পৃথিবী মাস্ক পরতে জানে না
ইদানীং মানুষগুলো এমনভাবে মাস্ক পরে হাঁটছে
যেন এ বসুন্ধরা থেকে বাঁচতে পারলেই রক্ষা!
ভাগ্য ভাল
ভাগ্য ভাল আমাদের
পৃথিবী মাস্ক পরতে জানে না।
আহা যদি পৃথিবী জানত
মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেতে কবেই সে মাস্ক পরে হাঁটতো।…
বিধ্বস্ত নীলিমা
আহা স্বদেশ আমার—
কলমির বন নেই আর, আছে ঝাউবন
তাও বুকের মাঝখান দিয়ে পাথুরে সড়ক
ইলেকট্রিক ব্যাটে মশকীর সশব্দ মড়ক।
লোহার উপর বউ-পেটানোর ভঙ্গিমায় হাতুড়ি চালাচ্ছে বেধড়ক।
উদ্ধত স্তন তবু, স্তনে স্তনে পর-পুরুষের দাঁত
দেশের শরীর ভুলে যায় সমস্ত আঘাত
রাতে চর্ব্বি, দিনে-দুপুরেও তাই, এ শহর ভুলে গেছে হা-ভাত।
আকাশেও ফাটল ধরেছে, ডাকতো নীলিমা এককালের কবিরা
মাথার উপর নীলিমা নেই আর, রাতের সড়কেই শুধু
ঘুরে-ফিরে সহস্র নীলিমারা।
পশ্চিমা পুঁজি অথবা ভিত বনাম উপরকাঠামো
এখন যে কবিতাটি তুমি লিখিবে ভাবুক
তা হয়ে উঠিবে কতটা নান্দনিক
তাতে শিল্প-শিক্ষা-ধর্ম্ম আর দর্শন থাকিবে কতটা আনুপাতিক—
বিশ্বব্যাংক আর পশ্চিমা পূঁজি
তাতে খেলিবে নিঠুর খেলা
রচে দিবে ভিত তোমার কবিতার।
হে চিন্তানায়ক,
স্বাধীন কি নয় তবে তোমার চিন্তা-জগত?
স্বাধীনই বটে, তোমার গন্ডিবদ্ধ মনো-জগতের কারাগারে—
কাংখিত মুক্তি মিলিবে কি পরপারে?
আহা লজ্জা! তোমার কবিতার ভিত
রচিয়া গেলো কোন হতচ্ছাড়া কোন সুদূরের পশ্চিমা পুঁজি।
আকাশ দেখিবে কতটা নীল,
বৃক্ষকে বলিবে কতটা সবুজ
আর রক্তকে কতটা লালে লাল।
তোমার মনে হানা দিবে কোন আলালের ঘরের দুলাল
তাও রচিয়া গেল ঐ ধূর্ত্ত পশ্চিমা পুঁজি!
তবে এই ছিল কপালে বুঝি?
আমি কোন দেবতারে পূজি— তাও ঠিক করিয়া দিল পশ্চিমা পুঁজি।
তুড়ি
ফুরোলো কী তুড়ি মেরে
উড়িয়ে দেওয়া দিন?
আড্ডা মেরে তাড়ি খেয়ে
তড়পানো দিন?
তপোবনে তপোভঙ্গের পর,
হলো কি শেষ
আমার কথার তুরুফের তাস?
আহা! আজ সকলি যেন
তমোময় তঞ্চক সময়ের উপহাস!
তবুও আড্ডার একজন তুর্কি
নিয়ে আসে উড়কি ধানের মুড়কি।
তবুও আড্ডার একজন তলাপাত্র
জাগিয়ে রাখে নেতিয়ে পড়া সব গাত্র!
ফুরোলো কি তুড়ি মেরে
উড়িয়ে দেওয়া দিন?
করোনা’য় কি ফ্যাকাসে হলো
তোর সকল রঙীন?!
শফিউল আজম মাহফুজ
জন্ম নোয়াখালীতে হলেও শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠা, পড়াশোনা, চাকুরী সবই চট্টগ্রামে। কিশোর বয়স থেকেই কবিতা চর্চ্চার শুরু। ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য বিষয়ে পড়ানোর সুবাদে পাশ্চাত্য দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, সাহিত্যতত্ত্ব, সমালোচনা তত্ত্বের সাথে পরিচয় এবং চিন্তার বিকাশ লাভ। অনুবাদ, প্রবন্ধ এবং ছোটগল্পের প্রতি কিছুটা ঝোঁক থাকলেও কবি হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দর্শন, ভাষাতত্ত্ব এবং তুলনামূলক সাহিত্যের প্রতি রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সাহিত্য-আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।