আলাপপর্ব
সা : মেঘের পাত্রে দ্যাখো জীবন ভাসছে যুগপৎ..
তা : এর চে’ বৃষ্টি ভালো।
সা : মানুষ ছুটছে মানুষের ভয়ে, পালাচ্ছে হরদম।
তা : চলো বাড়ি ফিরি কিছু ছলাৎ ছলাৎ শব্দে…
সা : আগুনের কোনও উষ্ণতা নাই না কি!
তা : লাইচ্যুত বগির কিনারে অবাক ফড়িং দাঁড়িয়ে…
সা : চিন্তাবাক্স থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মরানদী ছাইরঙ…
তা : প্রতিটি ভোরের প্রস্ফুটিত হবার শব্দে তোমার ঘুম ভাঙে না?
সা : কতো শিশুতোষ মৃত্যুর মতো দূরাগত সৈকতের গানে ঢুকে গ্যাছে জ্বলন্ত কেরোসিন..
তা : ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছো, খুব তীব্র হচ্ছে ধীরে…
সা : শোনার ভেতরে শাদা পর্দা ছিঁড়ে যাচ্ছে…
তা : আর ঘনিয়ে আসছে পাঁজর ভাঙার শব্দ!…
বিচ্ছেদ
নিদারুন বায়ু জমে ভরে যায় খাবার বয়াম।
পোশাক পাল্টে আজ দন্ডিত জলপাইবনের
পাশে অন্ধ শামুক শোরগোল তুলে
নেশাগ্রস্ত সংসারে ঢুকে যাচ্ছে।
পাতার আড়ালে মূক ও বধির
একটা চড়ুই, দু’ ফোঁটা
লাফ দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে জল।
হামিংবার্ড
চোখের ভেতরে
একটা হামিংবার্ড
নিয়ে বসে আছি
চমকে দিও না তা থৈ
উড়ে যাবে…
উড়ে যাবে তারা─স্বপ্নেরা;
সারি সারি ডানা
ঘুমের ভেতরে বয়ে চলা নদী
হাতের তালুতে বয়ে যাবে
ঢোরা সাপ, রক্তের ধারা।
আবার শরীর
প্রাচীন নীরবতার যোগফল এই মহাপথ ─
জড়িয়ে আফিমফল, কিছুটা মায়া, অফুরন্ত
কোলাহল; কখনও প্রশ্ন করে না কিছুই!
সূচনা আমারই ছিলো, যেমন থাকে
এই যে মাথায় জমলো আলোমাখা জল,
নির্ঘুম কার্নিশের অবর্ণনীয় মোড়কে
ঢুকে গেল! ─জমছে সকল হিম, অবাধ্য
প্রবাহ… করোটির ফুল নিয়ে
চুপচাপ
অবগাহন
শেষে
চ্যাপলিন
ফিরে যায়।
পতন
─ রাত জাগা পথ পেরোনো যাচ্ছে না কিছুতেই!
─ নিরাপদ দ্বৈত জীবন চাই অন্তরবনে।
─ চলো অনিশ্চিত, নদীপথে কেঁপে ওঠা মাঝিটির মতো উষ্ণতা, না কি নিশ্চিত..
─ ‘চাই’ বলি যতোই তবু হারাই গহীনে খেই। বলবো না।
─ ভাঙা কাঁচ কেন দাঁড়াচ্ছো ওভাবে, রাত্রি আড়াল করে!
─ উহ্য থাকুক কিছু উজ্জ্বল তারা, আকাশের গোপন কক্ষে..
(তারপর একদিন সেই তারাদের থেকে নিকৃষ্টতম তারাটি সর্বস্তর ভেদ ক’রে পৃথিবীতে প্রবেশ করে!..)
নাম
অনেকটা প্রেমের গভীরে থাকি
অনেকটা ঝড়ের গতিতে থাকি;
নামের ভেতরে থাকে সমূহ সম্ভাবনা
ছায়ার আড়ালে হাসে
চিত্রকল্পের বাঘ।
তলিয়ে যাচ্ছি চোখে, ওহ হামিংবার্ড
নিজেকে অচেনা লাগে, অপর থেকেও
অধিক যাপনে, নামের গোপনে।
ঘুমন্ত মার্বেল, যা ক্রমশ গড়িয়ে যাচ্ছে
গড়িয়ে যাচ্ছে প্রেম, বর্ধিষ্ণু আবেগ
থেকে ঝরে পড়ছে ঘুমের মাঝে গজিয়ে
ওঠা নীলপরী; লালরঙ ভালোবাসে।
এই সব নিয়ে আমি কিছু বলি না। যারা
বলতো, তারা এখন ভিন্ন তরীতে
ঘুমন্ত মার্বেলের মতো গড়িয়ে যাচ্ছে।
দর্শন
ভীষণ দালানঘেষে প্রতিবেশি মেয়ে
পুরোনো চটির উপর দাঁড়িয়ে থাকতে
হচ্ছে। ─হচ্ছে তো? নামফলক
আঁকতে হচ্ছে কফিনে পেরেক ঠুকতে ঠুকতে।
─ আঁকছো তো? উজ্জ্বল কোনও আলো
নাই। দেখতেই পাচ্ছো।
ভাষাহীন
সবকিছু থেকে দূরে এসেছি ─ আমার
কোনো ভাষা নাই। কায়মনে
দীর্ঘ ¯ স্নায়ুভূতির ভেতর দিয়ে পাহাড়
ছোঁব, এই কথা ভেবে
হাসতে হাসতে তোমার হাত ধরি। ভাবনায়
উঠতে থাকি পাহাড়চূড়া, মনসাশৃঙ্গের অন্তরে।
এতো নীল ছড়িয়ে দিলাম প্রেমে, ভালোবেসে!
দূরত্ব
সারাদিন এত সহজ
আলো জড়িয়ে রাখো!
পেয়ারা বেষ্টিট মুখ, চারিধার
ফুল থেকে ফুলের দূরত্বে
গ্লানিচিত্রের স্মৃতি মুছে দিয়ে
রাত্রিবর্ণে ভরা পালকের আব্দার।
যতোটা দেখা যায় দূর থেকে
দূরের বিন্দু, তার অধিক দূরত্বে
তুমি-আমি দিগন্তে বিলীন।