সায়েমা খাতুন’র কবিতা

0

সিল্ক রুট

নগ্ন পদ-ছিল না জুতা চরণ যুগলে
এমনই এবড়ো থেবড়ো চড়াই উৎড়াই পথে
অবিরাম কেটেছে আঙুল
অজস্র ফুলের সমারোহে ধাঁধিয়েছে চোখ পাহাড়ে
অপরূপ অর্কিডকে ডান পাশে বৃক্ষশাখে রেখে
চলে গেছি সমতলি জনসাধারণে
স্মৃতির জলে ফুলদানিতে ভিজে থাকে কোণার টেবিলে।
শ্বাপদ ও আনন্দসংকুল ছিল পথ
প্রাচিন, মধ্য ও আধুনিক যুগে
সুদীর্ঘ সিল্ক রুটে আমার মোটেই মোটর ছিল না
যতকাল পদব্রজে চলেছিলাম আমি
কিংবা ঐতিহ্যের শকটে
সকল ক্লেশকে পেয়েছিলাম
তন্ন তন্ন করে বিস্তারিতভাবে
এমনিভাবে পেয়েছিলাম আমি
সবকিছু যা ছিল পাওনা মানুষের
দিগন্তের পথরেখা অসীম সংখ্যায়
আমি তার সবখানি পাই, সবখানে
উর্বরা ব-দ্বীপের জলজ শরীরে
চড়ুইয়েরও তেমন কি-না কে জানে
এইভাবে দেখতে পেয়েছিলাম আমি
আমি তাকে পরিপূর্ণ গ্রহণ করেছি
শ্বাপদ ও আনন্দসংকুল প্রান্তর
চরাচর আমার এমনি ছিল আদিঅন্তকাল
এমনি নির্জন ছিল আদিগন্ত
এমনি ঘন রাত্রি এসেছে একাকি অন্ধকারে
ঢেকেছে আমারে একেবারে
নির্জন অন্তরে
নিরূপায় নগ্নতাকে ঢেকেছে যতনে বৃহৎ রাত্রি
আকাশের কালপুরুষ ফিরিয়ে দিয়েছে একে একে
সবকটি প্রাণপাখি
হিরামন, শুক, সারি, ব্যঙ্গমা, হুমা
তারা না-কি জানে কিছু
ভাঙা ভাঙা জীবনের মানে।

জিঙ্গেল বেল

জিঙ্গেল বেল যদি না থাকত আজ
জীবনের ভাঁজে ভাঁজে সুখ বেজে উঠত না
উঠলেও জানতে পারতাম না
বৃষ্টির আগে একটা দমকা হাওয়ায় জিঙ্গেল বেল টুং টুং টাং বেজে ওঠে
সুখের আসা যাওয়ার জানান দিয়ে যায়
জিঙ্গেল বেল বেজে ওঠে সেটা জানাবার জন্যই
সে এলেই কি আমাদের আর গেলেই কি?
শুধু জেনে রাখা
ভগবান জানাবেন-‘দিয়েছিলাম’
আমরাও জানলাম হাতের মুঠোয় কেউ দিয়েছিল জল
দিয়েছিল রোদ্দুর কিংবা জোনাকের আলো
সে এলেই কি আর গেলেই কি
সেই সম্বন্ধ কবেই গেছে ঘুচে
সেই বিপন্ন প্রেমকাতরতায় সমাধিস্থ হওয়া
আত্মরক্ষায় অপারগতাও ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া
জিঙ্গেল বেল বাজবে প্রতি বসন্তে ও বর্ষায়, শরতে ও হলদে হেমন্তে
দেয়ালের ঘোর লাগানো গমক্ষেতে, সূর্যমুখি ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
সুমন্দ দখিনা বাতাসে।

আমাকে রেখেছি তোমার কাছে

সারাদিন তোমার মুখপানে চেয়ে থাকি
আমার সকল কাজে তুমি
তোমার মুখে কত ছবি কত কথা ফুটে ওঠে
আমি সারাদিন সেই ছবি দেখি
তোমার ভাষা বোঝার আশায় কেটে যায় বেলা
তোমার ভেতরে আমি সমগ্র জগতটাকে দেখি
ভ্রমি দেশে দেশে, ছায়াপথে
ভেনিজুয়েলা থেকে ভ্যাংকুভার
যতক্ষণ থাকি তোমার সাথে
এত সুর আর এত গানে ভরে থাকে ঘর
আর আমার কথা যখন আমি নিজেই গেছি ভুলে
তোমার স্মৃতিতে সব সযতনে রাখা
কম্পিউটার স্ক্রিন
তুমি তোমার ভেতরে আমাকে রেখে দিয়েছ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার