বিরামহীন দেড় ফর্মা~১
শব্দঝনৎকার অথবা শীৎকারে শীৎকারে সৌরঘূর্ণন
ঘূর্ণায়মান ঘুর্ণাবর্ত পেরিয়ে গেছি এন্ড্রোমিডা কিংবা পড়শী গ্যালাক্সি পেরিয়ে আরো দূর… আরো দূর…
আমাদের কোনো ঠিকানা নেই ঘর নেই তবু ওইসব শোবার ঘর থেকে উড়ে গেছে ঘুম
জানালায় জানালায় বাতাসেরা ঘুরলো খুব… খেলেছে পাখি পর্দায় পর্দায় মেলে ডানা যার কোনো উড়াল ছিলো না শিস ছিলো না
কেবল বজ্র ছিলো ঝড় ছিলো
এভাবেই একদিন আরেকদিন অনেকদিন অনেক অনেকদিন কেটে যাওয়া শেষে চোখের দিকে তাকাতে তাকাতে বলিরেখা গুনতে গুনতে মুখের দিকে পেটের দিকে স্তনের দিকে কেবল ভাঁজ আর ভাঁজ
এমন কী ছিলো এমন কী ছিল যা পাবো বলে এইসব জিইয়ে রাখা কথামালা দেহকে শাস্তি দিলো কেবলই আর বাইরের খোলসে আবৃত ঝুলে পড়া আড়াল করতে করতে মাটির কথা ভুলে যেতে চেয়েছিলাম অথবা সলতে পোড়া কুপির মতো দপ করে নেভার আগে আরেকটি ছাদ বাগানের স্বপ্ন অন্তত দেখা যেতেই পারে
নয়তো কোনো এক পরিব্রাজকের কাছে নতুন মানচিত্রের সন্ধান পাওয়ার অপেক্ষায় খসে পড়া তারার দিকে পথরেখা এঁকে নেওয়া হলে হাঁটার প্রস্তুতি স্বরূপ কিছু ফুল ও কাণ্ড ঝুলির ভিতরে রেখে একটা অলেখা গানে সুর বসাতে বসাতে পাপড়ির বিন্যাসে চোখ রাখা যেতে পারে।
বিরামহীন দেড় ফর্মা~২
আবার এমনো হতে পারে যেখানে কোনো পথই খোলা ছিলো না
মেয়েটি মদির চোখে দেখছিলো ঘৃণার পৃথিবী
পাতায় পাতায় বৃষ্টি কিংবা ঝড় রোদ কিংবা আলো
পাতাগুলো ঝরে গেলে ঋতু আসে
নতুন স্বামীকে ছেড়ে আসা নরক ভেবে কেউ কেউ পার হতে পারে না সোনালি সাঁকো
দুলছে তবু দুলছে এরকম দুলে ওঠা মনে পড়ে খুব
কোথাও পাখির ডানা ঝাপটানো ফুরোলে আলো ফোটে নাকি আঁধার কাটে তা ভেবে দেখার আগেই ছিনতাই হয় ভোর অথবা ভোটের বাকশো
লোকগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে হিসু করে রেশনের চাল কেনে ডাল কেনে টিকিট কাটে লাইনে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করে ডাক্তারের
যাদুঘরের দরজায় যেরকম ওরকম লাইন অথবা ভীড় নয়
তারও অধিক তারও অধিক তারও অধিক ভীড় ছিলো
যেখানে জুতাগুলো অনিরাপদ ভেবে সকলেই সকলকে জুতা চোর ভেবে নিলো
তাই কথা বাড়াবার আগে মাইকে ঝেড়ে কেশে একটা চিৎকার চিরকাল চিরকাল কানগুলো ঝালাপালা সইলো
কারা যেনো গুনে গেলো জীবনের দিন
বড় বড় সাঁকোঋণ বইলাম বাইলাম
জোয়ারের টানে টানে গাইলাম স্রোতে স্রোতে হয়রান ঘামস্রোত
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৩
ধরুন জামাগুলো জোট বেঁধে শুকোতে গেছে আর অমনিই তখন নগরজুড়ে ন্যাংটামো বেড়ে গেলো খুব! এসব গল্প টেনে নিয়ে তীরে ভেড়াতেই মনে হলো আমাদের ঘাটে একদিন জাহাজ ভিড়তো
এখন পাটাতনজুড়ে ফণা ও ফণীমনসার চাষ!
চতুর্ভুজ কানাঘুষা থেকে চাঁদের দূরত্ব মেপে আলগোছে ফেলে আসি সম্পর্কের অতীত
কুশনের আড়ালে থাকা আলতো কার্পাসে বেড়ালের কান্না লুকানো থাকে বলে চোখ বুজে কণ্ঠ মেলানো যায় অথবা সকল নদীকেই যেতে হয় সমুদ্র সন্ধানে
চৌচির বাকলের ভেতর সফেদ দেহ রেখে ঝরা পাতার গান ভাসে অঘ্রান হিমে মায়াদেবীর চোখে কোনো জল দেখেনি কেউ
এরকম জানতো যে সেও গেছে ঘাসকাটুরের দলে
নইলে জামাগুলো কাঁদছে কেন! কেন তারা ফিরে যেতে চাইছে না আর!
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৪
ভাঙা আয়নায় দেখা মুখের দিকে ফুটে ওঠা মানচিত্রের রূপ দেখে ফেলা পিতামহের অতীত
স্লোগান বাজে না রক্তে! ভাঙা দাঁতের চিরুনিতে তবু পরিপাটি রাজপথ রেখে যায় ফুসফুসে বিষের দাগ
এরকম নীল নীল নগরের রাস্তায় চুমু খাওয়া নিষিদ্ধ বলে কার্ডিগানের বনে শীত আসতো একদিন
ল্যাম্পপোস্টগুলো আইল্যান্ড থেকে ছুটতে চায় পাড়ার রাস্তায় ধান ক্ষেতের আল ধরে সাঁতরাতে চায় টাকি মাছের দলে ভিড়ে
ভালোবাসা প্রেম চুমু আলিঙ্গন আর খুনসুটি আবেদন হারালে ধর্ষণে উৎসাহ দেয় লিবিডো
পরীক্ষার পাশ মার্কে মজে থাকা বোকা বোকা নাগরিক জানে না এইসব
গলায় টাই লাগাও জুতায় ফিতা লাগাও কোমরে বেল্ট লাগাও… দোহাই তোমাদের! চোখ থেকে সরিয়ে নাও ওইসব মেজাজ! যেখানে কোনো মায়া নেই আলিঙ্গন নেই ছুঁয়ে দেওয়া নেই শিহরণ নেই চুমু নেই সেখানেই ষাড়ের তাড়া! সেখানেই কামার্ত বিভীষিকা! বিকৃত বাসনার ধিকৃত জনস্রোত
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৫
ঘোড়দৌড় থেকে ঘোরের মাঠ পর্যন্ত একটা প্ল্যানচেট ময়দান
মনবাড়ি থেকে একটু হেঁটে এন্ড্রোমিডার নক্ষত্রপাড়া ধরে নদীর কুলকুল কানে মেখে এগোলেই পাতাবাহারের রংবাহারি
রাতের কুলুঙ্গি থেকে বেরিয়ে কতগুলো চিঠি ভাসে হাওয়ায়
যেখানে অক্ষরের আরাধনা রেখে গেছে কেউ কোনো এক নাটাই গুটানো সন্ধ্যায়
দ্রাঘিমা রেখা পেরিয়ে চোখের যাতায়াত ছিলো যখন সেই ঝাপসা প্রহরের রেললাইনে ঝড় তুলে ছুটে যাওয়া ট্রেনের হুড়মুড় মুছে যাওয়া শেষে খেলাদের বেলা ফুরোতো
করাতকলের ঠিকানায় বৃক্ষদের চিঠি আসে রোজ
অক্সিজেনের মাতমের রাতগুলো টের পায় ঝরাপাতা
যারা চলে গেছে তাদের বুকের হাপরে কাঠকয়লার গান পৌঁছেনি কোনোদিন।
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৬
বাইনারি মগজে এইসব ভাংচুর ভাবনার ডামাডোলের মধ্যে ডুবসাঁতার পেরিয়ে ভুঁস করে দম নেওয়া জরুরি বলে জলজঙ্ঘা থেকে মাথা তুলে দেখে নিই ব্যাকরণ ভাঙা গোঙানির প্রশ্বাসে কোনো নাম ছিলো কি না…
পৃথিবীকে একটা গোল্লা ভেবে নিয়ে সরলরেখা টেনে টেনে হেঁটে যাওয়া শেষে ব্যর্থ হয় গোল্লায় যাওয়া
বক্তৃতাপর্ব শেষ হলে শূন্য মস্তকে ঘরে ফেরা লোকগুলো ভোট দেয় ভেট দেয় এদিকে গুবরেপোকারা মানুষের পদশব্দকে ঘৃণা করে বলে ঢুকে যায় গর্তে
মাছেরাও গিলে ফেলছে প্লাস্টিক! মনুষ্যদ্যান মনুষ্যোদ্যান এইসব গিলে গিলে পারে এসে নিহত দেহ নিয়ে শুয়ে থাকে নিল-তিমি ও অজনা সামুদ্রিক মাছের বংশধর
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৭
চ্ছালা! যা ভাগ!
ভয়ে মুতে দেওয়ার আগে আয় লাইনে দাঁড়িয়ে মুতে দেওয়া শিখে নে আরেকবার! স্লোগানকে বন্ধক দেওয়া প্রজন্মের কাঁধে চড়ে এগোতে চাওয়ার আগে করতল শক্ত কর!
কারো গালের বেশরম ত্বক অপেক্ষা করছে তোর জন্য! তুইতো নাগরিক ভেবেছিলি নিজেকে!
পাঁচটি আঙুল মুঠো করবার আগে আরেকবার থাবার ভঙ্গিতে ছুড়ে দেওয়া যায় শূন্যে! যেরকম উঠে যায় চোখের পাতা! মুষ্টিবদ্ধ হাত একবার উঠে গেলে তাকে আর থামানো যায় না
তবুও ভাবছিস অপেক্ষা করবি মানচিত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য মুক্তির জন্য
কিছুই পাবি না পাবি না পাবি না চ্ছালা বাঞ্চোত!
পাখি সব করে রব তবু পোহাবে না পোহাবে না রাত! রাত তবু পোহাবে না! তুমি চ্ছালা রব করো নদী রব করুক বৃক্ষ রব করুক এইসব পোয়াতি পোয়াতি খেলা রেখে আয় চ্ছালা!
লাইনে দাঁড়িয়ে যদি কিছুই না পারিস
পেচ্ছাব কর চ্ছালা!
চাই না কো আর চাইনা কো আর তুমি চাও তুমি চাও ওরা চাউক তারা চাউক তোমার চ্ছালা নুনু কাটা! তোমার চ্ছালি সিঁথি পথে সিঁদুরে মেঘ! তুমি ভাগ হও তুমি ভাগ হও মানুষ হয়ো না! তুমি পশু হও মানুষ হয়ো না! তুমি মন্দির হও নীড় হয়ো না! তুমি মসজিদ হও আশ্রয় হয়ো না…
চ্ছালা! যা ভাগ!
বিরামহীন দেড় ফর্ম~৮
মরতে মরতে বেঁচে থাকা মানুষের ধর্ম ব’লে মানুষেরা খাওয়া শুরু করেছিলো ধর্মের কলকব্জা
খাওয়া এবং শোয়ার পরে ঘুম ও কাম যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে যখন
সেইসব রাতে শেয়ালের ডাক পেরুনো ট্রেনের হুইসেল মিলিয়ে যাওয়া আঁধারে ঘন্টা বাজার অপেক্ষা করে অনেকেই অথবা টিনের চালে কুয়াশা চুইয়ে পড়া টুপ টুপ অবিরাম চলে তখন
এখানে কোনো রাজনীতি ছিলো না বলে টকশোওয়ালারা তাকায়নি কোনোদিন আর সেইসব বাতি নেভা হেঁসেলের আগুনেও ছিলো না মশালের আশ্বাস তবুও কারা যেনো মায়ের গন্ধ খুঁজে খুঁজে কয়লার আগুনে আলুপোড়া খাওয়ার স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে পাড়ি দেয় সুপারসনিক সোসাইটি!
জলের শুনানি শেষ হলে কূল ভাঙে নদীর
স্রোতের মহল্লায় ভাঙাবাড়ির আর্তনাদ ক্রমশ ঘনীভূত হলে সুন্দরবন থেকে শোনা যায় গোঙানির মতো সুর
মায়ের পেট চিরে বেরোনো মানুষের হাতে জরায়ুর স্বাধীনতা অথবা ভূমিষ্ঠ হওয়ার গল্প কোনোটাই নিরাপদ নয় ভেবে গাছেরাও এলিয়ে দেয় শরীর এবং ওইসব আনবিক কর্মশালায় মাটি ছেনে তুলে নেওয়া লোহা তামা রাবার অথবা সোনার নেকলেস পরিহিত স্যাপিয়েন্স ক্লাসে ইউরেনিয়াম তাল্লুক ভাল্লুক কথাবার্তায় চিপ্সের প্যাকেট আর মিনারেলজলেরবোতল খেতে শুরু করেছিলো আত্মাভিমানী সুইসাইডাল নীল তিমি
তবু ডলফিনেরা নাবিকের কম্পাস হতে চেয়েছিলো!
বিরামহীন দেড় ফর্মা~৯
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ পদযাত্রার সড়ক হারিয়ে গোড়ায় গণ্ডগোল ছিলো কিনা তা ভাবতে ভাবতে যখন পৌঁছলো তখন হারকিউলিস যুগ
বরফগলা নদীর ক্ষীনকায় স্রোতবহমানকূলে পাখিদের শবযাত্রা পেরিয়ে বিবর্ণ এপিটাফে শিকারের দৃশ্য আঁকা ছিলো বলে সে তিনি তাহারা ফিরিয়া আসিতে চাহিয়া দেখিলেন দুইখানামহাযুদ্ধ আর তেরলক্ষতিরানব্বইহাজারতেত্রিশকোটিখণ্ডযুদ্ধ সম্পন্ন হইয়াছে
মিস্টার ট্রাম্প কিংবা বুশ লাদেন অথবা স্টালিন ইহাতে লজ্জিত লজ্জিত হওয়ার প্রস্তাব রাখিতে চাহিলেও ঘোড়সওয়ার হইতে কোনো পাত্তা না পাইয়া ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত হইতে হইতে কলুর বলদের লাহান ভ্যাবাচেকা খাইয়া বোকাবোকা জনতা দিগুণ উল্লাসে জয়ধ্বনি করিতে করিতে দেখিতে লাগিলো তাহাদের ভিটামাটি উচ্ছেদের পায়তারা চলিতেছে বিধান রক্ষার কবজে কবজে আল্লা খোদা ভগবানের নামে
ব্যাবাকতে চাইয়া চাইয়া দ্যাখলেও আর কোনো সাড়া না পাইয়া পৌষ মাসের শীতেরে ইয়ার্কি ভাইবা কুয়ার পানিতে লাফাইন্না ব্যাঙগেরা সাগরে লাফ দিয়া কম্বল বিতরণে মনোযোগ দিয়া বিরাট মানবতার পোটলাপুটলি গুছাইতে লাগিয়া গিয়াছে
আহমেদ শিপলু
কবি, বাচিকশিল্পী ও লিটলম্যাগকর্মী আহমেদ শিপলুর জন্ম ১৭ জুন ১৯৭৬। পৈতৃক নিবাস কোলাপাড়া, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ। কৈশোর থেকেই ঢাকায় স্থায়ী বসবাস। লেখালেখির শুরু নব্বই দশকের শুরুর দিকে হলেও প্রথম দশকেই তার বিস্তার। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ১১টি, উল্লেখযোগ্য : বালিকার আকাশ, প্রজাপতিরা ফিরে গিয়েছিলো, বিষণ্ণ ইস্পাত, বিষবৃক্ষের উল্লাস, কোনো প্রচ্ছদ নেই, হিমঘরে চাঁদের শয্যা, নিমজ্জিত মগ্নমায়া। এছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেনে ছোট কাগজ ‘নন্দিতা’, কাব্যকল্প (আবৃত্তিশিক্ষার বই) এবং ‘আবৃত্তির শ্রেষ্ঠ কবিতা’। বর্তমানে তিনি সম্পাদনা করছেন ‘মগ্নপাঠ’ (শিল্প-সাহিত্য ও মুক্তচিন্তার পত্রিকা)।