বাঈজী সংগীত সম্পর্কে গিরিশ চন্দ্র ঘোষ একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বিবেকানন্দ খেতরির রাজসভায় উপস্থিত হলে একদিন কালোয়াতি সংগীত শেষে, একজন বাই গান করতে আসে। বিবেকানন্দ স্ত্রীলোকের গান শুনতেন না— বিশেষত ঐসব স্ত্রীলোক যাদের সম্পর্কে সমাজে নানা হেয়মূলক কথা প্রচারিত আছে। রাজা মিনতি করে তাঁকে বসালেন, এবং অনুরোধ করলেন একখানি গান শোনার জন্য। বাইজি গান ধরে:
প্রভু মোর অবগুণ চিত না ধর
সমদরশি হ্যায় নাম তোমার।।
এক লোহ পূজামে রহত হ্যায়,
এক রহো ঘর ব্যাধক পরো।
পরলোক মন দ্বিধা নাহি হ্যায়
দুহুঁ কাঞ্চন করো।।
প্রভু! তুমি নিরপেক্ষ, গুণহীন আর গুণবানকে সমান দৃষ্টিতে দেখে থাক— পরশমণি যেমন দ্বিধা না করে শিকারীর ঘরে আর পূজার ঘরে লোহা স্পর্শ করে সোনা করে দেয়। নদীর নির্মল জল আর নর্দমার নোংরা জল গঙ্গাদেবী যখন সমানভাবে গ্রহণ করেন তখন দুই জলই গঙ্গাজল হয়ে যায়। ‘তানলয় গঠিত, ভাবপূর্ণ সুকণ্ঠে গীত সংগীত শ্রবণে বিবেকানন্দের চক্ষে জল পড়িতে লাগিল, মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন ‘ধিক্ আমার সন্ন্যাস অভিমানে। এখনও ‘এ ঘৃণিত’, ‘এ মান্য’ আমার বোধে আছে।’ তারপর থেকে সেই বাঈকে বিবেকানন্দ ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন এবং যখনই খেতরি যেতেন তখনই রাজাকে অনুরোধ করতেন, ‘আমার মাকে ডাক, আমার গান শুনিতে ইচ্ছা হইয়াছে’। বাই পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে গান শোনাত। বাঈজীদের অবস্থান যে সমাজে তখন ভাল ছিল না তা এই একটি ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
মারাঠি ভাষায় বাই অর্থ মা বা বড় বোন। হিন্দুস্থানীতে বোন-এর সাথে সম্ভ্রমসূচক ‘জী’ যুক্ত করা হত শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য। তবে শব্দের মূল অর্থের সঙ্গে এই শব্দ ব্যবহারের কোনোই সঙ্গতি পাওয়া যায় না। বাঈজীদের মুঘল যুগে এতটাই হীন চোখে দেখা হত যে, কেউ গুণ-গুণ করে গান করলেও তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হত। বাঈজী প্রথা বহু প্রাচীন— সভ্যতার মতোই। জীবন-মরণের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়ে বাঈজীদের প্রতিদিনের দিন গোজরান। গানই ছিল তাদের মুক্তির বৈতরণী, মুক্তির উপায়, বেদনা নিবারণের হাতিয়ার। ঘৃণার দৃষ্টিতে এদের দেখা হলেও তাদের গুণের দিকটি উপেক্ষণীয় ছিল না মোটেও, তবে সামাজিক স্বীকৃতি মেলেনি সহজে। মঞ্চ-চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তাদের যেমন সাদর আহবান জানানো হয়েছে, তেমনি প্রয়োজন শেষে তাদের ছুঁড়ে ফেলতেও কুণ্ঠিত হয়নি সংশ্লিষ্টরা। তাদের গুণ জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেছে, অথচ বাইজি নামোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ঝরে পড়েছে অবজ্ঞা, ঘৃণার মনোভাব। সংগীত নিয়ে যারা কাজ করছেন তারাও এসব মধ্যযুগের শিল্পীদের আত্মত্যাগ, বৈরী-পরিবেশে বেড়ে ওঠা, সমাজবিচ্যুত সত্তায় শিল্পের সাধনা সর্বোপরি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধকে স্মরণ করেন না। কৃতজ্ঞ হন না উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে টিকে থাকা এইসব অসহায় শক্তিমান শিল্পীদের কাছে। সামাজিকভাবে বাঈজীরা যেমন অবহেলার শিকার ছিলেন, তাদের কাজও স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি, প্রতিষ্ঠা পায়নি শিল্পের মর্যাদায়। কয়েকটি হিন্দি-বাংলা ছবিতে যদিও এদের চরিত্র আঁকা হয়েছে, কিন্তু তা যথাযথ সম্মান ও নিষ্ঠার সাথে প্রদর্শিত হয়নি। তবে আশার কথা কিছু কিছু সচেতন সংগ্রাহক এসব অমূল্য বাঈজী সংগীত সংগ্রহ করে একে বাঁচিয়ে রাখার মহান দায়িত্ব পালন করছেন। এসব গানে কীর্তন-বাউল দেশি রাগ-রাগিনীর পাশাপাশি লোকজ ধারাও অনুসৃত হয়েছে। তবে আমাদের একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, বাঈজীদের সংস্কৃতি তথা সংগীতচর্চা নির্ভর করত ধর্মপতি, সমাজপতি, কোনো-কোনো অভিজাত সম্প্রদায়ের ওপর। কারণ তারা আর্থিকভাবে ছিল তাদের ওপর নির্ভরশীল। সংগীতের উৎকর্ষের চাইতে তাই তাদের নজর দিতে হত ক্ষমতাবানদের মনোরঞ্জনের দিকে। অনেকে বাঈজী এবং গণিকাদের এক করে ফেলেন। বাইজি শব্দটির সমার্থ হচ্ছে খেম্টাওয়ালি, জান, তওয়াইফ, তয়ফাওয়ালি, দেবদাসি, নাচনি, নাচওয়ালি, বাঈ অথবা বাঈওয়ালি। দেহপসারিনিদের সাথে বাঈজিদের একটা তফাৎ আছে। বাঈজীদের কর্মক্ষেত্র ছিল মূলত রাজা-বাদশাদের জলসাঘর, জমিদারদের অন্দরমহল। অর্থনৈতিকভাবে তারা পুরোপুরি ছিল এইসব রাজা-বাদশাদের ওপর নির্ভরশীল, আর তাই জলসাঘরের এইসব বাঈজীদের রাজারা যদি দৈহিকভাবে কামনা করতেন তাদের তা অবজ্ঞা করার উপায় ছিল না। এতদসত্তেও কোন-কোন বাঈজী ছিলেন যারা শুধু জলসাঘরে সংগীত পরিবেশন করতেন। এছাড়া যেসব জনপদবধূরা নাচ-গান শিখে তাদের আলয় জমজমাট করে তুলতেন তাদেরও বাঈজী বলা হত, তবে তাদের একটা আলাদা আবাস থাকত যেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল। মুঘলযুগে রাজদরবারের জলসাঘরের জন্য গুণী সংগীতকারদের রাখা হত, তাদের অনেকেই ছিলেন নিয়মিত বেতনভোগী। বাঈজীরা নিয়মিত বেতনভোগী ছিল কি-না তা জানা না গেলেও অন্তত এটুকু জানা যায় রাজদরবারের বাঈজীরা মোটা অংকের নজরানা নিতেন। বাইজিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজরানা নিয়েছেন গওহরজান বাইজি। তিনি প্রথমদিকে নিতেন ৫০০ রুপি, পরে প্রতি আসরে ১০০০ রুপি। একদিকে তারা ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক কিংবা সিরিয়াস গান যেমন করেছেন, তেমনি হাল্কা গানও তাদের করতে হয়েছে।
রমণী সখের জলপান, ঠিক যেন আঠারো ভাজা!
নারীর প্রেমে যে মজেছে, সেই পেয়েছে তারি মজা
নারী আঠারো কলা, নারী ফুটকলাই ছোলা,
নারীর প্রেম রসগোল্লা, কচুরি সালপোয়া খাজা।
বাইজিরা দেহতত্ত্বের গানও পরিবেশন করতেন তার নিদর্শন আমরা পাই নিচের গানটির মাধ্যমে:
এল প্রেম রসের কাঁসারি
আয় সই ভাঙা ফুটো বদল করি
একটি নয় সেই ছিদ্র নটা, রসবিহীন অন্তরে ফাটা,
জল থাকে না একটি ফোঁটা, আঠার যত সারি।
রামায়ণ-মহাভারত বিভিন্ন পুরাণ ইত্যাদি মহাকাব্যের ভিত্তিতে বৈদিকোত্তর যুগে সংগীত চর্চা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বাল্মিকি মুনির তত্ত্বাবধানে লব ও কুশ রাজসভায় নৃত্য এবং গীতের মাধ্যমে যে অপূর্ব গান করেছিলেন তা শ্রবণ করে শ্রী রামচন্দ্র তাদের পুরস্কৃত করেছিলেন। বৈদিকোত্তর যুগে বিভিন্ন জাতকে নৃতগীতে পারদর্শী একাধিক নটির উল্লেখ পাওয়া যায়: শ্যামা, শ্রীমতি ইত্যাদি।
প্রাক-বৈদিক যুগের বীণা, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের মধ্যদিয়ে মহাকাব্যের যুগ তথা বৈদিকোত্তর যুগ পার হয়ে মধ্যযুগে এসে সংগীতের সবচেয়ে বেশি প্রসার ও বিবর্তন সাধিত হয়। ১৫৭৫-১৭৫৭ খ্রি. বাংলার মধ্যযুগ বলে চিহ্নিত। এই সময়টি নানা কারণেই উল্লেখযোগ্য। ক্ষমতার পালাবদল, শাসন প্রকৃতিতে রূপান্তর, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ও ধর্মনৈতিক আবহে সংঘাত ও মিলনের ক্ষণ বলে পরিগণিত। মধ্যযুগে সংগীত নিয়ে পর্যালোচনা করতে গেলে দু’টি সুস্পষ্ট ধারা পরিলক্ষিত হয়: প্রাক-মুসলিম যুগ ও মুসলিম যুগ। মুসলমান শাসকদের আগমনের পূর্ব-পর্যন্ত ভারতবর্ষে সংগীতের একটি স্বতন্ত্র রূপ বিদ্যমান ছিল। দীর্ঘদিন মুসলমান শাসনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত হওয়ায় সংগীতের ক্ষেত্রে একটি নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। এতে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে সংগীতের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সাহিত্যেও। বখতিয়ার খিলজির সাথে তুর্ক জাতীরা প্রথম শাসক হিসেবে বাংলায় প্রবেশ করলেও পরে পাঠান ও আফগানরা শাসক হিসাবে প্রাধান্য বিস্তার করে। এরও অনেক পরে আসে মুঘলরা। আর মুঘলদের প্রসন্নতার ফলেই শিয়া সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটে, যারা ছিলেন বিদেশী। স্বাভাবিক কারণেই তারা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ছিলেন অপরিচিত। নিজেদের শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্যে, জনসমর্থন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে তারা বাঙালিদের ধর্মান্তরকরণের দিকে নজর দেয়। অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের আশা, নিম্নবর্ণের হিন্দুরা উচ্চবর্ণের সামাজিক নিগ্রহ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে, কখনো-কখনো ক্ষমতা প্রয়োগের প্রবল বাসনা তাদেরকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে। মুসলমানদের আগমনের পর শিল্প-সাহিত্যে মুসলমানিয় প্রভাব যেমন আসে তেমনি সংগীতে আসে পরিবর্তন। মুসলিম আগমন, তাদের শাসনব্যবস্থা, বল প্রয়োগ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শিল্প-সংস্কৃতি লাভ করে আরেকটি স্বতন্ত্র রূপ। শিল্পকলা মূলত ছিল ধর্মাশ্রীত। এমনকি ভারতচন্দ্র, কবি কঙ্কণ বা জগজ্জীবনের মতো শক্তিধর কবিরাও ধর্মভাবনার প্রতি উদাস হতে পারেননি। মুসলমান শাসকদের আগমনের পূর্বে যেমন হিন্দুদের দেবী বা হিন্দুপুরাণের কাহিনিনির্ভর ছিল সংগীত, তেমনি পরে ইসলাম ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় শিল্পকলায়। বিভিন্ন রাগের বন্দিশগুলোতেও এর প্রমাণ স্পষ্ট। আল্লাহ-রসুলের গুণগান করা হয়েছে এসময়ের সৃষ্ট অনেক রাগের বন্দিশে। তবে শাসকরা বিশিষ্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হলেও রাষ্ট্রনীতি তাদের কাছে ধর্মনীতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যাই হোক ধর্ম সমন্বয়ের এই যুগে শিল্পী মূলত সংগীতশিল্পিদের করা হয়েছিল সবচেয়ে অবজ্ঞা। তাদের জন্য ছিল না বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। বৃহত্তর সমাজে তারা ছিল পরিত্যাজ্য। নবাব-রাজা-বাদশাদের জলসাঘরে সংগীত পরিবেশন ছাড়া তাদের শিল্পীসত্তা বিকাশের অন্য কোনো পথ ছিল না। সাধারণ মানুষের সেই জলসাঘরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। অর্থনৈতিকভাবে তারা ছিল রাজা-বাদশাদের ওপর নির্ভরশীল। আর এইসব রাজা-বাদশারা সংগীতশিল্পীদের শিল্পীসত্তাকে দেহ থেকে পৃথক করে দেখতেন না, তাই তাদের বলা হতো বাঈজী। মুসলমান শাসকরা বাংলার মসনদ অধিকার করলে সেই সময়ের মুসলমান কবিরা তাদের মুসলিম পাঠককে তৃপ্ত করতে গিয়ে অবলম্বন করেন নানা ধর্মিয় কাহিনী, যে কাহিনীগুলোর অধিকাংশই ছিল আরব বা ইরানের। পরে এ অবস্থা থেকে ক্রমমুক্তির মাধ্যমে শিল্প-সাহিত্য-সংগীত ধর্মনিরপেক্ষতায় লালিত হয়। আকবরের বঙ্গজয়ের প্রাক্কালে দ্বিজ বংশী দাস লিখিত ‘মনসামঙ্গল’-এ ধর্মসহিষ্ণুতার পরিচয় পাওয়া যায়। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাজাহান এরা সকলেই নৃত্যগীতের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। উপমহাদেশের প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর শুধু সংগীতের সমঝদার ছিলেন না, তিনি নিজেও একজন উঁচু মানের সংগীতজ্ঞ ও সংগীত সমালোচক ছিলেন। গাইবার নতুন রীতি যারা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন সেসব সৃজনশীল গায়কদের বাবর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। শের আলি বেগ ছিলেন সম্রাট বাবরের বিশেষ প্রশংসাভাজন সংগীতকার। শিল্পকলার নিবেদিত পৃষ্ঠপোষক হিসাবে সম্রাট আকবরের নাম অন্যদের অবদানকে নিষ্প্রভ করে দেয়। আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরী’-তে লিখেছেন, ‘সম্রাট আকবর মোহময় এই শিল্প মাধ্যমের একজন পরমহিতৈষী ও প্রতিপোষক হিসেবে এর চর্চা, সাধনা ও পরিবেশনে উৎকর্ষতা আনয়নের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন। তার দরবারে উপস্থিত থাকতেন পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও নারী সংগীতজ্ঞ। এদের কেউ হয়ত ছিলেন হিন্দি, কেউ ইরানি, তুরানি বা কাশ্মিরি। সভাসংগীতজ্ঞরা সাতটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলেন। সপ্তাহের একেক দিন একেক গ্রুপকে সংগীত পরিবেশন করতে হত। আকবরের দরবার সমৃদ্ধ করেছিলেন মিয়া তানসেন ছাড়া আরো অনেক গুণী সংগীতজ্ঞ শিল্পী। তাদের মধ্যে মান্ওয়ার রাজা রাজবাহাদুরও ছিলেন। আকবরের শাসনকালেই বহিরাগত বাদ্যযন্ত্রের সাথে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণের ফলে আকর্ষণীয় বাদ্যযন্ত্র উদ্ভবের মধ্য দিয়ে নতুন অনেক যন্ত্রের সৃষ্টি হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরও দরবারের সাঙ্গীতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখেছিলেন, তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও তিনি ছিলেন অসম্ভব সংগীতানুরাগী। জানা যায়, সম্রাট শিকার বা অন্য কোনো কারণে রাজধানীর বাইরে অবস্থান করার সময় সংগীতশিল্পিদেরও সাথে নিয়ে যেতেন। তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞি নুরজাহানও ছিলেন সুললিত কণ্ঠের অধিকারিণী এবং কায়মনোবাক্যে সংগীতপ্রেমী। এই শিল্পকলা চর্চার জন্যে উৎসাহিত করতেন ভীষণভাবে। ধর্মবিশ্বাসে সম্রাট শাজাহান গোঁড়া হলেও গান শোনা ছিল তার প্রতিদিনের অভ্যাস।
বিভিন্ন দেশ থেকে সুন্দরী নৃত্য-গীত পারদর্শী শিল্পীদের এনে জলসাঘরের জৌলুস বৃদ্ধি করতেন। সম্রাটদের মধ্যে বিশেষ করে আকবরের সময়ে নৃত্যগীতের সর্বাধিক প্রসার হয়েছিল। আমির ওমরাহ বা নবাবদের চিত্তরঞ্জনের জন্য সংগীত কিছুটা আদর্শচ্যুত হলেও রাগাশ্রয়ী সংগীতে গজল ও ঠুংরিও পরিবেশিত হত নৃত্যের সাথে। নবাবদের জলসাঘর ছাড়াও জমিদারের অন্দরমহলও মুখর রাখতেন বাইজিরা। বিভিন্ন পালাপার্বণে বসত আসর। দেশীয়দের সাথে সাহেবরাও আমন্ত্রিত হতেন নাচ-গানের এসব আসরে। বাঈজীদের মধ্যে কেউ-কেউ ছিলেন যারা জলসাঘরে শুধু সংগীত পরিবেশন করেই নবাবদের মনোরঞ্জন করতেন, দেহ বিলিয়ে নয়। পরবর্তীকালে কেউ কেউ বেরিয়ে এসেছিলেন জলসাঘরের সেই সীমাবদ্ধ গণ্ডী থেকে। ঔরঙ্গজেবের সংগীত বিদ্বেষের কারণে বাঈজীরা নেমে আসেন মাটির কাছাকাছি, গণ-মানুষের কাছাকাছি। সাধারণ মানুষের সংস্কৃতির সাথে তারা পরিচিত হন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাদের শিল্পজ্ঞান। বাঈজীদের মধ্যে অনেকেরই গান রেকর্ডকৃত হয়। এদের মধ্যে বেগম আকতারী বাঈ, গোবিন্দরানী বাঈ, গওহরজান বাঈদের গান আসন করে নেয় জনগণের মনে। তার গাওয়া ১৮৭৩ সালে রবীন্দ্র সংগীতসহ অনেক গান রেকর্ডকৃত হয়। ‘কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলাম না…’ গানটি ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত। এছাড়াও তার প্রিয় গানের মধ্যে ছিল ‘হরি বলে ডাক রসনা’, ‘ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখি উড়ে গেল’, ‘আজ কেন বধূ অধর কোণে’ ইত্যাদি গানগুলো। কৃষ্ণাভিমানী, আগ্রাওয়ালী মালকাজান এরা ছিলেন ঊনিশ শতকের বাঈজী শ্রেণীর গায়িকা। আগ্রাওয়ালী মালকাজান ত্রিপুরের রাজদরবারে বার বছর ছিলেন। গজল ও ঠুংরি তিনি খুব ভাল গাইতেন। কৃষ্ণাভিমানি বাইজির ৬টি রবীন্দ্র সংগীত ও ৪৭টির মতো বাংলা গান রেকর্ডে আছে। খেয়াল ও ঠুংরিতে কৃষ্ণাভিমানির চমৎকার দখল ছিল। কিন্তু তা অনেক পরের কথা। বেগম আকতারী বাঈ, গোবিন্দ রানী বাঈ প্রভৃতি বাঈজীদের গান রেকর্ড হয়ে পরবর্তীতে সাধারণ জনগণের মনে আসন করে নেয়। বাঈজীরা যে শুধুমাত্র মনোরঞ্জনের জন্যই গান পরিবেশন করতেন এমন নয়, তারা অনেক উঁচু মানের আধ্যাত্মিক গানও করতেন।
আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা।
জনমের শোধ, ডাকি গো মা তোরে
কোলে তুলে নিতে আয় মা…
সমাজে যারা ছিলেন অবহেলায়, সেই সব অপাংক্তেয়দের কবিরা দেখেছেন মানবতাবাদী দৃষ্টিতে। কবিগুরু রবী ঠাকুরের ‘পতিতা’ কবিতায় ফুটে ওঠেছে এই জনপদ বধূদের কথা।
আমি শুধু নহি সেবার রমণী
মিটাতে তোমার লালসা ক্ষুধা।
তুমি যদি দিতে পূজার অর্ঘ্য
আমি সঁপিতাম স্বর্গসুধা।
দেবতারে মোর কেহ তো চাহেনি
নিয়ে গেল সব মাটির ঢেলা,
দূর দুর্গম মনোবনবাসে
পাঠাইল তারে করিয়া হেলা।
কবিতাটি রচিত হওয়ার চার বছর পর ১৯০১ সালে এক বৈঠকে কবিতা আবৃত্তিকালে রবীন্দ্রনাথ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন: ‘আমি এ কবিতায় বলিতে চাহিয়াছি যে রমণী পুষ্পতুল্য, তাহাকে ভোগে বা পূজায় তুল্যভাবে নিয়োগ করা যাইতে পারে। তাহাকে যে কদর্যতা বা পবিত্রতা প্রকাশ পায় তাহা ফুলকে বা রমণীকে স্পর্শ করে না। ফুল বা রমণী চির পবিত্র, চির অনাবিল, তাহাতে ফুলের বা রমণীর কোন ইচ্ছা মানা হয় না বলিয়া সে ভোগে বা পূজায় নিয়োজিত হয় এবং তাহাতে নিয়োগকর্তারই মনে কদর্যতা বা পবিত্রতা প্রকাশ পায়।’
সান্ত্বনা, সম্পর্ক থেকে শুরু করে জীবনের সংগ্রাম উঠে এসেছে তাদের গানে। দেবজিতের ভাষায়, ‘এ জীবন দিনগত পাপক্ষয় এর প্রতিনিয়ত যেন এক পূর্ণ জীবনের অধিকার লাভ। প্রতিনিয়ত যেন এক জীবন সংগ্রাম। শ্বাস-প্রশ্বাসে ঘামে-রক্তে প্রতিমুহূর্তের স্বকীয় জীবনের কাঠিন্যে দ্বন্দ্বময় সেই নারী। তাদের দেহ কণ্ঠের স্পর্শে রূপান্তর হয়ে যায় সমস্ত তর্ক-তত্ত্বে।’
সম-সময়ের ছাপ পাওয়া যায় এমন কিছু গানও আছে তাদের, যেমন—
বাঁকা সিতে ছড়ি হাতে বাবু এসেছে।
হেসে কাছে বসেছে
কামিজ আঁটা সোনার বোতাম,
চেনের কি বাহার,
রুমালে উড়ছে লেভেনডার,
গলায় বেলের কুঁড়ির হার,
গলা ধরে সোহাগ করে,
নইলে কি মন বসেছে
জীবনের তাড়নায় পেশাকে আঁকড়ে ধরলেও তাদের মনে যে সাধারণ নারী-প্রেমের ব্যাকুলতা ছিল তা তাদের গানের মধ্য দিয়েই বারবার প্রকাশিত হয়েছে—
ওগো আমার সোনার ছবি ভেঙে দিও না।
দেখে দূরে যাও গো সরে কাছে যেও না
ছবি আছে এক আশে,
তার অধরে মধুর হাসি কাঁপে তরাসে—
(ওগো) মিশিয়ে যাবে কঠিন পরশে।
তার চোখে আঁকা জলের রেখা মুছে নিও না
অথবা
কই কেউ বলে না আমায়।
কাঁদো কাঁদো মুখে কেন ছলছল চায়,
কেঁদে এস এরা কেন কেঁদে ফিরে যায়
আপনার মত আসে, আপনারে ভালোবাসে,
পরের মতন শেষে কোথা ভেসে যায়।
আপনি কাঁদিয়ে কেন পরেরে কাঁদায়
পূর্বেই বলেছি, গীতিকার হিসাবে তখন জনপ্রিয় ছিলেন রামনিধি গুপ্ত। তাঁর জনপ্রিয় গানের একটি:
জনম আমার শুধু সহিতে যাতনা।
জীবন ফুরায়ে এল, আঁখিজল ফুরাল না
এমনি অদৃষ্ট ঘোর, জনমেও সখি মোর,
পুরিল না জীবনের একটি কামনা
খুব জনপ্রিয়তা না পেলেও কিরণশশী দাসের গানও শোনা যেত। মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ দিকে অর্থাৎ ঔরঙ্গজেবের সময় থেকেই শুরু হয় সংগীতের দুর্যোগপর্ব। ঔরঙ্গজেব ছিলেন ধর্মান্ধ এবং সংগীতবিদ্বেষী। তার সময়ে এসে বাঈজীরা হয়ে গেল স্থানচ্যুত, ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষিপ্তভাবে। আর্থিক অনটনে তাদের জীবন হয়ে পড়ল অনিশ্চিত। কোনোরকমে বেঁচে থাকার জন্য তারা আশ্রয় গ্রহণ করল বিত্তবানদের। শম্ভুনাথ ও অনিন্দিতা ঘোষ তাদের বইতে লেখেন, ‘অনেকেই লক্ষ্নৌয়ের নবাব আসাউদ্দৌলার দরবারে যোগ দিলেন। লক্ষ্নৌতে অযোধ্যার শেষ স্বাধীন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের দরবার অলংকৃত করেছিলেন সুবিখ্যাত কথকশিল্পি ঠাকুর প্রসাদ। নবাব নিজেও ঠাকুর প্রসাদকে নৃত্যগুরু হিসাবে বরণ করেন।’ এভাবে কিছু শিল্পী বেঁচে গেলেও অধিকাংশ শিল্পী তথা বাঈজী তখন বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে একরকম যুদ্ধ করে টিকে থাকতে চেষ্টা করেন। এই সংগ্রামের মাধ্যমেই উঠে আসেন আকতারী বাঈ, গোবিন্দ রানী বাঈ, গওহরজান বাঈ এর মতো শিল্পীরা। গীতিকার হিসাবে তখন জনপ্রিয় ছিলেন রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু। এছাড়াও দশরথী, ভারতচন্দ্র রায়ের মতো বহু গীতিকারের গানই হয়েছে বাঈজী সংগীত সংকলনভুক্ত। এছাড়াও আছেন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মধুসূদন দত্ত, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখ। খুব জনপ্রিয় না হলেও কিরণশশী দাসীর গানও শোনা যেত। গোবীন্দ রানী বাই এর গান রেকর্ড হয় বিশ শতকের গোড়ায়। বাঈজীরা শুধুমাত্র যে তাদের নিজেদের গানই গাইতেন তা নয়; সেকালের অনেক গীতিকারের গানকে বাঈজীরা প্রথমে জনসমক্ষে আনেন, পরিচিত করান, এবং তাদের দ্বারাই গানগুলো সে সময় জনপ্রিয়তা পায়। এ থেকে বাঈজীদের সংগীত-সংস্কৃতি সম্পর্কে যে উচ্চ ধারণা ছিল তা সহজে অনুমান করা যায়। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয়তো তাদের ছিল না কিন্তু নিজেদের পেশার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ তাদেরকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিল। … সেই সময় বিভিন্ন বাইজিপল্লিতে অনেক গীতিকারের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গানও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল। নীচে নটবেহারি মজুমদার সংগৃহিত একটি সংগীত দেয়া হল যা থেকে তাদের সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যাবে।
আজ তোমায় দেখতে এলেম, অনেক দিনের পরে।
ভয় নাইকো সুখে থাকো, অধিকক্ষণ থাকবো নাকো,
আসিয়াছি দু’দণ্ডেরি তরে।
একথা বলাবাহুল্য যে, বহু গীতিকারের মতো রবীন্দ্রনাথও এই গানটি নিশ্চয়ই বাঈজী সংগীত হিসেবে রচনা করেননি। পরবর্তীতে বাইজিরা এধরনের গানকে তাদের ভাণ্ডারে জমা করে সমৃদ্ধ হয়েছিল। বাঈজীরা রবীন্দ্রনাথের আরেকটি গানকে জনপ্রিয় করেন:
আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি,
তুমি অবসর মত বাসিয়ো।
নিশিদিন হেথায় বসে থাকি
তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো।
ইংরেজ রাজত্বের প্রথম দিকে, আধুনিক কালের শুরুতে, অর্থাৎ ১৭৫৭ খ্রি. হতে প্রথম দুই-তিন দশক সংগীতের ধারা ধীরে চললেও দ্বিতীয়ার্ধে, ১৮০০ খ্রি. হতে সংগীতের মুক্তিপর্ব শুরু হয়। এই সময় ওস্তাদ আর বাঈজীদের সীমাবদ্ধ গণ্ডী ভেদ করে সংগীত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ইংরেজ শাসনামলের এই সময়ে বাংলাগান ধীরে-ধীরে পাশ্চাত্যের সংগীতের সংস্পর্শে আসতে শুরু করে। পাশ্চাত্য সংগীতের প্রভাবও পড়ে এইসময়ই। বলা হয়, রবীন্দ্রনাথ উপনিষদ প্রভাবান্বিত ছিলেন। তবু রবীন্দ্রনাথই প্রথম আধুনিক শিল্পী যিনি সুনিপুণভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের সমন্বয় সাধন করেছিলেন। বাংলা গানের ভাবকে নষ্ট না করে তিনি পাশ্চাত্য সুরের সাথে দেশীয় সুরের সমন্বয় সাধন করেন।
ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কিবা মৃদুবায়
তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোল চলিয়া যায়।
অথবা
পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে-কি ভোলা যায়।
বাংলা গানে পাশ্চাত্য সুরের এই প্রভাব ধীরে-ধীরে বাড়তে থাকে। রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতি চর্চার পাশাপাশি বিগত পঞ্চাশ বছরে নিপুণভাবে বাংলা গানের চর্চা হলেও তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কমে গেছে লোকজ সংগীতের কদরও। বাউল গান প্রায় হারাতে বসেছে। পাশাপাশি জনপ্রিয়তার জন্য বাংলাগানের মূল ভাবকে নষ্ট করে যেন-তেন ভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে পাশ্চাত্য সুর। এরই ফলস্বরূপ বাংলা গানে গড়ে ওঠে ব্যান্ডসংগীত নামের নতুন একটি ধারা। তবে আশার কথা বাংলাগানের চিরায়ত ঐতিহ্যে ফিরে যাবার বাসনায় ক্রমেই লোকজ সংগীত, বাউল গান স্বমহিমায় ফিরে আসছে। তবে বাংলাগানের আধুনিকায়নে প্রাতিষ্ঠানিক-প্রাথমিক পর্যায়ে বাঈজীদের অবদানকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এরাই আমাদের সংস্কৃতির চলমান স্রোতকে একটি সময় জিইয়ে রাখে, বিশেষ করে সংগীতের ক্ষেত্রে। দেবজিত্ বন্দোপাধ্যায়ের একটি কথা দিয়ে এ-প্রবন্ধের ইতি টানব, ‘এ যেন বিনোদনের এক লম্বা করিডোর দিয়ে হেঁটে চলা— দু’ধারের ঘরে ঘরে পালটে যায় রূপসজ্জা— ফুলের গন্ধ— ঘুঙুরের আওয়াজ। তবলা সারেঙ্গী আর হারমোনিয়ামের মুর্চ্ছনায় শোনা যায় ভিন্ন চরিত্রের গান। গায়িকাদের তালিম চলে ঊষার প্রায় বিরাম গভীর দিনান্তে বহু পথিকবন্ধু রচনা করে দেয় রজনীর শেষ তারার সুপ্ত গীতের মালা। প্রয়োজন আর প্রয়োজনাতীত, প্রাকৃতিক আর মানবিক, তন্ময় শরীর আর হীন অর্থ ভাবনা দুয়েরই পরিচর্যা হয় তাঁদের গানে। একদিকে যেমন আছে দর্শন, অন্যদিকে তেমনই ইতিহাস।’ বাঈজী সংগীতের একটি চমৎকার ইতিহাস আছে। এ নিয়ে আরো গবেষণা হলে হয়তো অনেক মূল্যবান তথ্য ও সংগীত আমাদের গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।
দায় স্বীকার:
১। দেবজিত্ বন্দোপাধ্যায় : বেশ্যা সংগীত ও বাঈজী সংগীত
২। আবুল ফজল : আইন-ই-আকবরী
৩। সনৎকুমার নস্কর : মুঘল যুগের বাংলা সাহিত্য
৪। ম ন মুস্তাফা : আমাদের সংগীত ইতিহাসের আলোকে
১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, আগস্ট ২০০২