স্বরূপ সুপান্থ’র কবিতা

0

চন্দ্রগান

সহজ চোখে জলতরঙ্গ জ্যোৎস্না নাচে
পাতার খোপে উড়কাবোলা স্বয়ং কাঁপে,
পাখনা খুলে পঙ্খিমাতা উড়াল দিলে
পুকুর পাড়ে পদ্মপাতা কেমনে দোলে?
অসীম ছাঁচে গড়া শহর ধুঁকে মরে
দালান কোঠা কাঠ খড়িতে লালা ঝরে,
ভেতরগোঁজা সাফ সুতরো বিনির্মাণে
পানসি নৌকো ভিড়ল তীরে সঙ্গোপনে
অব্যাখ্যাত স্বপ্নসুলুক সন্ধানে তাই
জ্যোৎস্না মেখে চন্দ্রগানে যাই ভেসে যাই

জানা-সংগীত

পাতারা চাইলে, বিস্মরণের দিনে
কিছু জানা-সংগীত গাওয়া হতে পারে।
এভাবে, আমাদের দুঃখ মুছে ফেলা যাবে
শব্দ নিবিড় যোগ্যতায়…
চিন্তার জলে ঢেউ স্রোতে পাতার কাঁপুনি
অবগাহনের মন্ত্র শোনালে নিত্যানন্দপুরে
কড়ি জমানো খেলা কতকাল আর চলে?
বরং মন্ত্র হবে, নৃত্য হবে, মন-আনন্দে সওদা হবে
হরিবোল
পরমায়ুনন্দন, যে যায় ইচ্ছেমতন যায়
বিকল্প সুখসন্ধানে!
পাখির মতো উড়ে গেলে ডানাভাঙা
উড়ে গিয়ে দূরে গিয়ে পড়ে থাকি নিশ্চেতন
এবার, কোন পাতাশব্দে অথবা শব্দঘোরে
শরবিদ্ধ তূণে সঞ্চয় করে চলি-
কালের মন্ত্রণা ও ছায়া।

বাঘবন্দি

এই যে রাস্তাটি গেল, চারপাশের পাহাড়ি খাঁজ কেটে শহর হল; কিংবা রোডম্যাপলগ্নি আঞ্চলিক সীমানা তুলে দেয়া হল-বহুজাতিক চেতনার ক্লান্তিতে অপ্রতিরোধের দিন এবার ফুরাল! এখানে বিশেষ নিদ্রায় মিলা নাুি মহিলা পাকুড় সন্ধানে এলে, নিশ্চিত ঘ্রাণে জেগে ওঠে শহর। পাহাড়ের কোলে ঢালে রাস্তা যখন বুকে বুকে হেঁটে চলে রোডম্যাপের কোনো অস্তিত্ব কি ছিল তখন…
জানা গেল, বহুকাল বাঘবান্ধব অরণ্যগভীর। যে পথে হেঁটে গেছে বাঘ বা রেখে গেছে পায়ের ফসিল-মানুষের অনুচ্চার পলায়ন সে পথে। বাঘেরা চিরকাল রোডম্যাপ করে, ভুল হলে পূর্ব হতে আবার শুরু করে।
আমিও অক্লেশে অনুমানে দাঁড়িয়ে ফুটপাতে, শহরের রেলিঙে; পাহাড়ের অক্লান্ত সিটি শুনে, পিঠের পাহাড় সামনে টেনে, স্বপ্নগ্রস্ত ঢুকে পড়ি ভিতর! হরিণ-ভিড়ে দাঁড়িয়ে খুঁজে চলি, সেই চোখ, অরণ্য শহরে। উৎকর্ণ হরিণি আত্মা ছুঁয়ে বুঝে ফেলি-এ শুধু অনিরত প্লাবন, পরাধিন গাড়ল!
চোখ খুলে নিমেষে পৌঁছে শহুরে গোলাঘরে। ফ্যাকাশে মূর্তি, রাশি রাশি হাসির বিলবোর্ড, চোখ চলে সেই চোখে, বাঘবন্দি বিজ্ঞাপনে! আহা, পাহাড়ের পথ ছেড়ে-ঠিক বুঝে নিল রোডম্যাপ।

চত্বর

আকাশ এখানে মুক্ত ছিল, নির্ভরতার প্রশ্বাস ছড়াত চত্বর জুড়ে; বসন্তে পাখির গান বা ফুলেদের মন্ত্রগুপ্ত উচ্চারণ! হয়ত কোনো জোড়পাতা ছুঁয়েও যেত পরস্পর। একদিন ইমারত হল, চারপাশের সমূহ উপকরণ শনৈ শনৈ উচ্চারণে প্রকাশিল-অতঃপর শব্দ হল, লোহালক্কড়ের সন্ত্রাস হল, আর চত্বরে গড়ে উঠল গোলচত্বর।
কখনো কারো হাতে উঠে আসে শিরস্ত্রাণ; পিঠাপিঠি সময় মেপে কেউ-বা দুর্বা ভাসায় নদীতে-জলের যত ফেনা, কথার সিঞ্চন-ইতিহাস। তা হতে মানুষ থাকে কতদূর স্মৃতিতে শব্দে।
স্মৃতি যেন শব্দবহুল সাগ্রহ-সভা, বহুকাছের নিরপেক্ষ কোন সত্তা। যে কথা এখনো রয়ে যায় বাকি, বা যার কথা বলাও হয়নি দীর্ঘদিন-সেসব অপ্রকাশ্য কথা ও স্মৃতির কোনো গূঢ় সন্ধি হয়ত আছে। এভাবে বেদনা ঝরে, সাত্ত্বিক
সান্তনার, অগুরু!
কে আর কি হবে, খুঁজে যদি না পায় সুর! হাতে নিয়ে চঞ্চল অভিধান, ক’জনে নির্মাণ করে শব্দযোগ্য সময়; কে আছে এমন পথিক, পাশে পথে গড়ে তুলতে না চায় ইমারত! হয়ত এমন আকাশ খুঁজে, যার তলে দাঁড়িয়ে হেসে নিতে পারে সে ক্রুর হাসি অথবা সন্ত্রাসের চোখ গলে ঝরে পড়া কোনো দীর্ঘশ্বাস

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার