ঘুরে ঘুরে নাচি
আমার মাঝে মাঝে রাস্তায় খুব ঘূর্ণি নাচতে ইচ্ছে করে
পৃথিবীর সব মঞ্চই খুব ছোট মনে হয়
আদিম শিকারিরা যেমন দড়ির চক্কর ছুঁড়ে দিয়ে
বুনো ঘোড়াকে উল্টে ফেলে দেয় পা বেঁধে
তেমনি হাঁসফাঁস অবস্থা হয় আমার ছোট্ট মঞ্চে ঘুরতে গিয়ে
আমি তাই নাচতে চাই চৌরাস্তার মোড়ে
চারটি পথ ঘুরে ঘুরে চলে গেছে যেখানে চারদিকে
আমার নূপুরের নিক্কনে থেমে যাবে দশদিক
আকাশে উঠবে ঘূর্ণি
ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল থেমে যাবে
যেন সে স্থির হয়ে থেমে গেছে চিরকালের মতো
আমার নাচের শব্দে নেচে উঠবে দশদিক
ঘুরে উঠবে শালিক পাখি—
এক চক্কর দেবে ফিঙে
আমার নাচের শব্দে থেমে যাবে সারি সারি মানুষ
ঘুমের ঘোরে পাওয়া মন্ত্রের মতো—
মাঝরাতে জেগে ওঠা, তন্দ্রার মতো
হৃদয়ে মুক্তির মতো, অলৌকিক দেয়ালির মতো
ঘুরতে থাকবে স্বপ্নে পাওয়া আমার নাচ
আমার মাঝে মাঝে জিপসি মেয়ের মতো গোলাপি ঘাগড়া ঘুরিয়ে
হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছে করে শহরের পথে পথে
হাতের ঘুঙুর বাজিয়ে
মাঝে মাঝে মনে হয় লক্ষ্মৌর মেয়ের মতো—
সেতার সামনে রেখে মেহেদি ভরা আঙুলে
তুলে নেই রুপোলি তবক দেওয়া পান
কোনো এক মন্দির প্রাঙ্গণে— সারি সারি ধূপের সম্মুখে
আতপ চালের ভেজা গন্ধ—
বাজিয়ে শঙ্খ দেবদাসি মেয়ের মতো ঘুরে ঘুরে নাচি
পাথর কুঁদে তৈরি করা সুঠাম মুখের স্বামি—
অনন্তকাল অপেক্ষা করে স্মিত হাসি নিয়ে নিমীলিত চোখে
এক মেয়েকে মনে পড়ে মাথায় সোনালি চুল
হাতের ফুলের ঝুড়ি তার রাস্তায় পড়ে থাকে—
কি হবে ফুলের ঝুড়ি দিয়ে
সে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরাট প্রাসাদে
কাঁচ লাগানো দরজার সম্মুখে
কখনো উঁকি দিয়ে দেখছে—
সারি সারি মোমবাতি আর ফুলের ঝুড়ি সাজানো যে ঘরে,
মাথায় সোনালি চুল তার চূড় করে বাঁধা
গোলাপি গ্রিবায় সকালের রোদ ঠিকরে পড়ে।
স্বপ্নের ঘুঘু পাখিরা উঁচু কার্নিশ থেকে ডেকে ওঠে ঘু… ঘু…
অনেক উপর থেকে তারা নিচের দিকে চায়—
মেয়েটি মাথা নিচু করে বসে থাকে
অনেক পালিশ করা মেঝে আর
আড়াল করা স্বপ্নের করিডোর আছে যে ঘরে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
পারস্যের গালিচায় পা রেখে
অম্বুরি তামাকের শুভ্র ধোঁয়া ঘুরে ঘুরে ওঠে—
যেখানে রাতের বাতাসে
জাফরানি পোশাক পড়ে
গোলাপ জল ছিটানো এক সুবাসিত রাতে
আমি ঘুরে ঘুরে নাচি।
বরফ ঝরা কোনো ঘূর্ণির রাতে
শিস দিয়ে তেড়ে আসে বাতাসের সাথে
কুঁড়েঘরে আগুন পোহাতে থাকা খনি শ্রমিকের
চোখের সামনে হঠাৎ ভ্রমের মতো আমি ঘুরে ঘুরে নাচি
আমার নাচের গতিতে মাথা নিচু করে সারি সারি পাইন
তুষারে শুধুই পায়ের অজস্র রেখা ফুটে থাকে
বসন্তে কলকল করে বয়ে যাওয়া নীল নদীর সাথে
সূর্যের আলোয় পান্নার মতো জ্বলে ওঠা পাতার সম্মুখে
যে পাতারা পড়ে থাকে ঘাসে
গায়ে এসে পড়ে সকালের সোনা রোদ
বড় বড় গাছের ছায়া মাঝে মাঝে
শুকনো পাতার খয়েরি স্তূপের সামনে
বাতাসের ঘূর্ণির মতো আমি ঘুরে ঘুরে নাচি
হায়েনার হাসিতে খান খান হয়ে ফেটে পড়া
অন্ধকার ঘন বনে শিকারির তাঁবুর সামনে
মশালের আলোয়
বেদুইন মেয়ের মতো মরুর বাতাসে দুলে দুলে
নক্ষত্রের আলোয় জমে থাকা শিশিরে
পাখির চোখের পাপড়ির উপরে
রোদের কণার মতো আমি ঘুরে ঘুরে নাচি
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে
তাদের সামনে আমি ঘুরে ঘুরে নাচি
চারটি রাস্তা ঘুরে ঘুরে চলে গেছে আমার চারদিকে
আমার ভাবতেই ভারি ভাল লাগে
চারটি রাস্তার সম্মুখে গোলাকার বৃত্তে
আমি ঘুরে ঘুরে নাচি কত্থক, ওডিসি
আমার ভাবতেই ভারি ভাল লাগে।
নৌকা ভ্রমণ
নদীর ভেতর দেখি ভাসমান লাশ
ভাসে ডোবে— ঘূর্ণাবর্ত।
এমন সে অসহায়—
অথই জলের ক্রিড়নক।
জলের শ্যাওলা, খড়কুটো ভাসে চারপাশে।
নিস্তব্ধ শরীর ভেসে আসে—
ছুঁয়ে থাকে বিস্তৃত অপার জলরাশি
ওপরে আকাশ।
শুধু নৌকা পাটাতন— এক ফালি কাঠ
এটুকু সীমানা ছাড়া আমরা সমান
নিচে জলরাশি
আর
উপরে আকাশ।