শামসুদ্দোহা শোয়েব’র কবিতা

0

শীতলার দেশে ডানাকাটা পরি হাসে

এই লাশ কার গো! কার এমন সোনার টুকরা কাফনে মোড়া। ওলাওঠা বুঝি বিরাণ করবে এ গাঁয়ের সব মায়ের কোল?

শীতলার পূজা দেয় ছনতই বুই। গোরস্তানের কদমের ডালে সে দেখে ভূতের মুখ। মানত মানে।

ভেলা ভাসে সন্ধ্যায় সুরমার জলে। ঝাঁকে ঝাঁকে মোমবাতি জ্বলে নেভে। অশরীরী কেউ যেন ওতে চড়ে চলে যায় দূর-নিরুদ্দেশে। হাসে ছনতই— বলে, দিয়েছি ওলাওঠা গ্রাম তাড়িয়ে।

আমি শুই জানলা খুলে। পুবের আকাশ-নক্ষত্রের হাওয়ায় ওড়ে জোছনার পরি। ইচ্ছে করে ছুঁই তাদের। বাঁশঝাড় মাথায় বসে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি-কি মসৃণ পাখনায় তারা সাঁতরে যায় শূন্য থেকে মহাশূন্যে।

শীতলার দেশ— কবরও ওম ছাড়ে মৃতের। শিউরে ওঠে গা। শংকিত মায়ের কণ্ঠ-জানলা খুলে শুয়েছিস। দিনকাল ভাল না। বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়।

আমার যে ঘুম আসে না। বাইরে পরি রেখে, পরিদের বানডাকা রূপ রেখে, কে যায় ঘুমোতে, বল!

ফিরে আসি তোমার কাছেই

আমি অলক্ষেই থেকে যাই ওর; দীপান্বিতা তাকে দেখি
আপন গরিমায় কেমন আপনিই আচ্ছন্ন; তার চারপাশে
নাচছে রহস্য-প্রজাপতি।

আমার হাতের দীপটিতো নিভু নিভু; হঠাৎ হাওয়ার ঝাপটায়
এই জ্বলে এই নেভে; কোনওক্রমে আড়াল তৈরি করে নক্ষত্রকলিদের,
ওর ভেতরে লুকিয়ে রাখি আমার প্রাণশিখাটি।

ওর এলায়িত চুলে দেখি আষাঢ়-মেঘেদের আনাগোনা;
এই বুঝি ঝপাৎ ভেঙে পড়বে শ্রাবণের কান্তার হয়ে।

কখনও কখনও ভাবি ওর দৃষ্টিতে আপতিত হতে হবে যে এমন
কি দায় আছে আমার? আর তার কোনও সদুত্তর মেলার আগেই
দেখি বুকের ভেতরে জমে আছে হিম, এই হিম উড়ে আসে
ওর দৃষ্টি ছুঁয়ে।

অতলান্ত যখন গভীর ঘুমায় বুকে নিয়ে পৃথিবীর বিশাল বারিধি
তখনো একা জেগে থাকতে হবে আমাকেই— একা জেগে থাকি আমি
নক্ষত্রগামি সব মাস্তুলের ঢেউ গুণতে।

মাঝেমধ্যে থমকে যাই বিকিনিপরা মেয়েদের টানে; ওদের
একজন আমাকে দেখিয়েছিল একবার কোনও এক
দূরদ্বীপদেশনারকেলবীথি— চোখে তার নেশা, সমুদ্রসোহাগি

তবু ভূমধ্যসাগর হাওয়ায় আন্দোলিত সুশোভিত সব দ্রাক্ষাবাগান
পেরিয়ে আমার চোখ তার মুখের পানেই; আমি অলক্ষেই
পড়ে আছি ওর— আপনি বিভোর যে আপন অভিলাষে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার