বিষ-এ-সঙ পদ
অকস্মাৎ আমার যেটুকু অব্যয় তুলে নিলে কষ্টিতে
সেইটুকু আমাকে— এইবার
অনবরত আমার অভিমুখে পাঠাতে পার
নয়ত, পার যদি, ক্রিয়াপদ ভাঙবার ক্রিয়া কর তুমি।
এত নান্দনিক বিষ-অন্ন-তায়, জোড়ালো এই রাতে—
তোমার মুখোমুখি দাঁড়াবার এত এত ভয়—
যদিবা ছিনিয়ে নাও সবটুকু অব্যয়—
ও কথা কি আর ভাবা যেতে পারে?
আমার ওইটুকু আমাকে, বরং অভিমুখে পাঠাও
একটা প্রদর্শনী হয়ে যাক— কতোটুকু ঝলসালো ‘আমি’।
শব্দ
তোমাকে চর্চ্চা করি
নিরুদ্দেশ শব্দ পাঠাই তোমার দিকে।
তুমি শুনতে পাও না—
অথচ আমার দীর্ঘশ্বাস তোমার দিকেই যাত্রা করে।
জলের থৈ-থৈ শব্দের মত আমার ভেতরে শব্দ হয়
তোমাকে ডাকবার অনুচ্চারিত শব্দ হয়।
ভীষণ শব্দ হয়…
একটা চিৎকারের বড্ড প্রয়োজন হয়ে গেছে আজ
কিন্তু তোমার অসুন্দর আমাকে চিৎকার শেখাতে পারেনি
কিংবা তোমার সুরেলা দুঃখে আমি চিৎকার ভুলে গেছি
কিংবা আমার কণ্ঠস্বর অযুত অযুত চিৎকারে বিলীন
আর আমি—
একটি নীরব খণ্ড-ত’র মত হাঁটু মুড়ে বসে থাকি
বসেই থাকি…
হরিৎ স্বপ্নগুচ্ছ আমাকে দেখতে আসে রোজ—
[তুমি আরো দূরে সরে যাচ্ছ
তুমি ডুবিয়ে যাচ্ছ অতলে কোথাও]
বলো এমন স্বপ্ন আমাকে দেখতে আসে কেন?
ফোঁটা ফোঁটা কবিতায়— ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মত
কেন আসে বৃষ্টি-বৃষ্টি দুঃখ?
বৃষ্টি তো তোমার চেয়ে অধিক বৃষ্টি নয়
বৃষ্টিজন, বৃষ্টির দোহাই দিলাম—
এস, আমার শব্দকলা নির্ভার করে নাও…
অনুবাদ, তোমাকে
তুমিই অনুবাদ হয়ে আস আলাদা শরীরে
এবং আমার প্রেম নিয়ে আসে অভিন্ন পরিস্থিতি
ঋতবর্ণ এই জীবন, হিম রক্ত কল্লোলে ভাসিয়ে নিচ্ছ… নাও—
আমি জেনে গেছি, প্রতারক আত্মার বারোয়ারি ক্রন্দন।
চোখের স্থানে চোখ রাখলে ভীষণ জলকেলি হয়
কখনো দুঃখবোধের ঘুমে তোমার দিকে ধাবমান তোমাকে দেখি
নিজেকে চুরি করে নাও। কোথায় রাখ তোমার সমস্ত বিউটি-ফুল?
নিরুপায় আমিও আমার পাশে— খুব পাশে বিমূর্ত্ত হই
গ্যালিপ্রুফে অমার্জ্জিত সংশোধন হয় নামের।
তখন ভালবাসব না বলিয়া
এত এত ঘুমের পরে
সেই তো ভালোবাসার কাছেই মাথানত করি
গাছ, পাখি… এবং মানুষের পৃথিবীতে।
আর তুমি তো সেই— অনুবাদ হয়ে আসবেই
আলাদা শরীরে…
আমি গুপ্ত চিরকুটে পুনরায় লিখব— ঘনিষ্ঠ হও।
মিড নাইট মাস্টারবেশন
আত্মা ঘন হয়ে আসছে। কীটাত্মার ঢল নেমে আসছে আমার দিকে, আপনার দিকে। প্রাতিষ্ঠানিক মদ্যপগুলো, বেসামাল যারা— আমাকে ডুবাবে এবার। ডুবিয়েই ছাড়বে লাল অন্ধকারে।
অন্ধকার আমাকে ঘিরে রাখছে সারাদিন, সারারাত। আপনি তো জানেন, এত অন্ধকারে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভারী লাগে এই নিষিদ্ধ শরীর।
দেখুন, কীট পতঙ্গের আত্মা— আত্মাগুলো আরো ঘন হয়ে আসছে। এবার চলুন দোযখের শেষ দরোজা দিয়ে পালিয়ে বেরোই। ঢুকে পড়ি আরেক দোযখে। নয়তো একটা নরকরাষ্ট্র, একটা দেশ, মাতৃভাষা বাংলার একটা ভূ-খণ্ড— নৌকায় ভেসে যেখানে যাচ্ছে, যুবকের অবশিষ্ট প্রশান্তি ‘মিড নাইট মাস্টারবেশন’ সেখানে সম্ভব নয়।
খেলা
প্রথমত গর্ভ থেকে বেরিয়ে কবরে লুকোয়
এরপর কবর থেকে বেরুবার ছিদ্র খোঁজা মন
তারও ভেতরে মন আছে কিনা—
ভাবতে ভাবতে পাখিদের পেছনে পাখি হয়
বাপ দাদার সম্পত্তি ভেবে আকাশে ওড়ে
মন ওড়ে, পাখি ওড়ে
ওড়ে সমূহ সংসার
শেষে ঝরে পড়ে বৃদ্ধ ফুলের মত, জলের মত
পঁচে সরে গলে যায়, বইতে থাকে, বয়ে যায়
আমিও বইতে বইতে
তরল থেকে জন্ম নিই পুনর্ব্বার
মৃত্যু দেখতে দেখতে জন্ম নিই
জন্ম নিতে নিতে নিজের মৃত্যু দেখি
মৃত্যুর ভেতর দিয়ে জন্ম দেখি জন্মান্তরে
নিত্যই কী এক নির্লজ্জ খেলা এইরূপ—
খেলতে পারো, গোপন ঈশ্বর?
আয়না
আয়নাটি ভেঙ্গে গেলে
সে আয়নায় আত্মদর্শন নিষেধ
সম্ভবত অমঙ্গল হয়
অথচ তুমি কেবল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলেও
তোমার গভীর চোখে
অন্তত আমার অর্দ্ধবিম্ব প্রত্যাশা করি…
হোসাইন মাইকেল
জন্ম— ৮ জুন, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িতে। কবি ও গদ্যকার। সম্পাদনা করেন ওয়েবজিন দিব্যক।