সাঁতারের কূল
এক চিন্তিত ডাল, জানে, সেও ছিলো না এক একা। গাছেদের হয়ে হয়েছিলো পাতার মৃত্যু। বনে বা বাগানে, বানে বা বাতাসে, দোলন এলে, ফুলের জন্যেও ভেবে উঠতো সে। ফলের ভার ও ভাব নেবে বলে, কত গতজন্মের আবৃত্তি করে করে বাওতালে ঝুলছিলো। আজ অনেকদিন, এক করে এসেছে কাল, ভেসে যাচ্ছে ডাল, আগুনমুখার জলে।
একটা ঢেউ, আছড়ে পড়ার আগে, নিজেকে ছেড়ে দিলো। ভেসে যাওয়া ফেলে, এক পতঙ্গ, বসেছে তারে-এই বিপন্ন দিকে, এই ভেবেছিলো?
সেই ভাব ধরে কোথায় পড়েছিলো, কোন তোড়ে, সেকথা জানতো, ‘এখন পতঙ্গের জীবন’। চিরায়তে থেকে সেই ডাল, আপন্ন পতঙ্গকে বলছে, “কোনো তংকসারে আছো? আমিও আবার তিলে তিলে গাছে যাবো, ভেসে যাওয়া বিপদে ঝাঁপ দাও, তোমার কূল সাঁতারে।”
সাগরভরা বোতল
হাঁটলে আর স্থির থাকতে পারি না, যাই। যেদিক দিয়েই যাই, হাটে গিয়ে উঠি! হাটে উঠলে, নিজেকে দোকান দোকান লাগে। দোকান খুলে বসি!
কেউ কিছু দাম করে না! তাহলে কি মালপত্র দেখছে না? আরও ঝাপ তুলি। এবার দেখি, আনন্দে পাওয়া লোকেরাও দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাক চেপে ধরে!
কোথাও ফিরে আসি আবার। একদিন এক অবিকল, পেছন থেকে টান দেয়, ‘কই যাও? তোমারে কিনছি!’
বলি, ‘আমি তো নিজেরে বেচাকিনা করি নাই! দামই তো দিতে চায় না কেউ!’
বলে, ‘দাম থাকলে তো কেউ কিছু কইতই! আমারও মূল্যসামর্থ্য নাই। একজন তোমারে এই দামেই দিয়া দিলো!’ জিজ্ঞেস করেছিলাম তারে, এই নিদামকে মূল্যহীনের কাছে নির্মূল্যে বেইচা আপনি কী পাইলেন? বলল, ‘মুক্তি!’
দূর্দিক
কিছুটা সময় আমি, তোমার সাথে
একজোড়া পা,
পথ পথ করে,
হাঁটি।
মাটিমোট ঠেলে দেয় গাছ, ‘সময় যায়,
তুই কি নদীর মাছ?
ঘুরে ট্যুরে
কোথাও যাবি না!
পরের ফাঁদ,
আরামের ঝাইলে এসে গাঁ ঘষবি মাছের খইসে…?’
আনন্দচিতা
এমনি এমনি ছোট হয়ে উঠিনি,
বহুবার মরে গিয়ে গিয়ে
সমস্ত দরোজার ভেতর প্রবেশ তুলেছি।
এমন ক্ষুদ্র হয়ে উঠেছি,
উঠেছি বহু মৃত্যুর প্রেম নিয়ে
প্রতিবার ঘটে গেছি অন্য কেউ!
ওগুলো জন্মচিৎকার, ক্ষীণপ্রিন্ট,
নিজেকে নিজের মধ্যে ভরে ভরে
দেখিয়েছি, সবকিছু সবকিছুতে যায়!
সুস্থির-উন্মাদ থেকে খুলে যাওয়া
পার্থক্য হাতে তাও দিচ্ছে পরিবেশ
সেই হাত, সিগনাল হয়েছে যত্রগতিতে!
এতো ছিন্ন ছিন্ন করে
সম্ভাবনা রুখে দিচ্ছে চলপথ,
সিঁড়ি এঁকে, পথ লিখে, দুর্নিবার যাই!
থেকে যাওয়া থেকে,
এই বয়ে যাওয়া থেকে
রূপের অনন্তে ডুবিয়ে প্রতিটি দিন
দাঁড়িয়ে যাচ্ছি, ‘আনন্দচিতায়’!
মাদন
কে যেন বলেছিল উড়ন্ত গাছ
ওমনি
ডালে চড়ে বসে আছে স্থির!
নিচে এক জটাবাঞ্ছা পাগল,
প্রকৃতি সামাল করে আছে…
সে-ই তো বলেছিলো,
রাত্রি হত্যার দায় নিয়ে সূর্য ওঠে,
আলোতে ঢেকে যায় আলামত!
অন্ধমুল, বিপরীতে জ্বলে…
উড়বে গাছের ভেতর থেকে
একটা পুরুষ গাছ বেরোয়,
একটা নারী গাছ বেরোয়
এবং অনুরূপেরা, এই পথে
নিজের পায়ের ছাপ দেখে
একটা পাগল পাগল হয়ে যায়।