অযুত ধারাপাত
অনেক দূর চলে আসার মত যখন সে পাহাড় থেকে গড়িয়ে যায়
চারদিকে আলো জ্বলে ওঠে
মনে হয় এক একটা সূর্য্যের গন্তব্য
এত আলো ধরবে কার বুকে
এই আলোকে সামনে রাখবে কোন জন
আলোর তো অগণন ডালপালা
সব শাখাতেই দেখা যায় আলোকথার কুটীর
মায়ের আঁচল ভরা স্নেহকথার বর্ণমালা
পৃথিবীতে আজ তো রঙের বাক্য
সাজানো গোছানো ধোপদুরস্ত একটি বাক্যে উত্তর
কুটীরের লম্ফয় কে আর বিশ্বাস পেতে পারে
কে আর বুকের খাঁচায় হৃদয় সাজিয়ে বলতে পারে একটি বর্ণে ধরব আমি অযুত ধারাপাত।
নদী
বৃষ্টি হয়ে গেলে যতগুলো অতিরিক্ত নদী তৈরি হয়
একটা নদীরও কোন উৎসবিন্দু নেই
অথচ মাথার ছাউনি দেখে মনে হবে
অনেকগুলো শ্রাবণের সন্ধে
ওরা ছাদের নীচে গল্পে কাটিয়েছে
চোখ দেখে মনে হবে হ্যারিকেনের আলোয়
ওদের সকলের বর্ণপরিচয় হয়েছে
পুবদিকের সকালের ছাত্ররা
নদীর নামের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল
ভূগোলের সামনে অনেকটা সময়
নদীর গতিপথ বর্ণনায় কেটেছিল
কোন কোন ঘাটে নদীর নামের কাছে
অনেক অনেক ডাব সন্দেশ জড় হয়েছিল
এতকিছুর পরেও নদী থামেনি
ফাল্গুনী সন্ধেয় তার মুখে
উঠে আসেনি কোনো প্রিয় নাম
এখন চোখের সামনে অগণন নখহীন চেষ্টা
সারি সারি নদীর পাড় বরাবর শুয়ে আছে
জানলা দিয়ে সাতদিনের নিম্নচাপের মেঘলা বিকেল
ঘড়ির কাঁটাগুলো আবছা হয়ে গিয়ে
ভাতের রোগা থালার মত দেখাচ্ছে।
দুঃখঘর
মাটির যাবতীয় দুঃখঘর আমাদের ব্যর্থতা
সাতসকালে গান গেয়ে যে মাঝি চলে গেছে
আলোর দুয়ার দিয়ে ঝরনা রোদের পাতায় পাতায়
তাকে দেখেনিকো কেউ
দুঃখদুয়ারে যাদের রোজ নামতা মুখস্থ
তারা তার পায়ের শব্দ শুনেছিল
গিঁট খোলা নেই বলে যারা বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে
তারা মাঝরাতে স্বপ্ন দেখেছিল
কুয়াশায় ঢেকেছিল সবগুলো খোড়ো চাল
চাঁদ ফুটো হয়ে জ্যোৎস্নার জল এসে
ধুয়ে দিয়েছিল সবকটি কলাপাতা
ভাতের গন্ধ এসে কড়া নেড়েছিল
ঘুম ঘুম চোখে জেগেছিল যারা
তারা সব দুঃখের আত্মীয় হয়ে কলাপাতায় গল্প লেখে
দুঃখকথা বেশি পড়ে গেলে
পাতার ক্যানভাস জুড়ে শুধু কালো কালো দাগ
বুক পেট জুড়ে হাজার ক্ষত
হাঁড়ি জুড়ে আল্পনা তবু বেড়ে যায় খাওয়া খুব
খেতে খেতে আকাশ ছাদে চাঁদ দেখেছিল যারা
সব গাছ খুলে দিয়ে তারা ভেসে যাবে আলোগান নিয়ে।
মাটির দিনের গল্প
এইমুহূর্ত্তে পৃথিবীর কোন স্কুলে
মাটির দিনের গল্প হচ্ছে
ঘরের যত আরশোলা মাছি
দমবন্ধের পরিবেশের সমীকরণে
পা মেলাতে কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে
জানলা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
মাটির দিনে বন্যা নামে
আজকের অপলকা পায়ের পৃথিবী
বন্যার জলে গুলে যায়
কেউ একজন হাত তুলতে নদী বাঁক নেয়
দাদুর গল্পের চরিত্ররা
মাটির দিনের গল্পে হেঁটে যায়
অনেকেরই মনে পড়ে যায়
কেউ যেন তাদের গল্পে
এইসব লোকেদের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল
ডাকলেই তারা ফিরে চাইবে
কিন্তু কি হবে তাদের ডাকনাম—
এসব ভাবতে ভাবতে তারা
আরও অনেকটা এগিয়ে যায়
কেউ কেউ অন্য মুখে
অন্য গল্পের ঘরে ঢুকে পড়ে
আগুন ডাকতে জানে না বলে
পৃথিবীতে অন্ধকার নামে।
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম: ২ জানুয়ারি, ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলার ধনিয়াখালি গ্রামে। লেখালিখির শুরু খুব ছোটবেলা থেকেই। পেশায় গৃহশিক্ষক হলেও সাহিত্যই চব্বিশ ঘণ্টার ধ্যানজ্ঞান।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
তুমি অনন্ত জলধি (কবিতা), বিমূর্ততার অনন্ত প্রবাহে (কবিতা সংক্রান্ত গদ্য), দু এক পশলা মান্না (ছড়া), চার ছক্কায় শচিন (ছড়া)। সম্পাদিত পত্রিকা : ছায়াবৃত্ত, কাটুম কুটুম।
ফোন— ৯৪৩৩৩১২৯৬২।