মহলের উল্টো দিকে
আপনি সুন্দর
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলীমায়।
র্ববরেরা ছিলো সব কালে
এখনো শোভন লোকালয়ে
আপনি সে ভয়ে
মুখটা নেকাবে ঢাকবেন?
অক্ষর সাজে না শাড়ির বৈধব্যে
ফিরে তাকান বেগম
মহলের উল্টো দিকে
ফসলের ক্ষেতে।
পিতলের বক ধ্যান ভেঙে
অলস দুপুরে দেখে
আপনার নূরের ছোঁয়ায়
র্মমর শব্দে ভাঙছে সুনসান নিরবতা।
এক যে ছিল রাজকুমারী
এক যে ছিল রাজকুমারী
তার স্বপ্নের নায়ক
ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন;
বুকের গোপনে লাল মলাটের বই
দিগন্তে উড়াতো স্বপ্নের ফানুস
নায়কের ছায়ায় ঘুমাতো
তৃতীয়ার স্বপ্নগুলো!
কত বছর পর
কবি লিখলেন ‘রাশিয়ার চিঠি’
রঙিন স্বপ্নের মৃত্যুর খবর!
তারা দেখতে দেখতে
দেখা হলো না আকাশ
মূর্তির ছায়ায়
এ কালের পতিতা ঘুমায়।
আমার মায়ের কণ্ঠস্বর
শহরের কোলাহল থেমে গিয়ে
দূর প্রান্তে আকাশের সীমানা ছুঁলো রাঙামাটি
জলভরা বিলে ডুবুরী সেজে আছে ধানের শীষ
আজি ধানের ক্ষেতে
রৌদ্র-ছায়া লুকোচুরি খেলা খেলে না
শাদা বকগুলো বুদ্ধি প্রয়োগে জলপান করে,
মৎস্য ধরে;
আমার মায়ের কন্ঠস্বর হারায় জ্বলের শরীরে
সে ভাষা কেবল বোঝে বোয়াল, রুই, সরপুঁটি আর মৎসকণ্যা
শান বাঁধানো পুকুর ঘাট
পশ্চিম পাড়ে উর্ধ্বমুখী ডালপালাহীন তালগাছটির শিখরে
মাঘী-পূর্ণীমার রাতে পেত্নির আসর বসতো কোন এককালে
আজিকার শিশু অবাক বিস্ময়ে সে কাহিনী শুনে
মোনাজাত তৃতীয় নয়নে
গাঁও-গেরামে খুঁজে ফিরে রূপকথার ডাইনী।
গ্রামটির অন্তরে দাগ কেটে ধীরে বহে হাঁটুজল নদী
আমার মায়ের শৈশব, কৈশোর আর উত্তীর্ণ বয়সের কষ্ট-কল্পনা
ঘন-ঘোর বরিষায় সেই নদী ভাসায় স্বপ্নভঙ্গের রাগে
কৃষি জমি, কৃষকের যৌবন এবং জোয়ান কিষাণীর কোল;
দেখতে দেখতে নগরের চেহারা যেখানে পাল্টে যায়
সেখানেই মাঠ-ঘাট-নদী,
গ্রাম ও মানুষজনের ধবল জ্যোৎস্নায় নিশি শব্দের
উৎসব মিলায় শিশির স্নিগ্ধ প্রভাতে
আলতো মেঠোপথের নিশানা নিয়ে চলে পান্থজনেরে
অজানা এক কান সোনামুখের পরীর হাটে।
দরবারী রাতের কুয়াশা
মার্কসবাদের প্রথমপাঠ অ, আ, ক, খ সম্পর্কে
অন্ধদের কলোনীতে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের
কৃষিকাজে উৎসাহ হারালো বয়োবৃদ্ধ পিতা
সামন্তবাদ রেখে যায় দয়ার শরীরে চাবুকের দাগ
ঘোড়সওযারীদের পছন্দ ছিল দরবারী রাতের কুয়াশা
বড়ো কষ্টের অতীত ভুলে
বেহালার বেহাগে জনাবা খোঁজেন বর্ণমালার যৌবন
প্রার্থনার ঘর সমূহ অর্চনা আর মাহফিলে সরব
কালধারায় ভূ-স্বামীরা কি বেঁচে থাকে স্মৃতিকথার বমনে?
পদ্যের আসরে নাচে কমলাসুন্দরীর মন
কাজল রেখার ঘুম ভাঙাতে আসছে
বণিকের প্রবাসী ছেলে।
সবুজ বনভূমির ভিতরে মৌসুমী একা চলে গেল
সবুজ বনভূমির ভিতরে মৌসুমী একা চলে গেল, পেছন পেছন
আমিও; মুর্হূতের মধ্যে কবরের নির্জনতা ভেঙে রোদের দুপুর
চুমু খেল একলা আকাশের ঠোঁটে। আকাশ পাঠালো
আমাদের জন্য মেঘ, মেঘের ছায়ার নীচে গভীর রাত অবধি
অপেক্ষায় থাকি, থেমে যায় যদি মৌসুমীর অভিমানী ঝড়!
ছুঁতে চেয়েছি মৌসুমীর রহস্যময়ী ছায়া; ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ
তীব্র অভিমানে আরো দূরে সরে মেঘের আড়ালে। আমার
কষ্টগুলো আহত পাখির মতো বনভূমির উদার জমিনে
পড়ে থাকে; সারাটা রাত দহনে পুড়ে মৌসুমী পা বাড়ালো
বির্সজনের পথে, সেই আলতা রঙের পায়ের তলায় আমাদের
অহংকার খোঁজে একটি পিতলের যৌবন।