ভাষাশহীদ স্টেশন
কবিতার মুখে লাগাম পড়ালে বিষণœ হয়ে ওঠে মেঘালয় বিকেল। দীঘল পথের সঙ্গে চরম বিদ্রোহ করে কমলা ভট্টাচার্যের লালখুন। জলপানি ভুলে তারপরও কবিতার কথা বলে শিলচরের স্বতঃস্ফূর্ত প্রমিলা
সে বলে কবিতারা একদা ওপারে ছিল, তারপর ভাগাভাগি রাগারাগি শেষে ওপারেই থিতু হল তারা; সঙ্গে ছিল ভাষাপ্রাণ রাধামনের ধামাইল, স্মৃতির এক চিলতে পুকুরে তিতপুঁটির নাচ, ধানকাটা খেতের ঝরঝর ধানের হিজা, লোড়া-বালিকার মমতাসিক্ত হাত আর বরষার জলথৈথৈ ধানকিত্তার মহাকাব্যিক আয়েশি দড়াটানা
এরকম মাতাল-করা স্মৃতি কমলাদের ডাকছিল। তারা সবাই আমাদের রফিক সালামদের মতন আসামি হয়েছিল অহমিয়া (বাংলা) ভাষার। টগবগে যৌবন ফুটছিল রাজপথে বোবা অক্ষর হয়েছিল প্রেরণার ট্রিগার, খাণ্ডবদানব পালিয়েছিল মৃত কমলার লাল চোখ দেখে
এভাবে সর্বকালেই কবিতারই জয় হয়, জয় হয় বঙ্গ মানুষের বিরল অক্ষরের
ভাটিরাতের জিকির
ভাটিরাত; জিকির পড়ি তোমার,
কাঁপনতোলা বুকের দোলায়
এ বড় মর্তবার ধ্র“পদি গীত!
তোমার দাইড়ে-পৈঠায় হাইঞ্জাফতা
মদ্যপ বেসামাল!
রাধাকৃষ্ণ ভুলে মউজে জলঘাসের পিরিতে
নাটাই হাতে থাকা মুগ্ধ বালক
ঘুড়ি ওড়ায় মেঘের ভিড়ে, সুতো ছিঁড়ে…
কার কাছে করুণা মাগে, চেয়ে থাকে কার আকাশপানে?
কেউ না জানুক, তুমিই জান কেবল
আজাইরা বইয়া আমি নেজাইরা
কোনসে নিদয়ার মুখ পড়ি অতীত গড়ে
ফিচার
আমার নিঃসঙ্গ বাড়িতে কড়া নাড়ে খাঁ খাঁ দুপুর
কড়া নাড়ে নিশিন্দা রাত… বাউল সুর
একজন ছায়া সম্প্রতি আমার শহরবাসি হয়েছেন। তিনি হুডবিহিন রিক্সায় ঘুরেন। মেঘে মেঘে সময় কাটান। পলাতকজন তার পিছু নেয়… হরোপ্পা… মহেঞ্জাদারো বোঝায়… বোঝায় আমরা সবাই পৌরাণিক বাউল… আপনি যদি আধুনিকা-রাধা হতে পারেন তাহলেই খুলে দেব হৃদয়ের অর্গল… খুলে দেব হাজার বছরের পুরোনো নদীর উৎসমুখ।
সখা হবে আমার আস সখাসখি করি
পরানের গহিন থেকে ভালবাসার মোনাজাত করি
বালুর মাঠ লাগোয়া তেমাথা মোড়ের টেনিস চত্বর যখন মহড়া মুখর, আমি তখন উচ্চকিত সজল স্থির সুরমাকেই দেখি আপনার চোখে…। দেখি ঢেউ হওয়ার আগেই ঢেউয়ে লীন হয়ে যান শব্দহীন রাতের ভেতর।
হৃদয়ের দরোজা ভেঙে উড়ে যায় চঞ্চল ভোর
ছায়াসখি কাছে ডাকেন কাছে আসুন একজন সুর
আপনার যাতায়াতপথে-মায়াপথে আমি ছায়ার ছায়া হয়ে যাই। ডাকি আপনাকে নদীর ভাষায়। প্রিয় ছায়া একবার ঘাড় ফেরান, দেখুন পিছনে ফেলে আসা কুচকুচে কাল রাজপথটা আপনার রূপের মাজেজায় হয়ে গেছে এক রূপবতি নদী।
বাউল বিমুখ হলে উড়ে যায় রাত, প্রাণ হাতে ছুটে যায় রেল
মন্দ বয়ার ছুঁয়ে ছুঁয়ে, আলপথ বেয়ে বেয়ে, পেরুল বালককাল। এখন রক্তে বাজে যৌবন। ক্ষয়িষ্ণু আয়ুর পিছনে ছুটে কু ঝিক ঝিক রেল।
হাওরের বিক্ষুব্ধ আফালে কাঁপে বুক, কাঁপে দারুচিনি বন। রোদজল গায়ে মেখে ডাকে পোয়াতি সুরমা। মেঘভেলা কেবল ডাকে আর ডাকে। ডাকে দুরন্ত সময়ের উড়ন্ত পায়রা, ডাকে টুকটুকে লাল খৈচোরা বন। ডাকে ধানকিত্তা বিকেলের শাক বালিকারা।
পথিক, তুমি কি এতকাল পেরিয়ে গুণেছ ঢেউ? ডুবেছ সময়ের দিঘিতে গীতল?
বাউলকে ডেকে নিয়ো প্রিয় নদী। সকালে তার ভেতরে উঁকি দিয়ো ঢেউ অগণন। বিষণœ আলোর আদরে ছুঁয়ে যেয়ো প্রিয় অন্ধকার। ছুঁয়ে যেয়ো নদী-নারীর মমতায়।
পাখিরাও জানে, বাউল বিমুখ হলে, ঘরে-ফিরে না দুপুর। মুঠো খুলে উড়ে যায় ঘুমরাত। প্রাণ হাতে ছুটে যায় রেল…