বিনির্মাণ
(অজিত চৌধুরী-কে)
আমি তো কলোনিয়াল ছেলে
নানাভাবে ফেঁসে গেছি মার্ক্সবাদের মৃত্তিকায়।
আগুন পোহানো লাল কীর্তি, দু’খন্ড পৃথিবী আর
স্থায়িত্বের প্রিয় শর্তে আদ্যোপান্ত সামাজিক।
স্পর্ধিত আদম ও প্রিয়তম ইভের পৌরাণিক পাপ
জন্ম দিলে শ্রমের চাদর সূক্ষ রজঃস্বলা,
অভুক্ত প্রভুর পান্ডুর গ্রীবায় বিচ্ছিন্ন সংলাপ
অনুবাদ করে ফেলি গোলাপী রুটির অনুপ্রাস।
শব্দ থেকে গর্জে ওঠে অস্ত্র, লাল অতিকায়
সোয়েটার বুনে বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ।
তত্ত্ব থেকে সংগঠিত মুগ্ধ অসহ্য জার্নাল
সমাজাবিজ্ঞান-ভজনা ও বুড়ো আঙুল খেয়েছে একঝাঁক
বাদামী মানুষ। কালভেদে উল্টে দিলে পৃথ্বি, কেন্দ্রবিন্দু,
বুকে রাখ হাত নতুন পরিশোধন, মৃত্যুহীন অনন্ত জীবন।
কলোনিয়াল শিশুটি কাঁদছে শব্দহীন
পসিটিভিস্ট দ্বিধায় কাঁপছে হেগেল গুরুর রক্ত।
বদলাবে প্রতি মুহূর্ত মানুষ, খন্ড মানুষের গাথা,
বহুরূপে শুনেছি তাহার কথা বহুবার
কী উদ্দেশ্য জগত সংসার।
বিশুদ্ধ অস্তিত্ব ধ্বংস হউক অপার শূন্যতায়।
বিশুদ্ধ অস্থিত্ব —> হাওয়া —> শূন্যতা
: কোথা থেকে আসছ, মানুষ?
মার্ক্স চাঁদের অন্যপিঠ দেখালেন।
আমি বাজার, বাজার থেকে ফিরে যাচ্ছি
বিনিময়ে বিক্রীত সভ্যতার টিকেট সেঁটেছি গায়ে
পারটিকুলারিটির কারুকাজ।
আমরা জন্মেছি পণ্য থেকে, মৃত্যু মানে পণ্যের বিচ্ছেদ।
বিশ্বব্রহ্মান্ডের সবকিছু আগুন, বাতাস, ফুল, পাখি, নারী
বাজারেই ফিরে আসি।
শুধু এক বিস্মরন ছাড়া মানুষের কেনো সিনোনিম, এন্টোনিম নেই,
অর্থ নেই, মুক্তি নেই, কীর্তি নেই, তবু ভালবাসা
অনন্ত অসীম সত্তা।
হাড় ভাঙ্গা খাটুনির নীলকোট ছুড়েঁ ফেলি দূরে
এই কারখানা, এই গৃহ, তপ্ত আগুনের ভাঁড়।
আমি কমুনিস্ট নই, জানিনা এথিস্ট কিনা,
ফেমিনিস্ট স্বর্গবালা মেনকার বোন।
আমার তরুণীকন্যা স্নান ঘরে পোশাক খুলতে ভয় পায়,
পরমেশ্বর সবটা দেখছেন ভেবে সে মিলনে অনিচ্ছুক
মাথায় ঢুকেছে গিয়ে মগজধর্ষণ ।
অবশেষে প্রাচীন ধ্বংসের স্তুপ থেকে জেগে ওঠে
শীতলা দেবীর পুজো,
শীতলা দেবীকে জিনস্-এ মানিয়ে যায়।
চিরকালীন ভীতির অবশেষে বেদনার ঘনবোধ, প্রাগমিটিজম,
নানাভাবে কলোনির কনক্রিট ভেঙে নতুন জলের ধারাপাত
ধ্বংসের অবিনির্মাণ।
উত্তরণে সব ধারনা বদলে গেছে ক্রমাগত
নীলপথ রেখা বেয়ে।
শুরু হল স্বপ্ন বপনের দিন, কলোনিয়াল ইন্টারভিন।
[ বিনির্মাণ ‘স্বপ্নাদ্য মাধুলি’ গ্রন্থভূক্ত কবিতা। (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ অনুসৃত) চারবাক-এর বানান রীতির পরিবর্ত্তে কবির অনুসৃত বানান রীতিতে কবিতাটি পুনঃপ্রকাশ করা হল। — সম্পাদকীয় ]
এজাজ ইউসুফী
জন্ম: জানুয়ারি, ১, ১৯৬০। উত্তর আধুনিকতাবাদী কবি, লেখক, সম্পাদক এবং সাংবাদিক। নব্বইয়ের দশকের সমকালীন প্রেক্ষাপটে কবিতা বিনির্ম্মাণের করণ-প্রকৌশলে ইউসুফী বিশেষ মাত্রা যুক্ত করেছেন। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উত্তর আধুনিকতাবাদ ধারণার প্রবর্ত্তনে ভূমিকা পালন করেছেন একজন চিন্তার প্রবক্তা হিসেবে। [১] তার কবিতায় মানুষ, রাষ্ট্র, দর্শন, সাম্যবাদসহ সময়ের বিচিত্র রূপ প্রতিফলিত হয়েছে। [২] ২০২০ সালের হিসেবে তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একুশে সাহিত্য ( কবিতা) পুরস্কার পান।সম্পাদক— লিরিক (লিটল ম্যাগাজিন)। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— স্বপ্নাদ্য মাধুলি (কবিতা), উত্তর আধুনিকতা : নতুন অন্বয়ের পরিপ্রেক্ষিত (গদ্য)।