রিজোয়ান মাহমুদ’র কবিতা

0

চাদর ও সাবানের স্বরূপ

সে সব মুঘল রাজারা নেই আজ, শাসন ও তোষণের জন্য
একে অপরের কাছে উপঢৌকন পাঠাত, তাতে ছিল হরক রকমের
অতিমূল্যবান মহার্ঘ সামগ্রি।
একটি হিরক খচিত স্বর্ণের রেণু থেকে উপচে পড়ত মুঘল প্রেমিকের
চতুর দস্তনা আজ প্রায় তিনশ বছর পর, একটি পিংক রঙের চাদর,
সাবান আর কলম— এসব উপহার সামগ্রি হিসাবের খাতায় তোলা আছে।
অতঃপর চাদরের ইতিবৃত্ত ও সাবানের স্বরূপ
জানার আগ্রহে কাঠমুণ্ডুতে এক নেপালি মেয়ের
শরণাপন্ন হই। সে আমাকে ইতিহাস না বলে, শুধু জানিয়েছে
এসবের গূঢ়ার্থ না খোঁজে বরং যাকে দেবে তাকে খোঁজ দু’বুকের
মহেঞ্জোদারোর ভেতরে, কেননা যে জনশূন্য মহাদেশ এখনো তার, তাতে
একজন শাসনকর্তা দরকার। একটি সভ্যতা ও খরস্রোতা নদীর ঢেউ,
সে তোমাকে ভাসিয়ে নেবে। হয়ত বলবে, আমার কারণে এমন দশা
প্রকৃতপক্ষে চাদর ও সাবানের ইতিহাসে এত সুখকর ছিল না কোনোকালে
আর যে কলম, লেখা আছে সাদা কালিতে, সে মহাদেশে নামার অধিকার।

ঘামের ইতিহাস

ত্রিকোণমিতি কখনো পড়িনি। অংক ও জ্যামিতিতে কাঁচা ছিলাম বলে
মাস্টার মশাই শেষ পর্যন্ত আগ্রহ দেখাননি। আমার ধারণা ছিল,
প্রাচিন গুরুদেবের মতো বুদ্ধি নয়, ধ্যানমগ্ন থাকলে সব কিছু শিখে
নেওয়া যায়। অতএব দর্শন পড়ার আগে দার্শনিক হয়েছি লালসবুজ
পাতায়। যারা আমাকে ভাবায় ত্রিকোণমিতির জঙ্গলে ভূত আসে
গভীর রাত্রিরে। তারা জানে আমি এসব না পড়েও বুঝে গেছি ঘামের ইতিহাস।
চর্যাপদের হরিণ শাবক, প্রকৃতির গভীর দ্যোতনা থেকে আমাকে পাঠ দিয়েছে।
আসলে আমিই প্রকৃত লোক, দাতরঙা ফুল
তিনটি কোণের মাঝখানে ডুব দিয়ে পেয়েছি নিকুঞ্জকূল।

ধনেশ পাখি

বরেন্দ্রভূমি নামার জন্যে আমার একটি টিকেট দরকার
ওখানে ঘাসের বুকে নেমে আসে সুগভীর ছাড়া
রাত জাগানিয়া স্বপ্নে জাগে ধনেশ পাখি
স্বপ্নে সারাক্ষণ কথা বলে উৎস মুখ।

একথা জেনেছি বয়ঃসন্ধিক্ষণে, প্রপিতামহের মুখে।
আমার সম্পর্কের সুতোগুলো নুয়ে পড়ে— শুনি বাকি ইতিহাস
আমার সারা গায়ে শ্রাবণ মেখে নেমে যাই নিচে, কোনো উপকরণ ছাড়া
খুঁজতে থাকি ছপছপে মাটি। নুনজলে অনাদৃত ভূমির কুশিলব
একসময় সোঁদা গন্ধে ভরে মন, ক্লান্ত হয়ে মাটিকে কামড়ে ধরি
আমি আর উপরে উঠতে চাই না। প্রপিতামহিকে মনে মনে বলি
ভাল লেগেছে এই দেশ, মাটি, রক্তপাতহীন এখানে হানাহানি নেই।
আমি এই ভূমির দায়িত্ব ধনেশ পাখির কাছে ছেড়ে দিতে চাই ।

নিরবপুর আমার মায়ের গ্রাম

আমি বুঝি
তোমার বাড়ি বাউলপুরে, অচিন পুকুরপাড় ধরে
দেউড়ি ঘরের মাঝখানে যে সরুপথ বাঁশঝাড়ের মচমচে হাওয়ায়
বহু দূরে চলে গেছে… সে পথে তোমার বাড়ি।

মা, বলেছিল এরকম ছবির মতন তোর নানুবাড়ি।
নদীর যে ঘূর্ণি, একতারার তার, তার সুরে সুরে আকাশে মেঘ হয়
অতঃপর বৃষ্টি নামে, সন্ধ্যায় সুবর্ণগ্রামে বাতি জ্বলে।
কিছুদূর এগোলে মাঠের সবুজ ছুঁয়ে কাদা কাদা রাত্রিরে ভাষারা কথা বলে।
আমার মা কথা বলে। আমি জানি এই নিরবপুর মায়ের গ্রাম!
কেউ জানে না।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার