কোরবানি
…
শুভ হোলি/ লোহিত খুনের উৎসব/…
পিপাসার্ত্ত তরবারি/ করছে মিছিল/ জবাই জবাই/…
চু্প্/
বলিস না/ নিতে পারব না/
রক্তাক্ত ফুলের ঘ্রাণ/…
তরুণ খুনের জনপদে/ ফলছে ফসল/
সোনাঝরা/…
সমাগত কোরবানি/ কাজীর দেউড়ি থেকে পালিয়েছে/
কাহিনির গরু/ নন্দনের ষাঁড়/…
চুপ্/ চুপচাপ/ শুয়ে পড়্/ শুভ হোক কোরবানি/…
শুভ হোলি/ লোহিত খুনের উৎসব/ রক্তে নিহিত রয়েছে/ সম্ভাবনা/…
বাঁশকাব্য
বাঁশ! কে কখন কাকে দেবে… এমন ভাবনা মুখরিত যাপনবেলায়,
কীর্ত্তিমান,
দেখালেন, নানান জাতের বাঁশ,
বাঁশের বিবিধ ব্যবহার…
আমার
লেগেছে ভালো, গেঁথেছে পরানে, বাঁশের বাঁশরি!
বাঁশ না বাঁশির সহচর
সুন্দরের(!)
পথে পথে বাজাই বাঁশরি, ফেরি করি সুর।
কীর্ত্তিত শিল্পের ভোরে
বাজি, পৃথিবীতে— হ্যামিলনে, বাঁশ না বাঁশির প্রয়োজনে!….
সখা!
কে তোমাকে দিলো বাঁশ? বানাও তাহাকে বাঁশি,
যাও
যমুনার কূলে, ডাকছে রাধিকা,
আর সখীদল।…
বাঁশ,
কে কখন কাকে দেবে… এমন ভাবনা মুখরিত যাপনবেলায়,
কহে তিতুমীর,
কার,
হাতের মুঠিতে খেলা করে লাঠিবাঁশি? যমুনার বুকে জাগা গ্রামবিশ্বচরে…
কলার বাজার
কলা।
বারো মাস ফলে, কলা বেচে ভাত খাই। কোন কলা চাই, কাঁচকলা?
…
আপনি কৃষ্ণ না! কেন বলছেন?— না, আমি কলা খাই না!
বেশি না, একটি খান।
জানেন তো, কলা ছাড়া পৃথিবী অচল!
আমি না, বলেছে মহাশয়!
জনাব, কেন যে ভান করছেন?
জানি, আপনাদের বাগানে নানারকমের কলাগাছ আছে।
জনাব
কলার কারবারি। আছেন বলেই বেঁচে আছি!
খান,
টাকা লাগবে না, মন থেকেই দিলাম, মনের মাধুরী মেখে খান। তবে ধীরে,
না হলে গলায় আটকাবে।
জনাব, আটকালে মরণ। সাধের জীবন কুপোকাত। তা, কলাও যাবে, জীবনও…
ক্রীড়া : বাঘ না শাপলা
এ-হাতে ও-হাতে ঘুরে কড়ি, যখন যাহার হাতে থাকে তখন তাহার!
জুয়ার টেবিল।
আঙুলের নিবিড় টোকায় ঘোরে শিল্পমুদ্রা!
বাতাসে ভাসে কামনা— কী নেবে হে, বাঘ না শাপলা?
ঘেমে ওঠা নাভিশ্বাস ভেঙে
বলল লোকটা, শাপলার সখা আমি অরণ্যবিভূতি!…
বিদ্যুৎঘূর্ণন শেষে চোখের তারায় ধাঁধাঁ,
শেষ হাসির সমরে ক্রীড়াফল
: বাঘ।
ভয়ার্ত্ত সন্ধ্যায় কেড়ে নেয় মূলধন রমণকামড়ে।
খেলা শেষে ডুবে গেল বেলা,
গুটিয়ে রঙের মেলা,
পুঁজির শিকলে বাঁধা বাম(ন) পরান,
নীরব চরণে ফিরে দেখে, কাঙ্ক্ষার দিঘিচোখে ফুটে আছে একটি শাপলা!
পেরেস্ত্রোইকা / গোধূলিসন্ধির নৃত্য
মঙ্গল আলোকে দেখা
লোহিত মাটির মেয়ে, দেখে,
দুহাতে শিকল পরা কিশোরের কুঁড়িগাঁয়ে
বুড়ো আঙুলের পেটে ঘোরে
লাটিমপৃথিবী!
চোখ, চলো দেখে আসি সরিষাফুলের ক্যানভাস!
যাপিত জীবন বোঝাপড়ায় কাটাব সঙিনসময়।
দিন যায়
তিমির রজনী পাঠে
দিগন্ত উজ্জ্বল গোধূলি মাড়ায় সূর্য্যশিশু,
লাল
আকুলিবিকুলি প্রাণে
হাতছানি দেয় আঁধারধারিণী মাতা।
এই
ক্রান্তিকালে
হরহামেশা পরানে লাগে
মৈত্রয়ীর নীড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে বিশ্ববাউলের একতারা!
চোখ,
যাবে নাকি?
কালের যাত্রার পথে প্ররোচনা দেয়
যাপিত জীবন!…
বাদলের উকুনকাহিনি
স্বর্ণালি পৃথিবী ভুলে যাবে, ভেবে, একদা, মেয়েটি
ললিত আঙুলে দিঘল পরিধিময় চুল থেকে
একটি উকুন
ছেলেটির চুলে ছেড়ে
বলেছিল, জেনো— আলতো কামড়ে আমাকে পড়বে মনে, শ্রাবণনিশিতে জানালায়!…
ছেলেটিও কম কিসে?
যেন দেবদাস—
ভুলে গেছে চিরুনি চালনা, বাবরি দোলানো চুলের বাহার ও সেলুনে যাতায়াত।
ভয়,
পাছে ঝরে পড়ে প্রেমিকার সাধের উকুন।
ভাবে :
পোকামাকড়ের অধিবাসে কীবা আসে একটি উকুনে!
এখন মাথায় উকুনের রাজ্যপাট,
কা-ম-ড়ে কা-ম-ড়ে
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, শয়নে স্বপনে অভিসারে ডাকে, একগাছি দড়ি হাতে কলাতলে…
জলপাই পাতার কুটির
জনপদ
ছেঁড়া শাড়ির আঁচল হাওয়ায়
আধাআধি
বুজে আছে চোখ, যেন কাকঘুম।
সুবহেসাদেকে
নুরানি বাতাসে ভাসে হাঁক: আসসালাতু খায়রুম মিনান নাওম!
দিন ও রাতের মধ্যচাপে
পুব আকাশে কঁকায়, একটি সকাল।
অতঃপর যাত্রা,
মুখে পুরে
পোড়া মরিচের ঘ্রানভরা
একসানকি পান্তার নুনহীন অমল গরাস, একঢোক পানি।
আচনক
দরোজায় কড়া নাড়া,
নূর হোসেন, দাঁড়ারে! বর্গী এলো জনপদে।
নাওয়াখাওয়া ভুলে সহসা দাঁড়াতে গিয়ে
মঞ্জুশ্রীর
চরনতলায় গোঙানো গনেশ, গণপতি! চোখ রাখে জানালায়, দেখে দৃশ্য!
ঘাসের সবুজ গালিচায় বাসর সাজানো কুয়াশায়,
উঁকি দিয়ে ঊষা
সন্তর্পনে ঢোকে অন্য এক কুয়াশাভিরামপুরে।…
বারটার দেয়ালিকা / সময়সংকলন
…! এইসব
আলোআঁধারির নগরায়নে
দেয়ালঘড়িতে
বারটার দিকদরশন।
সময়আবহ—
পটভূমি থেকে ঝরে পড়ে আবাল্যশৈশব,
ছেঁড়া ঘুড়ির পেছনে দৌড়,
দক্ষিণভূর্ষির পথে পথে প্রজাপতি বালিকার রঙিন ডানায় চেপে ফেরা রং
— সময়সংকলন।
নঞর্থক ঘুমে লীন হ’তে হ’তে
চোখে
ভেসে ওঠে চালচিত্র—
উত্তরদুয়ারি বাড়ির কার্নিশে জোড়াশালিখের সংসার,
খড়কুটোর পাঁচালি, গলায় গলায় প্রেম।
সামন্ত আঁধারে
জীবনের ঘানি টেনে টেনে
কালচক্রে
বসুদার আত্মহননের পর কল্পনা বৌদির লক্ষ্মির সংসারে ভাঙনের লয়,
পায়ের সমান জীবনবিতান ছেড়ে শরীরসমান মাটির মরমে মেশা এমিলি আপুর
শবযাত্রা।
মধুর প্রচলে
আমাদের উদাসিন দেখে
প্রপিতামহরা
বলতেন— শোন,
অশত্থতলায়
মন্দিরের উলুধ্বনি, গিরজার ঢং ঢং,
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা সুরেলা আযান… সবই তাহার, একই
সুখের আরাধনা!
নিখিল নাস্তির সঙ্ঘারামে
এইসব
অমৃতকথার গোপনদরোজা খুলে দেখি,
ইন্দ্র-জাল!
কত ধান আর কত চাল!
ঘুমঘোরে আরো দেখি, ভুবনপাড়ার জংশনে নওল দিনের সখা, কড়া হুইসেল,
চলে যাচ্ছে রেলগাড়ি…
উৎসর্গ— এমি। সবুজ আপুটি। হলুদশাসনে ঝরে গেছে পাতাঝরাকালে।
চক্রপাড়ার মানস
চক্রপাড়ার মানস তার চোরাবালিচোখ
সময়সৃজনে ভালবাসে শিল্পের যাতনা
কে যে বলে
চোখের ভ্রু যেন-বা ধনুক মণি হল তীর
কিবা
পাখির নীড়ের মতো চোখ—
ছাই
এসব কিছুনা
তার
চোরাবালিচোখ— চক্রপাড়া
খেলাঘর বাঁধা জীবনসৈকতে
চক্রবর্ত্তী
চক্রে… চক্রে… ডাকে নন্দনকাননে
সময় কুড়ানো নীড়ে
আমূল জড়িয়ে নেয় চোরাবালিচোখে
দেয় আনন্দবেদনা— সময়সখ্যতা