বিবর্ত্তন
~~~~~~~~~~
বহুবিধ খুনের এ উদ্যানে
একটি মামলা কেবল ঝুলে থাকে
বটছত্র হয়ে;
মৃতের উৎসবে অহেতুক
অবতীর্ণ সান্টাক্লজ জিঙ্গেল বেল হাতে,
শিশুর জন্য
একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ার মত
প্রতিশ্রুতি
চাপা পড়ে যায় অতি আড়ম্বরে।প্রান্তরে কেউ থাকে বুঝিয়ে দিতে
শঙ্খের ভেতরে কীভাবে বেজে ওঠে
ক্রাইম পেট্রলের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।আমরা জেনেছি, বিবর্ত্তনের ধারায়
ইগুয়ানাও দিব্যি সাঁতার কেটে বেড়ায়
লাভা মণ্ডিত সমুদ্রপৃষ্ঠে।
তূরীয়
~~~~~~~~~
একটা কসমিক আওয়াজে
তোমার ঘুম ভেঙে গেল,
কেউ কথা বলতে চাইছে দেয়ালের সাথে,
ঘোরে
চেতনে বোধনেএকটা অপর্য্যুদস্ত ঘোড়া তীব্র বেগে ছুটে গেল
তুমি তাকে অল্পের জন্য দেখতে পাওনি
তার ধূলিধূসর ছায়াপথে উড়ছে
যাপিত জীবনের অস্পষ্টতাদেয়াল কিংবা কেউ কিছু বলতে চাইছে,
তুমি কিংবা দেয়াল শুনতে চাইছ;
বাজছে
কোন অতীন্দ্রিয় সঙ্গীত।কান পাতলে
ত্রস্ত খরগোশের ছোটাছুটি
টেকটোনিক সংঘর্ষের আগাম পদধ্বনি;অত তো সহজ নয় ব্যাসল্ট আর সিলিকন স্তর
পেরিয়ে যাওয়া।
ফী সংখ্যা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মানুষের হাতে মশাল থাকলেই ভাল
মশাল না থাকলে
মানুষ হাতে তুলে নিচ্ছে সেই চোঙ
যা দিয়ে কেবল নীল রঙ ওঠে, ধোঁয়াটে…ঢেকে যাচ্ছে
সভ্যতা, অন্তর আর এ শহরের পথগুলো।শহরটা আজ বেঁকে গেল নব্বই ডিগ্রী ভাঁজে
সি আর বি’তে ধূ-ধূ বাতাস, পাতাদের কোলাহলবিন্দুকে তারা টেনে নিয়েছিল অসীমের পাড়ে
অহেতুক, অনর্থকভাবে;
সেইসব সূত্রগুলো ছিঁড়তে ছিড়ঁতে জুড়ে গেল
প্যাগানদের পেন্টাকল।প্রাকৃতিক অনুপাত ভঙ্গের দায়ে
পুড়িয়ে দেয়া হল বাজপাখীদের আবাস
শিরিষের ডালে কোথাও থমকে আছে দীর্ঘশ্বাসআকাশ অন্ধকার করে মেঘ ডাকছে
শহরটা ডুবছে কালো চাদরে, হিমের মত নিঃশব্দে।মানুষের হাতে মশাল থাকলে ভাল
জ্বালুক আলো
নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে মানুষ জেনে নিক তার
ফি সংখ্যা।
নদীরেখায় মাইন
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আলফাডাঙ্গা ডুবে যাচ্ছে–
হে পরওয়ারদিগার
তেমার নিয়তিতে আমি আঁকতে চাই
ঝুলন্ত সেতু
বাঁক নিয়েছে মধুমতী, চন্দ্রাবতীর আলোয়
আমি শুনেছি ছাদ বাগানে
বিবিধ গোলাপের কানফাটা চিৎকার।দূরে কোথাও কাশছে
এক্যুরিয়াম ভেঙে ছিটকে পড়া কাছিম দম্পতি
অদৃশ্য মাইন পোতা আছে প্রতিটি সীমান্তে–
নাফ নদী পার হতে চেও না
ওখানে দ্বিমুখী স্রোতের কুচকাওয়াজ চলছে,
বলেছিলাম সেই সেনা সদস্যকে;মাইন সুইপার পেঙ্গুইনরা এখনো
বারো হাজার নটিক্যাল দূরত্বে অবস্থান করছে
বোঝাই যাচ্ছে
জমাট বরফের চাইয়ে আটকে যাবে প্রত্যাশিত
ডিসেম্বর।এসো রহমানুর রহীম
ক্যালেন্ডারের পাতায় আমরা একসাথে বসে
নামতা মুখস্ত করি।
মাথার ভেতরে কাছিম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মাথার ভেতরে এক কাছিম ওড়ে
উড়ে উড়ে বনবন ঘোরে
মাঝে মাঝে তার খোলস থেকে
গলা টেনে
আমার খুলি ভেঙে-ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে।পূর্ব্বকোন হতে আসে অদ্ভূত ঘ্রাণ,
পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিক সহ নানা প্রান্ত
হতে
আসে নতুন বা পুরাতন ঘ্রাণ।
উড়িয়ে স্বপ্রাণ
কাছিম মগজ মাখিয়ে খায় সেই সব ঘ্রাণ।একটা গবাদি পশুর ঘ্রাণ
আমাকে ডেকে বলে নিছক তোমাদের দুটি পা
আর আমার আছে বাড়তি দুটি
অন্যথায় আমরা জাবর একইরকম কাটি।মাথার ভেতর
কাছিমের ঘ্রাণ বলে
কামড় দিতে তুমি আমার কাছ হতেই শিখেছ
যেখানে তুমি তোমার অতীত ফেলে এসেছ
সেখানেই
তুমি তোমার ভবিতব্য কামড়ে ধরে রেখেছ।উড়ে যেতে যেতে এক চিলের ঘ্রাণ
যেমন ধাওয়া করছে এক শালিক ছানা
যদিও বলতে মানা
আমাদের নীল ঘ্রাণ ধাওয়া করে ঈর্ষার মতন
সহদোর, বন্ধুর চিলতে হাসি।এই ঘ্রাণ কম বেশি সবাই ভালবাসি।
ফাহমিনা নূর
জন্ম: ১৯৭০, ঢাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এম এস এস, লোক প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা: শিক্ষকতা, বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল। নিবাস: চট্টগ্রাম।