নৈঃসঙ্গের উত্তরায়ণ
জন্ম বেদনা নিয়েও কেটেছি সাঁতার, আজ কেন জল ঝরে যায়?
ও জননি, কেন তুমি লুটিয়ে দিয়েছ সব ধুলোর নগর
পেয়েছি পিতার ঘ্রাণ, সেই সুখে ছেড়ে যাব শরীরের ছায়া
শিকার তৃষ্ণা ছাড়া একবেলা শান্ত কভু থাকেনি জনক
আমি কেন ফিরে যাব মৃত নদী হয়ে?
আমার বোনেরা খেলে নিদ্রার খেলা, তাদেরও দু’হাত ভরা খনন-পিপাসা
শ্মশানের স্মৃতিচিহ্ন এঁকে রাখি নিকানো উঠোনে
দেহের আঁধার জুড়ে জ্বলছে জোনাক
এই তবে পরিবার, বংশগতি
উত্তীর্ণ প্রত্নতৃষ্ণায়
নৈঃসঙ্গের উত্তরায়ণ…
ইনার স্টোরি
এমনই কঠিন রাতে কঠিন হৃদয় তুমি থাক এত দূরে?
তোমার বুকের ভাঁজে শুকায় গ্রীষ্মদিনে পাতার শিশির
কি করে বাউল গানে তৃপ্ত তুমি করে রাখ দেহের শরীর
মাটির সিথানে পেতে বরফিত শ্বাস তুমি কেন ফেল ছুঁড়ে?
মসলিন বুনতে শুধু লাগে বুঝি শিল্পিরই চোখের দরদ?
চোখের আড়াল হয়ে যে মন প্রেরণা দেয়, কই তার স্মৃতি
হারানো জন্ম দাগে উৎসাহে মেখে দেবে পরাণের প্রীতি
কোথায় সে পথভোলা, নতজানু মুগ্ধ মরদ?
আহারে বরিষা মাস, আলহীন জমি ভেজে জলের ছোঁয়ায়
বন্ধ দুয়ারে খিল, কই তার চাবি বল ঝিনুক কুমারি
নিঃশর্ত অধিকারে আঁধার তোরঙ্গ হতে দুঃখ আন পাড়ি
বিরান বসন্ত দিনে লোহিত সুগন্ধি মাখা রজনি পোহায়।
প্রথম সুন্দর
নিজস্ব গণ্ডি ছেড়ে যাচ্ছি না কেউই
কপালের কাছ বেয়ে নেমে আসে অবাধ্য আঙ্গুল
নাভির একটু বামে উদাস জন্মদাগে বিভোর দু’ঠোঁট
রুপালি আঁধারে বুকের বরফে সাহসি উষ্ণ বাহু
সেই কি প্রথম খোলা ভুলের কপাট?
যেই পরিচয়ে ছিল না আবেগ, উষ্ণতা বোধ কোনো
তারই হাত ধরে করাল দুপুরে কেঁদেছিল সাদা হাঁস
পাখির ডানায় রোদের সাঁতার জেগেছিল অধিকার
ঝিনুক কুমারি বেয়েছিল একা বেদনার সাম্পান
দেখেনি যে স্রোত, তারই তৃষ্ণায় জেগেছিল প্রার্থনা
সেই কি প্রথম প্রেম, তনুর হুতাশ?
প্রথম প্রশ্ন করা : ‘মেয়ে তুমি কার?’
হইনি গণ্ডিচ্যুত, তবু ঠিক ছুঁয়ে ছুঁয়ে দু’চোখের পাতা
এখনই বলতে পারি
চলে গেলে কষ্ট হবে খুব…
প্রস্থানের ধারাভাষ্য
বন্ধ দরোজা তবু ঘরে প্রেম ঢোকে, কি করে বন্ধ থাকে বুকের বোতাম? উষ্ণ দু’ঠোঁট ছুঁয়ে খুলে যায় সুন্দরের ভেতর মহল। আঁধার সুড়ঙ্গ পথে নেমে আসে চাপ চাপ কষ্টের বোধ। শরীর ডেকেছে বলে জেগে ওঠে চোখ বোঁজা আরেক শরীর। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ তারই ডাকে ভুল হয় চাঁদের হিসেব। বৃষ্টি ঝরবে ভেবে, মুখ তুলে চেয়ে থাকে শুষ্ক ব-দ্বীপ।
প্রিয়, ভালবাসা মানে বুঝি এই মতো গভীর ক্ষরণ?