ধানসূত্র
ঢ.
দাঁড়কাকু, দাঁড়কাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধানক্ষেতে, ছদ্মবেশে, কাকতাড়ুয়ার। কাকতাড়ুয়া, তাড়ায় না কাক অথবা কাক আসে না কখনো ধান খেতে। তবু তার বদনাম, নামের পাশে বদ হাওয়া নিয়ে উড়ে যায়, উড়ে যাক, উড়ে খাক জগতের সকল জঞ্জাল। আর দাঁড়কাকু, অতীতের মতো, দাঁড়িয়ে থাকাই যার কাজ, কর্জ করা জামাটি পরে, পরাণের পাখিদের ডেকে নেয় বাহুর পরে; বাহু প্রসারিত করে ভবিষ্যতে নেবে দেবে যাওয়া পায়ের প্রশ্রয়ে। প্রশ্রয়ে তার ধানচাষ আর ধানচাষী, শতাব্দী ধরে। মরে গিয়ে চাষীর হৃদয় হয় দাঁড়কাকু, ফিরে আসে দাঁড়কাক হয়ে, কাকতাড়ুয়া হয়ে। ক্ষয়ে যাওয়া চাষীর জীবন তাহার, আহার আগলে রাখে আর বেঁচে থাকে জমির বুকে, ধুঁকে ধুঁকে, দাঁড়কাক হয়ে, আমাদের দাঁড়কাকু।
ণ.
এসেছে নদীর ঢেউ, ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস হয়ে জল, জলের উচ্ছ্বাস, জলোচ্ছ্বাস। তাকে দিতে হবে পাড়ি ধানের মৌসুম, মৌসুমী বায়ুর সাথে, আয়ুর সাথে, ধানের। ধানের আয়ু নদীর জলের সমান, সমসাময়িক তারা। ধারা বয়ে যাওয়া নদীর সাথে বয়ে যাওয়া ধানের জীবন, বয়ে যায় চাষীর চোখে। চোখে তার জল, জলের দর্পণ। দর্পণে ভেসে যাওয়া ধান, ডুবে যাওয়া ধান, মৌসুমী জলোচ্ছ্বাসে। এই যে উচ্ছ্বাস, জলের, এটা তার চেনা আর নিজেকে সে চেনে। ফলে বুনে যায় ধান নদীকূল ঘেঁষে, ভালোবেসে মৌসুমী হাওয়া ।
ত.
উঠোনে সোনালী ধান, সোনা রোদ সোনা বউয়ের পায়ে পায়ে। পায়ের তলে তার মহা পৃথিবী, পৃথিবীর উঠোন জুড়ে ধানের নাচন। নেচে নেচে সোনাবউ ঘাটে ধান আর গায় গীত ধান ভাঙ্গানিয়া। ভাঙ্গনের গান যেন আকাশ জুড়েও। গর্জে ওঠে মেঘের ষাঁড়েরা আর খেয়ে ফেলে রোদের উচ্ছ্বাস। মেঘের ষাঁড়ের ডাক বাতাস আর বৃষ্টির সংকেত, সোনাবউ চেনে। কোন ডাকে জল আর কোন ডাকে বায়ু, আয়ুর জন্ম থেকে সবই তার জানা। ডানামেলে ষাঁড়ের মেঘেরা আকাশ আড়াল করে ছুটোছুটি করে। ছুটোছুটি বেড়ে যায় ধানধর্মে বিশ্বাসী সোনা বউর। বেড়ে যায় বিশ্বাস তার মেঘের ষাঁড়ে।
আহমেদ মওদুদ
জন্ম: ১৯৮১। জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুরের মাহিগঞ্জে। লেখালেখি করেন দুই দশক থেকে। পেশা— শিক্ষকতা।
প্রকাশিত বই:
কবিতা: দেহের আড়ালে থাকে প্রকৃত স্বজন (মাটিয়াল— ২০০৯), দুঃস্বপ্নের চিরস্থায়ী বাগানের খন্ডচিত্র (বাঙময়— ২০১২), দুঃস্বপ্নের চিরস্থায়ী বাগানে (বাঙময়— ২০১৮)। কিশোর উপন্যাস: কিশোর (নিসর্গ— ২০০৭), কবি (বাঙময়— ২০১৭)। গবেষণাগ্রন্থ: রংপুরের লোকছড়া (বাঙময়—২০১৭)। জীবনীগ্রন্থ: বিদ্যাসাগর (মনদুয়ার— ২০২০)।