সাজ্জাদ সাঈফ’র কবিতা

0

পাথর

এ পাথর কটুক্তি-সহিষ্ণু;
এ পাথর একা, হৃদয়ে হেলানো কাঠ,
সারা গায়ে পেরেক-সমাজ, বিঁধে রয় দ্বন্দ্ব সমাস বেয়ে।

তার ছিল বাগানে যাবার কথা
তার ছিল চোখ-পেন্সিলে আঁকা, ক্ষণিক আকাশ বুকে!

তুমি দেখ নাই তিস্তার বান
শোন নাই শাওন গহন ডাক

এ পাথর একা, গাঙপাড় ঢাকা ঘাস—
উঁচা ঘাস, বারো মাস।

অতিবৃষ্টি

তবে কি বৈরাগ্যের ঝোক?

বিতাড়িত ডোমের মতই, কাচুমাচু
অতিবৃষ্টির দিনে, কেন থাকে মানুষের মন?

যে কোন হৃদয় হতে কান্নার সুর
দূর থেকে আরো কতো দূর
আমাদের সকল গল্প নিয়ে
একদম একা বল্কল, বল ফুল
একাকীত্বই-বা এত, কেনো গাণিতিক?

পতঙ্গ

এইবার মেঘে নীল হব, বিষে নীল হব গেয়ে, বসন্ত বাতাসে;

ব্যাপক কোন ভাংচুর
দুঃস্থের কলহে যত, কাপড় কাচার শব্দের মত
তুফানের ডানা খুলে দেব আজ!

উপরন্তু, শান্ত থাকবে উপকূল
নগরীর রুলটানা আইল্যান্ড ধরে গিয়ে
এত দূর এত ঘন বিলোপের ধারে এসে
ফিরে পাই পূনর্ব্বার, ভেঁপুহীন মাস্তুল!

খুতখুতে কেরানীর মত, মাথা নীচু করে ডুবে যায় সূর্য্য
আঁধারে ডুবে গিয়ে ধ্বনিবিথীকার বনানী
ফিরে দাও পার যদি!

পত্ররহিত কয়েদের করতলে, নগরী, এখানে বোবাদের চাষাবাদে
দাঁড় ফেলে তুলে রাখে আবহের শতমারীবীজ;

সাবানে রুক্ষ কর পাটাতন, আজ শোব, আজ তুলে রাখ ঘরহীন হবার গল্প
শোকেসে ব্রান্ডি পাবে—

পাথরের যিশু উহ্য হবে আজ, পতঙ্গ লেলিয়ে দেব মগজে মগজে!

আমার ভগ্নি জল

অসম্পূর্ণ ঘড়ির ভেতর ঘুরে, অভিজাত সময়কলের ভেতর
সারাদিন পায়চারি করে, এত আগুন, এতসব উপেক্ষার স্বপক্ষে
আমি আর আমার ভগ্নি জল, মেহগনি পাতাদের ভিড়ে
একটাও পাখি, দেখতে পেলাম না!

এরপর সবুজের সান্ত্বনা
সুদূর তীর্থকে দেয় স্মৃতির শারদ-কেয়া

এইখানে মিথ্যাকে অতিথি ডেকে
আমাদের আরতি ফুরায়; আমি আর
আমার ভগ্নি জল, কীর্ত্তিকে কাতর দেখে
অভ্যস্ত, এত আগুন, এত নীল প্রবঞ্চনা
তুমি আর কোথায় পেয়েছ, পাবে?

আমরা ভিজুম

দুই ধারে রোদ নিয়া বিদিক নদীও হাসে
ঢোল-বেহালার হাসি, বিহানের কোল ঘেঁষে
ছয় ঋতু মহাকাশে যায়, পাখি ওড়ে, পাখা-ঘুম-ঘুম
কোরক খুলেছে রোদ, শেষ দৃশ্যে, আমরা ভিজুম!

সখী, কে ডাকে বিলের পানিতে, ডাকে ধানীচর?
এই প্রেম ছনের কুটীর, গায়ে থাক পাতার অক্ষর।

দুই কাঁধে মেঘ নিয়া, জাগো তুমি তিরিশ শ্রাবণ
হাড়মাসে ভুখ লাগে যার, তারে কয় পিরিত পাবন;
দুই চোখে নিদ পড়ে নাই, রাত নামে নিঝুম বাগান
তারে কয় পরাগে পরশ, যার, ফুল ফুটে কলির বিধান।

এই প্রেম, তিরের ফলায় গাঁথা, কলিজার টুকরা কেমন
ছুঁই ছুঁই জ্যান্ত দেখায়, মহাসড়কের ধারে, বন্যা যেমন!

ঝাঁকের দোয়েল

‘কিং তো দিবেঁ কিং তো নিবিজ্জেঁ
কিং তো কিস্তই মন্তহ সেব্বে
কিং তো তীথ তপোবন যাই
মোকখ কি লবভই পাণী হ্নাই’
                                  — দোহাকোষ

বুকে পথ করে একটা নদীকে দেখি
ভাগ হয়ে গেছে দুইদিকে। মাঝে শিলাপাথরের ঢালু
কতদিন স্বপ্নে এসে, গড়িয়ে নামছে নদী;
স্নান করে আগুন-পানিতে, মানুষের আওয়াজ পেলে
ঝর্নায় এলিয়ে দিচ্ছে গা;

বুকেতে অনেক নদী, একটা মোহনা পেয়ে
বর্ষাকে আহ্বান করে গান, যেনো এক শিকারি পাখির ঠোঁট
সারাদিন ঘুরঘুর করে, ম্যাপ জুড়ে ছোবল মারে, রক গায়, ঠাট্টা করে;

তবু এক মিঠা নদী যায়, নিজ ঢেউ নিজের বুকেতে ভরে, কতদূর গেলে
সূর্য্যকে ঋষি মনে হয় বল, এই ভেবে হাওয়া ঘুরে যায়, এই ভেবে
তুমিও কি নাও আঁচলে স্মৃতির পাথর!

যেনো গৌরব ডেকে ডেকে পাহাড়ি জঙ্গলে, চুপ হ’ল ঝাঁকের দোয়েল।
যেনো মিঠা সব পানি ফুলে ফেঁপে পিপাসায় রসনা মেটাবে একা!
এইভাবে তিয়াস জুড়ায়, রুহুর?

 

104495420_3230969826960739_416480444243706963_nসাজ্জাদ সাঈফ
কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক।
জন্ম ২৯শে জুন, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর, মনোরোগ চিকিৎসক।
সম্পাদনা—নীহারিকা (রম্য পত্রিকা, ২০০২, ঢাকা), ঈক্ষণ (বগুড়া লেখক চক্রের মুখপাত্র, ২০০৭)
সহ-সম্পাদনা (ক্ষেপচুরিয়াস ওয়েবজিন, ভারত, ২০১১), ঈক্ষণ (২০১০ ও ২০১১, বগুড়া)
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি— দি ওয়ান্ডার্স (ঢাকা), এডমিন-লাইফ আড্ডা: পাঠচক্র (২০১৪-২০১৫, বগুড়া)
আসর পরিচালনা সম্পাদক
কাব্যগ্রন্থ— কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা (২০১৭), মায়ার মলাট (২০১৯), ভাষার সি-বিচে (২০১৯, কলকাতা), বহুদিন ব্যাকফুটে এসে (২০২০)।
সন্মাননা— প্রথম কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘বঙ্গভূমি বর্ষসেরা কবি— ২০১৯-এ ভূষিত হন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার