মা ও বাবা একটি সম্প্রদান কারকের নাম
ওই যে দেখছো সবুজ পাহাড়,
নির্বাণ তত্ত্ব নিয়ে
অহর্নিশ দাঁড়িয়ে আছে,
তার ভিতরে আছে হাজার বছরের দহন পোড়নের লাভার ইতিহাস।
অথচ তোমরা শুধু সবুজ দেখে
মুগ্ধ হতে শিখেছো, অনুভব করতে
শেখোনি।
ইটের অরণ্যে বাস করে,
এক্যুরিয়ামের জল দেখে যাদের অভ্যেস,
তারা কি জানে ঘোলা জলের পৃথিবী কেমন?
তারা দ্যাখে না কিভাবে মা ও বাবাকে শত ঝড় ঝাপটায় ওই পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
কোটি কোটি কার্বন অণু গিলে গিলে
মা ও বাবাকেও এভাবেই গড়তে হয়
সবুজ ক্লোরোফিলের সংসার।
অথচ মানুষ মিছেমিছি বইয়ের পাতায় কতো কিছু না খুঁজে বেড়ায়,
একবার
মা ও বাবাদের তামাটে কুঁচকে যাওয়া ত্বকের ভাঁজ ভেঙ্গে জেনে নাও
প্রকৃত সম্প্রদান কারকের সংজ্ঞা।
বন্ধু
একটা নতুন সকালের রোদ,
বয়ঃসন্ধিকালের লাবন্য নিয়ে
আমাকে ঘাসের ভিতর এনে দিয়েছিলো
স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশিরের প্রণয়।
আমি একটা যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে
পিছনে, হিরোশিমার সব ক্ষত ভুলে গিয়ে, সামনে এগোতে
হাতে তুলে নিয়েছিলাম
সভ্যতার প্রথম সুমেরীয় চাকা।
নূহের প্লাবনের পর,
তুমিই তো আমার ভুবনে বিবর্তন ঘটিয়েছিলে…
এককোষী অ্যামিবা থেকে বহুপ্রাণের।
অথচ
এক বিষণ্ণ বর্ষায়,
আমার পৃথিবীতে
মেঘের কোলেস্টেরল দেহ ফেটে
ঝরেছিলো সালফিউরিক বৃষ্টি।
প্রত্যেকটা আলোর যমজের মতো অন্ধকার
নেমেছিলো দেবদারুর বাগানে।।
তোমার এক একটা আততায়ী
নিঃশ্বাস,
আমার টাইমলাইন জুড়ে এনে
দিয়েছিলো
শব্দের দুর্ভিক্ষ।
অবশেষে জেনেছি,
প্রেমের চেয়ে মোহময় কোন নিকোটিন নেই,
প্রেমের চেয়ে বিষাদময় কোন মৃত্যু নেই
চেয়ার
একটা চেয়ারের জন্যই তো এতো সভা,
মিছিলের আযোজন।
অথচ একটি চেয়ার যেটা কিনা
মৃত ডালের তৈরি,
তার সোনালি শৈশব ফেলে
এসেছে বৃক্ষের পরিবারে,
এখন সে নিস্প্রাণ, উবু হয়ে বসে আছে।
কোন অভিযোগ নেই, চাহিদা নেই,
ঘুরছে অনবরত এ অফিস থেকে ও অফিসে…
কর্তার মর্জিমতো…
একদা সোঁজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ
তোমাদের সমাজে এসে,
কী রকম
মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ে আছে!
শূন্যস্থান পূরণ
বাক্যের যে শূন্যস্থানটা
তুমি পূরন করে যাওনি,
আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে
সেখানে “অবহেলা” শব্দটি বসিয়েছি,
একবার এসে অন্ততঃ মার্কিং করে যাও,
ভুল না সঠিক?
এক বাক্যের শূন্যস্থান পূরন নিয়ে
আর কতদিন বসে থাকবো
এদিকে ঘড়ির কাঁটাগুলো হিংস্র
জল্লাদ হয়েছে,
পর্যবেক্ষকের ইশারার অপেক্ষায়।
অথচ শূন্য খাতার সামনে
আমার দীর্ঘ বনবাসের
খবর কি তুমি রাখো?
প্রেম শুধু ডুপেমিন নয়
৮.২ সেকেন্ড কোন রমনীর দিকে গভীর
দৃষ্টিতে থাকালেই যদি
পিটুইটারি গ্রন্হিতে প্রেমের রসায়ন
শুরু হয়,
তাহলে এরকম শেক্সপীয়ারিয়ান
লাভ তো কতো সহস্র জনের জন্যই ছিল,
সে খবর কী রোমিও-জুলিয়েটরা জানে?
সত্যিই যদি প্রেম শুধু ডুপেমিনের খেলা হতো, সমাজ আমার এ অপকর্মের জন্য
কয়েক’শ ক্যারেকটার সার্টিফিকেট কবেই বাজেয়াপ্ত করতো।
বাস্তবে তা হয় নি,
একজনের মন পাবার জন্য
আমাকে তেত্রিশ কোটি দেবতার কাছে
অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়েছে,
বলেছি ‘‘আমার রক্ত মাংসের একজন
পার্থিব মন শুধু দরকার।’’
যার সামনে আয়নার মতো দাড়িয়ে
নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবো প্রতিদিন।
যার সাথে ছোট একটা ছাদের নিচে দাড়িয়ে এই সুনীল আকাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবো অনায়াসেই।
ঝরা পাতার কবিতা
প্রিয় কবিতা,
তুমি একটু সেলুলয়েড জগত থেকে ফিরে এসে দেখো।
কয়েকটা গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল,
দোকানের কাছে গুটিকতেক গোলাপের উপচে পড়া ফুলের ঢেউয়ে,
তুমি ভেসে যেওনা।
তারা তোমাকে সুন্দরের সংজ্ঞা শিখাবে না,
তারা তোমাকে জীবন দেখাবে না।
গাঢ় কালচে সবুজের দিকে তাকাও, চারপাশে ন্যাড়া বৃক্ষগুলোর দিকে তাকাও,
কান পেতে শোন, ঝরা পাতার কান্না। পুরনো গ্রামোফোনের মতো বেজে উঠবে
খসে পড়া পাতার মর্মর শব্দ।
কী নিদারুন কান্না!
যেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের নিচে
চাপা পড়ে আছে আর্মেনিয়ান কোন শিশু,
যেন এক একটা পাতা ক্রুশবিদ্ধ যিশু। সেই সব ঝরা পাতারা জানে প্রকৃতির সৌন্দর্য কিভাবে ফোটে,
কিভাবে এক একটা বসন্তের জন্ম হয়,
ট্রোজানদের মতো নিজেদের ধ্বংস করে তারাই,
নির্মাণ করে নতুন কোন সভ্যতা।
তাদের রক্তের অনুবীজ থেকেই জন্ম নেয় রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া।
এক একটা বসন্ত, এক একটা
নৈসর্গিক রুপ,
প্রিয় কবিতা, এই ঝরা পাতারাই জানে
কিভাবে অন্ধকারের বুকের পাজর ভেঙ্গে
জন্ম নেয় এক একটা আগুন ঝরা সোনালি দিন।
স্মার্টকার্ড
পাখিদের কোথাও উড়ে যেতে
স্মার্টকার্ড লাগে না,
গোলাপেরা মাখে না আলাদা সুগন্ধি বা আতর,
একমাত্র মানুষেরই সব লাগে-
যেকোন ভূখন্ড বা
হৃদয়ের অলি গলিতে পৌঁছতেও এখন
দরকার পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা স্মার্টকার্ডের, কেননা
কেনা বেচার এ যুগে, মাংসাশী প্রাণিদের বাজারে,
হৃদয়ও আজকাল নিলামে বিক্রি হয়,
এখন বুকের ভিতর হৃদয় নেই, শুধু হৃদপিন্ড আছে,
আমাদের প্রত্যেকেরই একটা ভূখন্ড
রয়েছে, তবে সেখানে সাম্রাজ্যবাদীরা নীলকর আদায় করছে অহর্নিশ।
শিশুকাল
বড়োদের শিশুপাঠ থেকে শিখেছিলাম
অ-তে অজগর…
আর ভূগোল পড়েই জেনেছি,
পৃথিবীতে নিঃসঙ্গতার চে’ বড়ো কোন
সাম্রাজ্য নেই,
বর্বরতার চে’ বড়ো কোন শাসক নেই।
তাই এখন শিশুদের কাছে শেখার পালা।
দেখা যাক তারা কী পছন্দ করে?
দেয়াল?
নাকি দিগন্ত?
ইটের শিখর?
নাকি ঘাসের শেকড়?
একবার তাদের জিজ্ঞেস করেই দেখুন,
কী দেখতে পছন্দ করে?
ইটের অরণ্যে মানুষের অসুস্থ প্রতিযোগিতা?
নাকি
ঘাসের পৃথিবীতে সারিবদ্ধভাবে
পিঁপীলিকার হাঁটা?
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা?
নাকি
খোলা মাঠ পাড়ি দেওয়া?
তাদের কাছ থেকেই শেখা যাক
জীবনকে কীভাবে দেখতে হয়।