তুহিন দাস’র কবিতা

0

বর্ণমালা সিরিজ


অন্ধকারের পর অনুসন্ধিৎসু আলো
মিথ্যার পর প্রচণ্ড সত্যের বুদবুদ
এবং
যেইসব মুহূর্ত আজও জন্মায় নি
তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা
তাই না?
অহেতুক বিবমিষা কুড়িয়ে ফিরো না
শুষে নাও আলোর গতি-সম্ভাবনা…

আমার চিন্তায় খেলারত পুনর্জন্ম


ছায়ারা যেভাবে আকৃতি পাল্টায়
হয় বহুভূজ-কৌণিক
খানিক সমান্তরাল; ছায়াসঙ্গি
পাশে পাশে চলি আশা-নিরাশায়। প্রলোভনে?
প্রলোভন দাঁতাল সাপের কামড়খেলা?
অথবা আগুনের চুল/হঠাৎ আশ্চর্য পতন-ভূমিঝাঁপ?
সময়ের প্রতিকৃতি কোনোদিন ভুলব না-
সেইসব বিষাদিত ভঙ্গি! আহা!

তুমি কি শুনতে পাও টুপটাপ মৃত্যুর গান…
ঘোর প্রেম, হতাশায় ঘেরা দিনযাপন!

ধ্বনিরা যতদূরে যায়-ততদূরে সীমারেখা?


বহুগামি প্রেমের কম্পন উদ্দীপনায় স্থির…
আজ তার মতো প্রায়ারম্ভ প্রতিটি সকাল!
লক্ষণিয় সকালের বর্ণচ্ছটায় ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গ
একই অবভাস আমাদের অভ্যন্তরে
কদাচিৎ ক্লেদ, নিছক বিস্মৃতি-

পাথরে পাথর ঠুকে আগুন…
শরীরে শরীর ঠুকে ক্ষয়, পচন…

তাকালেই দেখতে পাই শব্দের ঢেউয়ে
দেহময়তায় জড়িয়ে আছে আত্মশ্লাঘা!


প্রত্যাশা মনে নেই, কেন?
সত্যিই মুখরতা ভুলে গেছি? না
আড়ালে আবডালে দ্রুত পোশাক পাল্টে
মিশি নি জনস্রোতে? কেউ চেনে নি!

আমরা খুউব মাটির মানুষ-
সুযোগ পেলেই লোভি চিতাবাঘ!

সকল বিভেদ উড়িয়ে দিয়েছি হাওয়ায়
জোর ফুৎকারে-বাতাসে বাতাসে
সেই কল্পিত রাত্রিবিহঙ্গ উড়ে বেড়ায়

যৌবন চরণদাসি; এমন রাতপাখি নয়…


প্রেমহীন ঘর নিঃসঙ্গ কবর…
সূর্য আমাদের অবিস্মরণীয় পিতা;
তাই নির্নিমেষ আলোর গান গাই
ভিন্ন বার্তা পৌঁছে যায় কানে কানে
ইথারে-আত্মশূন্যতায়-
অবিকৃত শুনতে পাও; অভিন্ন?

গোনা মৌখিক ভাঁজ; সবই ইতিহাস…
অবশিষ্ট কত বিন্দু প্রচল কষ্টমুদ্রা?

ক্লান্তি বুঝি না; বুঝি দারুণ প্রগতি


শুনি নাই তোমার হুংকার, ইস্রাফিল…

আমাদের স্মৃতিপটে মুদ্রিত প্রণয়লেখায়
যৌনতার বৈরি সংবাদ-ভস্ম হোক
হৃদয়ের মধ্যে বাঁশবন, বিলাপ গঞ্জন…
রোদসি, খণ্ডিত চেতনাগুলো জীবন্মৃত-
তবু ঠুকরে খাও দেহপত্রের নগ্ন ক্রোধ
বোধের মশাল জ্বালিয়ে, আমি পরাজিত
জীবনের শাখামূলে এই-ই দাঁড়ালাম


আগুনে পোড়া লোহা পেটালে, ছোটে
ফুলকির নাচন-প্রেমস শান্ত রক্তের ক্রন্দনে
মিশ্রিত বুদবুদ। আর ঘুম হবে না
ভেবে কত মাঝরাতেই হিম, ছুটেছি
মাঠে আলোময় পোকাদের তাড়াতে

তবু অনুভূত হল না কৃতি, মোহিনি?

আজ তুমি চিরঞ্জিব, দূরস্মৃতিপিয়াসি
আমার বেদনা একান্তই আমার


মৃত্যুচিন্তায় অজানিত সম্ভাবনা; উজ্জীবন…
যৌনতায় ওষ্ঠের দলনে গলন্ত মোম ফেলে
সংকোচ ভেঙে বল-মরণ ভালবাসি
ভাল লাগে বিষাদ, ওষুধ, জরা, হাসপাতাল
গাঢ় নষ্ট পুঁজ, গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা, ঘূণ-ক্ষত
বেহিসাবি অসুখ, ছিন্ন নাভি, প্রলম্বিত রক্তপাত

একজন সেবিকা আমার মা…
অন্যজন অস্থির সময়ের প্রেমিকা…


সবচে’ স্মরণিয় প্রতুৎপন্নমতি দিন
যেদিন নদীকে নতুন চোখে দেখার জন্য
করিৎকর্মা নয়-অবিমৃষ্যকারিতায়
হৃদয়শিরার দাগগুলো মুখস্ত পড়ে যেতে

আমি বশিভূত; তোমার স্পর্শরেখায়…


মহাপ্রপঞ্চের রাতে জ্যোৎস্নাস্নাত ছাদে
পাশাপাশি বসে দুই মানব-মানবি
চাঁদোয়া ঘিরে স্বপ্নজাল বুনে চলে
ক্রমাগত দেহের ঝুমঝুমি বাজিয়ে
শোনায় তাদের উদ্দীপক পতনগান

সময় তাদের পায়ে পাথর হয়ে গড়ায়
রাত্রি কেবলই ঘুরেফিরে অনুকার অন্ধকার
মৃতপ্রায় স্মৃতিদের লালায় ভিজেও
অনুভূত হয়নি তারা কেনই-বা ক্রন্দনরত

জ্বলতে থাকুক একটি কুপির কাঁপা কাঁপা শিখা


দিনপঞ্জির পাতায় হারানো বিশেষ দিনটিকে
খুঁজতে আমার কিশোর ও বালকবয়সি
মুখসমগ্র হেসে মিলিয়ে যেতে দেখলাম
চুপিচুপি পাঠ করি সেই নৈশ বিদ্যালয়

বয়স একটি গ্রন্থ; চুরি হল, ফিরে পাইনি
যার চিলেকোঠায় হাতল ভাঙা চেয়ার
ছেঁড়া তক্তপোষ, মাকড়সা ঝুলন, নষ্ট আতশবাজি
জালালিয় ঝুপঝাপ-
অসতর্ক ছিদ্র হতে কদাচিৎ
নেমে এলো শেষবেলার বিব্রত আলো

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার