অন্ধকারে নিবেদিত প্রেম
অন্ধকার গভীর হলে বের হল সে
অতৃপ্ত অচেনা,
যে তার ধোঁয়াশায় নিযুক্ত ঝুম
কষাঘাত পেয়ে জেগে ওঠে খুব।
নিক্ষিপ্ত রক্তবীজ
ভিতরে ঘন আবহ
ঘিরে থাকে চারপাশ,
শব্দহীন ভুবন
যে মতে বলে— কে তুমি?
নিশ্চিহ্নতার দিকে যেতে চাও!
বেগ পেয়ে আবার বাজি ধরে কার হাতে
ঘন কাল অন্ধকারে ধরে যে মশাল।।
অঙ্গ
বৈপরীত্যে স্বত্বাময়
দ্বন্দ্বে দ্বন্দ্বে আলোড়িত
বিলীনের নিশানা ধরে
উঠে আসে শূন্যে।
তরঙ্গমত বয়ে বেড়ায়
যেভাবে রূপ অনুভূত হয় হাওয়ায়,
আদিমতম নিবৃত্তির দিকে যেতে থাকে।
একটা ক্ষুদ্র কীট
পথের ধুলা
ঝড়ে পড়ল একটা হলুদ পাতা
তা হতে আদিগন্ত আকাশ,
দৃষ্টিবিভ্রম।
এখানে একটা গল্প থাকে
—গল্পের ভিতর জীবন—
—জীবনের ভিতর নদী—
—নদীর ভিতর গতি—
গতি হতে ছিটকে পড়ে— হাসি কান্না
লাল/কালো/সোনালী ইতিহাস,
সম্মিলিত শব্দবিভ্রম।
যা শুধু বলেছে কেউ!
যা শুধু শুনেছে কেউ!
আত্মরম্ভে জমেছে আকরিক।
বাতাসে চৌম্বক দাও
তুলে নিক আকরিক
আমাদের শস্যক্ষেত্র
বহুকালের শ্রমসাধ্য,
নিবেদিত ভুলে।
প্রেম
এ পাশটিতে শুতে দিব তোমায়
বুকের পাঁজর ঘেঁষে,
শিয়রের পাশে জমে ওঠছো খুব।
হে শূন্যতা তুমি আছো,
হুট করে উধাও হবে বলে
কাতরায় দেহ।
বাঁশের সাঁকো হেটে পার হয় গ্রামান্তর।
অনন্ত সবুজের চোখের ভিতর
জেগে ওঠে প্রতিশ্রুতি—
জীবনের আভাসে
দিগন্তের উদ্ভাসে,
কৌণিক অভিক্ষেপে মিলে
অসীমে অসীমে।
এ মন
চুম্বন চিরন্তন
বিস্তৃত কপাল জুড়ে জমেছে যে মেঘ,
তার অভিপ্রায়।
তৃতীয় চোখ
উৎস থেকে নিসৃত
এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে নদী
তরঙ্গিণী নদী
কল্লোলিনী নদী,
আছে তার গতি
প্রতিবন্ধকতা পেরুতে নিয়েছে বাঁক
তারপর হয়েছে সহজ, এ অভিমুখ-
মিলনের অভিপ্রায়ে
জীবনের প্রতিরূপে
ঢুকে গেছে বুকে।
পড়ন্ত বিকেল
নিকটবর্তী নদীর পাড়ে শ্মশান।
একটা পুরনো বটগাছ,
স্থিত কেন্দ্রভূমে বিনম্র ভাবশক্তি,
জ্বলছে চিতা—
এ নশ্বর দেহ পুড়ে পুড়ে হতেছে নিশ্চহ্ন।
নিঃশব্দ ভূমি।
ভিতরে মিশে যায় অনন্ত কীট, ক্রন্দন
জীবনের ধ্বনি,
জন্মে… মৃত্যুতে… রূপান্তরে… চক্রে… কালান্তরে…
যা কিছু নিমগ্ন তা থেকে দূরে, বহুদূরে…
কতদূরে…?
দূরে অদৃশ্য স্তর থেকে
ঝাপসা ধোঁয়াশা পেরিয়ে
দৃশ্যমান স্তরে,
ক্রমে ক্রমে এগিয়ে আসে বুকের কাছে বর্তমান
উপলব্ধ স্তরে,
তারপর ফিরে যায় পশ্চাৎগমনে।
এইসব আপেক্ষিক অবস্থান ও দূরত্ব বিবেচনায়
অভিজ্ঞতার হতেছে রূপান্তর।
শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হন্তদন্ত
মর্মর শব্দে টনটনাচ্ছে হৃদয়
চোখের পাড়ে জমা হচ্ছে অতীত কালের কালো রেখা
বেঁচে থাকাটা অনন্যোপায়।
কলের চক্রে ফেঁসেছে।
আঁচলে বাঁধা আছে জীবন ধন
জননীর মত জীবন্ত শৈল্পিক হাতে ছড়িয়ে দিবে—
সে ভূমি কই?
ভক্তিহীন পায়রাগুলো ওড়ে
জীবনের ছায়া পড়ে আরো জীবন।
বহুরূপ পাবে বলে জীবন
কেঁপে ওঠে ভূমি
আছড়ে পড়ে চারনবৃক্ষ
পাক খায় ধূলি ও ঝড়,
ধিকিধিকি জ্বলে আগুন।
নয় কোনো পক্ষপাত
নয় কোনো আবেগজাত
অনিবার্য এ খেলা,
আপন খেয়ালে।
প্রেমের প্রোথিত উদ্যানে
ডুব দেয় অন্তর্ধ্যানে
সমস্ত ব্রহ্মান্ড ঘুরে
ভেসে ওঠে বালির চরে
সমুদ্রজাত সন্তান এক, লবনাক্ত শরীরে।
ধেয়ে আসে নেমে যায় অবিরাম ঢেউ
ভূমি মধ্যভাগে
বিস্তৃত সমুদ্রপীঠে
ভাসে ছোট ছোট জাহাজ,
একটা ক্ষুদ্র তৃণের মাঝে লেখা হয় অনন্ত জীবনের ইতিহাস।
ব্যস্ত ভারে
যেটুকু সময় গোছাতে গোছাতে
সূর্য ডোবে ডোবে
রক্তিম লাল রক্তের উত্তেজনায়
জীবনের কাছে আসে তাজা জীবন,
স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারে পোকারা গান গায় সমবায়,
একাকী পৃথক।।
উত্তম মণ্ডল
জন্মঃ ১৭ নভেম্বর ১৯৮৯, জেলা- নওগাঁ, উপজেলা- পত্নীতলা।
বর্তমানে স্কয়ার ফার্মার অধীনে মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার হিসেবে কর্মরত।