আহা মরণ!
তোমার চিবুকে কি বুকে
মরছি ধুঁকে ধুঁকে
কি এক গোপন
সুখে কি অসুখে ।
কি দেখছিলে
অমন ঝুঁকে ঝুঁকে ?
আর আমি তোমার
চিবুকে কি বুকে ।
কি এক গভীর
সুখে কি অসুখে,
দেখি এবার
(আমার) মরণ কে রুখে ?
বৃহৎ কারাগার
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগারটি নির্মাণ করতে
ত্রিশ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল
দীর্ঘ নয়টি মাস।
বিশ্বাস করবেন না জানি
শুধুমাত্র জন্মগ্রহন করার অপরাধেই
এখানে সাজাভোগ করছেন
চৌদ্দকোটি মানুষ।
অক্ষত চোয়ালের লজ্জা
(হুমায়ুন আজাদ স্মরণে)
আকাশের কপালে তিলক এঁকে দিয়ে
নির্লজ্জ চাঁদ উঠলো ঠিকঠাক ।
আর আমরাও বাতিঘর এর সামনে দিয়ে
প্রবেশ করলাম চেরাগীর যোনিতে ।
তারপর তুমুল আড্ডা, সে যে কি তুমুল আড্ডা
তুমি নেই আজ কতদিন…
তবু থামেনা কিছুই।
তুমি কি জেনেছিলে এর সব
এমনই হয়, মানুষের অদ্ভুত স্বভাব
চায়ের সাথে সিগারেট, পরাটার সাথে কাবাব
না হলে মানুষের চলেনা ।
অথচ শতাব্দীর হাহাকার নিয়ে তুমি বিগত
তোমার ঝুলন্ত চোয়াল শুধু ঝুলে আছে বাংলার বুকে
তোমার মুখে, তোমার চোখে বিদ্রুপের হাসি
যেনো বলছো একি প্রহসন, আহা প্রহসন ।
তুমি আজ বিগত-
তবু আড্ডাগুলো জমে ওঠে ভীষণ
মানুষের অদ্ভুত স্বভাব
অনায়াসে ভুলে যায় সব ।
সারা মুল্লুক ঘুরে যখন ফিরি
দাঁড়াই আয়নার সামনে, দেখি আমার শান্ত চোখ,
মসৃণ মুখ, অক্ষত চোয়াল।
লজ্জায়, ভীষণ লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢাকি ।
১০.০৮.২০১২
সহজ জ্যামিতি
হৃদয়ের সব সংলাপ ফিরে যায় অনাহত
আমাকে কেন্দ্র করে আঁকছো যে হৃদয়ের চাপ
তা আমার হৃদয়কে ছেদ করবেনা কোনকাল
তোমার কি জানা নেই সহজ জ্যামিতি
তোমার হৃদয়ের সমান কিংবা অন্তত
অর্ধেকের বেশি ব্যাসার্ধ না নিলে
আমাদের হৃদয় কখনো সমদ্বিখণ্ডিত হবেনা।
উত্তর-আধুনিক ঈশ্বর
আমিতাজমহল দেখিনি, তবু বিশ্বাস করুনজনাব
শাহজাহানের সাথে আমার মনের অনেকটাই মিল
আমি আমার মাতৃভূমির বাইরে একপা’ও দেইনি কখনো
আমি আইফেল- টাওয়ার দেখিনি, হোয়াইট হাউস,
চীনের দেয়াল, টাইটানিক জাহাজ, টুইন টাওয়ার
কিছুই দেখা হয়নি আমার।
অথছ, বিশ্বাস করুন আমার মনে হয়, শুধু মনে হওয়া নয়
আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করি সেপ্টেম্বরের এগারোতে
যেন আমি টাওয়ারের একশ গজের ভিতরেই ছিলাম
আমি দেখেছি শিশু নির্মিত বালুর খেলা ঘরের মতো
ধূলিসাৎ হয়ে গেছে সেই সুউচ্চ ভবন আর জীবন
বাঁচানোর জন্য লাফিয়ে পড়ছে মানুষ।
টাইটানিক জাহাজ ডুবে গেলো অথছ মনে হচ্ছে
এইতো সেদিন বন্ধুরাসহ বাদাম চিবুতে চিবুতে
হুমায়ুন আজাদের গল্প করছিলুম এর পাটাতনে বসেই।
ইরাকে যাওয়ার সুযোগ হয়নি কোনদিন, ইচ্ছেও নেই
তবু কেন জানি মাঝে মাঝে মনে হয় আমিই সাদ্দাম
বাংকারে দীর্ঘদিন লুকিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি আমার।
বলতে লজ্জা হয়, তবু আমাকে বলতেই হবে, আজ
আমি ফাঁস করে দিব আমার সব অমানবিক কর্মকাণ্ড
আমার হাতেই নির্যাতিত হয়েছে শত-শত ইরাকি যুদ্ধ- বন্দী।
আমিই তাদের নিয়ে মেতেছি উলঙ্গ উল্লাসে।
ইসরাইল- ফিলিস্তিনে যত হত্যাযজ্ঞ, এতে রয়েছে আমার
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা।
আমি একদিকে মাদার-তেরেসা, নাইটিংগেল হয়ে সেবা করে যাই,
শত শত দুঃস্থ, অসুস্থ, অনাহারীদের।
আর অন্যদিকে আমি হিটলার, বুশ, মীরজাফর…
এসব শুনে আমার এক নাস্তিক বন্ধু আস্তিক হয়েছে গতকাল
সে বলেছে, আমিই নাকি ঈশ্বর।