ঘোর ও অন্যান্য কবিতা // শুভ্র সরকার

0

ঘোর

এর চে’ কিছু মনে পড়ার দিনে
আস্থা রাখি খুব
তখন নীরব থেকেই ভরসায় দেই ডুব
পালিশকথা পেতে পেতে আতকে ওঠা মন
যায় অতীত দূর, থাকে থমকে ইট পান্থশালা
আর একে একে যত জড়ো হওয়া ঘোর..

 

বোবাপাখি

দুধপুড়া এক হুমহুমাহুম বাতাস
এমন ভোজবাজিতে তাক করে হাসে
মরা দুপুর
ফুলকি ও বোবাপাখি পরষ্পর
প্রতিজ্ঞার ভাঙা সকাল
স্কুল সন্তানেরা নিচ্ছে শপথ
টোকা দিয়ে দেখছি
তরঙ্গ ছড়ানো শিশুর আর্তি
মিলিয়ে যায় কোথায়?

বাতাস খুশ চলে যাও
বোবাপাখি ডাকবে না আর….

 

বৃষ্টিদিনে

এমন বৃষ্টিতে পাতার ঝাপটা ছোটে
আমরা অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকি
কেন জানি কোন আক্ষেপ নেই
নেই ভিজে যাবার রিদমিক

পুরনো রেইনকোট পরিহিত লোকটি
বৃষ্টিছাপার শব্দ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে
এইসব শব্দ কখনো জোড়া লাগে না জলে
আমরা তাকে আষাঢ়ের
টুকরো গল্পের মতন ভাবি

এত যে বৃষ্টিভার আকাশ
কারো কারো মন খারাপ খুলে
আবার স্থির হয়ে পড়ে

গ্যাজ দাঁতে হাসির মেয়েটাকে চিনি
খুব ভিজবে বলে তার বাহানা ঘিরে
একটি ছাতা চুপচাপ জমে থাকে

বিরহসম্ভবা এইসব দুপুরে
আমরা দূর হতেই স্থির হারাই
আবার পাখিদের ভেতর নড়েচড়ে

তবু; জানিনা
পাতার আশ্রয়ে কাঠবাদাম কতটুকু স্থির
বুকের বেড়ায় জড়ানো মন কতটুকু স্থির
এইসব ভাববো না আমি
বরং ভাববো
অকারণ ভ্রান্তি দোলো মানুষ কোথায় চলে….

 

মৌসুমি বাতাস

এমন দুপুর পাথরের মত লাগে। ওড়ে ছুট মৌসুমি বাতাস। ডুবে যাবার পর রোদে নামছে শ্যাম সন্ন্যাস। ইট বিছানো পথে জমে যাচ্ছে মেঘ গোঙানির ছায়া। একটা লোকালয় জুড়ে দেখছি বহুভাব। একটা লোকালয় লুকনো দিনের নিরীহে ফার্ণ পাতার মত মেলায়। একটা লোকলয়ের ঘরদোর ছোট- বড় শান্ত সবুজাভ। আহা আহা থোম ধরা শ্রাবণের হাঁস হালট ধরে হেঁটে যায়..
পারাপার

হতে পারে হারানো আমেজ
কোন একদিনের বুক গড়ানো ঢেউ
ভেসে ভেসে দূর পাটাতন
কাছাকাছি জল নীরবতার আঁধার

ইশারায় পাতারা কাঁপে
রপ্ত করে কেমন
দূর হাওয়া বহতার লকলক

তবু টের পাই পেঙছায় নুয়ে পড়া
উদর ফুঁড়া বাঁশবন
যেন তার ভেতর একান্তের নেকাব খুলে
দহন সংকল্পে মিশে যায়

কিছু জোনাকি গোপনে থাকে
স্বভাব প্রচ্ছন্নে ঘুরে বেড়ায়
চকিত ফুল হয়ে জ্বলে রয়
আমি তারে ভাবি বেলুন—

আমি মাটির পথে পথে হাঁটি
একা বসে থাকি
ডাকাডাকি পারি সুহৃদ
জানি প্রত্যপর্ণ পেরিয়ে
বহুদূরের মাটির গাঁথুনি
মরা পাতারা কেবল বয়ে নিয়ে গেছে

আমাদের দূরত্ব এক পারাপার
মার্বেল হতে গর্ত অবধি তার ক্ষীণ শ্বাস—

 

জীবননামা

নাইবা হলাম যা হতে চেয়েছিলাম
হতে পারিনি বলে আক্ষেপ রাখিনি কোন

মানুষ তো বাঁচে
ঘর থেকে কবর নিয়েই

মাটির গন্ধ এরচে ভালো

স্বপ্নের রেখা ছিঁড়ে আরেকটা স্বপ্নই
না হয় আঁকলাম তিথির ঘুমে

মানুষ তো বাঁচে
রোদে রোদে ফড়িং বসন্ত এলে
মেঘের ঝুটিতে একটাই চাঁদ
দেখার তুমুল বাসনা নিয়ে…

 

সিজনটা ধান কাটবার

এখন বৈশাখ মাস সিজনটা ধান কাটবার। কৃষক কাটছে ধান বিষণ্ন সকাল। স্তুপ করা উঠোন ভরা ধান। পাকা শরীরের ঘ্রাণ। পাখিরা দিগন্তের দিকে ধাবমান। বিল হতে ধানক্ষেত। ছোট ছোট আলপথ। বাড়ির দিকে জমে আছে টান। অদূরে দাঁড়িয়ে বধূ ভাবে শুধু। জীবনটাও যেন একটা ক্ষেত যাপনটা ফসলের মতন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার