আমাদের মত
আব্বা বলতেন, কেউ মারলে মেরে আসবি
আম্মা বলতেন, পারলে আরেক গাল পেতে দিবি
একটু বড় হ’লে, আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে
আমি যিশু আর মোহাম্মদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
অথবা মেলাতাম দুজন কবির যথাযথ লাইফস্টাইল।
কে কার চেয়ে মহান বা ধূর্ত?
মাঝে মধ্যে কৃষ্ণও খেলতো ভেতরে।
ফাঁকফোকরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে মনে হ’তো,
আমার চেয়ে কেউ বড় বা ছোট নয় বরং একটা গ্রহ
যে স্বয়ং অবস্থানে অহর্নিশ ঘুর্ণায়মান।
ছোট বেলায় একবার আমার চেয়ে বড় একটি ছেলে
পেছন থেকে আঘাত করলে আর আমার আম্মার কথা মনে আসলো।
আরেকবার বয়সে ছোট একটি ছেলে…
আমি আব্বাকে স্মরণ করলাম।
পরে একবার নির্জনে খেয়াল করলাম দুটো পাখি খুব বিতর্ক করছে
একটি পাখি বলছে, আমি পাখি এটাই সত্য।
অন্যটি বলছে, না বরং আমাদের উড়ন কৌশলে—
আমাদের পাখি হওয়া নির্ভর করে।
সময়কে প্রশ্ন করলাম, তুমি সত্য মিথ্যা বা সঠিকের চেয়ে অন্য কিছু?
সে পাল্টা প্রশ্ন করলো, সত্য মিথ্যা তোমায় কে শেখালো?
ফের আমার আব্বা আম্মার কথা মনে আসতে লাগলো।
আব্বা সন্তান হয়েছে এখন, আর আম্মা বেড়াতে গেছে।
কিন্তু সত্য বা মিথ্যার চেয়ে আমার মনে হ’তে লাগলো,
আমরা সকলে তো যার যার সময়ের মত!
পৃথিবী নামক রাষ্ট্র
পৃথিবী নামক খাতায় কিছু লিখতে বলাতে,
প্রত্যেকেই লিখলো ‘আমার’।
ভুলবশত দুয়কেজন লিখেছিল ‘আমাদের’।
তারা বোকা ও বাতিল গণ্য হ’ল।
এবং সকলের জন্য তৈরী করা হ’ল মানচিত্র।
আমরা মুক্ত ও স্বাধীন হলাম এবং পাখিদের
পুষতে লাগলাম খাঁচায়।
ফলত, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, কাঁটাতার, ক্ষমতার র্সাবভৌমত্বে হয়ে উঠলাম মহান।
বোকাদের বোঝানো হ’ল, ‘স্বপ্ন আর বাস্তব এক নয়’। সেই থেকে পৃথিবী বাস্তবের আর বোকা’রা স্বপ্নের।
বোকারা আজো রাস্তাঘাটে হাঁটে, আনমনে হাসে, মানুষের রুপ দেখে, পুলকতি হয় ছোট্ট ঘাসফুলে,
এদিকে
যারা লিখেছিল ‘আমার’, পাখির ডানাগুলো তাদের,
পা দুটো তাদের, মাথাটুকু তাদের।
আর
ছোট্ট প্রাণটুকু নিয়ে বোকাগুলো সব মানুষের কাছে স্বপ্নকাতর পাগল হয়ে আছে!…
ইতিহাসের পাতায় সেই র্নতকী
ইতিহাসের পাতায় সেই র্নতকী’র কোন চিৎকার পাওয়া যায়নি
একটি তেলাপোকা যা জানতো, ইতিহাস রচয়িতা তা জানেনি কেন?
এই প্রশ্নে কুকুরটির কোনদিন মানুষ হওয়ার স্বাদ জাগেনি।
এদিকে সেই নর্তকি এ জন্মে হয়েছে একটি ঘাসফুল। দেখে এ জন্মেও মানুষের পদদলিত করার ইতিহাস!
যেখানে প্রজাপতি এসে খেলে প্রতি ভোরে নিয়ম করে, ঘাসফুলটির সাথে। বৃষ্টি’রা ঝরে পড়ে, আনন্দে ফুলটির নাকের ডগায়!
পাগলটা
পাগলটা প্রেম খুঁজে বেড়ায়
পাগলটা হাসে,
দোলে দোলে পাতাটির—
নৃত্যের তালে তালে।
ঘাসফুলটা হাসে,
ভাবে বুঝি তারে দেখেই—
চেয়ে থাকে।
পাগলটা কাঁদে,
পতিত বৃষ্টি ছন্দের লয়ে
পাগলটা ভাবে,
গাছটি দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে—
তারই দাদার আমল থেকে!
পাখিটা কেন ডাকে ভোরে,
জেগে ওঠা সুরে?
পাগলটা স্বয়ং পানে চেয়ে,
অবাক হয়ে দেখে
মাটিরে বলে, এই যে ফেলি পা—
তোমার বুকের পরে
তোমারও কী ব্যাথা হয়,
হৃদয় নামে চেনা যায় কারে?
পাগলটা বলে,
ঠিকের ঘরে সব অসুখ কেন রে?—
পাগলটা প্রেম খুঁজে বেড়ায়
ঝরা পাতাটির সংসারে।
পাগলটা’র প্রেমের ক্ষুধা লাগে
ঘাসফুলটির সাথে খুনসুটিতে মাতে
প্রেম দেখে, কান্না-রঙ মাজারে।
নিঃস্ব পা-হীন গাছটির লগে
পাগলটার গোপন কথা থাকে!
পাগলটা প্রেম খুঁজে বেড়ায়
প্রেমহীন প্রেমের সংসারে!
প্রার্থনালয়
এই ঘাসের বিছানা ছেড়ে তুমি কই যাবা?
বেশি হলে মিশবা কেবল তার অতলে।
অন্তঃশূন্য নয় বরং তুমি ঘাস-ফুল
ঝুলে, ফুটে থাকা ফুলের অগম্য ভাষা হবা।
ওখানে শিশির, ওখানে কীট আর—
জীবিত মানুষের পদ-ছাপ আঁকা।
তুমি হও তার, যে কারো ছিল না কোনদিন।
হেসো কেবল নিঃস্ব হাসি। তুমি হও তার,
যে জন্মান্ধ না অবেক্ষনে স্পর্শেই অমলিন।
এসো, ঘাসের জায়নামাজে, পড় নিজেরে—
গহীনে একক রাশভারী নিমগ্নতায়।
এখানে আত্মসুর বাজে সু-মধুর,
এখানে একান্ত আপনার তলে, আপনাতেই বিভোর!
প্রিয় দুঃখ ভালোবাসি
আমি দেখি, খুঁজি, আড়াল হই। গহীনে যাই,
অতলে ডুবি, ভাসি। ফের দেখি ব্রহ্মাণ্ড ফোটে—
আছে রঙে-কামিনী! কি ভেবে আমি আকুল
হই, আরাধনায় মাতি, মেতে মৈথুনও ক্লান্ত
আঁখি! অথচ দেখো, আকাশের জড়তা নেই
মানুষের কাছে। মানুষের সাথে মিশে প্রিয়
নীল আর আধাঁর-সমেত হৃদয়ের উদাম ভাষা
হয়ে ওঠে। এই নির্লজ্জ আমি, কেবলই নিত্য—
সত্য রুপের প্রেমে পড়ি। জেনেছি আরো,
প্রেম মিথ্যার মত প্রিয় খাঁটি! অথচ দেখো
হৃদয়ের ক্লান্তি নেই, প্রকৃত নিকটে যাওয়ার।
আমাদের এই দূরত্ব আঁধার মিলে গেলে, কিছু
অশ্রু ঝরে যায়, আনন্দ শিহরণে ডুবি। তবু
তারও অধিক যা সত্য জানি, জানি না বলে,
জানার ছলে, কেবলই প্রিয় দুঃখ ভালোবাসি!