বাংলা কবিতা
তোমাদের হাই হ্যালোর ভিতরে সেদ্ধ হচ্ছে হাওয়া, আর সেই হাওয়ার সাথে কতো কথা কই; আমার যাপন তোমাদের অচেনা, যেমন কাঁথার ভিতর নিঃশ্বব্দে ফুটে আছে ফুল, বরং আড়াই ঘর পেছনে এসে ঘোড়াটাকে ধরো- শতাব্দীর নিরবতায় যে আস্তাবল, লুকিয়ে রেখেছে নীলচাষ আর চাবুকের দাগ, শেকড় উপচে আসে কেঁচো, এ হলো নিমিত্ত; এর ওপর তোমাদের প্রতিষ্ঠানগুলি ফুলহাতা জামা পরে দাঁড়ানো, মাথার ওপর ছায়া দেয় তোমাদের প্রেস!
যেনো হেঁটে হেঁটে তুমি ওকে স্কুল দেখাচ্ছো, ওই পাড়ে বাঁশের আড়া পর্যন্ত ওয়ারিশ তুমি, মিথের আগুন থেকে আঁকিয়ে নিয়েছো ট্যাটু, ফুলবাবু হয়ে প্রতিদিন শাহবাগে যাও, ছবির হাঁটে গিয়ে শেয়ার করে চুরুট ধরাও, নারী বন্ধুটির গায়ে হেলান দিয়ে বসো, আর, এতেই নাকি তুমি নারীবাদী, অথচ চোখেমুখে লুকিয়ে রাখো পুরুষগরীমা; তোমার লেখাপত্র জড়ো করে হাত তোলো দেখি, সমালোচককে এগিয়ে দাও, দেখি মুরোদ তোমার!
বাংলা কবিতার বুকের ঢোর বড়, তোমার থ্যাবড়ানো মগজপ্রতিভা ভাঁজ করে রাখার জায়গা তার আছে, বরং সৈন্যগুলার সঠিক চাল দাও, পেনড্রাইভে জমা করো মুভি!
খাঁচায় সারারাত তন্দ্রাচ্ছন্ন পাখি, ডোরাকাটা পাখি; অনিদ্রাকে প্রেম বলে ডাকে!
আওয়াজ করে গলার রগগুলারে দেখাও, পারো তো লাফ দিয়ে পার হও
বাংলা কবিতার আগুন!
ঘুমাও বরং
একদিন আগুন আমাকে বিনাশ করে গেলো পুড়ে, আমি কিছুই বললাম না;
একদিন কোথা থেকে জলোচ্ছ্বাস এসে, ভাসিয়ে নিয়ে গেলো আমার অস্তিত্ব;
আমি তারপরও কিছুই বললাম না, একদিন একাই হাঁটছি এমন আধো রাতে
আমার ছায়া আমাকে গিলে নিতে চাইলো, আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমার সমস্ত
অনুশোচনার ওপর, সামনে হেমন্ত, ঝরা পাতাদের করুণা হতে কোনও দস্যুর
ফেলে যাওয়া ভায়োলিন যেনো বেজে ওঠে, কোনও প্রান্তর শুষ্ক রেখে ফিরে আসে
আদ্রতা, উপনিবেশ তৈরি করে এক পাতা হতে আরেক পাতার দিকে ভেসে আসছে
পিঁপড়া;
সামনে বিস্মৃতিও, গলাজলে ডুবে থাকা গাছে এলিয়ে রাখছে গা, ভারী হয় পুঁথিবর্ণে;
দুদিনের জ্বর এসে ক্লান্ত করেছে তোমায়,
তুমি ঘুমাও সখা, তুমি ঘুমিয়ে থাকো বরং!
শিকার
আজ কোনো প্রহরীর দিকে ছুটে আসে তারাদের ছুঁড়ে দেয়া শিস, আর সেইসব শিসের টুকরা কুড়াতে পৃথিবীতে মেঘ নামে, যেনো প্রশ্নপত্র বাঁধা এক দিগন্তের অধিকারী তুমি, শিকারে এসেছো আর ডাল থেকে ডালে ঝাঁপ দেয় ভ্রান্ত বানর, ভগ্ন হৃদয় থেকে আসে বাজের আওয়াজ-
কার হাতে তুলে দিতে চাও, একে?
তুমি এক গল্পের ঘোর থেকে ছুটে যাও আরেক যুদ্ধগাঁথায়, মাটিতে দেবে আছে কর্ণের রথের চাকা, ভীম নেই তবু শোনা যায় শল্যের চিৎকার; তুমি নিঃসঙ্গ, নিজেই ছিঁড়েছো তোমার হাস্যোজ্জ্বল ফটো, ঘর থেকে হাত বের করে আঁচ করতেছো শীত।
ঠান্ডা বাতাস আসে, মৃতদের কথা নিয়ে নির্বাক পৃষ্ঠা ওড়ে, সমস্ত রাত; এই ফাঁকে ভেবে নিতে চাও নাকি, কলোনির ছাল ওঠা ছাদ?
ঐদিকে হেলে আছে কাকতাড়ুয়া, ধান থেকে ধানের দূরত্বে উঁকি দেয় শোলের পোনা, বাতাসে জুড়ায় নিশি; ধরো, এই পথ একদিন তোমারই ছিলো- এঁকেবেঁকে সারারাত শেষে পেয়ে গেছে সড়কের দেখা, এই মাটি তোমার চেনা, এইখানে তিতির গড়িয়ে নেমে আসে গম্ভীরা!
কতো রাত থেমে গেছে ঢালের দিকে এসে, হোস পাইপ-চাতাল লক্ষ্য করে; দ্যুতি ও দন্ডের কাছে ম্লান জীবনচিত্র নিয়ে, কতোদূর যেতে পারো তুমি?
নিশিডাক, আকাশে বিছানো দেখো;
মেঘ হতে মেঘে উড়ছে জোনাক!
মহাসড়কের হর্ন
সলতে সাজিয়ে উবু হয়ে বসা কুমারির পাঠাভ্যাসে গমগম করে ময়ূরীর নাচ।
আমার মুখস্ত হয় দ্রুত। শুধু রাত, প্রতিহত আসামির মত হ্যান্ডস আপে গম্ভীর হতে থাকে।
এখানে হ্যাজাকলন্ঠনে
বিস্তৃত হলো গান, পৃথিবীর সুদূরতা এসে
পথিকের পায়ে থামে, এখানে তোমার স্মৃতিকে
তাড়া করে ফেরে মহাসড়কের হর্ন!
স্মৃতি কি বড়শি কোনো?
আকশি উঁচানো হাত?
ধোঁয়া ছেড়ে নিঃশ্বাস জড়ো করে
গেরস্থ পাকঘর, আমাকে প্যাস্টেলে আঁকে
ঘুমভাঙা কন্যা আমার!
এই জড় ফনিমনসার পাতা
স্বপ্নে গিয়ে ওড়ে, পৃথিবীতে ঢেউ মানে
অপার অনিশ্চয়, তোমাকে যাত্রাপথেরা
চেনে?
আমার মুখস্থ হয় দ্রুত
আমার হিজলপাড়ের গাঙে
নিস্কৃতি এসে বসে, তুমি অন্য পাড়ে
শালিক!
হারমোনি
তোমাকে হঠাৎ ছুঁয়ে যাচ্ছে বিরোধ, এর পাশে বেলা নামানো ছায়া জড়ো হলো, সারাদিন মৃত্যুকে ভেবে
ওজুর পানিতে নামে রহিমন!
তোমাকে দেখলে এগিয়ে আসে, পুরনো পত্রিকা;
ছাল ওঠা হাতলে বাঁকানো ধারালো ছুরি, ছাত্রনেতা, আঘাতের দৃশ্য!
হারমোনি এগিয়ে দিচ্ছে আকাশ
এ বছর শীতের ছিলো না জার
গাছে গাছে বাকল ছিলেছে কারা?
তোমার ছায়ার ওপর চৈত্রফাটল খোলা মাটি
পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুধাকে গর্ভে নিয়ে
এ মাটি উচ্চারণ করে গান, তার গলা ভেঙে গেছে!
তার শরীরে প্রেম? নাকি পরকীয়া আঁকা?
হৃদয়
টেবিলের এপাশে বসে তুমি ওপাশটাকে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছো, অথচ তোমার হাত ঘামছে না। তাড়াহুড়া নেই, যেনো গায়ের সমস্ত রক্তনালীতে ঢুকে গিয়ে নিজেকে খুঁজে বের করছো, একটি শিশুর ছায়াকে চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখেছো তুমি, অটোরিকশায় করে একটা নক্ষত্রকে প্রতিদিন পাঠিয়েছো স্কুলে!
একটা আত্মগোপন বুকে নিয়ে তোমাকে হাঁটতে দেখলাম রাস্তায়, সামনে কোনো জিজ্ঞাসাকে দেখতে পাচ্ছো নাকি? লাউপাতা পেঁচিয়ে গিয়ে, টুপিপড়া দেখতে লাগে একতলার ছাদ, দেয়ালে ভোটের পোস্টার;
তোমার কোনোদিকে মন নাই- এতো কুয়াশা, এতো হার্ডব্রেক
একটুও নড়াচড়া নাই তোমার!
ফল
(মজনু শাহকে)
পিছনে তোমার ওড়ানো ঘুড়ি-
গোধূলি বিছানো চাঁদ, উঁকি দিয়ে দেখতেছে তারে
বহুদিন হলো, তির থেকে ছাড়িয়ে পাখির বুক
দিগন্তে রক্ত ছড়ালো কে?
এই জ্যোতিগল্পে, প্রশ্নকাতর ঘুম
ধোঁয়া উড়ে উনুন হচ্ছে কালো
মৃত শিশুরা দেখা দেয় এসে স্বপ্নে
মায়ের ঘটি উপচে পড়ছে জল!
ডেওয়া ফলেরা আঙিনায় পড়ে ধূলা
বোঁটাচ্যুত স্মৃতি, মনে রাখে নাকি ফল?