পিং পিং বল
ব্যধি সরে সরে আসে
দীর্ঘ হতে হতে
কবরে নেমে যায় রাস্তা
ব্যলট নেই বুলেট নেই
এক অশরীরী যুদ্ধ
যাবতীয় আয়োজনকে
পিং পিং বল ভেবে
মেরে যাচ্ছে ছক্কার পর ছক্কা
নানা বর্ণের
দামী রঙের
সামরিক সাজোঁয়া আজ খেলনা
খেলনানগরের নখ দাঁতহীন সম্রাট
শুকনো পাতার মতো গর্জায়
পাশ দিয়ে বয়ে যায় লাশনদী
মানুষ মারার কল
অসুখের কোনো দেশ হয় না সাগরী
খিদে মানে না কোনো সীমান্ত
এক অসুস্থ বাতাস
মুখে সময় নিয়ে
উড়ে বেড়ায়
আলোর আগে আগে
ভালোর আগে আগে
অসুখের ইশারায়
আজ বন্ধ ধর্মের সমস্ত দরোজা
কবরে তিল ধারনের জায়গা নেই
চোখ থেকে উধাও
আনন্দের দিনগুলি রাতগুলি
অসুখ আজ গর্ভে
অসুখ আজ অসুর ও ভগবানের
একহাতে দিন আরেক হাতে রাত নিয়ে
ঘরে বসে মানুষ
পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে উৎসব
মাথার উপর দিয়ে
চলে যাচ্ছে সুখ রঙের ঘোড়া
ঘোড়ার মুখের খবর নিয়ে
অসুখ বয়ে যাচ্ছে
দেশের পর দেশ
অসুখের মুখে আজ
মানুষ মারার কল।
দৌড়
ঘোড়া মারা গেলে
গাছজন্ম
পালিয়ে যাবার ইচ্ছে থাকলেও
পা রেখে
যেতে পারেনা কোথাও
জান বাজী রেখে
কিনে আনে ডানা
গাছের দৌড়
সেই ছাদ পর্যন্ত
লতিয়ে লতিয়ে…..
অসুখ
অসুখের ভিতর
যাতায়াত করে অন্ধকার
লালারস রক্ত-আমাশা
শাপ লেগে গেছে হাড়ে
দূরে দূরে সরে যায়
প্রিয় ছাদ
বোগেনভোলিয়াকে জড়িয়ে জড়িয়ে
সূর্যস্নান করে শালিখ দম্পতি
পড়ে থাকে আত্মাহীন খোলস
এই অবসরে
খোলসে খেলা করে প্রিয় ঈশ্বর
তুমি খোলস সাজিয়ে তুলছো
কান্নার অলংকারে
গোপনে পাচার করে দিচ্ছো অসুখ
অসুখের গভীরে
নামহীন গোত্রহীন এক সুখ
যাতায়াত করে জন্মের পর জন্ম।
ফুঁ
বাঁশী জন্মের লোভে
ফুটো সঞ্চয় করে বাঁশ
শূন্য থেকে গড়িয়ে আসা ফুঁ
ধারণ করে গর্ভে
বেজে ওঠার আগে
ফুঁ আর ফূটো
কাছাকাছি আসে
ঘি আর সলতে
অপেক্ষা করে আগুনের।
কুটুম
রোদে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
গাছ আমাদের কুটুম
আমাদের অসুখ
ধর্মান্তরিত হয়ে গাছেদের সুখ
তুমি গাছের বান্ধবী
ক্লান্ত রাস্তার পায়ের নূপুর
ছুয়েঁ থাকা পাপ
দু-হাতে নদী ছুটিয়ে জয় করছো আলো।
শোধ-প্রতিশোধ
মৃত শিশুর হাতে বাতিল খেলনা
খেলনা নগরীর শেষ কান্না
ধাক্কা খাচ্ছে গম্বুজে গম্বুজে
তুমি সংশোধন করতে চায়ছো
জীবনের প্রথম ও প্রধান ভুল
যে বদলে দিয়েছে
তোমার ভুগোল ইতিহাস
মার খেতে খেতে
ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি
শোধ প্রতিশোধের খেলা
তোমাকে বন্দী করে
রাস্তায় নেমেছে বিপন্নতা
সমস্ত অস্ত্র আজ ভোঁতা
অসংখ্য নিরুপায় দৃষ্টিপাত
নিস্পলক দাঁড়িয়ে থাকে
শুধু একটি অন্ধ প্রজাপতি
সবার অলক্ষ্যে
এক মুঠো রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে
আমাদের অসহায় জীবনের খাতায়।
ত্যাগ
কান্না বদল করবে বলে
দরোজায় এসে দাঁড়ায়
দুটি কাঠ
নিরিবিলি হলে
গাছেদের সংসারে আসবাবের গল্প
অবিবাহিত জানালার অবৈধ প্রেম
ফাঁক পেলেই
উকিঁ দেয় পরকীয়া চোখ
অন্যকে সুখ দেবে বলেই
বিছানার নীচে
গাছেদের এই আত্মত্যাগ
মনে রেখেছে বেবুশ্যা রাত।
দেবাশিস সাহা
জন্ম ০১/০১/১৯৭০, জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলাউড়ি গ্রামে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বাণিজ্যে স্নাতক। পেশায় ব্যাংক আধিকারিক। নেশা কবিতা যাপন আর গাছ পোষা। ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে দশটি কাব্যগ্র। প্রজাপতি রঙের গ্রাম, সার্কাস জীবন, দেখা শেখার স্কুল, আলোদের ঈশ্বর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ২০০৪ সাল থেকে সম্পাদনা করেন আলোচনার কাগজ ছাপাখানারগলি।