বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বাজার অর্থনীতি // আদনান এইচ খান

0

যুবক বিজ্ঞানের সূচনাক্ষণ নির্ণয় বেশ দুঃসাধ্য, তবে ধারণা করা যায় যে, আদি মানুষেরা নিজেদের অজান্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, তারা অভিজ্ঞতায় বুঝেছিল ঘর্ষণের ফলে তাপ ও আগুনের উদ্ভব হয়। প্রমাণযোগ্যভাবে বিজ্ঞানের সূচনালগ্ন বলা হয় বৈদিক যুগকে, বেদ হতে জানা যায় যে, তারা লক্ষ করেছিল নির্দিষ্ট বয়সে কিছু মানুষের মূত্রে পিপিলিকা আকৃষ্ট হয় এবং এই রোগের নাম তারা দিয়েছিল মধুমেয় (খি.পূ. ৫০০০ বছর) যা বর্তমানে ‘ডায়াবেটিস’ নামে সারাবিশ্বে তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীতে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের সময় বিজ্ঞানের যথেষ্ট গঠনমূলক বিকাশ হয়। প্রায় সমসাময়িক চার্বাক দর্শন ও বিজ্ঞানের ভাবধারায় পুষ্ট এবং ভারতিয় অঞ্চলের বিজ্ঞানের চেতনার একটি নিদর্শন। শিশু বিজ্ঞানের ধীরে-ধীরে বড় হবার কথা ছিল, কিন্তু নানা বাস্তবতায় বিজ্ঞান বন্দি হয় মধ্যযুগিয় খাঁচায়। মধ্যযুগের এই মোড়কে আবির্ভূত হয় খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ধর্ম। অভিজ্ঞতা আর অদৃষ্টের সংঘাতে বিজ্ঞান হয় বন্দি। এই বন্দি অবস্থা চলে প্রায় দেড় হাজার বছর। ১৩ শতক ও ১৪ শতক হচ্ছে মানব ইতিহাসের পুনর্জাগরণ বা ‘রেনেসাঁস’-এর সময়। মধ্যযুগের অসহনীয়তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই হচ্ছে এই পুনর্জাগরণ, যা ঘটেছিল তখনকার শিল্পিদের মধ্যে তাদের চিত্রকলায়, সাহিত্যে। তবে এই পুনর্জাগরণের আরেকটি বিশেষ দিক ছিল বিজ্ঞানের যাত্রা, বিজ্ঞানের থেমে যাওয়া শৈশবের শুরু। শৈশবের এই পথে তাকে চলতে শেখান গ্যালিলিও, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, নিউটনসহ আরো অনেকে। সেই পথ চলায় আর স্থবিরতা আসেনি, আজ একবিংশ শতকের বিজ্ঞান পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত, এবং তার গতিও এখন তীব্র। তীব্র ও গতিশিল এই বিজ্ঞান জন্ম দিয়েছে ক্ষমতার, বর্তমানে এই ক্ষমতা প্রয়োগের প্রধানতম মাধ্যম হচ্ছে প্রযুক্তি ও বাজার অর্থনীতি। আর বিজ্ঞানের সামর্থ্য এখন অনেক স্বচ্ছ।

প্রযুক্তি প্রতি একক সময়ে মোট কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, অর্থাৎ প্রযুক্তির প্রয়োগে একক পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পূর্বের চেয়ে কম সময় প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে সময়ের অপ্রতুলতাই প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ায়। সময় যখন অলসভাবে ব্যয়িত হয় তখন প্রযুক্তি আরো বেশি অলস করে ফেলে মানুষকে। প্রযুক্তি নামক প্রায়োগিক বিজ্ঞান বর্তমানে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা সম্পর্কের সাথে মিশে আছে। ধীরে-ধীরে এই পারস্পরিক সম্পর্কগুলো গভীরতর হচ্ছে এবং যা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি প্রভাবিত।

বর্তমান সময় বিজ্ঞানের সময়। বিজ্ঞানের অবদানে এসেছে উন্নত চিকিৎসা, মহাশূন্যকে জয় করার সম্ভাবনা, মৃত্যু আজ প্রশ্নের সম্মুখিন, তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি। মোদ্দাকথায় নিয়তি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আজ অনেকটা সফল। কৃষকের ফলন আর মেঘ-বৃষ্টি নির্ভর থাকছে না। উন্নত বীজ ও সেচ প্রকল্প কৃষকের দৃষ্টিকে নিয়ে এসেছে অদৃশ্য নিয়তি থেকে দৃশ্যমান পৃথিবীতে। পদ্ধতিগতভাবে বিজ্ঞানের বিজয় হচ্ছে এর সাধারণিকরণ পদ্ধতি যা প্রায়োগিক ফলাফলের দিক হতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং সম্ভাব্যতার মাপকাঠিতে সঠিক। কিসের সম্ভাবনা? প্রযুক্তির বিকাশের সম্ভাবনা। এর মাধ্যমে সময় নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা, ক্ষমতাবান হওয়ার সম্ভাবনা। সম্ভাব্যতার এই সূর্যোদয় বেশি দিন আগের কথা নয়। বিগত ২শ বছরের কাছাকাছি সময়ে এই ভিত্তিতে এডাম স্মিথ দিয়েছেন বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির কাঠামো। আইনস্টাইন, হাইজেনবার্গ জন্ম দিয়েছেন ‘কোয়ান্টাম থিওরি’ যা পাল্টে দিয়েছে গতানুগতিক সত্যের ধারণা। স্টুয়ার্ট মিল তার ‘ইউটিলিটারিয়ানিজম’-এ ব্যাখ্যা করেছেন গণতন্ত্রের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। বিজ্ঞানের যাত্রাপথে যখন রেলইঞ্জিন আবিষ্কার হল, উড়োজাহাজ তৈরির স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেতে লাগল, সম্ভাবনার তীব্রতা তখন থেকেই বুঝতে পারল বর্তমান প্রযুক্তির পরাশক্তিরা। শুরু হল তাদের নতুন বিজ্ঞানচর্চা, কারণ বিজ্ঞানচর্চা ব্যতিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন অসম্ভব। আর স্পষ্টভাবেই বিজ্ঞানকে নিয়ন্ত্রণ মানে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ। ফলাফল হিসেবে দাঁড়ায় সময় ও সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ, সংক্ষেপে ক্ষমতাবান হওয়া। ক্ষমতার প্রত্যাশা সার্বিক ক্রিয়া-কর্মের একটি প্রধান অনুঘটক, আর ক্ষমতাবানদের এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া একটি স্বাভাবিক মানবিক গুণ। গ্রিক সভ্যতায় রাজ্য জয় ও দাসবৃত্তির প্রচলন থেকে আজকের ইরাক আক্রমণ ক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন… উদাহরণ নেহায়েত কম নয়। আধুনিক মানববিধ্বংসি অস্ত্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত, একচেটিয়া রাখারই একটি হাতিয়ার। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্রেডিট কার্ড, On line Banking সুবিধা ইত্যাদি দিচ্ছে পৃথিবীর বড় বড় ব্যাংকগুলো। জনসাধারণ পাচ্ছে সহজে লেনদেনের সুবিধা। প্রযুক্তির পাল্লায় পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলো হচ্ছে স্থিতিশিল ও নিয়ন্ত্রিত। রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানগুলো আজ আদর্শ মানদণ্ডের সম্মুখিন। ISO (ISO – International Standardization for Organization) সনদ ব্যতিত পণ্য রপ্তানি সীমিত হয়ে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা পণ্য ক্রয় করছে, মানদণ্ড শুধু তারাই নির্ধারণ করছে, আর এই মানদণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষণের সব দায়িত্বও তারাই নিচ্ছে। কেননা এর জন্য প্রয়োজনিয় প্রযুক্তি তাদেরই যাদের কলকব্জা হাতিয়ার দখলে রয়েছে। প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের করার কিছুই থাকছে না। যাদের কাছে এর দখল তারাই আমাদের শেখাচ্ছে মানবতাবোধ, শিশুশ্রম বন্ধ, পরিবেশ সম্পর্কিত সচেতনতা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম যেভাবে তাদের সংবাদ প্রচার করছে, আমরা সেভাবেই তা জানছি এবং ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। একদেশের সংবাদ তারা পৌঁছাচ্ছে অন্য দেশে নিজেদের প্রয়োজনমাফিক। প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সর্বোপরি ব্যক্তিগত চিন্তা। মঙ্গল গ্রহের প্রথম রঙিন ছবি পৃথিবীর মানুষ দেখছে অল্প সময়ের ব্যবধানে, যা কয়েক দশক আগেও কল্পনা করা যেত না। আগামিতে দাদিমাদের চাঁদের বুড়ির গল্প যে পাল্টাবে না এই মুহূর্তে কে বলতে পারে? বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানের কাঠামোয় তৈরি আরেকটি সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বাজার অর্থনীতি। প্রযুক্তির প্রয়োগের জন্য ক্ষেত্র প্রয়োজন, বাজার অর্থনীতি হচ্ছে সেই ক্ষেত্র। বর্তমান বাজার অর্থনীতিই প্রায় এককভাবে করছে প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পুনর্গঠন, পরিমার্জন এবং পরিশোধন। বাজার অর্থনীতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কোন প্রযুক্তি আমাদের কতটুকু প্রয়োজন এবং কোন প্রযুক্তি প্রয়োজন নয়।  বিষয়টি স্পষ্ট হবে মানুষের জীবনও কিভাবে দয়ার ওপর নির্ভরশিল হয়ে যাচ্ছে উদাহরণ দিলে। AIDS রোগের ঔষধ লক্ষ লক্ষ AIDS রোগির ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই থাকছে। কারণ বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা, ভদ্র ভাষায়, যার কেতাবি নাম Patent Law| রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানের ISO সনদ একই উদ্দেশ্যের ফসল। মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল দর্শনও সকল দেশের সকল বাজারের জন্য প্রযোজ্য সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রক শ্রেণি, যা পোষ্য অর্থনীতিবিদদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে জাত। অবশ্য আড়াল করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে একজন ব্যক্তি বা সমাজ বা রাষ্ট্রের যোগ্যতাই তার মূল্য নির্ধারণ করবে। বাজার মুক্ত হলে শক্তিশালি প্রযুক্তির অধিকারিদের সামনে ক্ষুদ্র প্রযুক্তিধারিদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব, এক্ষেত্রে যোগ্যতার দোহাই দেয়া তাদের উভয়মুখি কথারই প্রতিফলন। কোনো কিছুর ধারাবাহিক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান সময়ের এই মানদণ্ড নির্ধারণে সেই নিয়ন্ত্রক শ্রেণিরাই যে এগিয়ে থাকবে এবং বিজ্ঞানকে তারা ব্যবহার করবে হাতিয়ার হিসাবে সেটা সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা সম্ভব।

নিশ্চয়তা মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। প্রতিনিয়ত মানুষ খোঁজে নিশ্চয়তার ঠিকানা। এই নিশ্চয়তার পথে কখনও অগ্রদূত হয়েছে ধর্ম, কারণ ধর্মিয় বিধান মানুষকে দিয়েছে নিশ্চয়তার ঠিকানা। মধ্যযুগের একটি পর্যায় এই ধর্মিয় বিধান হয়েছে নিয়ন্ত্রক শ্রেণির হাতিয়ার। ক্যাথলিক চার্চ ছিল মধ্যযুগে পশ্চিম ইউরোপের ক্ষমতাধারি শ্রেণি। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান দিচ্ছে সেই নিশ্চয়তার ঠিকানা, কারণ নিয়তির ওপর নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান অনেকটা সফল এবং বিংশ শতকে এসে সেই বিজ্ঞানও হচ্ছে নিয়ন্ত্রক শ্রেণির হাতিয়ার। এভাবে মানব সমাজে সৃষ্ট সকল নিশ্চয়তার পথই ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হচ্ছে সেই সময়ের নিয়ন্ত্রক শ্রেণির হাতিয়ারে। হয়ত এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। মধ্যযুগের নিয়ন্ত্রক শ্রেণি ছিল নিয়তির মানদণ্ডে শক্তিধারিরা পরবর্তীতে যাদের হাতিয়ার হয় ধর্ম। বর্তমানে এই শ্রেণি হচ্ছে প্রযুক্তির মানদণ্ডে শক্তিশালিরা যাদের হাতিয়ার হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের বিকাশের এই চরম সময়ে যখন পরমাণুর ভিতর থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত মানুষের চলাচল হচ্ছে গতিশিল, মৃত্যুকে চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞান, তখন কি আরেকটি মধ্যযুগ অপেক্ষা করছে আমাদের মতো ক্ষমতাহীনদের জন্য? ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বলে গোষ্ঠি বা জাতির মধ্যে যখন ক্ষমতার পার্থক্য বেশি হয় নিয়ন্ত্রণে তখন বৈষম্য সৃষ্টি হয়, আর বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় দুর্বল হলে ক্ষমতার পার্থক্য সহজেই হবে ব্যাপক। যতদিন নিশ্চয়তার নতুন কোনো পথ খুঁজে না পাওয়া যায় ততদিন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর তাই বর্তমান সমাজ বিজ্ঞানের চাকায় ভর দিয়ে চলছে, হয়ত চলতে হবে আরও বহুদিন।

বর্তমানের মানুষ সামাজিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতৈক্যকে সমর্থন করে অর্থাৎ গণতান্ত্রিক। এতে তারা কিছু পায়, কিছু হারায়। গণতন্ত্রের এই পাওয়া আর হারানোর দ্বন্দ্বের মাঝে সুবিধাজনক এক বাস্তবতায় প্রতিটি মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে। গণতান্ত্রিক মানুষের আত্মকেন্দ্রিক ভোগ সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। প্রযুক্তি মানুষকে দেয় বস্তুগত এবং পরাবস্তুগত ভোগের সুবিধা। যেহেতু আমরা এই পৃথিবীর অধিবাসি এবং আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো গণতান্ত্রিক ফলে আমরা সহজেই ভোগবাদি চিন্তা দ্বারা সমাচ্ছন্ন। প্রযুক্তি ও বাজার অর্থনীতি উভয়ই বস্তু এবং পরাবস্তুগত ভোগকে প্রলুব্ধ করে। ফলে স্বভাবতই আমাদের  মতো দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও বাজার অর্থনীতির সম্মুখিন হবার কোনো বিকল্প নেই। ডাঙ্গায় বাঘ এবং পানিতে কুমির হলে, দ্রুত দৌড়াতে শিখতে হবে এবং ভাল সাঁতার জানতে হবে, নচেৎ জীবনের অনিশ্চয়তা অবশ্যম্ভাবি। এটা ধরে নেয়া যায় যে গুপি-বাঘার মতো দৈবশক্তি আমাদের নেই এবং রাজার সম্পদ শুধু গান গেয়ে দখল করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান দিয়েই বিজ্ঞানের সম্মুখিন হতে হবে, প্রযুক্তিতে শক্তিশালি হতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিজ্ঞানের লালনভূমি বিশ্ববিদ্যালয়কে সংস্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন যাতে রোগহীন ও সঙ্গতিপূর্ণ বিজ্ঞান-শিশু এদেশে জন্মাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল প্রকার জাতিয় রাজনীতির সম্পূর্ণ বাইরে রাখতে হবে। সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং বাস্তবতার নিরিখে সঙ্গতিহীন বিষয় এবং কোর্সসমূহ বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র গবেষণা ব্যতিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যা কমাতে হবে, এ লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধি এবং এক বা দুই বছর মেয়াদি কোর্সসমূহ চালু করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় বাধ্য করতে হবে এবং এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা যথাযথ করা আবশ্যক।

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে প্লেটো কল্পনা করেছিলেন আদর্শ রাষ্ট্রের, যে স্বপ্ন আজও পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কল্পনা তার নিজের জন্য। নেতৃত্বে নতুন চিন্তাধারা এবং সুসংগঠিত বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞান এই নিশ্চয়তার কল্পিত রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে।

বর্ষ ৩, সংখ্যা ৬, আগস্ট ২০০৪

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার