যাব বলেও যদি যেতে না পারি
আমার আহ্নিকগতি জুড়ে শুধু তোমার রিংটোন
রাতজাগা শব্দেরা লিখে চলে মায়া উপন্যাস
সেলুলয়েড জুড়ে ভিড় করে আসে বাতিল কিছু স্মৃতি
তবু মায়াজন্ম নিয়ে যেতে হয় প্রত্যেক সকালে ।
ফিরিয়ে দিতে হবে বলে তুমি অজুহাত খুঁজে চলো
ওষধি স্বপ্নে চেয়ে বসো হিরের নাকছাবি
সমুদ্র, পাহাড়, মধু-প্রতিশ্রুতি ফিকে হয়ে আসে
আমি তবু বালির প্রাসাদ রচনা করে চলি ।
প্রেমিক অথবা লম্পট
আমি কি চাই এর উত্তর যখন খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছি
সেই অবস্থায় গিয়ে পৌঁছলাম একটা টগবগে নদীর কাছে
তার কাছে শান্ত হয়ে বসে কান পাতলাম
শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম পাড়ের কাছে
তার ঠান্ডা বাতাস জুড়িয়ে দিচ্ছিল মনটাকে
জ্যোৎস্নারাতের ভরা জোয়ার
তাকে যেন আরো মায়াবী করে তুলেছে
সিনটাও বেশ আবেগঘন…
এমনসময় চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা প্রকান্ড নৌকো
আর তার দাড় টেনে হাজির হল এক মাঝি
সুঠাম কৃষ্ণকালো দেহ
জোছনার আলোগুলো পিছলে যাচ্ছিল তার শরীর থেকে
দেখলাম–
নদীর চোখজুড়ে মুগ্ধতার রেশ
ধীরে ধীরে চন্দ্রাহত হচ্ছে সে।
নদী আমাকে চোখ মেরে বললো–
“তুই সাঁতার জানিস?”
আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম তার দিকে…
ততক্ষনে তার চোখের কোনে ফুটে উঠেছে তাচ্ছিল্যের হাসি।
নৌকোর গতিটা এখন আরো তীব্র
নদীটার বুক চিরে এগিয়ে চলেছে ক্রমশঃ
তার উচ্ছল শীৎকারে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে প্রায়
এই সব সময় আমি গান্ডুর মতো ঘরে ফিরে আসি।
তারপর নিবিষ্ট হই এরোটিক উল্লাসে।
যা কিছু অবসাদ চেঁপে বসে মস্তিস্কে ও বুকে
তাকে নিমেষে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে ফুরফুরে হই।
আসলে এই সব অবস্থায়
আমি যন্ত্রের উপর ভরসা রাখি
আমার একান্ত আপন পুরুষ-যন্ত্র।
নাগরিক সমাজ ও তার যান্ত্রিক সভ্যতা।
কারখানা বন্ধ হয়ে আসে
জং ধরে, মরচে পড়ে,
যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে যায়।
ইকোনোমিক থার্মোমিটারে পিছিয়ে পড়ে গ্রাম।
বেকারত্বের গ্লানি ভরে ওঠে মফঃস্বলের পাঁজর জুড়ে।
এখন উত্তর দাও এই যন্ত্র নিয়ে আমি কি করবো?
আমিও তো ফসল ফলাতে চেয়েছিলাম-
‘নাগরিক লম্পট ফসল’।
মাঠভর্তি যুবতী ধান
নিজ হাতে গড়া স্তনরূপী লাউ
তানপুরা সদৃশ কুমড়ো…
মাঝে মাঝে মনে হয়
কিছু একটা হওয়া উচিত ছিল আবশ্যিক
মাঝি বা কৃষক
প্রেমিক অথবা লম্পট ।
নিভৃতযাপন
তোমার প্লুতস্বরে আটকে গেছে
গোটা একটা দুপুর
টিফিনের কৌটোয় কিছু ম্যাজিক রেখে গেছি
আপাতত নদীর পাড় জুড়ে তোমার আবদার গুলো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাঁদের টুকরোর মতো
আজকাল পুরনো ছাদ থেকে সূর্যাস্ত দেখি না আর ।
জো
আমি অন্ধকারের দিনলিপি লিখি
আর প্রেমিকারা মরে যায় শীতকালের মতো ।
এ জীবন বৃষ্টি বিধৌত নয় বলে
সর্ষে দানার মতো একটা মেয়ে খুঁজে চলি
অথচ তেমন একটা মাটি পেলাম কই
যেখানে পায়ের ছাপ পড়ে
কিন্তু পা ভেজে না ।
ডুব
পাঁচিলের খাঁজে খাঁজে মুখ লুকিয়েছে ইচ্ছেরা
একটা সরু গাছ তবু
মাথা তুলে দাড়াতে চাইছে
আপ্রান চেষ্টায়।
উড়ন্ত কোকিল বলে গেছে বাসা বাধার দিন
ঘনিয়ে এসেছে
এখন বরং
প্রেম যত্নে তুলে রাখো সিন্দুকে।
নদীতীরে সন্ধ্যা নেমে আসে…
কুসুমরঙা
গর্ভবতী আকাশ
জীবন শিখিয়ে যায়
আমরা আসলে সূর্যাস্তের কাছে ঋণী।
নিঃস্বাস, প্রেম ও অন্যান্য অনুষঙ্গ
আমি ল্যাবরেটরি থেকে ঘুম চুরি করে ফিরি
আর গিনিপিগ খুঁজে বেড়াই সবুজ আলোক বিন্দুতে
তৃষ্ণা কিছুটা সরীসৃপের মতো
আঠালো জিভের অগ্রভাগ জুড়ে শুধু কাজু বাদামদের ঋণ
এখন কলার ছাড়া জামা পড়ি
সম্পর্ক আসলে গলাবন্ধের নাম ।
যাপন
স্থির জলের মতো অতোটা মসৃন নয় বলে বাতিল করেছি যে সব ত্বকের কাহিনী ,
তাদের কাছে আমার পাপ বাড়ছে সমুদ্রের মতো ।
একলা যাপন শেষে প্রতিটা দিন আসলে এক ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা
লাল সুরকির অভিযোগ অগ্রাহ্য করে
মারণ রোগের শিকড় বেড়ে চলে ।
সমুদ্রকে বোঝাতে পারি না –
বয়স বেড়ে গেলে প্রেমিকার
নিজেকে অসহায় পিতার মতো লাগে ।
দাগ
যদি একলা হলেই কবিতা হয়ে ওঠা যায়
তবে অনুবাদের সাথে আমার তীব্র মতান্তর
রাতের কাছে কিছু সুন্দরী জমা রেখে আসি
স্বপ্নেরা বন্ধক থাকে যেভাবে
এসব কিছু কৌতুহল চুপ করে পড়ে থাকে
আর স্ট্রিট ল্যাম্পের আলো লিখে রাখে জোনাকীদের মৃত্যু সংবাদ ।
নিরাময়
যা কিছু দেখছো সে আসলে কাঁচা-পাকা ঘোর
উঠোন উন্মুক্ত হলে পড়শীদের উৎসাহ বেড়ে যায়
এই যে আজানুলম্বিত বিকেল , জেনে রেখো সে আসলে সন্ধের কাছে পৌঁছনোর অজুহাত মাত্র ।
বোরোলিন দিয়ে যে সব ক্ষত নিরাময় হলো না শেষপর্যন্ত
আমরা তাদের জন্য খুঁজে এনেছি ভাড়াটে চিকিৎসক ।