একটি ফটোগ্রাফ এবং জলফড়িং গল্প
আকাশ তুই কার জন্য কাঁদিস?
নাটাই এর সুঁতো কেটে উড়ে গেছে মেঘঘুড়ি— নাটালির মেয়েটার কাজল মাখা প্রশ্নবোধক চোখ—
কে তুমি পরিচিত? সেই ভালবাসা— কমলি শাকের ওপর প্রিয় জলফড়িং;
নাকি নিরেট শুভ্র মধুরিমায় কোন দূর সীমানায় দেখা হয়ে যাওয়া কবেকার নিশিফুল…
স্রোত ধরে ধরে উড়ে যাচ্ছ নিশ্চুপ গাংচিল— বাতাসে ভেঙে ভেঙে পড়ে অপেক্ষার পার্থিব পালকবর্ষ;
সেই কবে শেষ দেখা, ফাগুনের উঠোন ভরা বৃষ্টি ছিল—
আমি কিন্তু কাঁদিনি কুড়ানো শেষে পুথির পুরাণ;
বিগত বসন্তরাগে বিয়োগান্ত প্রেমের দলেই পরে আছি অবয়ব— এক আশ্চর্য
মু-গল্পের চৈতন্যে নিত্ত বিভাস্তবক এ মনতাপস।
কী যেন নিস্পৃহতার ক্যানিবালিজম আমায় কুঁকড়ে খাচ্ছে ভেতর-বাহির;
ঠিক যেন অগ্রন্থিত মলাটের ভাজে একা পড়ে থাকা দ্বিধাগ্রস্ত ফটোগ্রাফ… সবুজ সুবিমল হারালে
সবাই এমন করেই চলে যায় একদিন—
গোধূলির গলে যাওয়া শঙ্খ আত্মার বিমূর্ত বিলাপে চকচকে জলের পরাভূত জলফড়িং—
নিভে গেছে তটিনী ধরে টিউলিপে নির্বাক সন্ধালোক!!
পাথরের চোখ
পাথরের চোখ তার পড়ে থাকে
নোনতা জলে,
নুড়ির বুকে;
সমুদ্র কি যানে, বুকে তার কত স্রোত
পাড় ভাঙে ধীর অধীরে?…
আদিগন্ত ঘুমিয়ে গেলেও
বালুকাবেলায় চিহ্ন আঁকে তার আঙুলেরা,
রেপিংপেপারের মতো খসখসে শব্দে পাখির ঝাক উড়ে যায়,
খুলে যায় হৃদয়ের ফসকা গিট।
শুধু খোলা থাকে তার পাখি শূন্য পোষা খাঁচা—
আসলে গাংচিল সুমুদ্রের কাছে কী চায়?…
ঢেউয়ের বুকে বুক চিতিয়ে এক বুক
নোনা তৃষ্ণা ছাড়া?…
ভ্রষ্ট স্মৃতির রেলগাড়ি
দুস্তর এ মধ্যরাত/ সাইরেনে বেজে ওঠা পুনশ্চঃ সেই জন্ম কথন/
ইথারে ফুলে ওঠা জানালার সবকটা টনটনে যোনি মুখ/
মেলে ধরে বিম্বের মতই ফুটে থাকে স্বপ্নহীন যত মিথ্যে শ্লোকে শেষতট/
আর কিছু অপেক্ষায় বুনতে থাকা অধরা/
যখন কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে ভিজিয়েছিলো উচ্ছিষ্ট কামকনাগুলো/
ঘুম ভেঙে দেখে বাতাসা হাতে করিডোরে দাড়িয়ে সেই শৈশব/
বাবলা গাছের তলা, কলাবাগিচায় পরিত্যাক্ত কনডম/
ফিরে আসে সবুজের মাঠ লাল হিজল ফুলে ফুলে/
মন্দিরে ঝরা ফুল হাতে যে মধ্যবয়সী বিধবা কামের তৃষ্ণা নিয়ে শুকায়েছে বিলাপের রোল/
এ মৃত্তিকায় জন্ম সুখ মিছে জানি শুধু তবে/
অলিক মাইফেলে শরীরের কুচকানো বলিরেখা পাতে সন্যাসী/
পড়েছিলো একদিন মন্ত্রসুখ কপাল কুন্ডলার/
তখন বিপ্রতীপ বেলেল্লাপনায় ফিনাইলে ধুয়ে ফেলা শহরতলির সেকেন্ড স্ট্রিট…
ঝরে গেছে বেমালুম ভেসলিন মাখা যত শুকনো পাতার ঝড়/
আবার রোদকনাগুলো বুড়ো হলে তীব্র অপ্রসন্নতায় সম্মুখে ডুবে থাকি তন্দ্রাচ্ছন্ন বিষন্ন কোন মধ্যান্নের বায়স্কোপে/
জ্যামিতিক মাপঝোক শেষে, সিম্পোগ্রাফের মতই কান পেতে রাখি এখন সুপরিকল্পিত স্টেথোস্কোপে!!
সংসার
শূন্য ঘর পড়ে থাকলে
বারান্দাকে কথা দেবার মত আর কিছুই থাকে না।
নোঙর
ধরে নিতে পার
একটা চুমুর স্থায়িত্বকাল হতে পারে ৫০ সেকেন্ড…
বাকী ১০ সেকেন্ড
তোমার পূর্ব প্রস্তুতির—
তুমি আসলে কত নটিকেল
বিস্তৃত হতে পারো?…
ইমতিয়াজ আহমেদ
জন্ম- ১৯৮৮ সালের ৫ আগষ্ট, ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর।
বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর
পেশা— সাংবাদিকতা ।