পরপর তিন তিনটা ককটেল ফাটানোর পর সমস্ত রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেল। হরতাল অমান্যকারী ভিড় বেশী ভাড়া দাবি করা কয়েকটি টেম্পু রিকশা যেদিকে পারল পালাল ভয়ে। চটজলদি নেমে গেল দোকানের সার্টারগুলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে এক মধ্যবয়েসী লোক। অফিসে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিল বাসের অপেক্ষায়। পরিবেশ যখন ভীষণ থমথমে পাঁচজনের দলটি চেঁচিয়ে উঠল- হরতাল সফল হোক। আরও কয়েকবার চেঁচানোর পর টায়ারে আগুন ধরানো হল। কালো ধোঁয়া টায়ার পোড়া কটু গন্ধ বিভিন্ন খোপে লুকিয়ে থাকা অসহায় মানুষগুলোকে করে তুলল আরও বেশী আতংকিত। এলাকার বিখ্যাত লেজকাটা কুকুরটি তখন ডাস্টবিনের পাশে তার সঙ্গীনির পাছাতে লিঙ্গভেদ করতে উদ্যত। আতংকিত হয়ে সেও হারিয়ে ফেলল শিশ্নের রাগ।
যে পাগলটি প্রতিদিন সকালবেলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা স্কুলের সামনে কিশোরীদের দেখে কামার্ত হয় আর লুঙ্গির তলে হাত ঢুকিয়ে বসে থাকে সেও আচমকা দাঁিড়য়ে গেল রাস্তার মাঝখানে। ট্র্যাফিক পুলিশের মতো মুখের ভিতর বাম হাত ঢুকিয়ে ভঙ্গি করল বাঁশি বাজানোর তারপর ডান হাতে একটি কঞ্চি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অকেজো এক গাড়িকে পেটাতে শুরু করলে পাগলের ছেঁড়া লুঙ্গিটি কোমর হতে খসে পড়ে। তখন সকলের আতংকিত চোখে খেলা করে বিস্ময়। এ্যাদ্দিন যারা কেবল দেখেছে পাগলার কারবার অথচ দেখেনি পাগলের যন্ত্রকে তারা বুঝতে পারে এইরকম হয় না সচরাচর । যাদেরটা ছোট তারা হতাশ হয় পাগলের যন্ত্রের সাথে তুলনা করে। কিন্তু মধ্যবিত্ত চোখ চক্ষুলজ্জার নিমিত্তে কোনকিছুতে বেশীক্ষণ আটকে থাকতে পারেনা। তবে একজন ডাক দিতে চেয়েছিল শিবলিঙ্গ বলে। কিন্তু তার পাশের বন্ধুটি হিন্দু। এতে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত লাগার সম্ভাবনা বেশী। শেষ পর্যন্ত বেচারা কথাকে দমন করল ঠোঁট কামড়ে। জটলায় গরমে একজন অনুচ্চস্বরে বলল- শালার ভাদ্র মাসের তালপাকা গরম। দুয়েকজন তার কথাতে সায় দিলে সে বুকে ফু দিয়ে বাতাস করে। জটলা ভেদ করে বাইরে উঁকি দিলে দেখতে পায় পুলিশের জিপ ছুটে আসছে। স্পটে এসে রোবট পুলিশ নিয়ে নিল সশস্ত্র পজিসন। তাতে আরেকজন উঁচু গলায় বলে ফেলল- বাংলা সিনেমা। ঘটনার শেষে পুলিশের আগমন।
পুলিশের বাঁশি শুনে প্রথমেই রাস্তায় নামল অন্ধ ভিখিরিটি। ঘটনার সময় সে কিভাবে লুকিয়েছিল তা বিস্তর গবেষনার দাবি রাখে। কিন্তু এখানে সময় সংক্ষেপের কারনে অনুল্লেখিত থাকবে। একজন অন্ধ ভিখিরির প্রথমেই রাস্তায় নামার বিষয়টিতে অধিকাংশ লোকের ইগোতে লাগল। প্রতিযোগির উত্তেজনা নিয়ে তারাও নেমে পড়ল ট্র্যাকে। অথচ পুলিশের চোখ দেখে তাদের সমস্ত উত্তেজনা প্রশমিত হলে ভাব করল কিছুই না জানার। যে বাজার করতে এসছিল সে ঢুকে পড়ল কাঁচাবাজার। যে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে সে লেট করে হলেও হেঁটে যেতে লাগল অফিস।
কিছু সময় পার হলে দেখা গেল দুয়েকটা রিকশার আনাগোনা। পুলিশ একজন সন্দেহকারীকে জিজ্ঞাসা করছে। অন্য একজন কানে ওয়ারলেস লাগিয়ে কেবল মূখস্ত বলে যাচ্ছে ইয়েসস্যার- ইয়েসস্যার…
একজন চিকনা রিপোর্টার রিপোর্ট লিখছে ঘটনাস্থলের। এক পথচারীকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাতে জানাল- প্রায় পঞ্চাশজন লোক ককটেল ফাটিয়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে।
যারা ঘটনা পুরোপুরি অবলোকন করেছেন তারা অন্যজনের সাথে সাক্ষাতে জানাতে লাগল- অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। আমার চোখের সামনেই ককটেল তিনটা ফাটল।
অন্যজন বলল- দেখেছেন পাগলের কান্ড? মেয়েরা স্কুলে যেতে লজ্জা পায়। মতিন ভাইকে বল্লেও কানে তুলছে না।
-মতিন ভাই চাপে আছে।
-চাপে থাকবে না! এলাকার পোলাপাইনগুলোতো সব এখন জাহাঙ্গীরের পিছনে…
কথোপকথনকালে ছয়ফুট লম্বা পাগলের পুন আবির্ভাব ঘটলে কেন্দ্রে সবার চোখ চলে যায় তার ওপর। যেখানে পুলিশের সশস্ত্র নজরদারি আতংক ভুলে যাওয়া মানুষ সার্টার গুটানো দোকান ভ্যান রিকশা টেম্পু। পাগলের হাতে তখনও সেই বাঁশের কঞ্চি। বিড়বিড় করে কিছুদূর দৌড়ে যাচ্ছে আবার বেক করছে। আর তার শিশ্ন দৌড়ের সাথে দুই উরুতে বাড়ি খাচ্ছে তাল রেখে। উপরোক্ত ব্যাক্তিদ্বয়ের কাছে গিয়ে পাগল বল্ল- দশটা টাকা দে। টাকার মধ্যে ‘চাহিবামাত্র বাহককে দশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ এই উক্তিটি যার জানাছিল সে পাগলের রাগি চোখের ভয়ে চটজলদি দশ টাকা বের করে দিল।
পূর্বঘটনার জের ধরে লেজকাটা কুকুরটি ভয় পেয়ে লুকিয়েছিল ডাস্টবিনের ভেতর। আতংক কেটে যাওয়াতে সে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল। বেরিয়েই কয়েকবার ডাকল সঙ্গীনিকে। তখন দেখে অদূরে সঙ্গীনির পাছা শুকছে অন্য এক কুকুর। তারপর কেন্দ্রে চোখ ফেরাতেই দেখল পাগলের নেতানো শিশ্ন পেন্ডুলামের মতো বাড়ি খাচ্ছে উরুতে। বাড়ি খেয়ে ফুলে ফুলে উঠছে। কিন্তু কুকুর তার লাল মাংসপিন্ড থলে থেকে বের করতে পারছেনা।
টাকা পেয়ে পাগল খুঁজছিল সেই মাগীকে। যে গতরাতে তাকে নিম্নমূখী স্তন দেখিয়ে বলেছিল- নিবি? দারোয়ান বিশ টাকা দিয়েছে। তুই দশ টাকা দিলে হবে।পাগল দিতে পারেনি। ফলে একটা চাপা অভিমান ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে নিজের হাতকেই কল বানিয়েছিল সে। পাগল দেখে দুজন এন.জি.ও. মাঠকর্মী হরতাল দিনেও দেহজীবিনি জরিপে বেরিয়েছে। সুপার মার্কেটের সিঁড়ির তলায় থাকে যে দেহজীবিনি তার সার্ভে হচ্ছে। যার সাথে এই সুপার মার্কেটের দারোয়ানের আছে দেহমনোগত ভাব । পাগলকে তেমন পাত্তা দেয় না। দারোয়ান বেশ হম্বিতম্বি ভাব দেখাচ্ছে মাঠকর্মীদের সাথে। জরিপের ভাষা শুনে দেহজীবিনিও হেসে উঠছে লজ্জায়। ফলে মাঠকর্মী দুজন ছেলে ও মেয়ে উভয়ে পড়েছে বেকায়দায়। জরিপের খালিঘরে ঠিক চিহ্ন দিতে দিতে দেখে পাগল শিশ্ন পাকিয়ে এগিয়ে আসছে। তার পেছনে লেজকাটা কুকুর। সে তার লেজ ফিরে চায়। পাগলের শারীরিক ভাষা মাঠকর্মী দুজনকে যথেষ্ট আক্রান্ত করে। দেহজীবিনির সম্ভ্রব রক্ষার্থে দারোয়ান লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় পাগলের সম্মূখে।
কুকুরী তখন ডগি স্টাইলে। নয়া জোয়ান কুকুর অস্ত্র ঠেকিয়ে নিয়ে নিয়েছে পজিসন। এসব দেখে লেজকাটা কুকুর পারলনা আর নিজেকে ধরে রাখতে। প্রচন্ড রাগ ঘৃণা হিংস্রতা নিয়ে সে ছুটে গেল তাদের দিকে।
যারা অফিসের জন্য সকালে বেরিয়েছিল তারা এসব কিছুই দেখলনা। যে বাজার করতে এসেছিল যে পিতা তার কিশোরী মেয়ের লজ্জার কথা বলছিল যে পাগলকে দশ টাকা দিয়েছিল এই ঘটনা তাদের সকলের সামাজিক মূল্যবোধে ধাক্কা দিলে ভীষণ। পাগলের যন্ত্র দেখে যে লজ্জিত ব্যথিত হয়েছিল তারই কেবল মূখ ফসকে বেরুল-শালা কুত্তারবাচ্চা। অন্য কেউ ঘটনার প্রতিবাদ জানালো না।
এমতবস্থায় পুলিশের নীরব ভূমিকা সবাইকে সন্দিহান ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলল।
1 Comment
ভালো লিখেছেন উপল। লেখায় মুন্সিয়ানা আছে। নিখুঁত বর্ণনা। অভিনব ভাব।
আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।