আত্মগত প্রলাপ
ও আমার ব্যাধিগ্রস্থ শহর, দুঃখবৃত্ত ছন্দে তোমাকে লিখছি
সুর ক’রে তাল লয় ঠিকঠাক ক’রে ক’রে তোমাকে পড়ছি
কর্কশ দুপুরে
যেভাবে ছাদ থেকে বয়স্ক পলেস্তারা খসে খসে পড়ে
কবিতা নয়, আমারই আত্মগত প্রলাপ
পাঠ করতে করতে দেখি— অশ্রুসমেত
শব্দডোবায় ভেসে যাচ্ছে গাঢ় অক্ষরের মতো দু’একটি চোখ
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে কাছাকাছি
আমারই করুণ অতীত
ভুল বুননের বুকে কী করে জাপটে ধরি তাকে?
পাঁচ টাকার গরীবি ব্র্যান্ডের সিগারেট টানি, কখনো টানতে টানতে
পলাশীর দিকে এগোই
কখনো নীলক্ষেত পার হয়ে
উদ্যানের ফ্রন্ট সাইড— টিএসসির বাইর আঙিনা—
বিকেলের পর দেখা যায় সোনালি চুলের সেই রমনী
শরীরের আঁজভাঁজ ঢেকে রাখে মৃদু
অপর পুরুষ মুঠোভরে তার আঙুল ডুবিয়ে রাখে
চলে যায়— চলে যায়
ওরে সহজিয়া প্রেম,
সস্তা নিয়মে চলতে পারি না বলে— এই শহরে
এখনো প্রেম ছোঁয়া হলো না
না-হোক তবু মানুষ কিংবা অমানুষের ভিড়ে কোনো কোনো র্যাসিস্ট
দু’পয়সার জীবন তো ছুঁয়ে দিয়ে যায়!
ওরে জীবন, ও ব্যাথিত জীবন,
আদি বিন্দু থেকে অন্তের দিকে তির্যক হেঁটে চলা তোমার
এই শহরে নামপদের বাইরে কোনো নামগন্ধ নাই
তবু কোনো উজানিয়া মেঘ— দলায় দলায়
রাজনৈতিক ছন্দে গলে পড়ে তোমার ভেতর
রিমঝিম– টুপটাপ– কখনো গর্জন শুনি…
মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় অপ্রিয় রিংটোন বেজে ওঠে ফোনে
স্ক্রিনে ত্রিবিন্দু উঠানামা করে—
মায়ের সেই নৈমিত্তিক সুরেলা আওয়াজ
বাড়ি আয়— বাড়ি আয়— বাড়ি আয়…
ও আমার ব্যাধিগ্রস্থ শহর,
কানে কানে কথা বলা ভালো লাগে না
দূরান্ত দুঃখ আমার একদম ভালো লাগে না
কোলাহল ভেঙে ফিরে আসি ঘর
এইখানে নিজস্ব বলতে—
ভাড়ায় স্থির একটি চৌরসিয়া ঘরই রয়ে যায় শুধু
পুবের দেয়ালে চিত্রিত বনলতা সেন—
যার চুলের অন্ধকারে চোখ রেখে দু’একটি দীর্ঘশ্বাস নেয় জীবনানন্দ…
তার পর, তার পরের পরেও—
কবিতা নয়, আমারই আত্মগত প্রলাপ
পাঠ করতে করতে দেখি— অশ্রুসমেত
শব্দডোবায় ভেসে যাচ্ছে গাঢ় অক্ষরের মতো দু’একটি চোখ
একটি গোপন শ্বাস
প্রতিদিন
তার ফুসফুসে একটি গোপন শ্বাস রেখে বলি—
যত্ন করে রেখে দিও, প্রিয়জন
জল দিও— জলোৎসব হবে
একটি মায়াবী চারাগাছ জন্মাবে বুকের ভেতর
তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে
ছায়া দেবে আমাদের বৃক্ষ
পৃথিবীতে তখন শান্তিমতো নিঃশ্বাস নেয়া যাবে
সুবোধের প্রতি
কোন্ আ-কারে তুমি কার—
হযরতিয়া শাড়ির আঁচল ধরে আছো
চিনতে পারো না সুবোধ?
তবু সেই শাড়ির সুতোয়
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকুক
তোমার আধুনিক মননের গতি!
একটি শাড়ি কেমন হয়ে ওঠুক
তোমার চিন্তা সমগ্র, বিপ্লবী পতাকা!
তোমার অবেলার দুঃখ, অ তে অশান্তি…
সব— সবকিছু!
দেখো ফোরাতের জলে একদিন যদি
ডুব দিয়ে আসা যায় ধর্মীয় জাহাজে!
তারপর
বেঁচে থাকলে একসঙ্গে
পুলসিরাত পার হওয়া যাবে!
ভিনদেশি ঝড়
ফর্সা শাঁসের সুপারি— মায়ের বড় প্রিয় ছিল
ভিনদেশি ঝড় এসে সেই সুপারি গাছটিরে
বিদ্যুতের তারের উপর ফেলে দিলো নির্মমভাবে
এই দুঃখে ঝড়ো হাওয়ায় কাঁপে
আব্বার গভীরতম নিশি!
আর আমি—
মোমের আলোয় সে-ই তো লিখতে বসলাম…
হোসাইন মাইকেল
জন্ম— ৮ জুন, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে। কবি ও গদ্যকার। সম্পাদনা করেন ওয়েবজিন দিব্যক।