হ্যান্ডস আপ
দু’হাতে রাষ্ট্র আমাদের
আমরা ক্রমশ হয়ে উঠছি অন্যের
আমাদের ব্যক্তিগত কোনো কথা নেই
কোনো মত-অমত নেই
কোনো ইচ্ছে নেই
কোনো বাঁধা নেই
সবকিছু যেন সের্ন্সড
দু’হাতে রাষ্ট্র আমাদের
আমরা ক্রমশ হয়ে উঠছি অপরের
‘রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর নাম- তর্জনী’
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নাম- মধ্যমা
রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রের নাম- বৃদ্ধাঙ্গুলি
যেন এই তিন আঙুল নল উঁচিয়ে
বন্দুকের মতো তাক করে আছে মাথায়
আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, প্রতিনিয়ত
‘হ্যান্ডস আপ’ ভঙ্গিমায়…
প্রভু আছনে ভাষায়
প্রভু জানালেন:
আমি তোমাদের বানিয়েছি মানুষ
আমি তোমাদের প্রভু।
তোমরা আমার আনুগত্য প্রকাশ করো
সুতরাং, জ্ঞান হলো, প্রভু ভাষা জানেন
প্রভু বললেন:
আমি সর্বদা প্রত্যক্ষভাবে তোমাদের দেখতে পাই
এবং তোমরা কোনো অসৎ কাজ
লুকিয়ে কোরো না
জানলাম তিনি দেখতে পান
প্রভু বললেন:
এবং কি তোমার মনের ভেতর যা কিছু অব্যক্ত
আমি তাও বুঝতে
এবং জানতে পারি
জানলাম তিনি আমাদের ভেতরে বাস করেন
তবু তাঁকে দেখিনি কখনো
কেবল ধারণ করেছি শব্দমাত্রায়
প্রভু কোথাও নেই
সর্বশক্তিমান প্রভু আছেন ভাষায়
প্রাকৃতপাপ
এই ফুল-ফল, সমুদ্র-নদী, কি মধুর, মিশ্র আবেগে
চোখের মোহণশোভা হরণ করে বুকে থাকে জেগে
জীবন তো কীটের নয়, মানুষ হয়ে প্রতিভাত আজ
অমূল্য প্রাণায়ু; এখানে মৃতের সমাদর— সুন্দরসাজ;
রাগঢাকে জীবনেরে জানায় বিদায়— করূণাময় কৃপায়
শ্রেষ্ঠের রাজতিলক বোধের গভীরে পুষ্পের ন্যায় জন্মায়
হে হাওয়া, নমস্যঃ ওঁম নমোঃ— তোমারই প্রাকৃতপাপে
পৃথিবীতে আসিছে মানুষ তব নব নব সৃষ্টিতে, সয়লাবে
মৃত্যু
চোখের আলো জ্বালিয়ে রেখেছি
বোবা ল্যাম্পোস্টের মতন
হাঁটার কৌশল শিখি
বহুজাতিক পথে কাছে;
ভ্রমণে মেতে উঠি— অনিঃশেষ
প্রতিমুহূর্তে, নিয়ত
গোপনে লুকানো ক্রুট ফেলে
পেরিয়ে যাই, সতর্কে
যেন মৃত্যু এখানে
হোঁচট খেয়ে পড়া দৃশ্যটি।
উপমা
এঁকেবেঁকে যাওয়া এক বিমর্ষ নদী
সরল জলস্রোত—
পাড়ভাঙা ধ্বনি—
দৃশ্যের জানালা গলে
উড়ে চলে যায় এক বিষণ্ন মাছরাঙা।
অজস্র শোকের পায়রা
সেই জল ছুঁয়ে ভাসে;
তরঙ্গের মত— দৈর্ঘ্য-প্রস্থের সমান্তরালে..
ব্যর্থ, অসুখী, মলিন মানুষেরা আসে
স্নান করে তিনরাত…
বিস্তীর্ণ পৃথিবী শুয়ে থাকে তার পাশে
প্রশস্ত মাঠের মতোন;
বুকে নিয়ে ক্ষত—
একটা দুঃখ আছে অবিকল নদীটির মতো।
নিয়তি
তিনটা পিঁপড়া বেড়াইতে যাইতেছিলো
আমি বসে ছিলাম পুকুরঘাটে
তিনটা পিঁপড়া হাঁটা ধরলো পথে
আমি ঢিল ছুঁড়ে ঢেউ তুলি জলে
তিনটা পিঁপড়া তখন অর্ধেক পথে
আমি কি মনে যাইতে নিলাম মাঠের দিকে!
তিনটা পিঁপড়া আগাইতেছিলো খুব সাবধানে
আমি হাঁটতেছিলাম আনমনে, খোশ মেজাজে
তিনটা পিঁপড়া মারা পড়লো আমার পা’য়ের তলায়
আমি তখন গাইতেছিলাম গান, ফাগুন হাওয়ায়
বসন্তবিরহ
হাওয়ার সাইরেনে
উড়ে… দূরে
পাখিরা কেটে কেটে যাচ্ছে
রৌদ্রের ছায়া
কালের রেডিও বাজছে
ক্ষীণ ভলিউমে;
এখন প্রমত্ত বসন্তের ঋজুগান…
চোখের মোহনশোভা হরণ করে
পলক ফেলে, মুহূর্ত
হেঁটে যাচ্ছো
ছাতার ভেতরে একা তুমি—
খাঁ খাঁ;
আমি প্রচণ্ড দুপুর।
ডাকবাক্স
পথের আড়ালে পথ—
যেন পড়ে থাকে নিখোঁজ
গন্তব্যের অটুট সন্ধানে
চিনে নেয় তারে
ছায়াহীন কোনো রোদের দুপুর
যেন বিকেলবেলার সারস
মেলে ধরে প্রাপক প্রাপক ঠিকানা
অজানা ভ্রমণ ডানায়
আর দুয়ার খুললেই যেমন হাওয়াদের দৌরাত্ম্যে
ভিড় করে আসে খোঁজের আকাশ;
নৈকট্যের খাম—
তেমনি অসংখ্য ঠিকানাসমেত;
মানুষও এক প্রাচীন ডাকবাক্সের নাম
দেখা
পাশ ফিরে তাকিয়ে থাকি, তাকিয়েই থাকি
যতক্ষন না নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছো পথের আড়ালে
তোমার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে
চোখের প্রতিভায় এঁকে রাখি পথের দূর-তত্ত্ব।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় দেখি— তুমি নেই
অথচ অ-জ্ঞানে পাপড়ির মতো
তুমি আমার ভেতর মেলে ধরো নিজেকে
তোমাদের উঠানের ডানপাশে যে বাগানবাড়ি!
তোমার ঘরের জানালা বরাবর যে পেয়ারাগাছটি!
এখন চোখ বন্ধ করলেই
সেই পেয়ারাগাছটির মতো দেখতে পাই তোমাকে।