পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ (১০০০-৩০০ সাঅপূ): একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা

0

এক. রাজনৈতিক ইতিহাস
-কাহিনীর বিস্তার
আমাদের আলোচ্যকালের পশ্চিম এশীয় রাজ্য ও সা¤্রাজ্যগুলো হলো প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার আশেরিয়া ও বেবিলনিয়া, পারস্য ও মিডিয়া, লিডিয়া, এশিয়া মাইনর, উরারতু, ইলাম, সঙ্গে যাযাবর সিথীয় ও কিমেরীয় ও মানানীয় নামের একটি জাতিগোষ্ঠী: আয়োনিয়া, মিশর এবং কুশ, এবং গ্রিক-পারস্য সংঘাত। এছাড়া আরাম-সিরিয়া, ফিনিশিয়া এবং ওই অঞ্চলের সংখ্যাহীন নগর-রাজ্য এবং ফিলিস্তিনে সামেরীয় নামের নতুন এক জাতিগোষ্ঠীর উদ্ভব। সর্বোপরি, বিভক্ত ইহুদি রাজ্য: ইসরাইল ও এহুদা।
তবে সিথীয় কিংবা কিমেরীয় কেউই এশীয় ছিল না; এই দু’টি শক্তি সাঅপূ [সাঅপূ-সাধারণ অব্দপূর্ব, খ্রিপূ (খ্রিস্টপূর্ব)-এর বিকল্প] ৭ম শতাব্দীর প্রথমদিকে ইউক্রেনের স্তেপ থেকে এসে পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে নিজেদের জুড়ে নেয়। এমনকি মিশর বর্তমান সময়ের মতো এশীয় শক্তি না হয়ে একটি আফ্রিকান শক্তি ছিল, একইভাবে কুশ/নুবিয়া বা আজকের উত্তর সুদান, কিন্তু এই দু’টি দেশ আমাদের আলোচ্যসূচিতে এসেছে ইতিহাসের নিরিখেই: প্রাচীন মিশরের মূল রণভূমি ছিল এশিয়া; ফারাওরা ফিলিস্তিন-সিরিয়া-ফিনিশিয়া তথা লেভান্টে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং সীমান্ত থেকে হিত্তিয়, আশেরীয়, বেবিলনীয়দের দূরে রাখতে গিয়ে তাদের মানচিত্র সিরীয় সীমান্তের ফোরাত তীর পর্যন্ত এঁকে নেন, যার ফলে মিশর একটি পশ্চিম এশীয় শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া মিশরে ২৫তম কুশাইট রাজবংশ গঠিত হওয়ার পর তারাও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে, যেভাবে আমরা বাইবেলে কুশাইট তাহার্কাকে পাই, তিহর্ক নামে, যখন আশেরীয় বাদশাহ পঞ্চম শালমানেসের জেরুশালেম ঘেরাও দেন, তখন এহুদার বাদশাহ হিস্কিয়ের মিত্র তিহর্ক ফিলিস্তিনে এসে হাজির হলে কুশ বাইবেলীয় ইতিহাসের মতো পশ্চিম এশীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। এছাড়া নয়া বেবিলনীয় বাদশাহ দ্বিতীয় বখতেনাসরকে দিয়ে জেরুশালেম আক্রমণ ও বায়তুল মোকাদ্দস ধ্বংস ওই যুগের একটি বিখ্যাত ঘটনা।
-বিভক্ত ইহুদি রাজ্য ও শত্রুমিত্র
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের বিবরণমতে, দাউদের মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন পুত্র সুলাইমান এবং ফিলিস্তিনে পিতা-পুত্রের শাসনকাল প্রাচীন ইহুদিদের ‘ঐক্যবদ্ধ রাজ্যযুগ’ নামে পরিচিত, যেটি পরে, সুলাইমানের মৃত্যুর-পরবর্তী, ভেঙ্গে গিয়ে দু’টুকরো হয়ে পড়েÑযার একটি উত্তরের ইসরাইল রাজ্য এবং অপরটি দক্ষিণের ইয়েহুদ বা এহুদা রাজ্য, যখন কথিত ঐক্যবদ্ধ রাজ্যটি (১০০৪-৯২৮) আশিবছর অতিক্রম করেছে (৯২২ সাঅপূ); এবং এই ভাঙ্গন দেখা দেয় সুলাইমানের উত্তরাধিকারপুত্র রহবিয়ামের উত্তরাধিকারিত্বে, যার প্রধান কারণ তার স্বেচ্ছাচারিতা এর প্রতিক্রিয়ায় ইহুদিদের বারোটি গোত্রের মধ্যকার দশটি গোত্র ইসরাইলি কনফেডারেশন থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইয়ারাবিমের নেতৃত্বে আলাদা রাজ্য গঠন করে; অপরদিকে তুলনামূলকভাবে ছোট জেরুশালেমকেন্দ্রিক এহুদা রাজ্যটি রহবিয়ামের অধীনে থেকে যায় এবং দু’টি রাজ্য পতনের আগে পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে শত্রু ও মিত্ররূপে সম্পর্ক রাখে।
বিভক্ত ইসরাইলের রাজধানী প্রথমে তির্সায় প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে সেটি সামেরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়, যেটির ৭২২/৭২১ সালে আশেরীয়দের হাতে পরাজয়ের মধ্যদিয়ে বিলুপ্তি ঘটে; এহুদা এরচেয়ে আরও একশ’ ৩৫ বছর স্থায়ী হয় এবং সাঅপূ ৫৮৬ সালে নয়া বেবিলনকে দিয়ে বিদায় নেয়।
দু’টি রাজ্যের মধ্যে এহুদা (৯২২-৫৮৬ সাঅপূ) প্রথম কোনও বিদেশী শক্তি তথা মিশরকে দিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে, পরে দামেশকের আরামীয় বাদশাহ প্রথম বেনহদদকে দিয়ে ইসরাইল (৯২২-৭২১ সাঅপূ) আক্রান্ত হয়; এরপর দামেশকের সঙ্গে ইসরাইলের ক্রমাগত সংঘাত এবং পরবর্তী ৮ম শতাব্দীতে ওই অঞ্চলে নয়া আশেরের অগ্রাভিযান; এরপর সাঅপূ ৭ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে নয়া বেবিলন ও মিডীয়দের উত্থান: সাঅপূ ৬২৬ সালে নয়া আশেরের সবচেয়ে শক্তিশালী বাদশাহ আশুরবনিপালের মৃত্যুর পর প্রথমে নিনেভের অধীন নয়া বেবিলন বিদ্রোহ করে; এতে অন্যরা যোগ দেয় এবং মিডীয়-বেবিলনীয় জোটের হাতে আশেরের রাজধানীয় নিনেভের পতন ঘটার পর  মিত্রশক্তি আশের সাম্রাজ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।
-নতুন শক্তিবিন্যাস
সাঅপূ ৭ম শতাব্দীর শেষে নয়া আশেরের পতন থেকে পশ্চিম এশিয়ায় দু’টি শক্তির উন্মেষ ঘটে (৬১২): নয়া বেবিলনএবং মিডিয়া, এবং ওই সময়কালে নয়া বেবিলন যখন মিডিয়াকে নিয়ে আশের সা¤্রাজ্যের পতন ঘটায় এবং পশ্চিম এশীয় মানচিত্রে নিেেজ প্রতিষ্ঠিত করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেÑতখন, কিংবা এর আগে থেকেই, মিশর একটি ক্ষয়িষ্ণু পরাশক্তি, যে কারণে আশেরের পাশে দাঁড়ালেও তার সফল উদ্ধারকর্তা হতে পারে না এবং নয়া বেবিলনীয় রাজপুত্র দ্বিতীয় বখতেনাসরের তাড়া খেয়ে তাকে নিজ সীমান্তের ভেতরেই আটকে থাকতে হয়, এমনকি বখতেনাসার মিশর সীমান্তে গিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান, যদিও জয়পরাজয় অনিশ্চিত থাকে এবং বখতেনাসর আরও বেশি সামরিকশক্তি সংগঠনের জন্য বেবিলনে ফিরে আসেন। তবে বেবিলনিয়া এবং মিডিয়ার শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়নিÑপার্শীয় আখামেনীয় সাইরাস দি গ্রেটের (৫৫০-২৯) উত্থান পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র আবার পাল্টে দেয় এবং তার বিজয়াভিযান প্রথমে মিডিয়া, পরে নয়া বেবিলনকে পশ্চিম এশীয় রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় জানায়।
তবে এই দু’টি সা¤্রাজ্য তথা মিডিয়া ও বেবিলনের পতনের সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতাও জড়িয়ে আছে: মিডিয়া বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিল বাদশাহ অস্তিয়াগেসের সেনাপতি হারপাগাসের এবং বেবিলনের বিরুদ্ধে বিশ^াসঘাতক ছিলেন বেবিলনিয়ারই সেনাপতিদের একজন, গোবরেস। ব্যাপারটি এভাবে ঘটে যে, সাইরাস শহরের ওপর আক্রমণ চালালে বাদশাহ নবোনিদাস পুত্র বেলশৎসর তার সৈন্যদলকে নিয়ে পারস্যের বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসেন, কিন্তু বেবিলনের দায়িত্বে নিয়োজিত তার আশেরীয় গভর্নর গোবরেস রাজধানী শহরটিকে প্রতিরক্ষাহীন করে দেন। তবে হারপাগাস এবং গোবরেস, পরে, উভয়েই, পারস্য সা¤্রাজ্যের বিস্তারে দিকপালের ভূমিকা রাখেন।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, সাইরাসের আবির্ভাবকালে নয়া বেবিলন এবং মিডিয়ার সঙ্গে অপর দু’টি প্রধান শক্তি ছিল লিডিয়া ও কিলিকিয়া। তবে সাইরাস বেবিলন জয়ের আগেই লিডিয়ার দখল নেন, সঙ্গে এশিয়া মাইনর এবং বেবিলন জয়ের ফলে সিরিয়া-ফিলিস্তিন আপনা থেকেই পারস্য সা¤্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়ে এবং সাইরাসের বিজয়রথ মিশর সীমান্তে গিয়ে পৌঁছুয়। তবে কুশ তখন আর এশীয় রঙ্গমঞ্চে নাই, মিশরের সেইট রাজাদের দিয়ে মিশর থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তারা তখন নাপাতা থেকেও আরও দূরে, নীল নদের ষষ্ঠ প্রপাতের মেরোতে চলে গেছে।
-মিশর ও নুবিয়া সম্পর্ক
ওই যুগগুলোতে মিশরীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি ছিল মিশর-নুবিয়া সম্পর্ক এবং দ্বিতীয়ত, মিশর-ইহুদি সম্পর্ক, যে ঐতিহাসিক অধ্যায়টি সাধারণভাবে সাঅপূ নবম শতাব্দীর শেষের দিকে জেরুশালেমের ওপর শেশোঙ্কের (বাইবেলীয় শেশক) আক্রমণ থেকে সূচিত হয়, যদিও শেশোঙ্ক লেভান্ট অভিযানে বেরুলেও তিনি জেরুশালেমে আক্রমণ চালিয়েছিলেন, সেরকম বিবরণ তার রেখে যাওয়া লিপি থেকে প্রমাণিত হয় না, যেটি এককভাবে বাইবেলের দাবি।
তবে মিশরে কুশাইট অভিযান একদিক থেকে দেশটির জন্য আশেরবিরোধী প্রতিরক্ষার সম্ভাবনাও তৈরি করেছিল, যখন কুশাইট বাদশাহ পিয়ে তার উত্তরমুখী অভিযান নিয়ে থিবেসের দিকে এগিয়ে আসেন, তখন বহুধাবিভক্ত মিশর অগ্রসরমান আশেরীয়দেরকে ঠেকানোর পক্ষে প্রতিরক্ষা সামর্থ রাখতো না, কিন্তু পিয়ের অভিযান প্রাথমিকভাবে সেই সুযোগ নিয়ে আসে: ‘খ্রিপূ ৭৫০ সালের দিকে নি¤œ নুবিয়ায় কুশাইটদের আগমন থিবান শাসকদের জন্য অবশ্যই বড় ধাক্কা হয়ে থাকবে, কারণ এটা দক্ষিণ থেকে আসা হুমকি। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বাস্তববাদী বিকল্প ছিল কুশের শাসকদের সঙ্গে একটি মৈত্রী, যার অর্থ, একইসময়ে সম্ভাব্য উত্তরাঞ্চলীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর সামরিক সংরক্ষণের সুযোগ।’১
-ইহুদি রাজ্য এবং বৈশিষ্ট্য
এখানে, এ কথাটিও বলে রাখি: বিভক্ত রাজ্য দু’টির চরিত্রবিশ্লেষণ করতে গেলে মোটাদাগে যা নজরে আসে, সেগুলোতে, প্রথমত, ইসরাইল রাজ্য এককভাবে কোনও নির্দিষ্ট রাজবংশকে দিয়ে শাসিত হয়নি, সেখানে বেশক’টি রাজবংশ দেখতে পাওয়া যায়, এবং সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজকীয় ক্ষমতার পালবদল ঘটেছে এবং ঘন ঘন, কিন্তু এহুদায় সেরকম না হয়ে এককভাবে দাউদ পরিবারের মধ্যে সীমিত থেকেছে, একমাত্র রানি অথলিয়ার সংক্ষিপ্ত শাসনকাল ব্যতীত, যিনি ইসরাইলি রাজা আহাবের মেয়ে ছিলেন, এবং বাইবেল তাকে স্বামীর মৃত্যু-পরবর্তী এহুদার সিংহাসনের একজন জবরদখলকারী বলে উপস্থিত করেছে, যাকে হত্যার মধ্যদিয়ে এহুদা রাজ্য আবার দাউদ পরিবারের অধীনে ফিরে যায় এবং বেবিলনীয়দের দিয়ে উৎখাত না-হওয়া পর্যন্ত ওই রাজবংশটিরই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইল যেখানে ধর্ম ও সংস্কৃতির দিক থেকে কেনানের প্যাগান সমন্বয়বাদকে প্রাধান্য দেয়, সেখানে এহুদা ইয়াহ্ওয়েবাদের উদ্ভব ঘটায়, এক ঈশ্বর: প্রথমটি তথা ইসরাইলি প্যাগানিজম ছিল গণতান্ত্রিক এবং বৈচিত্র্যমুখী, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা, প্রাচীন কেনানের প্রতিনিধিত্বকারী; বিপরীতে দ্বিতীয়টি এককেন্দ্রিক এবং স্বেচ্ছাচারীÑযদিও এহুদা প্যাগানিজমের প্রভাব সম্পূর্ণত বিমুক্ত হতে পারেনি; মূর্তি ও নক্ষত্রপূজা তার প্রবর্তিত ইয়াহ্ওয়েবাদকে বারে বারেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
তৃতীয়ত, দেখতে পাওয়া যায় যে, ইসরাইলিরা নিজেদেরকে বিশ্বজনীনরূপে পরিচিত করাতে চেয়েছে; তারা প্রথমে ফিনিশীয় নগর-রাজ্যগুলোর, যেমন টায়ার-সিডন, সঙ্গে  ব্যবসা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পাতায় এবং তা এগিয়ে নেয়, বিয়ে সম্পর্কও; এর পরে, ফিলিস্তিনে যখন হেলেনিজমের আগমন ঘটে, তখন তাদেরই বসবাস-করা শহর ও নগরগুলোতে তা প্রসারিত হয়। কিন্তু জেরুশালেমকেন্দ্রিক এহুদা ভিন্ন সংস্কৃতির আগমন ও প্রভাবকে মুসার শরিয়তবিরোধী বলে দেখে এবং এর বিরুদ্ধে চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার জন্ম দেয়, যা পরে হেলেনিজমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে এগোয়।
চতুর্থ হলো নবিদের সক্রিয়তা, যারা মূলত ধর্মীয় কর্তৃত্ব থেকে জাতীয়তাবাদী তাড়না থেকে চালিত হয়েছেন, এবং এই নবিদের মধ্যে আমরা বিশেষ যাদের দেখতে পাই তারা হলেন: ইশাইয়া, ইয়ারমিয়া, হোসিয়া, হগয়, জাকারিয়াÑযে দলটি নিজেকে জেরুশালেমকে কেন্দ্রিভূত রেখেছে, অপর দলটিতে বিশেষত নবি ইলিয়াস এবং তার শিষ্য আল ইয়াসা, তাদেরকে সামেরিয়ায় সক্রিয় হিসাবে দেখতে পাওয়া যায় এবং ইসরাইলি ইতিহাসে তারা ক্যু ও রক্তপাতের সঙ্গে জড়িয়ে যান।
পঞ্চমত, নয়া বেবিলনীয়দের দিয়ে জেরুশালেম ধ্বংস এবং এর আগে দশ হারানো গোষ্ঠীর কাহিনী ওই সময়কালের আরও দু’টি বড় ঘটনা, যদিও দশ গোষ্ঠী নিয়ে বাইবেল-বহির্ভূত কোনও বিবরণ মিলে না।
-মিশরের মানচিত্র
ওই যুগটিতে মিশরে ক্ষয় ও ভাঙ্গনের কাল, যেটি ‘তৃতীয় মধ্যবর্তী যুগ’ বলে অভিহিত হয়; এরপর অবশ্য নয়া রাজ্যযুগের সূচনা ঘটে, যে সময়কালে আবার শান্তি ও শৃংখলা ফিরে আসে।
তৃতীয় মধ্যবর্তী যুগে কুশ মিশরের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায় এবং মিশর বিদেশী অভিবাসী ও বিদেশী শাসন কবলিত হয়ে পড়ে: প্রথমে লিবীয় অভিবাসী, পরে কুশাইট ও আশেরীয় এবং এদের পরে আখামেনীয় শাসন কায়েম হয়: সাইরাস দি গ্রেটের পুত্র দ্বিতীয় ক্যামবিসেস ৫২৬ সালে মিশরের দখল নেন এবং মিশর পারস্যের একটি সাত্রাপিতে পরিণত হয়। এরপর আখামেনীয় রাজবংশকে উৎখাত করে গ্রিকবীর আলেকজান্ডার দি গ্রেট মিশরের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং দেশটির নতুন ফারাও হন।
তবে দ্বিতীয় মধ্যবর্তী যুগের এশীয় হাইকসস দখলদাররা যেখানে নিজেরাই মিশর শাসন করেছিল, সেখানে আশেরীয়রা নিজে শাসন না করে তার শাসনভার দেশজ করদ-রাজপুত্রদের হাতে ছেড়ে দেয়, যাদের মধ্য থেকে সেইটরা প্রাধান্য অর্জন করে ক্রমান্বয়ে সমগ্র মিশরের শাসক হয়ে বসে, এবং আখামেনীয় ক্যামবিসেস একজন সেইট রাজার কাছ থেকেই মিশরের দখল নেন; অর্থাৎ মিশরে বিদেশী শাসক রাজবংশগুলোর ধারাবাহিকতা এরকম: হাইকসস, লিবীয়, কুশাইট, আশেরীয়, পার্শীয় আখামেনীয় এবং গ্রিক, যাদের পরে রোমানদের আগমন আমাদের আলোচ্যকালের বাইরে।

-এবং গ্রিক
মিশরীয় ইতিহাসের গ্রিক অধ্যায় ফারাও প্রথম সামেতিকের সঙ্গে যুক্ত, যিনি তার বাহিনীতে লিডীয় ও গ্রিক ভাড়াটেদের নিয়োগ দেয়ার মধ্যদিয়ে গ্রিকদেরকে মিশরে জায়গা করে দেন; এরপর থেকে গ্রিকরা মিশরীয় রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে এবং ভাড়াটে হিসাবে নিয়োগ নেয়, যদিও তাদেরকে মিশরের বিরুদ্ধেও ভাড়াটে হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেখতে পাওয়া যায়; আখামেনীয় সাইরাসপুত্র দ্বিতীয় ক্যামবিসেস যখন মিশর আক্রমণ করতে আসেন, তখন গ্রিকরা তাকে সহায়তা দেয়, এরপর মিশর যখন পারস্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন গ্রিকরা পারস্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এক্ষেত্রে এথেন্স এবং স্পার্টা অগ্রণী হয়ে থাকে; এথেন্সের নেতৃত্বাধীন ডেলিয়ান লিগ ঈজিয়ান সমুদ্র অঞ্চলে পারস্যের প্রতিযোগী হতে গিয়ে মিশরকে মিত্র হিসাবে গণ্য করে, আবার এথেন্স বিরোধী স্পার্টাও একসময় মিশরীয়দের সঙ্গে যোগ দেয়। এছাড়া মিশরীয়রা পারস্য বাদশাহ জারেক্সেস যখন গ্রিসে অভিযান চালান, তখন তারা তার সা¤্রাজ্যের প্রজা হিসাবে তার সঙ্গে যোগ দেয়।

দুই. সূত্র সমাচার
-পুরাতন নিয়ম:ইহুদি ইতিহাসের ওই সময়কালীন প্রধান সূত্রগুলো হচ্ছে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের কয়েকটি গ্রন্থ, সঙ্গে আশেরীয় মহাফেজখানা বা আর্কাইভস, এবং বেবিলনীয় ক্রনিকলস; তবে আশেরীয় এবং বেবিলনীয় সূত্রগুলো এসেছে পরে, অর্থাৎ ফিলিস্তিনে আশেরীয়দের আক্রমণ সূচিত না হওয়া পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদেরকে পুরাতন নিয়মের একক বিবরণের ওপর নির্ভর করতে হয়Ñএকইভাবে এহুদায় বেবিলনীয় আক্রমণ সূচিত না হওয়া পর্যন্তÑযেগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রন্থ ১ ও ২ রাজাবলি এবং ১ ও ২ বংশাবলি; যেগুলোর বিষয়বস্তু ‘ঐক্যবদ্ধ রাজ্য’ যুগ তথা দাউদ ও সুলাইমানের রাজত্বকাল; এরপর বিভক্ত রাজ্যযুগ এবং সামেরিয়া ও জেরুশালেমের পতন: ‘‘আমাদের প্রধান বাইবেলীয় ঐতিহাসিক সূত্রগুলোÑআবারও গ্রন্থ রাজাবলি (২রাজা ২১-২৫) এবং বংশাবলি (২বংশা ৩৩-৩৬)Ñঅসন্তুষ্টকরভাবে অপ্রতুল এবং অনেক ফাঁকফোকড়ও রাখে। যাহোক, বিবেচনাযোগ্য অতিরিক্ত তথ্য, ওইকালে সক্রিয়, নবিদের কিতাবে দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষত ইয়ারমিয়া, এরসঙ্গে হেজকিল, সফনিয়, নাহুম এবং হাবাক্কুক রয়েছে। অধিকন্তু, কীলকলিপি, নির্দিষ্টভাবে বেবিলনীয় ক্রনিকল, যেটি যুগের দু’টি অংশের শেষের দিককে চমৎকারভাবে রোশনাই করে, আমাদেরকে চিত্র পূর্ণ করতে যোগান দেয়, যা আমরা এককভাবে বাইবেলীয় উৎস থেকে কখনোই পেতে পারি না।’২এছাড়া ২রাজাবলিতে ফারাও শেশকের জেরুশালেম আক্রমণ ও লুটের যে কাহিণী বর্ণিত আছে, তা শেশকের রেখে যাওয়া বিবরণ থেকে সমর্থিত হয় না।
-আশেরীয় সূত্রগুলোতে যেসব ইসরাইলি বাদশাহর নাম যুক্ত হয়েছে, তারা হলেন যথাক্রমে: ইসরাইলের বাদশাহ আহাব, যেহু, যিহোয়াহস এবং এহুদার বাদশাহ মানশা: আশেরীয় ফলকগুলোতে ইসরাইল এবং এহুদার নয়জন বাদশাহ বিবরণভুক্ত হন বলে উল্লিখিত হয়। তবে ফিলিস্তিেিনর নিরিখে আশেরীয় এবং বেবিলনীয় সূত্রগুলো ইসরাইল বা এহুদার অভ্যস্তরীণ পরিস্থিতি বা রাজবংশের উত্থানপতন, রাজন্যবর্গ ও উত্তরাধিকারিত্ব, ধর্ম ও সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কিত কোনও বিবরণ লিপিবদ্ধ করে না।
-ধর্মীয় বিবরণে প্রাধান্য:বাইবেলে রাজা-রাজড়াদের যেসব বিবরণ এসেছে সেগুলোতে রাজনৈতিক বিবরণের চাইতে ধর্মীয় বিবরণই প্রাধান্য পেয়েছে, যার কেন্দ্রে ইয়াহ্ওয়েবাদ এবং রাজা-বাদশাহদের গ্রহণযোগ্যতা তাদের ইয়াহ্ওয়েবাদের প্রচার-প্রসার বা মান্যতাকে দিয়েই নিরূপিত হয়েছে; এবং আমরা এই বিষয়টি ইয়ারাবিম এবং রহবিয়ামে, এমনকি পরবর্তী বাদশাহদের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই, যেমন, এহুদার বাদশাহ মানশা কিংবা ইসরাইলের বাদশাহ যিহোয়াহসকে নিয়ে এবং দু’টি রাজ্যের পতনের কারণ বিশ্লেষণও সেইভাবে করা হয়েছে।বাইবেল লেখকদের কাছে ইউসিয়া কিংবা হিস্কিয়ের রাজনৈতিক বিষয়াদির চাইতে তাদের ধর্মীয় সংস্কার বেশি গুরুত্বলাভ করে, এবং মানশার সঙ্গে আশেরীয়দের সম্পর্ক নিয়ে কোনও বিবরণই লিপিবদ্ধ হতে দেখা যায় না।
-দাউদ পরিবারের প্রতি পক্ষপাতিত্ব:বাইবেলীয় বিবরণগুলোর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এর গ্রন্থগুলোতে প্রাচীন ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা সম্পর্কিত কাহিনী বিশেষত দাউদ পরিবারকে কেন্দ্রে রেখে এবং তাদেরকে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েরচিত হয়েছে এবং বাইবেল লেখক, সম্পাদক, অনুলিপিকারী সবাই একটি ধর্মীয় তাড়না বা পূর্ব ধারণা থেকে প্রভাবিত হয়েছেন বলে উল্লিখিত হন, যারা দাউদ পরিবারকে ইহুদিদের একমাত্র বৈধ শাসক বলে মনে করতেন; এবং এ কারণে তারা ইসরাইল রাজ্যের শাসকদের প্রতি তাদের বিরূপতা অপ্রকাশিত রাখেননি, এমনকি ইসরাইলের মূর্তিপূজা এবং প্রতিবেশী কেনানীয়দের সঙ্গে তাদের মেলামেশাকে তারা ইয়াহ্ওয়ের প্রতি বিদ্রোহ ও জঘন্য গুনাহরূপে দেখেছেন এবং ইসরাইলিদের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে চেয়েছেন, এবং তা মাত্রাতিরিক্তভাবেই, যদিও, তাসত্ত্বেও, ‘পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলো আশেরিয়ার সঙ্গে ইসরাইল এবং এহুদার লোকজনের সম্পর্কে ইতিহাসে খুবই নিখাদ অবদান রেখেছে। মনাহেমের নজরানাদান, উত্তর ইসরায়েলিদের বন্দিত্ব, আহসকে দেয়া তিগ্লৎ-পিলেসেরের সমর্থন, দামেশক দখল, হোশেয়কে শালমানেসেরের অধীনস্ত করা, সামেরিয়ার পতন, হলহে এবং হাবোরে ইসরাইলের স্থানান্তর, সনহেরিবের এহুদা আক্রমণ, জেরুশালেম ঘেরাও, পুত্রদেরকে দিয়ে সনহেরিবের খুন হওয়া, টায়ারের সঙ্গে আশেরীয়দের ব্যবসা। এসারহদ্দোনে অধীনে ফিলিস্তিনের উপনিবেশকরণ এবং অন্যান্য সূত্রের সমাবেশ অথবা অপ্রত্যক্ষ সূত্র আশেরীয় স্মৃতিস্তম্ভগুলো থেকে অতিরিক্ত এবং বিশদ গ্রহণ করে। এছাড়া সেগুলো গুরুত-¡সহ ঘটনাবলির ক্রমপরম্পরার বিবরণ দেয় এবং কীলকলিপি উদ্ধারের প্রাথমিক পর্যায়ে অপরিমাপযোগ্য মূল্য রাখে।’৩
-অপর্যাপ্ত তথ্য: বাইবেলীয় বিবরণগুলো যে ‘অপ্রতুল এবং ফাঁকফোকড়ে-ভরা’,সে বিষয়টি আমরা এরইমাঝে উদ্ধৃত করেছি। তাছাড়া ইহুদি ঐতিহ্যে বেবিলনের নির্বাসনকাল নিয়ে বিবরণ খুবই কম এবং এক্ষেত্রে প্রধান দু’টি গ্রন্থ হেজকিল ও দানিয়াল; এবং নির্বাসন-পরবর্তী গ্রন্থ উযায়ের ও নহিমিয়ায় বাস্তবে নির্বাসনকালীন বিবরণ নাই, ফলে ‘ওই যুগের ইসরাইলের ইতিহাস রচনা চূড়ান্তভাবেই একটি কঠিন বিষয়। আমাদের বাইবেলীয় সূত্রগুলো যাচ্ছেতাই রকমের অপর্যাপ্ত। নির্বাসনে নিজ থেকে, বাইবেল আমাদের বলে, কার্যত কিছুই সংরক্ষিত হয়নি যা অপ্রত্যক্ষভাবে নবিদের কিতাব ও অন্যান্য রচনাবলি থেকে জানা যেতে পারতো। পঞ্চম শতাব্দী থেকে নেমে আসা নির্বাসন-পরবর্তী যুগ, আমাদের একমাত্র ঐতিহাসিকসূত্র উযায়ের-নহিমিয়ায় পাওয়া বিবরণলেখক-এর টানা উপসংহার অংশ, এর অতিরিক্ত অ্যাপোক্রাফীয় গ্রন্থ প্রথম উযায়ের, যা উযায়েরের বিবরণলেখকের বিবরণের সেপ্টুয়াজিন্টের মূলপাঠের যোগান দেয়। কিন্তু এই গ্রন্থগুলোর মূলপাঠ চরম স্থানচ্যুতিপ্রদর্শন করে; আমরা ফয়সালাহীন সমস্যার প্রথম এক বিশাল স্তূপলাভ করেছি, সঙ্গে অনেকগুলো ফাঁকফোকড় যা যতটা সম্ভব অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে, আরও আছে নির্বাসন-পরবর্তী অন্যান্য বাইবেলীয় গ্রন্থ এবং বাইবেল বহির্ভূত সূত্রগুলো থেকে কুড়ানো টুকরো টুকরো তথ্য। যখন এসব কিছু সম্পন্ন হয়, তখন ফাঁকফোকড় উৎসাহ হারিয়ে দেয় এবং বিভ্রান্তিকর সমস্যা থেকেই যায়।’৪
-আশেরীয় নিজস্ব ইতিহাস:সাঅপূ ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে সপ্তম শতাব্দীর শেষকাল বা মাঝামাঝি পর্যন্ত অসংখ্য রাজকীয় মূলপাঠ রচিত হয়েছে, যে সময়কালে আশেরিয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এশিয়ার আধিপত্যকামী শক্তি। বর্তমানে এধরনের ৮৫০ থেকে ৯০০ লিপির কথা জানা যায়। ওই সময়কার রাজাদের অভিযান বাইবেলে এবং অন্য ক্ল্যাসিকেল সূত্রগুলোতেও বিবরণভুক্ত হয়ে আছে: আশেরীয় ইতিহাসের মোটমাট ৭৪৫ থেকে ৬৪০ মধ্যবর্তীকালীন সূত্রের যে প্রাচুর্য রয়েছে তুলনা করলে দেশটির অন্য কোনও যুগ নিয়ে সেরকম মিলে না। একদিকে বিশাল পরিমাণ রাজকীয় লিপি, প্রায় ৩,৪০০ চিঠি, বেশিরভাগই বেশি নয়তো কম ভাঙ্গা, প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণভাবে এসব চিঠির প্রেরক ও প্রাপক রাজা এবং উঁচুপদের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।৫বাদশা বাদশাহ তিগ্লৎ-পিলেসেরের সূত্রগুলোতে রয়েছে ‘আশেরীয় এপোনিম কানুন’ এবং কেলহতে পাওয়া ফলক ও বাস-রিলিফে লিখিত বিবরণ। তবে ক্রম অনিশ্চিত।
-হেরোডোটাস ও তার ইতিহাসগ্রন্থ: পশ্চিম এশিয়ার বিশেষত আখামেনীয় রাজবংশ এবং গ্রিক-পারস্য সম্পর্কের সবচেয়ে বড় উৎসটি হচ্ছেন এশিয়া মাইনরের পারস্য নিয়ন্ত্রিত গ্রিক শহর হ্যালিকার্নাসেসে জন্মগ্রহণকারী ঐতিহাসিক হেরোডোটাসÑযিনি একটি কথক জাতির জন্মগত কথক বলেও অভিহিত হনÑতার রচিত ইতিহাসগ্রন্থটি একটি বিতর্কেরও কেন্দ্র এবং তা বুঝতে গেলে দু’টি বিষয় গুরুত্বের দাবি রাখে, প্রথমত, ‘পারস্য শাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে খ্রিপূ ৪৫৭ সালে হ্যালিকার্নাসাস থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। দ্বিতীয়ত, এইচ. জি. ওয়েলসের এই যুক্তি যে, হেরোডোটাস তার গ্রন্থটিকে একটি প্রচারণা পুস্তকরূপে লিখে গেছেন: ‘পারস্যবিপদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এশিয়ার বেশিরভাগ শহর মুক্ত হয়ে পড়ে। এই সবকিছুই প্রথমে অনেক বিশদ-সহ এবং চিত্রিতভাবে একটি লিখিত ইতিহাসে বলা হয়েছে, দি হিস্টরি অফ হেরোডোটাস। এই হেরোডোটাস প্রায় খ্রিপূ ৪৮৪ সালে এশিয়া মাইনরের আয়োনীয় শহর হ্যালির্কানাসাসের জন্মগ্রহণ করেন এবং এধরনের অবিকল বিস্তারিত বিবরণের তালাশে তিনি বেবিলন এবং মিশর সফর করেন। মাইকেলি থেকে সম্মুখগামী হয়ে পারস্য রাজবংশীয় বিবাদে জড়িয়ে যান। জারেক্সেস ৪৬৫ সালে খুন হন এবং মিশর, সিরিয়া ও মিডিয়ায় এই শক্তিশালী রাজত্বের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিদ্রোহ দেখা দেয়। হিস্ট্রি অফ হেরোডোটাস পারস্যেও দুর্বলতার ওপর জোর দেয়। অধিকন্তু, এই ইতিহাসকে আমরা এখন গ্রিসকে একতাবদ্ধ হওয়া এবং পারস্য বিজয়ের প্রচারণারূপে অভিহিত করতে পারি। হেরোডোটাস স্পার্টানদের কাছে জানা বিশ্বের একটি মানচিত্র নিয়ে যাওয়া অ্যারিস্তোগোরাস নামের একটি চরিত্র তৈরি করেন এবং তাদেরকে বলেন: ‘এই বর্বরেরা লড়াইয়ে সাহসী ও ধীরস্থির না। তোমরা এখন অন্যদিকে যুদ্ধে সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখানোতে গিয়ে পৌঁছেছো…দুনিয়ার কোনও জাতিই তাদের মতো ধনসম্পদ রাখে না: সোনা, রূপা, ব্রোঞ্জ, কারুকার্যখচিত জামাকাপড়, পশুপাল এবং দাসদাসী। এর সবকিছুই তোমরা পেতে পারো, যদিও সেই ইচ্ছা রাখো।’৬

সূত্রগ্রন্থ:
১-ল্যাসজলো টরোক (দি কিংডম অব কুশ: হান্ডবুক অব দি নাপাতান-মেরোটিক), পৃ ১৫; ২-জন ব্রাইট (হিস্ট্রি অব ইসরাইল), পৃ ৩১০; ৩-সি. এইচ. ডাব্লিওজনস (অ্যানসিয়েন্ট এশিরিয়া), পৃ ৪; ৪-জন ব্রাইট (আ হিস্ট্রি অব ইসরায়েল), পৃ ৩৪৩; ৫-এনসাইক্লোপেডিয়াব্রিটানিকা/দি নিও-এশিরিয়ান এম্পায়ার; ৬- এইচ. জি. ওয়েলস (আ শর্ট হিস্ট্রি অব দি ওয়ার্ল্ড), পৃ ১০৯-১০
 

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার