তালাশ তালুকদারের জিওগ্রাফি ও টেরর কবিতা

0

জিয়োগ্রাফি

তুমি কী এক উজবুক আবিষ্কারের আশায় অত্তোগুলো অসুখ নিয়ে
তালগাছের চারার মতন মাটি সাঁপটে ডুবে থাকো, ঐ ঢাকা সিটির দৃশ্যে
অভিভূত হও, হৃদপিন্ডে তালা ঝুলিয়ে নিজেকে নারচার কর
যেনবা হালুইকর ভাল ব্যসনের খোঁজ নিতে উর্বর হয়ে পড়েছো।


কেউ দূর্বিনীত ভঙ্গিতে তোমার দিকে তাকালেই মাথার ভেতর শোঁ শোঁ করে
উজার হয় ঐ সাবিহা ম্যাডাম, বাণভট্ট, মধ্যযুগ কিংবা নতুন পুরনো
মিলে গোটা বিশেক নিউরন কোষের গ্রাম।

পরিচিত কাউকে দেখলে তুমি জড়ে যাও, ট্রাংকে তুলে রাখা পুরনো জামার মতো
কুকরি মেরে যাও-। যেন তুমি আমি নতুন প্রেমিক
প্রথম সাক্ষাতে চমকে উঠি, হোঁচট খাই, ইতস্তুত হই -সজ্জনেরা বলে!

যতবারই ভাঙতে যাই ধোঁয়ার কংকাল ততবারই চোখের জলে ভেসেছে জাহাজ
ভাবছি আরেকবার জল্লাদ হব, আরেকবার চ্যুত, দেখি এইবার নিম্নে
নামতে নামতে তালার গহ্বরে চাবি ঢুকাতে পারি কিনা-!

‘বৃষ্টিপর দৃষ্টিবাবু সেই প্রথম মাটির ঢেলায় দেখেছিল শূন্যরূপÑ
যার প্রত্যহ আকাশে উঠতে টুল ভেঙে মাটিতে পড়ার হয় হয় ভাব।


দেখো এই আমি, কমা’র উপরে দাঁড়িয়ে আছি। যেকোন সময় পা
হড়কে পড়ে যেতে পারি- শ্মশানঘাটে যেমত নিরু পড়ে আছে একা।

আমি বিবিধ ফাটলে ক্রমেই দিনকে দিন ভড়কে উঠছি
হে বিদ্বৎসমাজ তোমাদেরও বিদায় বলতে পারবো না কেননা
তোমরা এ চৌতন্য জুড়ে খাসির মাংসের মতো সুস্বাদুতা জিভে লেগে দিয়েছ।


সব ল্যাঠা চুকে তোমার ভেতরে যে ক’টা গহনা আছে তাকে বাঁচাতে কি লাঠিসোটা হাতে নিয়ে মাঠে নেমে পড়বে না? দেখবে না শোঁওত করে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার কেমন করে মেঘফুঁড়ে শাঁ শাঁ করে চলে যায় আকাশের তল দিয়ে!

তোমার আনন্দগুলো সূর্যের মতন শুস্ক বস্তু ঘিরে প্যাঁচানো ছিল বলেই এতোদিন মুখ তুলে হাসতে পারেনি। আজ বাঙ্ময় হয়েই লেপ্টে খাচ্ছ ভূ-দৃশ্য, গীতবিতান একত্রে শুকানো তাল! আজ সুঁইয়ের ছিদ্রপথে প্রবাহিত হয় নদী, স্প্রিংয়ের আংটায় বারেবারে লাফিয়ে ওঠে পৃথিবী আর ক্রমে ক্রমে ক্লিপের অগ্রভাগে অনেক বজ্রপাত গেঁথে আসে।


ঘাড়ের কুঁজের মতো ছোট্ট ছোট্ট ঢিল পায়ে ফাটিয়ে আসছি তোমাদের মঞ্চে
এখন শরীরের খাঁ খাঁ খণ্ডে ফুল গুঁজে আদায় করে নিচ্ছি
আগেকার হারানো উল্লাসধ্বনি, অনেক উপকুল বেয়ে গড়িয়ে নামা
সূর্যের হাজারো বেদখলি দৃশ্যাবলি।

আমি আছি তৃণের মত, তাই সজিনার খাটেও পা মেলে শুয়ে থাকতে চেয়েছি-
ভূ-তল কেটে, বড় বড় পাইপগুলো নিম্নে গলিয়ে যেতে দেখেছি
যেন এ শহরের পুরনো ফ্ল্যাটে আবৃত পুরনো ধ্বস্ত পলেস্তরা, আস্তেঃ
গহ্বরের কাশের মতন শব্দ করে ধ্বসে না পড়ে।

তাই দেখে, দূরে, মোরগের আলস্যময়ে, ওই বাবলা গাছের উপর কে বা কারা
কিছু সময়ের জন্য হলোচলো রৌদ্রে ঘুরে এসেছিল।
আজ তারা ছাতার নিচে থাকা আশ্চর্য্যময় এক অন্ধকারে নিজেরই দাঁত দিয়ে
নখ খুঁটতে খুঁটতে স্টেডিয়ামে ট্রফি উঁচা করে দেখে বাড়ি ফেরে।

 

টেরর কবিতা

এই লেখাগুলো বাড়তি কোনো রসদ জোগাবে না জানি। এই লেখা ইঁদুরমাটি, গর্তের ভেতর থেকেই উগ্লে উঠবে। পালপাড়া থেকে এসে কুমোরেরা ওই মাটি ল’য়ে কোনো জেদী সন্তানের মুখশ্রী আঁকাতে চাইবে।

আমি সুতোরদের মত পেরেক ঠুকে ঠুকে কোনো দালানকোঠার আসবাবপত্রের দামি শৌখিন সামগ্রী বানাতে চাইব, কোনো গৃহিণী তাকে ধুয়ে মুছে ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে চেষ্টা করবে!

আমি দূর হতে বাকি কবিদের রোষ ফলো করে যাবো শুধু!


কে সে? যে প্রত্যেকবারই আমাকে হত্যা করে আর শিয়রে রেডলিফ জর্দার মতো কিছু না কিছু গন্ধ ফেলে রেখে চলে যায়। রাতশেষে দেখি, ছুরি আর গন্ধ মিলেঝিলে অন্ধকার ফেঁড়ে কবিতায় কিছু শাঁস তুলে এনেছে। ইঁদারায় কলস ফেলে গভীরতা বুঝে নিতে চাই-দেখি, হৃৎপিন্ডের পাল্স নড়ে উঠছে।

যে শহরগুলি গয়নাভরা বৌ-য়ের মতো সেজে থাকে, প্রীত করে, তার আঁচলে আমি গৃহের চাবি তুলে দিয়ে আসি।


জলে তর্জনী ডুবিয়ে সহ্য করো মাছের ঠোকর-
আর তল্লা বাঁশের মতো ডুবে থাকো মজা পুকুরে!

ওই অতসীর খেলা শিখতে শিখতে কতককাল নষ্ট কর, কিছুটা বালখিল্য হও, তারপর ঠিক্রে ওঠো -বাক্যবাগীশ হও, দেখবে বৃষ্টিতে ভিজে রোদে চিক্চিকে হওয়া গাছের পাতা থেকেও হড়হড় করে নেমে আসছে কবিতা। সেই কবিতাগুলো ছেলেবেলার ছবিগুলোর মতো মাটিতে হেলায় পড়ে থেকে উঁই ধরে নষ্ট হয়ে আছে সে কথা শুনতে পাবে না কখনো।

দেখবে মেঝেতে সপ্ বিছিয়ে রকমারি গল্প করছে তারা। পিঠেপিঠি ভাই হওয়ার পরও পৃথক থেকে পৃথকতর হয়ে থাকছে আজকাল। তাদের উত্তরাধিকারদের জন্য কুড়ে কুড়ে রেখে যাচ্ছে শরৎকালের চিমনি হাউজ থেকে তুলে আসা মর্মন্তুদদের সুন্দর সুন্দর ফটো।

দেখো, এই ডোবায় অনেক টলটলে রক্ত মানুষজনের কাজে লেগে যেতে পারে।


জেনো, ছাতিমের প্রাণ প্রমাণে নয় বিবশ আঙুলে পাতলা ঝাউ নড়ানোই আসল ব্যাপার। গ্লাসের ভেতর জলের ঢেউ তোলাটাই কীর্তি। যেভাবে ম্যাজিশিয়ান মাথার উপর থেকে হাত নিচে নামাতে নামাতে দড়াম করে লাঠি ফেটে সাপ বের করে আনে। সেভাবে মাটি ফেঁটে অন্ধকারগুলো চৌচির হলেই হয়। দেখো, তাকে দেখতে লোকজন চৌদিক থেকে হ্যাক্ হ্যাক্ করে ছুটে আসছে!


-ডুবুরি হও, ডুব দাও, জলের ভেতর কুড়ে পাবে দর্শনমাপার যন্ত্র। পাবে হাম নিঃশ্বাস ফেলার মতো কিছু বাটি। কবি দেখছে, এইমাত্র ইলিয়াসের শুয়ে থাকা কবরের উপর স্বল্পকিছু পাতা বাতাসে গড়িচ্ছে নিচ্ছে। যে দৃশ্য দেখে অভিভূত হও, লাউমাচা যেন-বা, পুরো আকাশ ঢেকে দিয়ে ঝাঁটাতে উঠোনের ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলো। -কলাকৈবল্য সৃষ্টতে আমার জাবেদা এই।


এই লেখাগুলোর আমুদে চেহারা, এর উৎপত্তি শাঁসভস্ম থেকে, ঠুমরির স্পষ্ট লয় তাল থেকে, একেবারে নিরাকারের তলদেশে আকারের এ রচনাবিজ্ঞান। এ লেখাগুলো এই, এইভাবে গায়ের চামড়া ছিলে, এই মেঘ ক্লিয়ার করতে করতে আসে এবং ঊষা নামক কোনো মেয়ে গটগট করে হেঁটে এসে বলে, এ লেখাগুলো তারই স্যামপল, অবরুদ্ধ বার্তা, সবকিছু অগ্রাহ্য করে এক ঝট্কায় হাঁড়ির দুধ বল্কে উঠেছে। আর দেখো এই চোখ সর্বদা ঘরের পিরেলীতে আটকে থাকে যেনবা শৈলীসূচ -সেলাইয়ে চাদর ফুঁড়ে ফুঁড়ে তুলছে।

এইখানে যতই জমির রস বাঙ্গী ফেটে হা করে রাখে ততই সুন্দরের কাছে নীল বর্ণগুলো গেঞ্জি পড়ে আসে। আমি তাক্ লেগে কবিতাদের পায়ের উপর পা তুলে বাবু সেজে বসে থাকা ফলো করি। এবং বাকি কবিদের কবিতার ত্বক শীতে ফেটে চর্চরে হয়ে আছে -দেখতে পাই।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার