অন্য বৃষ্টি
অঝরে বৃষ্টি নামে
শহরে, নদীতে, গলিতে, পাড়ায়
নর্দ্দমা ভরছে বানের জলের মত ভেসে আসা ময়লায়।
উরুর উপরে উঠে গেছে কবে থেকে নগরের আব্রু!
কোন্ নেতা হেঁটে যায়, নাচিয়ে যুগল ভ্রু?
ছিপখান তিন দাঁড়ে আড়াল নিয়েছে রাস্তার খানাখন্দ
পানের দোকানগুলো লকড মানে বন্ধ।
তারে তারে ঝুলে থাকা, কার কার
পোস্টার, ভোটের ইশতিহার ভিজে গিয়ে সব একসার!
অদূরে বিলবোর্ড—
সার্ফ এক্সেলে ধুয়ে গেছে না কি ভূতদের ভোটাধিকার!
ইভিএম মেশিনে কাচবিন্দু ঝলকায়, বলকায়।
মনে মনে গুনে নাও
হাতি ঘোড়া দলছুট কোন দলে কোন্দল!
পাহাড়ের ঢল স্রোতে কলকল, নির্ঝরে ঝরছে ঝড়ে বড় কল্লোল।
কানপাতা কংক্রিটের দালানের সারি, তবু কেন হায়! ঠাঁয় দাঁড়িয়ে নির্ঘুম যেন জোনাকির দল!
শতাধিক গল্প
কাঁধে নিয়ে অল্প কাল্পনিক বুড়ো তার
নীল বাতি জ্বালিয়ে রাখছে সেখানে বারান্দার কোনায়—
এখানে গল্প নেই,
মরে পড়ে আছে খাঁচার পাখি সব, নাই রব,
ভেজা রাতের মত অবিন্যস্ত, কুলহারা শ্যামের মধ্যবিত্ত।
হালখাতা খুলে গেছে,
কোথা বাজে রুমুঝুমু স্বরধ্বনি!
‘প্রণোদনা প্রণোদনা’ এইসব রাগ রাগিনী বাজলে শুনি
‘বাজেট বাজেট’ খেলায় কারা কারা খুব তাস পেটায়—
রিনরিন বাজে ঋণ, খেলাপিরা ফুসলায়,
কে কখন কোন সুরে কাকে পায়!
কার্নিশে পোড়ে বুঝি কাকদের সংসার
মার্চ্চ পাস্ট করে ফেরে পোশাক কর্ম্মীদের বন্ধকী দায়
ক্ষুধার কাছে হাঁটু মুড়ে দলে বলে ত্রাহি ত্রাহি প্রাণ যায়
বৃষ্টির ছাট কিছু বিকাশে পাঠায়
ভিজে যায় পিপিই, নাই মামা আইসিইউ মাস্ক গুলো ফলস পায়
ফাঁকতালে বিমানে কানামাছি সিকদার উড়ে উড়ে কই
যায়!
বলবে না, খবরদার! রুগী আর ডাক্তার
লাইন ধরে কবেকার ভিসা নিয়ে পরপার, যায় মরে
আগে পরে—
এইবার পালা কার!
বলো বলো এইবার, ছাতা নাই পালা কার?
পালাবার পালা কার? পরপারে পালাবার পালা কার?
দিল্লি
শামি কাবাব ভাজতে ভাজতে
আস্ত একটা দিল্লি ঢুকে যায় মাথার ভেতর।
দিল্লি আমাকে ঘুমাতে দেয় না
একটানা ঘুঘু ডেকে যায় মাথার ভেতর
ঘুমের ভেতর, ঘুমের চেষ্টার ভেতর
আমি মানুষ গুনতে বসি—
গুনতে গুনতে আমি সামনে এগিয়ে যাই
কিন্ত আমার সংখ্যা কিছুতেই এগোয় না
‘শূণ্য’ সংখ্যাটি আমাকে পেছনে টেনে ধরে—
আমি পেছনে ধাবমান
‘শূণ্য’ সংখ্যাটি আঙুল উঁচিয়ে বলে—
‘তুমি মুসলমান! তুমি মুসলমান!’
দিল্লি আমাকে কাল ঘুমাতে দেয়নি
ঘুঘু পাখিটি একটানা ডেকে গেছে
আমি ঘুমাতে পারিনি
আমি ক্লান্ত
আজ আমি ঘুমাব
আজ আমি মানুষ হব।
লিবিয়া, ২০২০
আকাশপথে কিছু পঙ্গপাল উড়ে গেলো ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে।
ওদিকে ছাব্বিশ সংখ্যাকে খবর বানিয়ে চিরতরে নিভে গ্যাছে পরিযায়ী পাখিদের রব;
ত্রিপলী শহরের অনতিদূর মিজদায় তাদের জন্য কোনো এপিটাফ লেখা হবে না।
নূহ নবীর পাঠানো নৌকো বেনগাজী বন্দরে ডুবে গেলে
আমরা বিলুপ্তপ্রায় ওরাংওটাংদের জন্য শোকার্ত্ত হয়ে পড়ি।
‘মানবপাচার’ শব্দটা অদ্ভূত, মঙ্গলগ্রহে সভ্যতার পত্তন ঘটাতে ঘটাতে অভিধান খুলে বসতে হয়।
ছাব্বিশটি পাখি হত্যায় ঠিক কতোগুলো বুলেট খরচ হয়েছে সে উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে ডেটা গুরুকে।
অর্থাৎ পাখিমৃত্যু মানে হলো বাণিজ্য সম্ভাবনা, উন্নয়নের ব্যাপক জোয়ার।
সে জোয়ারে ভাসতে ভাসতে আমি পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দাবী ক’রে বসি।
ঋণ মানে বোঝেন তো? ঋণ মানে হ’ল সাড়ে ষোলো কোটি হাতকড়ার দাম।
মিথ
জ্বলছে হিন্দু বাড়িতে আগুন
চলছে জাতিগত নিধন
আর আমার শরীরের বাম দিকটা
ক্রমশ…
সরে যাচ্ছে ডান দিক থেকে দূরে—
পারদ মানবের মত কোনদিন আমি
হয়ত
পুনরায় অখণ্ড হয়ে উঠতে পারবো না ;
ট্রেজার আইল্যান্ডের যে মানচিত্র
এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে—
তাতে আঁকা আছে উপসংহারের ইতিবৃত্ত ।
মূলভাবে, আমি কেবল নিজেকে
অসাম্প্রদায়িকতার মিথ শোনাই ।
ফেরা
শঙ্খ-জলে ভাসছে
কালো কোঁকড়ানো চুল, বাতাসে মেথির গন্ধে বৈসাবি ঘোর—
পাহাড় থেকে
ঝুম ঝুম ভোর ভেঙে নেমেছিল
যে ঝিনুক, জলের তলে তা রূপান্তরিত কফিন;
ডালা খুলে
বসে আছে মুরুব্বি গোছের এক মাছ,
সহস্র আলোক বিন্দু ছাড়িয়ে তুমি যেতে চাও সেখানে!
শোন মেয়ে,
তাকাও জলের আয়নায়—
ও’খানে নারী ষোল খণ্ডে প্রতিবিম্বিত,
ওখানে জীবন
নোনা ধরা দেয়াল, মৃত্যু ওখানে নগণ্য,
শিথিল বিদ্রুপের ছায়ায় বরং ফিরে এস মেয়ে;
কথা দিচ্ছি,
তোমাকে একটি মানবজন্ম দেব।
ফাহমিনা নূর
জন্ম: ১৯৭০, ঢাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এম এস এস, লোক প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা: শিক্ষকতা, বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল। নিবাস: চট্টগ্রাম।