চারবাকের সোমবারের আয়োজন চর্যাপদের পাঁচটি কবিতা । এবার একসাথে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হলো । আজ প্রকাশিত হলো তৃতীয় কিস্তি (১ থেকে ১০)।
-সম্পাদক, চারবাক
দেহ যেন বৃক্ষের সদৃশ; পাঁচখানা ডাল পাঁচ ইন্দ্রিয় সমান
চঞ্চলাপ্রবণ এ বুকে
একদিকে বাসা বাঁধে মায়ার বিভ্রম, অন্যদিকে আসঙ্গ সুখ
আর এ সুখদুখ ভোগ শেষে
মৃত্যু কেন অবধারিত আমাদের, অথবা
সমাধি রহস্যের কি হতে পারে স্বরূপ, গুরুই ভালো জানে
মুক্তির উপায়- ইন্দ্রিয়পটুতা নয়, পরম শূন্যতা
২.
দুধ-স্বাদের বোধিচিত্তফল
মাটির হাঁড়ির ধরে না একদম
বরং চেটেপুটে খেয়ে নেয় চতুর কুমীর
বউ, দাঁড়কাকে দিনের বেলা এতই যদি ভয়
তবে এ মাঝরাতে
কার টানে তুমি আজ ঘরের বাহির?
কানের হারিয়ে ফেলা দুল, নাকি প্রেমিকপরাণ- কও
কে দায়ী তোমার এ পাগল দশায়?
বধুযা, যে ঘরে ঘুমে কাতর শ্বশুরমশায়
মনে রেখ, তাই-ই তোমার আপন ঠিকানা
৩.
নাক ভরে টেনে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছ নিঃশ্বাস
চিকন বাকলে মদ, উফ! জিহ্বায় উচ্ছ্বাস
দুরূহ গৌরব পাবে
অমরত্বের উৎসব হবে; তোমাকে ঘিরে
যদি, এ মদ চোলাই করো ধীরে ধীরে
দশমীর দ্বারে চিহ্ন আঁকা ছিল
খদ্দের নিজের পথ পথ নিজেই চিনে নিল
পসরা সাজানো আছে চৌষট্টি ঘটায়
সেই যে সে ঢুকেছে, আর না বেরোয়
ছোট্ট ঘটি, আরো ছোট্ট নালা
সুস্থির চাল মানেই সুখের জানালা
৪.
যদি মুগ্ধ-ইংগিত পাই; পরিশ্রান্ত জলের
অতল থেকে একতাল মুক্তা তুলে
কাটিয়ে দেব বাকিটা সময়
আহ! রোমাঞ্চিত ঠোঁটে তোর কমলার স্বাদ
ছাড়া পেলে কখনও ধরা না দিস
আবেগে ভেসে ভেসে উপরে উঠিস
তালার মালিক শ্বাশুড়ি, চাবি দিলি এঁটে
চন্দ্র সর্যের পাখা দুটি ফেললি কেটে
যুবতী, ভেব না আড়ষ্ট আমি রতিকর্মে; বরং
এক্ষেত্রে রয়েছে আমার বিস্তর নামডাক
এ জীবন নিষ্ফল তোরে ছাড়া
৫.
ভবনদীর দেখ সুদীর্ঘ বাঁক
মাঝখানে ঢেঊয়ের তুফান
দু’ধারে কাদার ফাঁদ
চাটিল সাঁকো দিয়েছে ধর্মের আশায়
পারগামী লোকজন পার হয়ে যায়
এ সাঁকোটিকে করা হল দাঁড়
মোহতরুর কপালে শক্ত কুঠার
সাঁকোয় চড়ে বামডান করো না
কাছেই বোধি, দূরপানে যেও না
ওপারে যদি সত্যিই যেতে চাও
চাটিলের কাছে দ্রুত পরামর্শ নাও
৬.
সকরুণ ফাঁদে আটকে পড়া নিঃসঙ্গ হরিণটার কী যে হল; রক্ত চোখে
টুপটাপ আষাঢ়। জলপানে একটুও আগ্রহ নেই। এমন কি সবুজ ঘাসেও
দারুণ অনীহা। অথচ কী কান্ড দেখো, তাকে ঘিরেই মাংসের আগাম
উৎসব শিকারীর
আর ওদিকে, প্রাণের ঐশ্বর্য নিয়ে যথারীতি উধাও সঙ্গের হরিণী। কে তবে বন্ধুর
আসন্ন বিপদে বাতলে দেবে পথ? জোগাবে মুক্তির মন্ত্রণা?
ব্যুহবদ্ধ হরিণের এমন সুহৃদ বলো আর কে আছে
তাকে ছাড়া?
নিরাপদ দূরতে দাঁড়িয়ে বিনীত ইশারা হরিণীর- ‘পালাও পালাও এবার…’
হরিণের পায়ের
খুরের
সিম্ফনি ছাড়া
এখন যে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না
৭.
আলি ও কালিতে পথ রুদ্ধ
এসবে কানু মহা বিরক্ত
এত মায়া নিয়ে কই করি বাস
যে জানে মনের কথা, সে কেন উদাস
তিনজন তারা- সবাই এখন বিচ্ছিন্ন
সংসারে এতদিন যা ছিল অভিন্ন
যারাই এসেছে- গেছে প্রত্যেকেই
কেউ তো আর অবশিষ্ট নেই
জিনপুর কাছেই আছে
খবর পাবে কানুর কাছে
৮.
স্বর্ণ-সুষমায় ভরা করুণার নাও
রূপা রাখবে কই- দিশা না পাও
মাঝি, বেয়ে চল, ডাকছে সুমুদ্দুর
কে কবে শুনেছ বিগত জন্ম সুর
নোঙর গুটাও, কাছিও খুলে রাখ
জলের ভূ-গোল বেয়ে এগিয়ে চল
গলুইতে উঠে চারদিকে তাকাও
বৈঠা নেই- কে বাইবে এ নাও
বামডান দেখে সাবধানে গেলে
পংকিল এ পথেই মহাসুখ মেলে
৯.
উপড়ে ফেলো তোমার ব্যাপক বাঁধা
বিবিধ চিহ্নে ভরে তোলো কালের খাতা
খুশিতে গদগদ মাতাল কানাই
পদ্মবনে এমন লোক দ্বিতীয়টি নাই
সঙ্গীর প্রেমে হাতীরও আসে আসক্তি
মায়া; হ্যা মায়াই জীবনের শক্তি
ষড়গতি স্বস্বভাবে পরিশুদ্ধ
ভাবে ও অভাবে হয় না ক্ষুব্ধ
দশদিকে দশরতন বিছানো আছে
লড়াই করে জিততে চাই হাতীর সাথে
১০.
লোকালয় ছেড়ে দূরে আছো
সুখ স্পর্শে ফুলকি আঁকো
কী করে বাঁচি তোরে ছাড়া
উলঙ্গ কাপালিক দিশেহারা
চৌষট্টি পাপড়ির মুগ্ধ কমল
আহা! তুই তাতে নৃত্যে চপল
বিক্রি বন্ধ তোর চাঙাড়ি ও তাঁত
কার ভাঙা নায়ে করছিস যাতায়াত?
হ্যাঁ, সংসারচক্র তোর জন্যই ছেড়েছি
যা হয় হোক, হাড়ের মালা ধরেছি
ডোমনী, হাত বাড়িয়ে দাও
পদ্মের ভাঁজ খুলে মৃনাল খাও