একটি দিঘী কাটা আছে,
সীমানা ছাড়িয়ে যে জলের বুকেতে বাঁচে।’
একা-কৃত্য
গত সন্ধ্যায় ফ্রয়েড মশাই বললেন-
তোমার ঘরে যে ইঁদুরটি থাকে-
তার নাম-দূরত্ব।
হলুদ বিয়ারে শেষ চুম্বন দিয়ে-
নিজেকেই বলি-দূর-তত্ত্ব!
ছুট দাঁড়িয়ে, নিজেকে গোছাই,
ইঁদুরটিকে ব্যাগে ভরি, বিল চুকাই।
সাড়ে সাত ডলার-বিদায়।
অথচ, তখনো গুস্তাভ ইয়ং-
তর্কে উড়াচ্ছে শিমুল মেঘ,
কালো নদী ফ্রয়েডের সাথে!
আমার কাঁধে যেই ইঁদুরটি হাঁটে-
তার নাম নাকি-একাকীত্ব!
শীতের নক্ষত্রে, নিজেকে নিয়ে হেঁটে যাই,
ইঁদুরকে বোঝাই-একা-কৃত্য।
পাখিদের জন্য ক্র্যাচ
খোঁড়া পাখিটির ভাবনা ক্ষ্যাপা মনে।
চাতালে বসে বুড়ি গাছটাকে বলে-
আদম ব্যাপারী হয়ে যেতে মন চায়! মন বলে-
‘খট্টর মট্টর যন্ত্র হয়ে যাই চল্ দিন শেষে!’
বুঝলে?
দেয়ালে ভর ক’রে, সীমানায় দাঁড়িয়ে থেকে-
গুণে যাবো কাগজের নোট আর মানুষের মাথা।
পালকের তাপে চূর্ণীভূত হবে-ডামাডোল,
বিবেকহীন জাগতিক অহং যত্র তত্র, চামড়ার খোল।
মৃত পা’য়েদের মতো। আদিম ধ্রুপদী উপাদান শত।
ধূসর সবুজাভ কাঁচের আড়ালে,
আলোক সংবেদনশীল ইন্দ্রিয় ঢেকে-
বিক্রীত জীবনের ক্লান্ত পদযাত্রা দেখে। শিখে।
হেসে। কেঁদে। হাঁপিয়ে। দৌড়াতে গিয়েই-
আবার আমার পাখি হয়ে যেতে মন চাইবে!
এ জীবন যদিও পাখি’র। পুনরায় মাত্রাতীত
পাখি হওয়াই হবে শ্রেয়।
বুড়ি গাছ শোনে। শুনে হাসে। অতঃপর দেখে-
মানুষগুলোর দিকে ছুটে যায় বন্দুকের নল।
পায়ের নীচে বদলে যায় মৃত্তিকার রঙ, গন্ধ, রূপ।
সীমানা পেড়িয়ে তখন-অন্ধকার! না-কি ঝুলে মৃত্যু!
শেষবার কি ভেবেছিল তারা? কি দেখেছিল চোখ?
কার মুখ এসেছিল মনে? কি বলেছিল অস্ফুট ক্ষোভ?
পাখিটি’র মনেও বাড়ে জিজ্ঞাসা। বেড়ে গিয়ে-
হয়ে ওঠে পয়মন্ত কেতকী গাছ এক।
গায়ে তার হাজার কাঁটা। যেন খাঁজকাটা শীতের রাত!
বুড়ি গাছ দেখে পাখিটিকে। আপাদমস্তক জীবন্ত!
খোঁড়া পাখিটি ফের বলে-
মনে চায় আদম ব্যাপারী হয়ে যাই, খট্টর মট্টর প্যাঁচ।
মানুষের হাত দু’টো যন্ত্র, চালান করে দিই মহাকাশে
কেননা, মানুষ বানাতে পারেনি পাখিদের জন্য ক্র্যাচ!
অবিন্যস্ত
তারপর, থেকে বয়সের মতো বেড়ে যায় অপেক্ষা।
‘আমার সূর্যের’ একটা কুঞ্জকানন আছে। বাহারি ফুল আর মৌমাছি কবিতার রূপে গুঞ্জন করে। সবুজপাতার ছদ্মবেশে সেখানে বিচরণ করি। সেই অরণ্য একটু একটু করে আমায় কাছে টানে। আমাকে কি বলে সে?! বলে-
“তুমি একটা সবুজ পাতা!”
পত্রপুট কেঁপে কেঁপে ওঠে। সবুজ থেকে লাল, লাল থেকে নীল… আর নীল থেকে জলের নিচে কান পাতি।
কানে কানে বলি-আর তুমি????
ঘোর
ঘোর নাজিল হচ্ছে
কাগজের ভিড়ে উড়ে আসা স্বপ্নে
নিদ্রাজনক সুবাসি ফুলেল রেণুকায়-
তোমার নামের মতো অরণ্যে।
পিঠ বেয়ে নেমে যাওয়া ঝড়ে
স্পর্শের অধিক বরফ গলে
স্নায়ুজাল জড়িয়ে ছড়ায়-
কে ডাকে! কি নামে! দ-কারণ্যে..
নামের অধিক নামে…