কাল রাতে একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। আমার বেশিরভাগ স্বপ্নই কেমন যেন খাপছাড়া। আমি যখন কনভেন্টে পড়তাম তখন প্রায় প্রতিরাতেই এরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যেত। একদিন স্বপ্নে দেখি— দিগন্তজোড়া এক বিশাল মাঠ; যেখানে ঘোড়ার আকৃতির শত শত কবুতর চড়ে বেড়াচ্ছে। একটি কবুতরকে আবার চিৎ করে শুইয়ে মাটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। গালিভার ট্রাভেলস-এ নায়ক গালিভারকে লিলিপুটরা যেভাবে বেঁধে রেখেছিল ঠিক সেইভাবে। যখন দেখি কবুতরগুলো উড়ে আমার দিকে আসছে— এমন চিৎকার করে উঠেছি, আমার রুমমেটতো ভয়ে অস্থির।
আজকের স্বপ্নটাও ভয়ের। দেখি এক পাহাড়ের উপত্যকা। চতুর্দিকে উঁচু উঁচু পাহাড়। পরিষ্কার নীল আকাশ। চারিদিক সোনালি রোদে ভেসে যাচ্ছে। একটি জায়গায় লোকজনের জটলা দেখে এগিয়ে এলাম। কাছে গিয়ে দেখি একটি উঁচু পাথরের উপর একটি ঈগল পাখি বসে আছে। তার পালকের রঙ গাঢ় সোনালি। চোখে মুখে এক ধরনের তীব্র অহংকারি ভঙ্গি। ঈষৎ বাঁকা চোখে সে দর্শকদের দিকে তাকাচ্ছে আর পালক ঝাড়া দিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। ঈগলটির মালিক পাশেই বসা। তার লাল রেশমের পোশাকে সোনালি কারুকাজ। আমি পাখিটির একদম কাছে চলে আসলাম। পাখিটি সরে বসতে গিয়ে ভারসাম্য হারাল। পাথরের উপর যখন সে আবার ঠিকভাবে বসতে চেষ্টা করছিল তখনই তার পা আমি দেখতে পেলাম এবং নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলাম। মানুষের পুড়ে যাওয়া কদর্য হাতের মতো পাখিটির নখরসহ পা।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে রাতে দেখা স্বপ্নের কথা সবাইকে সাড়ম্বরে বললাম। কাসফিয়া আপু বলল— তুই বোধহয় দার্জিলিংয়ের কথা এখনও ভুলতে পারিসনি। আম্মু বলল— কতবার বলেছি রাতে দোয়াদরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে শুতে। পাউরুটিতে কামড় বসাতেই চিৎকার করে উঠে গালে হাত দিলাম। উহ, বাঁপাশের মাড়ির দাঁতে কি প্রচণ্ড ব্যথা। ভুলেই গিয়েছিলাম। অসাবধানে নার্ভে হয়ত চাপ লেগেছে। আম্মা বলল— কতবার বলেছি নওরিনের কাছে গিয়ে দাঁত দেখাতে। রুটক্যানেল লাগবে বোধহয়। অসময়ের দশ ফোঁড়। নওরিন আন্টির ডেন্টাল হোম খুব কাছেই। হেঁটেই যাওয়া যায়। আমি যাব যাব করে যাই না। কারণ দাঁতের ডাক্তারের ব্যাপারে আমার এক ধরনের অপার্থিব ভয় আছে। একটি সায়েন্স ফিকশনে পড়ছিলাম— দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবার সময়ে নায়কের যেমন ভয় ভয় করত, অন্য গ্রহে যাত্রাকালেও সে তেমনই বুক কাঁপানো আতংক অনুভব করে। আমার অবস্থা এখন সেই নায়কের মতোই। দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবার সময় আমি ভিনগ্রহে যাবার আতংক অনুভব করি।
নওরিন আন্টির চেম্বার দোতলায়। কালো রঙের পাথর দিয়ে মোজাইক করা। সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুত উপরে উঠলাম। এখন ৪টা বাজে। নিশ্চয়ই খুব ভিড় হবে। চেম্বারের দরজার হাতল জোরে চেপে ধরে সামনের দিকে টানতে হয়। দরজা খোলার পর দেখি ভিতরে ওয়েটিং রুমে মাত্র একজন রোগি বসে আছেন। পাশেই আন্টির রুমের দরোজা বন্ধ। ভেতরে কাজ করছেন বোধহয়। আমি ভদ্র লোকটির মুখোমুখি সোফায় বসলাম। মুখের উপর বিশাল এক পেপারের দুই পাতা খুলে উনি পড়ছেন। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে আমার খুব অস্থির লাগে। এদিক-ওদিক তাকালাম। দেয়ালে একটি ক্যালেন্ডার-এ হাসি হাসি মহিলা ও শিশুর ছবি ঝুলছে। পাশেই অ্যাকুরিয়ামে গোল্ডফিস খেলা করছে। আমি বুঝি না এত রঙ-বেরঙের মাছ থাকতে সবাই কেন গোল্ডফিস রাখে। প্রায় প্রতিটি ক্লিনিক, ডায়াগোনসিস সেন্টারে আজকাল দেখা যায় প্রায় একই ধরনের অ্যাকুরিয়াম আর সেই একই একই গোল্ডফিসের খেলা। রোগিদের সময় কাটানোর জন্য অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাল পরিকল্পনা। ভদ্রলোকটি পেপার ভাঁজ করে টেবিলে রাখলেন। আমি চমকে উঠলাম। কফি রংঙের শার্ট আর হালকা অ্যাশ ট্রাউজার পরা একজন অনবদ্য সুন্দর মানুষ। আমি মাথার সিঁথি বরাবর এক ধরনের সূক্ষ্ম-যন্ত্রণা অনুভব করলাম। এ ধরনের সৌন্দর্য আমার ঠিক প্রত্যাশিত ছিল না। আমি কোথাও দেখিনি। পরিচিত কোনো সুদর্শন খেলোয়াড় কিংবা নায়কের মতো নয় দেখতে, তার চেহারার মধ্যে অন্যকোনো ব্যাপার আছে। প্রথমবার যখন আব্বু-আম্মুর সাথে দার্জিলিং গেলাম— আমরা কেউ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারিনি। আকাশ মেঘলা ছিল। দু’দিন পর তারা চলে গেলেন। রুমের ভেতর বসে খুব খারাপ লাগত। তখনো ক্লাশ শুরু হয়নি। উইকেন্ডে শুধু বাইরে যাবার অনুমতি ছিল। তা-ও আবার টিমের সাথে শুধু বের হতে পারব। একা যাওয়া যাবে না। একদিন রুমের ভিতর বসে আছি মন খারাপ করে। হঠাৎ জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘের ভেতর থেকে একটু একটু করে ফুটে উঠছে বরফ কমলা তুষারের আলো। আমার মন খারাপভাব উবে গেল মুহূর্তেই। আমি তখন বিস্ময় আর সৌন্দর্যে অধির। সেই বিস্ময় আর সৌন্দর্যবোধ নিয়েই আমি ভদ্রলোককে দেখছিলাম। লোক নাকি ছেলে? উনার বয়স অনেক বলে আমার মনে হল। ঊনত্রিশ-ত্রিশ তো হবেই, আমার ছোট কাকার বয়সি। ভদ্রলোক মুখের উপর পেপার টেনে নিতেই আমি চমকে উঠলাম। আমি উনার দিকে এমন বোকার মতো তাকিয়েছিলাম— উনি নিশ্চয় খুব বিরক্ত হয়েছেন।
আন্টির ড্রয়িংরুম; সরি, ওয়েটিংরুমটি পচা। উনার aesthetic sense নেই বললেই চলে। গাঢ় সবুজ চেক কাপড়ের সোফা। মেঝেতে রাখা বড়সড় মাটির ঈগল, পাখিটি ডানা মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ঠিক যেন plane take off-এর ভঙ্গি। একপাশে সেই বাজে অ্যাকুরিয়ামে মাছেরা খেলা করছে আর তার উপরের দেয়ালে কাবাশরিফের বিশাল ছবি। ভদ্রলোক টেবিলের উপর আবার পেপারটি নামিয়ে রাখলেন। উনার কোনো দোষ নেই। ঐ পেপারে পড়ার বিশেষ কিছু নেই। ভারত বাংলাদেশের ওপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করবে, ভারত বাংলাদেশের ওপর কবে আক্রমণ চালাবে বেশিরভাগ প্রতিবেদন এইসব নিয়ে। এই পত্রিকা পড়লে মনে হয়, ভারতের বুদ্ধি বলতে কিছু নেই। ৩০ বছর ধরে আক্রমণ করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। ভদ্রলোককে দেখলাম মেঝের দিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছেন। সোফা দু’টো মুখোমুখি হওয়ায় খুব সমস্যা হয়েছে-ডানে বা বামে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ঘাড় ব্যথা করে। আবার সরাসরি উনার দিকেও তাকানো যাচ্ছে না। উনি মেঝের দিকে এখনো তাকিয়ে আছেন। মনে হয় যেন তাজমহলের মেঝে দেখছেন। ছেলেটিকে বেশ অহংকারি মনে হল। আমার দিকে একবারও তাকায়নি। মহা-পুণ্যবান। আমি বেশ এক ধরনের কৌতূহল অনুভব করলাম। মানুষের দিকে তাকানো নিশ্চয় অপরাধ নয়। বিশেষ করে ঘরে যখন দু’জন মাত্র মানুষ। আর করার মতো তেমন কিছু নেই।
ও লেভেল শেষ হবার পর ছুটিতে গায়ত্রি একবার এসেছিল ঢাকায়। আমি আর গায়ত্রি ঢাকায় রিক্সা করে অনেক ঘুরেছি। মানুষজন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। আমি বিরক্ত হতাম। গায়ত্রি বলত, It`s quite natural. ওরা সৌন্দর্য দেখছে। মানুষের দৃষ্টি সবসময় তাকানোর জন্য সুন্দর জিনিস খোঁজে। যেমন— গাছপালা, নদী, পাহাড়। ঢাকায় যেসব জিনিস আছে, সেসব সব আর্টিফিসিয়াল সুন্দর, সেগুলো দিয়ে পুরোপুরি মন ভরে না। তাই ওরা আমাদের দেখছে। আমরা তো ঈশ্বরের সৃষ্টি।
আমার মনে হল গায়ত্রির দেওয়া বক্তৃতাটি ভদ্রলোকের ওপর ঝেড়ে দেই। উনার এখন মেঝে দেখা শেষ। অ্যাকুরিয়ামের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন। তার চোখ অন্যরকম সুন্দর। এত উজ্জল, এত গভীর। মনে হল সন্ধ্যার সমুদ্রে কোনো নীলাভ নক্ষত্রের ছায়া পড়ছে। তার চুল এত কাল, এত ঘন অন্ধকার। অনেকটা ফিঙে পাখির পালকের মতো। চুলের সিঁথি এত সূক্ষ্ম যেন অন্ধকার মহাকাশে নক্ষত্র দিয়ে তৈরি আলোকবিন্দুর এক রেখা। আমি মনে মনে তার নাম দিলাম নক্ষত্র।
নক্ষত্রের গায়ের রঙ ভোর আর সকালের সন্ধিক্ষণের আলোর মতো উজ্জ্বল, শুভ্র, রক্তিম। তার ঠোঁটের রঙ দেখলে করমচা ফলের লাল আভার কথা মনে পড়ে।
আমি পত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছি। ভদ্রলোক দেখার মতো কিছু না পেয়ে কপালে হাত দিয়ে দু’চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেবার ভান করছে।
আমি রূপকুমারের আচরণ দেখে খুব আহত হচ্ছিলাম। আসলে আমার অনুভূতি ছিল বিচিত্র। একে তো দাঁতে ব্যথা, দাঁত তুলে ফেলার ভয়, অপমানবোধ, সৌন্দর্যবোধ সব মিলিয়ে একাকার ধরনের অনুভূতি।
ভদ্রলোকটি কি আমাকে বখাটে মেয়ে ভাবলেন? উনি মনে হয় ভেবেছেন, উনার পাড়ায় গিয়ে উনাকে আমি বিরক্ত করব। উনার আচরণ রীতিমতো অস্বাভাবিক। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি। আহা, আমি প্রেমে পড়ব— দাঁতের ডাক্তারখানায়! অসম্ভব। আমি মনে মনে ভেবে রেখেছি আমার মি. রাইটের সাথে আবার দেখা হবে গাছপালা ঘেরা খুব সুন্দর এক জায়গায়। ধরা যাক, সেখানে থাকবে শ্বেতপাথরের বড় বড় বেঞ্চ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়বে সেই সব পাথরের বেঞ্চের উপর, আমাদের মাঝখানে থাকবে অসীম নৈঃশব্দ্য। সেই নৈঃশব্দ্যের ভেতর দিয়ে লেকের পানিতে টুপটাপ পাতা ঝরে পড়ার শব্দ শোনা যাবে শুধু। পার্ক আর বেঞ্চের কথা মনে হলেই অবশ্য চিনাবাদামের কথা মনে পড়ে। অবশ্যই আমরা চিনাবাদাম খাব না। এর চেয়ে এক্সক্লুসিভ কিছু খাওয়ার চেষ্টা করব। অবশ্যই তার বয়স হবে বাইশ থেকে তেইশ-এর মধ্যে। আমার ছোট কাকার বয়সি হবেন না তিনি মোটেও। আর এত সুন্দর মানুষ বিয়ে করা বোধহয় ঠিক হবে না। কারণ দার্জিলিং-এর প্রকৃতি দেখে আমি প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম ঠিকই। কিন্তু একসময় পরীক্ষা ও নানা কারণে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পাহাড়চূড়া, বরফ, পাইন-এসবের দিকে একঝলক তাকিয়েই হয়ত অন্য কাজে চলে যেতাম। তার ক্ষেত্রেও কি এরকম হবে? না, না, সেটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার হবে।
আমি মাঝ বরাবর সিঁথি করি। তবে সিঁথির অস্তিত্ব শুধু চুল আঁচড়াবার সময় টের পাই, অন্যসময় নয়। কিন্তু এই মানুষটিকে দেখে আমার মস্তিষ্কের সিঁথি বরাবর সূক্ষ্ম একধরনের ব্যথা টের পাচ্ছি। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না এক ধরনের কষ্ট হয়। তার সৌন্দর্য ঠিক সহ্য হয় না। কার কথা যেন মনে পড়ে। কিসের কথা যেন মনে পড়ে।
আমার লিটারেচার ক্লাসের কথা মনে পড়ল। ক্লাসের জানালা দিয়ে দেখা যেত পাইন গাছের শাখা বাতাসে দুলছে। ম্যাডাম-এর হাতে খোলা বই। বইয়ের দিকে না তাকিয়ে উনি আবৃত্তি করছেন নিমগ্ন ভাবে :
I have seen him already
With vine leaves in his hair
flash and fearless.
আমি যদি মাইকেল এঞ্জেলো হতাম অবশ্যই তার ভাস্কর্য তৈরি করার অনুমতি চাইতাম। বাংলাদেশের মানুষের চেহারা ও গড়নে দ্রাবিড় বা ভেদ্দা বৈশিষ্ট্য দেখা যায় বেশি। হ্যা, আর্য গড়নও দেখা যায়। দীর্ঘ দেহ, উন্নত নাক, দৃঢ় চিবুক— সেসবও আছে। কিন্তু তার ওপর এমন অসম্ভব লাবণ্য ও অলৌকিক বিভা দুর্লভ।
উনার মধ্যে একধরনের বিষণ্নতা বোধ আছে। অহংকার ও বিষণ্নতা।
হঠাৎ পাশের রুমের দরজা খুলে ডাক্তার আন্টির এসিস্ট্যান্ট এই রুমে এল। আমাকে বলল, আপা এসেছেন? আসেন। এখন আপনার টার্ন। আমার কেন হবে? ঐ ভদ্রলোকতো আমার আগে এসেছেন। উনি তো আগে যাবেন। এসিস্ট্যান্ট উনার দিকে তাকিয়ে বলল আপনিও আসেন। কি ব্যাপার? আমার চিকিৎসা কি তার সামনে হবে না-কি? এই জেমস বন্ড ০০৭-এর সামনে ডাক্তার আন্টির মুভেবল চেয়ারে আমি মুখ হা করে শুয়ে থাকব? না, তা অসম্ভব। আমার মনে হচ্ছিল কোনো একটা ছুতো করে বাসায় চলে যাই। তাছাড়া এই রাজপুত্রের দাঁতের ট্রিটমেন্ট যদি আমার সামনে হয়-সেটাও আমার ঠিক সহ্য হবে না।
আমরা দুজনই রুমে ঢুকলাম। ভদ্রলোকের তাড়া একটু বেশিই মনে হল। ভেতরে ঢুকতেই দেখি একটা আট-দশ বছরের ছেলে। মুখে তুলা নিয়ে ছেলেটি ফোলা মুখে বসে আছে। ভদ্রলোককে দেখে বলল— চাচু। ডাক্তার আন্টি আমাকে ডাকলেন, এস স্বপ্নিল। ঐ চেয়ারটাতে বস। তোমার আম্মু ফোন করেছিলেন।
ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি, আপনার ভাস্তে তো খুব সাহসি। আজকে একদম কাঁদেনি। শুধু আম্মু, কাকু এরা সামনে বসে থাকলে সাহস কমে যায়, তাই না টিংকু?
ভদ্রলোক মানিব্যাগ বের করলেন। পকেট থেকে আরেক হাত বের করলেন ডাক্তারের ফিস গুণে দেওয়ার জন্য বোধ হয়। আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।
চিৎকার করে উঠতে গিয়ে কোনোমত নিজেকে সামলালাম। ভদ্রলোকের বাঁ-হাত কেমন যেন। মনে হয় দুর্ঘটনায় পুড়ে গেছে।
হায় খোদা! এ কারণেই কি তিনি অমন আচরণ করেছেন? এটা কি অহংকার, না তার হীনমন্যতা? না-কি আত্মমর্যাদা? না-কি যে মুগ্ধ দৃষ্টির তিনি পুরোপুরি যোগ্য নন, তা তিনি গ্রহণ করতে চাননি?
বর্ষ ৩, সংখ্যা ৫, ফেব্রুয়ারি ২০০৪