মনুষ্যত্ব বিপ্রতীপ মুনাফা ও অন্যান্য কবিতা // কায়েস সৈয়দ

0

মনুষ্যত্ব বিপ্রতীপ মুনাফা

দাসপ্রথার বিবর্তনে
সামন্ত দেয় উঁকি
মনুষ্যত্বের বিপ্রতীপ ডালে বসে
বসন্তের ডাক দেয়
মুনাফা

মুনাফামোহে নিজস্ব চোখ উপড়ে
মালিকানার দৃষ্টি
আমার পাড়ার মালিও এখন কানা
বাচ্চারা বলে মালি কানা
এই দুই কানার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই
যেখানে তৃষ্ণার অর্থ জলের পরিবর্তে
মিনারেল ওয়াটার
ক্ষুধার অর্থ একান্ত-প্রয়োজন না হয়ে
চাহিদা।

চাহিদাসূত্রে
যোগানের যোগান দিতে
ব্যবসার পসরা
মৃত মনুষ্যত্বে মুনাফার পায়তারা

মানবিকতার ঘুম ভাঙলে
মনুষ্যত্বের হাতেই হবে মুনাফার মৃত্যু

 

এলিজি


অনুভূতির যন্ত্রণায় জ্বলতে থাকা আগুন
কাচের বয়ামে আটকে দিলাম।
অক্সিজেনশূন্যতায় নিভে যেতে বাধ্য।


চেষ্টা করবো

চেষ্টা কেউ আসলে করে না কখনোই
যা করার তা করেই, চেষ্টা না করতে পারার লজ্জাকে আড়াল করার প্রকাশ লাইন হলো–
চেষ্টা করবো।


আমার একমাত্র সঙ্গী দুটো পা
পা দুটোকে মাঝেমধ্যে বুক সেলফে রেখে পাঠ করি পৃথিবী
মরুর দুপুরে তৃষ্ণায় পা দুটোর ব্যাপক ব্যাকুলতা

ঝিলের জল > নদীর জল > সমুদ্রের লবণাক্ততা
তবু কাঠফাটা রোদে যেন একফোঁটা জলে জ্বলা!


শুকোতে দেয়া খড়কুটোর পরিচিত ঘ্রাণ
এবং
আঁশবিহীন ধঞ্চের আঁশটে ঝাঁঝালো ঘ্রাণ
জানান দেয় আমার অস্তিত্ব
শেকড়ের টান…

অনুভূতিহীন
অনুশোচনাহীন
মানুষগুলো
আসলে মৃত


মাছরাঙার সৌন্দর্যে
বিভোর হলেও
জলের নিচের বোকামাছের
জন্য
সে নির্ঘাত আতংক

 

বিচ্ছিন্নের বিপরীত

একা মানেই অনেকটা বিচ্ছিন্ন হওয়া
শহর থেকে দূরে দীর্ঘনিশ্বাস নেয়া

বিচ্ছিন্ন হওয়া দ্বীপটিও ছেঁড়াদ্বীপ

কেউ কেউ পায়ের ছাপ এঁকে দিয়ে
নির্জনতায় হারায়। আত্ম-নিমগ্নতায় ডুব
দেয় চিন্তার দোলায়।

নিঃসঙ্গ সময়গুলোতে প্রাণ পায় হাহাকার।
ভেতরের অ্যাকুরিয়ামে অক্সিজেনের
শূন্যতায় খাবি খাওয়া মাছ খোঁজে
একান্তপথ।

একান্তপথে অনুসন্ধানের হাত ধরে
স্লোগানের মঞ্চে মানুষ ঠিকই বিচ্ছিন্নের বিপরীত।
সাম্প্রতিক


কতোটা মর্মান্তিক হতে পারে
একজন পোশাক শ্রমিকের জীবন!
আটটা টু আটটা
সূর্যাস্ত রয়ে যায় সব সময়
যার চোখের আড়ালে

২.

ক্রসফায়ার
বিধিবিধানকে কলমের খোঁচায় ক্রস দিয়ে
ফায়ারিং করে দাও।
মেধাশূন্য এবং পঙ্গুত্ব
আগত
ও অনা
গত।


এ শহরের রাস্তাগুলো
প্রশস্ত হতে হতে সমুদ্র হয়ে যায়।
সমুদ্রের চারপাশজুড়ে ব্যারিকেড
অ্যাম্বুলেন্সের নৌকোয়
রুগী ডুবে যায়

 

চাঁদের আবছা ছায়া

নগ্নপায়ে পাড়ের ঢেউ হালকা স্পর্শে
পলল লাগা বালুর উপর পায়ের চিহ্ন এঁকে
তোমার ভাব বিষন্নতায়আচ্ছন্ন মস্তিষ্কে
একপা দু’পা করে হাঁটতে থাকা– আবছা আঁধারে

একফালি চাঁদের আলোর আবছা ছায়া
আমার নিঃসঙ্গতাকে তাড়াতে হামাগুড়ি দেয়
বোধহীন চেতনায়

 

কথিত পুত্র

কোনো নারী
প্রথম কষ্টের দাগে হয়তো বা ছিলে

তুমিবন্ধু
দ্বিতীয় আঘাতের ভারে আছো হয়তো

কথিত পুত্র
যোগ হলো শেষাংশের তীব্র যন্ত্রণায়

মানুষমুদ্রার এপিঠে চড়ে
চেনা হয়েছে ওপিঠ
মানুষের নৌকো এখন আর চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছোয় না।

 

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার