ভূমিকা—
বিশ্বসাহিত্যে আধুনিক কবিতার ইতিহাসে প্রতীকবাদের আবিষ্কার ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর পথ ধরেই আসে ফিউচারিজম, দাদাইজম, স্যুররিয়ালিজম…
জাঁ মরেয়া ১৮৮৬ সালে শিল্প আন্দোলনের মেনিফেস্টো “Le Menifeste du Symbolisme” এ বলেন “প্রতীকবাদ সরাসরি অর্থকে পরিহার করে, স্থুল আবেগকে বাস্তবিক বর্ণনাশৈলীকে বর্জ্জন করে, একটি অদৃশ্য, আত্মার অন্দরমহল যেখানে স্বপ্ন কল্পনা নিত্য আনাগোনা করে সেই জগতটাকে তুলে ধরে।”
কবিতাকে ছন্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে, মুক্তছন্দের প্রয়োগে চেতনার প্রবাহে ছেড়ে দেওয়াই এর উদ্দেশ্য যেমনটা এজরা পাউন্ড এবং হুইটম্যান করেছেন। রোমান্টিকতা ও সিম্বলিজমের মাঝে মিল ও পার্থক্য দুটোই আছে।
উনিশশতকী রোমান্টিকরা ইন্দ্রীয় অনুভূতিকে (sensuousness) বড় করে দেখেছেন আর সিম্বলিস্টরা এটাকে আরো ঘনীভূত করলেন ইন্দ্রিয়জ অনুভব একটা আরেকটার জায়গা নিলেন।
চোখ আর শুধু দেখার নয়, স্পর্শ করার সেন্স বহন করল। এটাকে Synaesthesia বলে।
“প্রতীকবাদী কবিতা রোমান্টিক কবিতারই পরিশুদ্ধ এক্সটেনশন। সবই আছে। তবে অতিমাত্রায় সেন্টিমেন্টালিজম, প্রগলভতা, ক্রন্দনের জায়গায় সাংকেতিক দ্যোতনা, শব্দের কটুভাষার, উপমার অভিনব তৈরী এক ঐন্দ্রজালিক আবহ।” (Axel’s Castle by Admond Wilson)
ফরাসী কবি বোদলেয়ার (এর জনক), মালার্মে, র্যাবো, পল ভেরলেন— এই চারজনকে প্রতীকবাদ আন্দোলনের পুরোধা ভাবা হয় যারা ১৮৬০ ও ৭০ দশকে এর চর্চ্চা করেন। প্রতীকবাদীরা প্লেটো’র “Transcendentalism’’ এর মত বিশ্বাস করতেন, বাস্তব জগতের বাইরে আরেকটি স্বজ্ঞার জগত আছে। সেটাকে বুঝতে হলে প্রতীক বা চিহ্নের মাধ্যমে বুঝতে হবে। বোদলেয়ার যেমন বলেছেন, ‘‘a travers la poesie’’, মালার্মে যেটা মনে করেন “কোনো বস্তুর নাম উল্লেখ করা মানে কবিতার আনন্দের তিন-চতুর্থাংশ নস্যাৎ করা, যে আনন্দ আসে একটু একটু করে অনুমান করে— এই রহস্যময়ীতার নির্ভুল ব্যবহারই গড়ে তোলে প্রতীক: কবিতার সর্ব্বদা থাকতে হবে এক কটুভাস। কবিতা হবে চিত্রকল্প, ধ্বনিপ্যাটার্ন ও ছন্দের নিহিত সিম্ফনি, যা অনুভূতি, স্বপ্ন ও সংবেদনকে বহুগুণিত করতে থাকবে।”
আর এই প্রতীকবাদই পরবর্ত্তীতে পরাবাস্তববাদে পরিণতি লাভ করে।
অদ্ভুত বিষয় একদল কম্যুনিস্ট (অ্যাপোলিন, এলোয়ার, লুই আরাগঁ, আঁদ্রে ব্রেতঁ, লোরকা(স্পেন) যারা বাস্তবতা নিয়ে কাজ করতো, তারাই জন্ম দিল পরাবাস্তববাদের।
বলা হয়, ফ্রয়েড এবং ইয়ঙ এর সাইকোএ্যানালাইসিস তত্ত্বে প্রভাবিত হয়েছিলেন তারা।
অবচেতন মনের কোণে থাকা, গভীর সত্যকে ফ্রয়েড যেমন তার রোগীর মনের ভেতর অবলীলায় যা আসে তা বলে বের করতেন, তেমনি পরাবাস্তববাদী কবিগন সচেতন জগতের বাইরে অবচেতন মনের ভিতর সত্য খু্ঁজেছেন। ফলে “স্ট্রিম অব কনশাসনেস” হয়ে ওঠে অন্তর্লোকের দর্পন, একটা অদৃশ্য ও লুকানো সত্য।
পরাবাস্তববাদের মূল কথা অবচেতন মনের ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট ও আশ্চর্য্য সব রূপকল্প দ্বারা প্রকাশ করা। এঁরা বাক্যগঠনে, উপমায় পরষ্পর বিরোধী , উদ্ভট দৃশ্যে ভরিয়ে তোলে।
এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে রোমান্টিসিজম আর পরাবাস্তবাদে এক অদ্ভুত মিল রয়েছে। কবিতার জন্য প্রথমে “Spontaneous overflow of powerful feelings” (Wordsworth) দরকার। হৃদয়ের তন্ত্রীতে যেন বেজে ওঠে সেরকম একটা tranquility বা ঘোর দরকার।
তখন চারপাশের কি জড়, কি জীব— সব এক অদ্ভুত গতিশীল অস্তিত্ব নিয়ে শব্দের জগতে ধরা দেয়।
Wordsworth যেটাকে বলেন
“A motion and a spirit, that impels
All thinking things, all objects of all thought,
And rolls through all things. Therefore am I still”
তখন শব্দের ধ্বনি, ছন্দ আর সুরের এক ঐন্দ্রজালিক আবহ তৈরি হয়, পাঠক ভেসে যায় এক অন্যজগতে যেখানে যুক্তি, তত্ত্বজ্ঞান সব ফিকে লাগে, মোহাচ্ছন্ন হয়ে বিশ্বাস করে এই জগতকে। এটাকেই Coleridge বলেন “a willing suspicion of disbelief “
এই যে কবিতার এক শাশ্বত ভ্রমণ সেটি আমরা রোমান্টিকদের pantheism এর দর্শন, প্রতীকবাদের “A travers la poesie’’ বলি, পরাবাস্তববাদের “stream of consciousness” method বলি, সবই একবিন্দুতে এসে উপনীত হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, কবিতায়, একটু কটুভাষ, রহস্যে মোড়ানো “A travers la poesi’’ এর পাশাপাশি কবিকে একজন মিস্ত্রীর মত হতে হয়। নিখুঁত করতে হবে অভিনব চিত্রকল্প, উপমার বিনির্ম্মাণে। ইলিয়ট যেটাকে বলেন: “wrestle of the words” আবেগের সাথে মেধা ও মননের (emotion blended with intellect — Eliot) অনুপম রসায়ন ঘটানোর মুন্সিয়ানা দেখাতে হয় একজন কবিকে।
এবং এখানে উল্লিখিত কবিদের বেলায়ও সেইসব গুণের সমাহার দেখতে পাই।…….
পাঠ করুন কয়েকটি
প্রতীকবাদী ও পরাবাস্তববাদী কবিতা—
বিতৃষ্ণা || শার্ল বোদলেয়ার
দীর্ঘদিনের অবসাদগ্রস্ত যে হৃদয়
বিক্ষিপ্ত, বিষাদগ্রস্ত,
একটা ভারী, আনত আকাশ তাকে যেন ঢাকনার মত চেপে রেখেছে।
আর সমস্ত দিগন্ত ছেয়ে
আমাদের পৃথিবীতে নেমেছে
এক বিষণ্ণ দিন
রাত্রির চেয়ে আরো বিষণ্ন।
ধীরে ধীরে পৃথিবী ডুবে যায়
এক স্যাঁৎসেঁতে পাতালে,
প্রত্যাশাগুলোও পালানোর পথ পায় না,
বাদুড়ের মত ঘুরে-ঘুরে
অবশেষে ভীত ত্রস্ত পাখা ঠোকে
দেয়ালে দেয়ালে।
যখন বর্ষা তার বিস্তৃর্ণ জলরাশি নিয়ে নেমে আসে ভুবনে
বিশাল জেলখানার শিকলের মত
নিঃশব্দ মনুষ্যদলকে বন্দী করে।
এবং আমাদের স্নায়ুজগতের গভীরে একদল ঘৃণিত মাকড়শা
জাল বোনে।
হঠাৎ ঘন্টাগুলো লাফ দিয়ে ওঠে
রাগে
সমস্ত আকাশ ভরিয়ে তুলে
ভয়ংকর চিৎকারে।
এবং ধীরে ধীরে আমার আত্মার
ভেতর দিয়ে চলে যায়
দীর্ঘ শবযাত্রা,
কোন সংগীত নেই,বাদ্যযন্ত্র নেই
সারি সারি কফিনের যাত্রা।
আশারা পরাজিত হয়,
নির্মম বীভৎস যন্ত্রণা
আমার মস্তিষ্কের ভেতর পুঁতে
তার কালো পতাকা।
নরকে রাত্রি || জাঁ আর্তুর র্যাঁবো
(কয়েকটি চরনের ভাবানুবাদ)এভাবে থেমে যেতে থাকে জীবনের ঘড়ি।
আমি এই পৃথিবীর এক আউটসাইডার।
ধর্ম্মশাস্ত্রই ঠিক—
পতন নিম্নমুখী আর স্বর্গ ঊর্ধ্বমুখী।
তাই পৃথিবীর মানুষ পতনকে ভয় পায়
মানুষ তাই উপরের দিকেই ছুটে।আমি আজ নরকের বাসিন্দা।
শয়তান, ফার্দিনান্দ, বুনো বীজ নিয়ে দৌড়ুচ্ছে
যিশু হাঁটছিলেন গোলাপী কাঁটাঝোপের ওপর দিয়ে অশান্ত জলের ওপর দিয়ে,
আমি সব রহস্যের ঘোমটা উম্মোচন করতে
যাচ্ছি।
প্রাকৃতিক, মৃত্যু, জন্ম, ভবিষ্যৎ, অতীত, মহাবিশ্বসৃষ্টি তত্ত্ব, এমনকি
শূন্যতা
যার পিঠে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ক্লান্ত বিশ্ব।
আমি এখন ছায়ামূর্ত্তিপ্রবাহের অধীশ্বর।
আমাকে বিশ্বাস কর,
বিশ্বাস রাত্রির মত নিশ্ছেদ্র, নিরাপদ
সব নিরাময় করে
যাতে আমি তোমাদের দিতে পারি স্বস্তি,
যাতে খুলে যেতে পারে একটি বিস্ময়কর হৃদয়
ভালবাসার—
দরিদ্র মানুষ, শ্রমিকগণ!
বিশ্বাস কর, আমি প্রার্থনা চাই না।
তোমাদের আস্থায়
আমি জীবিত হব মৃতদের নরকে।
দ্বীপের ধারে || গিয়েম অ্যাপোলিন
দ্বীপের ধারে
শূন্য নৌকাগুলো ধাক্কা দিচ্ছে
আর আজ
রেববার কিংবা অন্যদিনও
একজন শিল্পীও সেখানে যাচ্ছেন না,
এমনকি মপাসাঁও নয়।
হাতকাটা জামা পরে নৌকোয়
নির্বোধ মেয়েদের সঙ্গে
ডিঙ্গি নৌকারা
গভীর দুঃখ দিয়েছে আমায়
দ্বীপের ধারে।
জলাহত একজনের কাসিদা || ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা
আমি নেমে যেতে চাই
আরো গভীরে
কুয়োর একদম ভিতর,
দেখতে চাই
জলের কালো সূচে বিদ্ধ হয়ে আছে
কোন সে এক হৃদয়।আহত শিশুটি কাৎরাচ্ছিল
তুষারের মুকুট পরে
দীঘি চৌবাচ্চা আর ঝর্ণা
আকাশে ঝুলিয়ে থাকে তাদের তরবারি।আহা! কী অদ্ভুত তীব্র প্রেম!
কী শাদা মৃত্যু!
কী আলোর এক মরুভূমি লুকিয়ে আছে
ভোরের বালুর গর্ভে।ঘুমন্ত শহরটিকে একা নিয়ে
কণ্ঠনালিতে
শিশুটি জেগে আছে একা।
স্বপ্ন থেকে উঠে আসে শুধু এক ঝর্ণা
বাঁচাতে চায় শিশুকে শৈবালের হাত থেকে।শিশুটি আর বেদনা মুখোমুখি
ভীষণ একা।
দুটি সবুজ বৃষ্টিধারা
বিনুনির মত
শিশুটি মাটিতে
আর বেদনা তার চারিদিকেকুয়োর আরো গভীরে যেতে চাই
মরণকে গিলতে চাই ঢোকে ঢোকে,
এবং দেখতে চাই
জলাহত একটি হৃদয়।(কাসিদা একটি ফার্সী শব্দ, যার অর্থ কবিতার ছন্দে কোন প্রিয়জনের প্রশংসা করা। [১] আরবী শব্দ ক্বাসাদ বিবর্ত্তিত হয়ে ফার্সী ‘কাসিদা’ হয়েছে)
গোলাপের গজল || ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা
গোলাপ — তার কোন সময়সূচনা নেই,
নেই ঊষা,
আপন বৃত্তে সদা জগ্রত।
সে খোঁজে
আর কিছু, আর কিছু।গোলাপ,
কোন তত্ত্বকথা বুঝে না,
বুঝে না কোনটা আলো কোনটা ছায়া:
কিছু মনু, কিছু তনু
শুধু খোঁজে আর কিছু, আর কিছু।গোলাপের মন
মজে না গোলাপের সাজে
আকাশের ওপারে
ও কি খোঁজে
আর কিছু, আর কিছু।
হিয়ারোগিল্ফ || শার্ল ক্রস
ঘরে ছিল তিনটা জানালা—
সাগর, মৃত্যু এবং ভালবাসা।
তাজা, লোহিত, শান্ত সবুজ আর বেগুনি রঙ।
হে রমণী, তুমি মধুর, মঞ্জুষা।
সাগর, মৃত্যু এবং ভালবাসা।চিত্রিত কাচ, ঘণ্টা, এক অমৃত সুগন্ধ
যা ভাবলেই পাই আনন্দ…নারী, তুমি আলোর চাইতেও আলোকিত এক দিন।
অথচ সেপ্টেম্বরের এক সন্ধ্যায়
ভেঙে গেল তিনটি জানালা
এক
সন্ত্রাসী হাওয়ায়।
আর
সাগর, মৃত্যু এবং ভালবাসা।এখন শিকারী চোখ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে
এবং
খুঁজে বেড়ায়—
নারী! নারী! মাংসের কফিন!
কালের জন্য শোক || জুলে লাফর্গ
সূর্যাস্ত এক কসাইয়ের অ্যাপ্রনের মত
লালরঙ এ রঞ্জিত।
কে যেন বলে আমাদের চামড়া
খসা নোটাই বাকী!এখন ঘটনা যেন পথের সফর
তোমার হৃদয় হয়ে যায়, যাযাবর
তড়বড়িয়ে হেঁটে চলেছে লুসিয়াডের দিকে!হেঁটে চল হে বিয়ের পয়গামেরা
গুদামঘরের পানে
সেই দ্বীপপুঞ্জে, লোকে পান চিবোয় যেখানে
আমার হবে না অ্যাডভেঞ্চার শোনা
এতো ছোট, স্বভাবে -চলনে,
প্যারিস-সার্কেল রেলওয়ে লাইনে!ওই তো ওখানে জলের মিস্তিরী
শিস দেয় রাজা ডাগোবারের সুর
আহা সাগরের এপ্রিল ভোর, কী মধুর!দুরন্ত ছোটে বাতাসের ঘোড়া
ওকে থামানো বৃথাই আশা!
আঃ ঈশ্বর জানে কী দু্র্দ্দশা
দুনিয়াজোড়া!
কবিদের পরিচিতি —
শার্ল বোদলেয়ার
উঁনাকে প্রতীকবাদের জনক ভাবা হয়। বুদ্ধদেব বসুর মন্তব্য, “প্রথম দ্রষ্টা তিনি, কবিদের রাজা, এক সত্য দেবতা।” ভের্লেন ঘোষণা করলেন “ফ্ল্যু দ্যু মাল” অলৌকিক গুণসম্পন্ন কাব্য এবং এটাকে আধুনিক সাহিত্যের বাইবেল ভাবা হয়। র্যাবো, মালার্মে সবাই তারই অনুসারী। কালজয়ী এই কবিকে জীবদ্দশায় বহু দুর্ভোগ পোহাতে হয়— তার লেখার জন্য এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও।
জাঁ আর্তুর র্যাঁবো
মাত্র পাঁচ বছর কবিতা লিখে, তাও আবার ১৫ থেকে ২০ বছর বয়স পর্য্যন্ত মাত্র দুটি বই। ভিক্তর হুগো যার নাম দেন “শিশু শেক্সপিয়ার”। ১৮৭৫ সালে একুশ বছর বয়সে নিজের টাকায় প্রকাশ করেছিলেন “নরকে এক ঋতু” এবং সেটাই তাকে অমর করেছে আধুনিক সাহিত্যের কিংবদন্তিসুলভ জীবন ও মৃত্যুর অধিকারী ফরাসি কবি জ্যাঁ আর্তুর র্যাঁবো। তার কবিতায় চমকে যায় প্যারিসবাসী। তারা ভেবে নেয় কবি মৃত। অথচ তখন আফ্রিকার জঙ্গলে দাসব্যবসায় নিযুক্ত।
(বোদলেয়ারের অনুসারী প্রতীকবাদ ও পরবর্তীতে পরাবাস্তববাদ ধারায় লিখেন।)
গিয়েম অ্যাপোলিন
প্রতীকবাদের অন্যতম প্রবক্তা। স্যুররিয়ালিজম টার্মটা উঁনারই আবিষ্কার। তিনি ‘নতুন ও কবি’ নামে শিল্পের একটি নতুন ম্যানিফেস্টো বের করেন। স্বেচ্ছাযাপিত জীবন ও পরীক্ষামূলক সাহিত্য চিন্তা তাঁকে বিশশতকের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি হিশেবে পরিচিতি এনে দেয়। “আলকল” কাব্যগ্রন্থ নামে পৃথিবীতে প্রথম যতিচিহ্নহীন কবিতাধারার প্রবর্ত্তন করেন।
ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা
ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা আধুনিক স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম কবি। তিনি একাধারে একজন কবি, নাট্যকার ও মঞ্চ পরিচালক ছিলেন। তিনি প্রজন্ম ২৭-এর (কবিদের সম্মিলনে গড়ে ওঠা সংগঠন, যারা ইউরোপিয়ান বিপ্লব স্প্যানিশ সাহিত্যে আনার চেষ্টা করে) একজন সদস্য হিসেবেই মূলত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। তার রচিত অসংখ্য রচনা ইংরেজী ভাষায় অনূদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের পাঠকদের কাছে এবং ধীরে ধীরে তার কাব্য-সাহিত্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বতন্ত্র এক ধারায়। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে জাতীয়বাদী কর্মীরা তাকে হত্যা করে, তার লাশ আর কখনও পাওয়া যায়নি। তাকে স্পেনে ‘জনগণের কবি’ বলে ডাকা হয়।নিজের এক বিখ্যাত বক্তব্যে লোরকা বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর আর সব জায়গায় মৃত্যুই শেষ কথা। মৃত্যু আসে, চিরতরে পর্দ্দা নামে কিন্তু স্পেনের বিষয়টি ভিন্ন, এখানে বরং মৃত্যু সব পর্দ্দা, সব আড়াল সরিয়ে দিয়ে সবকিছু দৃশ্যমান করে তোলে।’ তিনি স্পেনের ঐতিহ্যবাহী বুল ফাইটের সঙ্গে মৃত্যুর প্রতি মানুষের আত্মঘাতী আকর্ষণের যোগসূত্র খুঁজে বের করেছিলেন। লোরকা লিখেছিলেন, ‘স্পেন একমাত্র দেশ, যেখানে মৃত্যু বিষয়টি জাতীয়ভাবে সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।’
ফরাসী কবি শার্ল ক্রস বোদলেয়ারের অনুসারী প্রতীকবাদী কবি ছিলেন। তারা এই থিওরী অনুসরণে বেশ কবিতা রচনা করেছেন।
ফরাসী কবি জুলে লাফর্গ বোদলেয়ারের অনুসারী প্রতীকবাদী কবি ছিলেন। তারা এই থিওরী অনুসরণে বেশ কবিতা রচনা করেছেন।
সূত্র: History of modern poetry — David Perkins
অনুবাদক ও ভূমিকাকারীর পরিচিতি—
মাহবুবুল ইসলাম
জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১। পৈতৃক নিবাস— মাধবপুর, হবিগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ: জল ও জলোচ্ছ্বাস (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০১৯, প্রকাশক— চয়ন)। শিশির-হরফ (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০২০, প্রকাশক— চারবাক)।